‘হোহ্ হো...লুক অ্যাট দ্যাট...ইট বিলাইজ এ সেভেনটিন ইয়ার্স ওল্ড রিয়েলি...শোয়িং ভেরি লিটল রেসপেক্ট টু দি এল্ডার স্টেটসমেন’... ইয়ান বিশপের কণ্ঠ নিশ্চয়ই এখনো অনেকের কানে বাজে !

জহির খানকে টানা দুটি চার মারার পর ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারলেন তামিম ইকবাল। কুইন্স পার্ক ওভালের গ্যালারির দোতলার রেলিংয়ে আছড়ে বল ফিরে এল মাঠে। খুনে সেই তামিমকে দেখে ধারাভাষ্যকক্ষে বিশপের ওই বিস্ময়াভিভূত উচ্চারণ। বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নেমেই সেদিন তারুণ্যের ঝান্ডা উড়িয়ে ভারত-বধে বড় অবদান রেখেছিলেন আরও দুই তরুণ। তামিমের সঙ্গে সাকিব ও মুশফিক—তিনজন বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের আগমনী বার্তা জানিয়েছিলেন দারুণ তিনটি ফিফটিতে।
সেই তিনজন এবার খেলতে যাচ্ছেন তৃতীয় বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, সেটার পূর্ণতা কতটা দিতে পেরেছেন তিনজন? উত্তর খুঁজতে গেলে চলে আসে সেই অর্ধেক গ্লাস পানির ক্লিশে উদাহরণ। অর্ধেক ভরা দেখতে পারেন অনেকে, অনেকে দেখছেন অর্ধেক খালি!
তিনজনই বাংলাদেশের সেরা। রেকর্ডই কথা বলে তাঁদের হয়ে। ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সাকিবের (৩৯৭৭), উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৮২)। সাকিবের চেয়ে মাত্র ৮ রান কম নিয়ে দুইয়ে তামিম। ৩১৫৩ রান নিয়ে চারে মুশফিক, ডিসমিসাল সবচেয়ে বেশি (১৩৮)। শুরুর সম্ভাবনাকে বাস্তবতার ছোঁয়া পেতে দেখবেন এখানে অনেকেই। কিন্তু এটি কেবল মুদ্রার এক পিঠ। তাঁদের প্রতিভা-সামর্থ্য যেমন, তাতে এটুকু প্রত্যাশিতই ছিল। প্রত্যাশার পরিধি বরং ছিল আরও বড়। শুধু দেশের সেরা নন, এত দিনে তাঁদের তো থাকার কথা বিশ্বসেরাদের কাতারে। দেশের তারকা তামিম-মুশফিক বিশ্বতারকা হতে পারলেন কোথায়!
সেই তিনজন এবার খেলতে যাচ্ছেন তৃতীয় বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, সেটার পূর্ণতা কতটা দিতে পেরেছেন তিনজন? উত্তর খুঁজতে গেলে চলে আসে সেই অর্ধেক গ্লাস পানির ক্লিশে উদাহরণ। অর্ধেক ভরা দেখতে পারেন অনেকে, অনেকে দেখছেন অর্ধেক খালি!
তিনজনই বাংলাদেশের সেরা। রেকর্ডই কথা বলে তাঁদের হয়ে। ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সাকিবের (৩৯৭৭), উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৮২)। সাকিবের চেয়ে মাত্র ৮ রান কম নিয়ে দুইয়ে তামিম। ৩১৫৩ রান নিয়ে চারে মুশফিক, ডিসমিসাল সবচেয়ে বেশি (১৩৮)। শুরুর সম্ভাবনাকে বাস্তবতার ছোঁয়া পেতে দেখবেন এখানে অনেকেই। কিন্তু এটি কেবল মুদ্রার এক পিঠ। তাঁদের প্রতিভা-সামর্থ্য যেমন, তাতে এটুকু প্রত্যাশিতই ছিল। প্রত্যাশার পরিধি বরং ছিল আরও বড়। শুধু দেশের সেরা নন, এত দিনে তাঁদের তো থাকার কথা বিশ্বসেরাদের কাতারে। দেশের তারকা তামিম-মুশফিক বিশ্বতারকা হতে পারলেন কোথায়!
