ব্ল্যাকহোল হচ্ছে মহাবিশ্বের সেই সব স্থান যার ঘনত্ত,ভর অনেক বেশি এবং ব্যাসার্ধ খুবই কম। কোন বস্তুর ক্ষুদ্র ব্যাসার্ধের মধ্যে ঘনত্ত,ভর অনেক বেশি হলে তার মহাকর্ষ বল অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে সেই ব্যাসার্ধ হতে হয় শোয়ারজশিলদ ব্যাসার্ধের সমান (R=2GM/c^2)।
সাধারণত কোন ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে হলে কোন তারার ভর পাঁচ সৌরভর এর বেশি হতে হয়। মূলত ব্ল্যাকহোলের ভর অনেক বেশি থাকার কারনেই তার মহাকর্ষ বল এতো বেশি হয়ে থাকে এবং তার মুক্তিবেগ (Escape Velocity) হয় আলোর বেগের চেয়েও বেশি। তাই কোন বস্তু একবার ব্ল্যাকহোলে পতিত হলে পরবর্তীতে তা মহাকর্ষ বলকে অতিক্রম করতে পারে না। এমনকি আলো পর্যন্ত ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ বল এর কারনে আটকা পড়ে। ফলে সেই বস্তুটি তাৎক্ষনিকভাবে সেখানেই হারিয়ে যায়। আর যেহেতু কোন বস্তু থেকে আলো না আসলে আমরা সেই বস্তুকে দেখতে পাই না সেহেতু ব্ল্যাকহোল থেকে আলো না আসায় আমরা সেটিকে কালো দেখি। ব্ল্যাকহোলের যেই সীমানা থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না সেই সীমানাকে ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) বলে। ইভেন্ট হরাইজন এর মধ্যে আলো ব্ল্যাকহোলকে প্রদক্ষিন করতে থাকে। এই ইভেন্ট হরাইজন এর ভিতরে কি হয় আমরা তা জানি না। কারন কোন বস্তু ব্ল্যাকহোলে পতিত হওয়ার পর বস্তুটির পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে আজও জানা যায়নি। এভাবেই ব্ল্যাকহোল তার আশেপাশের গ্রহ নক্ষত্রকে গ্রাস করে নিচ্ছে।
ব্লাকহোল শব্দের অর্থ কালো গহবর। একে এই নামকরণ করার পেছনে কারণ হল এটি এর নিজের দিকে আসা সকল আলোক রশ্মিকে শুষে নেয়। কৃষ্ণ বিবর থেকে কোন আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না ঠিক থার্মোডায়নামিক্সের কৃষ্ণ বস্তুর মতো।
ইতিহাস
ভূতত্ত্ববিদ জন মাইকেল ক্যভেনডিসকে লেখা এক চিটিতে সর্ব প্রথম ব্ল্যাকহোলের ধারনা দেন ১৭৮৩ সালে। ১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়ার সিমন লাপ্লাস তার একটি বইয়ের প্রথম ও দিতীয় সংস্করনে ব্ল্যাকহোলের ধারনা উল্লেখ করেন যদিও ভরহীন আলো কিভাবে মহাকর্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয় তা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।
পরবর্তিতে ১৯১৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি দ্বারা এটা দেখাতে সক্ষম হন যে কিভাবে আলোর গতি মহাকর্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
কিভাবে তৈরি হয় ব্ল্যাকহোল ?
বিজ্ঞানিরা মনে করেন যে সব চেয়ে ছুট ব্ল্যাকহোলগুলো মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় তৈরি হয়ে ছিল ।একটি তারার মৃত্যুর
পর এটি একটি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে যদি এর ভর আমাদের সূর্যের ভরের ২.৫ গুণ হয়।
আমরা সবাই এটি জানি যে একটি তারকায় চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু পচন্ড তাপে পরস্পর যুক্ত হযে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয় । যাকে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া বলে । এ সময প্রচুর শক্তি নির্গত হয় ।মহাকর্ষের কারণে একটি তারকা িনজরে উপর চুপছে যেতে চায় ।অপর দিকে ভেতরের নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া একে চুপছে যেতে দেয় না । এভাবে প্রত্যেক তারা একটি সাম্যাবস্তা অর্জন করে । এ সাম্যাবস্তা কোটি কোটি বছর ধরে চলে। কিন্তু যখন তারাটি এর ভেতরের সব হাইড্রোজেন জ্বালিয়ে হিলিয়ামে পরিণত করে তখন এর ভেতরের নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ।
তখন তারাটির ভাগ্যে কি হয় বলতে পারেন? হ্যা তখন তারাটি তার মহাকর্ষের কারণে চুপছে যেতে তাকে। এর ভর সূর্যের ভরের ২.৫ গুণ বা এর বেশী হলে এটি ক্রমস সংকোচিত হতেই থাকে। ফলে এর মহাকর্ষ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এর মহাকর্ষী বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশী হয়ে যায়। তখন এর ভেতর থেকে আলোও নির্গত হতে পারে না। তখনি তারাটিকে আমরা আর তারা না বলে ব্ল্যাকহোল বলি ।
কিভাবে বিজ্ঞানিরা ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করেন?
