google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html একজন সাকিব আল হাসান - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Tuesday, February 10

একজন সাকিব আল হাসান





সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রতিবেদন

সাকিব আল-হাসান ( জন্ম: ২৪ মার্চ ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচেঅভিষেক। তিনি বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। সাকিব ছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁর খেলার মান আর ধারাবাহিকতা তাঁকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়, হয়েছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড়-"দ্যা ওয়ান ম্যান আর্মি", এছাড়াও রয়েছে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্ব।





প্রথম জীবনে এবং যুব ক্রিকেটে

তরুণ বয়সেই সাকিব ফুটবল খেলা শুরু করেছিল। তাঁর বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে খেলতেন এবং এক কাজিন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে। এরকম ফুটবল পাগল পরিবারে বড় হওয়া সত্ত্বেও সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা ছিল অসাধারণ। গ্রাম-গ্রামান্তরে তাঁকে খেলার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হত। এরকমই এক ম্যাচে সাকিব এক আম্পায়ারকে অভিভূত করেছিলেন যিনি এরপরে সাকিবকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাব (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) এর সাথে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। সাকিব তাঁর স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দ্রুতগতির বোলিং অব্যাহত রাখেন, সেই সাথে প্রথমবারের মত স্পিন বোলিং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন ও সফল হন। ফলস্বরূপ, ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান এবং প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে এটাই ছিল তাঁর প্রথম করা বল। এর আগ পর্যন্ত তিনি টেপড টেনিস বল দিয়েই খেলতেন।
মাত্র পনের বছর বয়সেই সাকিব অনূর্দ্ধ-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান। ২০০৫ সালে অনূর্দ্ধ-১৯ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে (অপর দুটি দেশ ছিল ইংল্যান্ডওশ্রীলঙ্কা) মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও তিনটি উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেন তিনি। ২০০৫ থেকে '০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্দ্ধ-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ৩৫.১৮ গড়ে তিনি মোট ৫৬৩ রান সংগ্রহ করেন এবং ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে

২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে ট্যুরে সাকিব প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। একই ট্যুরে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা ও মুশফিকুর রহিমের। সাকিব ও রেজাকে তখন "দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভা" হিসেবে গণ্য করা হত, সকল ডিপার্টমেন্টে যাদের দক্ষতা অসামান্য। তৎকালীন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের বক্তব্য এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্যঃ "তরুণদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। এখনই সময় তাদের আন্তর্জাতিক লেভেলে খেলার সুযোগ করে দেয়া।" একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় সাকিবের অভিষেক হয় ৬ই আগস্ট। তার প্রথম শিকার হন এল্টন চিগাম্বুরা। ৩৯-১, এই ছিল তাঁর সেদিনকার বোলিং ফিগার। ব্যাট হাতে তিনি ৩০ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন। শাহরিয়ার নাফিস সেদিন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রাখেন। ম্যাচটি ছিল সিরিজের শেষ ম্যাচ যাতে জিম্বাবুয়ে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী হয়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাকিব, ফরহাদ রেজা ও মেহরাব হোসেন জুনিয়র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ফলে, বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ এ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আয়োজিত 'বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০০৭' এ হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন ১৫ জনের বাংলাদেশ স্কোয়াডে ডাক পান এই তরুণ ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টের দ্বিতীর পর্বে যেতে সক্ষম হয় এই দল এবং ৭ নম্বর টিম হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করে। শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে দলটি বড়সড় রকমের অঘটনের জন্ম দেয়। তামিম ইকবালমুশফিকুর রহিম ও সাকিব-তিনজনের হাফ সেঞ্চুরির উপর ভর করে বাংলাদেশ সহজেই ১৯২ রানের টার্গেটে পৌঁছে যায়। টুর্নামেন্টে সাকিব ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৯ ম্যাচে তিনি ২৮.৮৫ গড়ে ২০২ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন মোহাম্মদ আশরাফুল (২১৬). সাকিব ৪৩.১৪ গড়ে ৭টি উইকেটও নেন।
সে বছরই মে মাসে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে'র এক সফরে ভারত বাংলাদেশে আসে। মে মাসের ১৮ তারিখ সাকিবের টেস্ট অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে। অভিষেকটা ঠিক স্বপ্নের মত হয়নি তার জন্য। এক ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে এই অলরাউন্ডার ২৭ রান করেন এবং ১৩ ওভার বল করে উইকেটশূণ্য অবস্থায় থাকেন। ম্যাচটি ড্র হয়। ভারত টেস্ট সিরিজ জেতে ১-০ ব্যবধানে এবং ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ তে। সিরিজ শেষে ডেভ হুয়াটমোর দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং হাবিবুল বাশারের স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ আশরাফুল। সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত [[আইসিসি টুয়েন্টি২০ বিশ্বকাপ' এর প্রথম রাউন্ডে |ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়ের সুবাদে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পায়। ম্যাচটিতে সাকিব ৩৪ রানে নেন ৪ উইকেট। সাকিব-ই প্রথম বাংলাদেশী যিনি টি-২০ ফরম্যাটে ৩টির বেশি উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয় যে, জিমি সিডন্স, অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন সহকারী কোচ, বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে আসছেন। সিডন্স বাংলাদেশের উন্নতিকল্পে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেন এবং ট্যালেন্টেড তরুণদের আন্তর্জাতিক লেভেলে বেশি বেশি সুযোগ দেবার ঘোষণা দেন।
২০০৭ এর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ দল দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে নিউজিল্যান্ড আসে। প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ না পেলেও পরের টেস্টেই সাকিব এনামুল হক জুনিয়রকে রিপ্লেস করেন তার ব্যাটিং কোয়ালিটির জন্য। এটা ছিল সাকিবের চতুর্থ টেস্ট। তখন পর্যন্ত সাকিব টেস্টে উইকেটশূণ্য ছিলেন। সাকিবের প্রথম টেস্ট শিকার হন নিউজিল্যান্ডের ক্রেইগ কামিং। নিউজিল্যান্ড জেতে এক ইনিংস ও ১৩৭ রানে। ওয়ানডে সিরিজেও নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে। তিন ম্যাচে সাকিব ১০.৩৩ গড়ে ৩১ রান করেন এবং ৪২.৩৩ গড়ে তিনটি উইকেট নেন। ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারী-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ সফরে আসে। দুটো টেস্টেই সফরকারী দল জয়লাভ করে। সাকিব ১২২ রান দিয়ে মাত্র একটি উইকেট নেন এবং ব্যাট হাতে ৭৫ রান করেন। ওয়ানডে সিরিজেও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ তে জয় পায়। এ সিরিজেই সাকিব ওয়ানডেতে ১০০০ রানের মাইলস্টোন অতিক্রম করেন। ৩৯টি ম্যাচ খেলে সাকিবের ব্যাটিং গড় তখন ৩৫.৩৭।

বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা

একজন অলরাউন্ডার হওয়া সত্ত্বেও অক্টোবর,২০০৮ এর নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ ট্যুরের আগ পর্যন্ত সাকিবকে বোলার নয়, ব্যাটসম্যান হিসেবেই গণ্য করা হত। টেস্টে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেও ওয়ানডেতে কিন্তু প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যেই থাকতেন তিনি। ট্যুরের আগ দিয়ে কোচ জিমি সিডন্স জানালেন, সাকিবকে স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবেই টেস্ট সিরিজ খেলানো হবে। কোচকে হতাশ করেননি সাকিব। উদ্বোধনী টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তিনি ৩৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৭টি উইকেট। তখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশী বোলারের টেস্টে এটাই ছিল বেস্ট বোলিং ফিগার। বাংলাদেশ সিরিজ হারে ২-০ তে, কিন্তু সাকিব ১৭.৮০ গড়ে ১০টি উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় পায়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্বাগতিক দল সিরিজ হারে ২-১ এ। সাকিব ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে মাশরাফি মুর্তজা (৭ উইকেট)'র পেছনে থেকে সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।
পরের মাসেই বাংলাদেশ দল দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-২০ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। সাকিবের বোলিং পারফরম্যান্স এখানেও অব্যাহত থাকে। প্রথম টেস্টের প্রথম দিন সাকিব উইকেটশূণ্য থাকলে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, বাংলাদেশের তৎকালীন সহকারী কোচ, তাকে বলে 'ফ্লাইট' দেবার পরামর্শ দেন। গুরুর উপদেশ শিরোধার্য করে সাকিব দ্বিতীয় দিনেই পাঁচ-পাঁচটি উইকেট তুলে নেন। দ্বিতীয় টেস্টে সাকিব আবারও এক ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নেন। সিরিজ শেষে সাকিবের ঝুলিতে জমা হয় ২০.৮১ গড়ে ১১টি উইকেট। সাকিবের বোলিং দেখে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক লেগ স্পিনার ক্যারি ও' কীফে তাকে 'বিশ্বের সেরা ফিঙ্গার স্পিনার' হিসেবে অভিহিত করেন। ২০০৮ এর ডিসেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কা এদেশে দুটি টেস্ট ও একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট (অপর দলটি ছিল জিম্বাবুয়ে) খেলতে আসে। দুটো টেস্টই শ্রীলঙ্কা জিতে নেয়। সেই সাথে ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালও। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সাকিবের করা ৯২* রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র জয়ের স্বাদ এনে দেয়। সাকিব ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।
২২ জানুয়ারী, ২০০৯ সাকিব আইসিসি'র ওডিআই অলরাঊন্ডার র‍্যাঙ্কিং এ ১ নম্বরে উঠে আসেন। ২০১১ সালে আইপিএল এর নিলামে তাকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনে নেয়।



Live your Life, Live your Dream.

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.