একই টেস্টে ইনিংসে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে মাত্র ২২ জনের। তালিকাটা আরও সংক্ষেপ হয়ে আসে যখন এই কৃতিত্ব একাধিকবার করে দেখানোদের নাম খুঁজবেন।
সেঞ্চুরি ও ইনিংসে পাঁচ উইকেট একাধিকবার নেওয়ার কৃতিত্ব এর আগে ছিল মাত্র চারজনের। সোবার্স, মুশতাক, বোথাম ও ক্যালিসের। আজ এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢুকে পড়লেন সাকিব। এর আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মিরপুর টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রান করার পাশাপাশি ৮২ রানে ৬ উইকেটও নিয়েছিলেন। চলতি খুলনা টেস্টে ব্যাট হাতে ১৩৭ রান করা সাকিব বল হাতে ৮০ রানে নিলেন পাঁচ উইকেট।
সাকিবের মতো সোবার্স, মুশতাক ও ক্যালিসও এই কৃতিত্ব দুবার করে দেখিয়েছেন। তবে এই জায়গায় সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন বোথাম। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব বোথাম করে দিয়েছেন পাঁচবার!
এমনিতে আরও একটি বড় অর্জন এই টেস্টেই সঙ্গী হয়েছে সাকিবের। ১০ বা তার বেশিবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে তিনটি সেঞ্চুরি করা ইতিহাসের মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার সাকিব। আগের সাতজন—রিচি বেনো, ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, ওয়াসিম আকরাম, ক্রিস কেয়ার্নস ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। তবে এত ‘ভিড়ে’র মধ্যে সাকিব থাকতে চাইবেন না নিশ্চয়ই। তিনি এমন কিছু করতে চান, যেটা শুধু থাকবে তাঁর নামের পাশে। কে জানে, বোথামের রেকর্ডটাও তিনি নিজের করে চাইবেন কি না!
সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট একাধিকবার নেওয়ার এই তালিকার বাকিরা এরই মধ্যে খেলা ছেড়েছেন। সাকিবের সামনে এখনো লম্বা ক্যারিয়ার পড়ে আছে। কে বলতে পারে, বোথামের এই অর্জনটাও একদিন সাকিবের হবে না!
হৃদয় এঁকেও হতাশ সাকিব
প্রথমবার প্রশ্নটা শুনেও না শোনার ভান করলেন। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক প্রসঙ্গটা আবারও ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সেলিব্রেশনে একটু ভিন্নতা ছিল...এই তো।’ সাকিব আল হাসান যতই বাঁক খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, প্রশ্ন ততই সামনে এসে দাঁড়ায়। আরেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ব্যতিক্রমধর্মী ওই উদ্যাপন আসলে কার উদ্দেশে? এবার উত্তর দিতে গিয়ে সাকিব হেসেই দিলেন, ‘যার উদ্দেশে করেছি সে বুঝলেই চলবে। অন্য কারও না বুঝলেও চলবে।’
‘অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি।’ বেশি বলার দরকারও নেই। অল্পতেই বোঝা যায়, বাতাসে হৃদয়চিহ্ন এঁকে তিনি আসলে কাকে দেখিয়েছিলেন। ঘটনাটা গত পরশুর। প্রায় তিন বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়ার আনন্দ সাকিব উদ্যাপন করলেন দারুণ ব্যতিক্রমীভাবে। ব্যাট মাটিতে রেখে গ্লাভস খুললেন। এরপর দুই হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনী এক করে বানালেন হৃদয়চিহ্ন, দিলেন উড়ন্ত চুম্বন। সাকিব রহস্যের অবগুণ্ঠন না সরালেও তাঁর উদ্দেশ্যটা বোঝা গেছে ওই প্রায় না বলা কথাতেই। স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির হয়তো মাঠে বসে খেলা দেখেননি, টেলিভিশনের সামনে নিশ্চয়ই ছিলেন।