যেহেতু ব্ল্যাকহোল থেকে আলো নির্গত হতে পারে না তাই আমরা কখনই এদের দেখতে পারি না। আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে যে আলোর গতিই হচ্ছে এই মহাবিশ্বের চরম গতি। মহাবিশ্বে আলোর গতির থেকে কোন কিছুর গতিই বেশী হতে পারে না । যেহেতু ব্ল্যাকহোল থেকে আলো নির্গত হতে পারে না তাই এখান থেকে আর কুনোকিছুই নির্গত হতে পারে না । তাহলে বিজ্ঞানিরা ব্ল্যাকহোল কিভাবে পর্যবেক্ষণ করেন?
ব্ল্যাকহোলগুলো তাদের শক্তিশালী মহাকর্ষ দিয়ে এর আশেপাশের অণ্ঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। একটি সাধারন তারা ব্ল্যাকহোলের কাছকাছি এলে এটি ব্ল্যাকহোলটিকে গিরে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। তখন এরা দৃশ্যমান আলো বিকিরণ করে । তখন ব্ল্যাকহোলগুলোকে স্যাটেলাইট বা টেরিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় । আর বিজ্ঞানিরা এই সুযোগটিই কাজে লাগান ।
কেন এরা মহাকাশীয় দানব?
ব্ল্যাকহোলের রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র । প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে েযখান থেকে কোনকিছু বের হতে পারে না । একে ঘটনা দেগন্ত বা ইভেন্ট হরিযন বলে । ঘটনা দিগন্ত থেকে কোনকিছু এমনকি আলোও নির্গত হতে পারে না । একটি তারা যখন কোন ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি আসে তখন এর পৃস্ট থেকে জ্বলন্ত গ্যাস মহাকর্ষীয় টানের ধরুন ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পরে । এভাব ব্ল্যাকহোলটি পুরো তারাটেকেই খেয়ে ফেলে । ফলে এর ভর ক্রমস বারতে থাকে । একসময় এটির ভর হয়ে ওঠে সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশী । তখন একে ত মহাকাশীয় দানবেই বলা যায় ।
ব্ল্যাকহোল কী আমাদের পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে পারে?
না । আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই । কারণ পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য কোন ব্ল্যাকহোলেই সৌরজগতের ততটা কাছে নেই । যদি সূর্যের ভরের সমান একটি ব্ল্যাকহোল সৌরজগতের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয় তবুও পৃথিবী এর ভেতর গিয়ে পরবে না । পৃথিবী যেমন সূর্যকে প্রদক্ষেণ করে তেমনি ব্ল্যাকহোলটিকেও প্রদক্ষেণ করবে । আর সূর্যও কখন ব্ল্যাকহোলে পরিণত হবে না কারণ সূর্যের সেরকম যথেষ্ট ভর নেই ।
ব্ল্যাকহোল সব জিনিসকেই গ্রাস করে ফেলে।একটি ব্ল্যাকহোল আরেকটি ব্ল্যাকহোলের কাছে গেলে কি হবে?কে কাকে গ্রাস করবে?
বিষয়টা খুব জটিল এজন্য গাণিতিক সমীকরণ ...
এছাড়া সম্প্রতি একটি ব্লাকহোলকে আরেকটি ব্লাকহোল ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে । বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় ব্লাকহো্লটি সূ্র্যের চাইতে ৩০ লক্ষ গুণ বড় । পুরো ব্যাপারটাকে দুটো ঘূর্ণায়মান লাটিম কাছাকাছি আসলে যেভাবে ধাক্কা খায় তার সাথে তুলনা করা যায় ।
দেখা গেছে System CID-42 তে যা ৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারা এখন পরস্পর থেকে ৩ মিলিয়ন মাইল/ ঘন্টায় দূরে সরে যাচ্ছে।
দুটো ব্লাকহোলের ঘূ্র্ণনের বেগ, কোণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে দুটো ঘটনাই ঘটতে পারে ।
মহাকাশবিজ্ঞান


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.