২০১০ সালের ইংলিশ গ্রীষ্ম যে তামিমকে দেখেছিল, যে তামিম মনোনীত হয়েছিলেন উইজডেনের বর্ষসেরা, সেই তামিমকে পরে আর দেখা গেছে কালেভদ্রে। অমন সাফল্যের পর আরও উঁচুতে, আরও সুদূর পানে ডানা মেলে দেওয়ার কথা যাঁর, উল্টো কখনো কখনো হিমশিম খেয়েছেন ডানা ঝাপটাতেই। বড় দলের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স আছে মুশফিকেরও। তবে বিচ্ছিন্নভাবে। নেই চোখধাঁধানো ধারাবাহিকতা। বিশ্বতারকা হয়ে ওঠার বড় মঞ্চ হতে পারত বিশ্বকাপ ক্রিকেট। কিন্তু দারুণ শুরুর পর বিশ্বমঞ্চে ম্লান দুজনই। বিশ্বকাপে ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট বিব্রত করবে দুজনকেই।
সাকিব অবশ্য শুধু বাংলাদেশেই নন, বিশ্ব ক্রিকেটের আকাশেও উজ্জ্বল তারা। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বসেরার সম্মান এনে দিয়েছেন তিনিই। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একসঙ্গে তিন সংস্করণেই র্যাঙ্কিং শীর্ষে থাকার অনন্য নজির গড়েছেন সম্প্রতি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন পরিচিতি দিয়েছেন, ভাসিয়েছেন অজস্র গৌরবে। বড় দলের বিপক্ষেও বড় পারফরম্যান্স তাঁর অনেক। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন বিশ্বকাপ, তামিম-মুশফিকের সঙ্গে একই বন্ধনীতে সাকিবও। ওই দুজনের তুলনায় সাকিবের বিশ্বকাপ রেকর্ড একটু কম খারাপ। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নামের পাশে সংখ্যাগুলো বড্ড বেমানান। ১৫ ম্যাচ খেলে সাকিব একবারও ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি পাননি!
তিনজনই অবশ্য একই রকম কিছু কারণকে নিজেদের ঢাল বানাতে পারেন। প্রথম বিশ্বকাপে তিনজনই ছিলেন একেবারে আনকোরা, টিনএজ-সদ্য টিনএজ পেরোনো। অমন শুরুর পর রাতারাতি প্রচারের আলো আর মনোযোগেও চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বয়স আর অভিজ্ঞতার ঝুলি ততটা সমৃদ্ধ ছিল না গত বিশ্বকাপেও। দেশের মাটিতে খেললে চাপের চেয়ে অনুপ্রেরণাটাই বেশি হওয়ার কথা। তার পরও ধরে নেওয়া যাক, চাপের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি তিনজনই। কিন্তু এবার? বয়স তামিমের ২৫, মুশফিক ২৬, সাকিব ২৭। অধিনায়ক মাশরাফিকে বাদ দিলে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও এই তিনজন। ১৪১ ওয়ানডে খেলেছেন সাকিব, মুশফিক ১৪০, তামিম ১৩৫। বয়স, অভিজ্ঞতা, ফর্ম—সব এখন পক্ষে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মানসিকতাও এখন শক্ত হওয়া উচিত। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের সেরাটা দেখানোর আদর্শ সময় এবং সুযোগ এবারই।
একটি-দুটি ফিফটি বা ৪-৫ উইকেট নয়, ধারাবাহিকভাবে দারুণ কিছু করা। বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো। সুযোগটা শুধু বিশ্বকাপের মঞ্চ বলেই নয়, মঞ্চটি অস্ট্রেলিয়ায় বলেও। র্যাঙ্কিং যত কিছুই বলুক, ক্রিকেটের কুলীন জগতে, সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার জন্যও অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় দারুণ কিছু করা জরুরি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনে কেউ যদি দারুণ কিছু করতে পারেন, কিংবা মেলবোর্ন-অ্যাডিলেডে, সেই পারফরম্যান্স ধারেভারে উপমহাদেশের যেকোনো পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাবে।
এমন নয় যে বিশ্বতারকা হতে গেলে বিশ্বকাপে ভালো করতেই হবে। কিন্তু বিশ্বকাপে ভালো করলে বিশ্বতারকা হওয়ার দুয়ার খুলে যায় সহজেই। আর বাংলাদেশের মতো দেশ, বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার সুযোগ যারা পায় অনেক দিন পরপর, বিশ্বকাপই তাদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। সুযোগ অবশ্য এবারই শেষ হচ্ছে না। আগামী বিশ্বকাপেও এই তিনজন খুব বুড়িয়ে যাবেন না। ইংল্যান্ডের মাটিতে পারফরম্যান্সকেও মাপা হবে অন্য উচ্চতায়। তবে চার বছর পর কার ক্যারিয়ার কোন গগনে থাকে, কে বলতে পারে! বিরুদ্ধ কন্ডিশন, কঠিন গ্রুপ, অচেনা আবহ—চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন। কিন্তু চ্যালেঞ্জ যত বড়, সেটি জয় করার পুরস্কারও তত বড়!
সাকিব, তামিম, মুশফিক—মঞ্চ প্রস্তুত। এবার সেখানে আলো ছড়ানোর পালা!
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.