এক দিন আগের ঘটনা হলেও কাল সংবাদ সম্মেলনে দারুণ হাস্যরস জোগাল সাকিবের সেঞ্চুরি উদ্যাপন প্রসঙ্গ। তবে সংবাদ সম্মেলনের বাদবাকি অংশের বেশির ভাগজুড়েই বিয়োগান্ত আলোচনা। কীভাবে মুছে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা, সে সম্ভাবনা আবারও স্পষ্ট করে তুলতে কী কী অসাধ্য সাধন করতে হবে সেই বর্ণনা।
তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ খুলনা টেস্টে এককভাবে চালকের আসনে নেই ফিল্ডিং ব্যর্থতার কারণে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে দুবার জীবন দিয়েছেন শামসুর রহমান, রেজিস চাকাভার স্টাম্পিং মিস করেছেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবও একমত, ‘যে এক-দুটি সুযোগ কাজে লাগাতে পািরনি, সেগুলোর জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সামনের বার যখন সুযোগ আসবে তখন যেন সেগুলো নিতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ ফিল্ডিংটা ঠিকঠাক হলে কালকের মধ্যে জিম্বাবুয়ের অন্তত সাত-আট উইকেট ফেলা যেত বলে মনে করেন সাকিব।
স্পিনাররা যে তৃতীয় দিন শেষবেলা পর্যন্তও উইকেটের বন্ধুতা পেল না, খুলনায় জিম্বাবুয়ের এখনো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারার সেটাও একটা কারণ। প্রথম টেস্টের পর বাংলাদেশ দলের আশা ছিল খুলনায়ও পাওয়া যাবে মিরপুরের মতো উইকেট। কিন্তু সাকিবের কণ্ঠে হতাশা, ‘আমরা আরেকটু বেশিই আশা করছিলাম। বিশেষ করে স্পিনারদের জন্য। সে রকম সাহায্য হয়তো এখানে নেই।’
আফসোস আছে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং নিয়েও। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ আসলে টেস্টের প্রথম দিনেই পিছিয়ে গিয়েছিল কি না। তিন উইকেট হারিয়ে সেদিন মাত্র ১৯৩-ই রানই হয়েছিল। সাকিব একমত, ‘আরও কিছু রান হলে অবশ্যই ভালো হতো। টেস্টে প্রথম দিনে মাত্র দুই-তিন উইকেট হারালে রান সাধারণত এত কম হয় না। ২৫০ রানের মতো তো হয়ই।’ ব্যাখ্যা করেছেন সেটা না হওয়ার কারণও, ‘যারা ব্যাটিং করেছে তারা বলছে, শট খেলা ততটা সহজ ছিল না। তার ওপর ওরা (জিম্বাবুয়ে) অনেক রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিল। ভালো জায়গায় বল করেছে। রান তোলা সহজ ছিল না।’
জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেটের তিনটিই কাল দিনের দ্বিতীয় সেশনে। কিন্তু ১৮৯ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পরও চাপটা ধরে রাখা যায়নি। দিনশেষে ওই পাঁচ উইকেটেই রান ৩৩১। সাকিবের হতাশা এখানেও, ‘মধ্যাহ্ন বিরতির পরই আমরা দ্রুত তিন উইকেট তুলে নিই। ওই সময়টা যদি ধরে রাখতে পারতাম...! আমার মনে হয় আমরা শেষ সেশনে ভালো বোলিং-ফিল্ডিং করিনি। শেষ সেশনে দুটি উইকেট নিতে পারলেও দিনটা আমাদের হতো। তবে এই উইকেটে এক সেশনে তিন উইকেট নেওয়াও কঠিন কাজ।’
জিম্বাবুয়ের পাঁচ উইকেটের তিনটিই সাকিবের। ব্যাট হাতে তো সেঞ্চুরি পেয়েছেনই। তবে এই সেঞ্চুরি সাকিবকেও যেন একটু অবাক করছে, ‘এত তাড়াতাড়ি রান পাব সেটা নিজেও প্রত্যাশা করিনি। ভেবেছিলাম আরও দুই-তিন ইনিংস লাগবে। আমি টেস্ট খেলছি আট-দশ মাস পর। মাথায় টেস্টের মেজাজটা আসতে আরও সময় লাগার কথা। আলহামদুলিল্লাহ যে এত তাড়াতাড়ি সব মাথায় আসতে শুরু করেছে। আশা করি সামনে আরও ভালো হবে।’


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.