google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html অফেন্ডিং শেখ মুজিব-১ : ২৫ মার্চ , ১৯৭১ , টাইম ম্যাগাজিনের অদ্ভুত তথ্য , অন্যসব প্রামান্য আর পরিশিষ্ট বিতর্ক - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Sunday, June 14

অফেন্ডিং শেখ মুজিব-১ : ২৫ মার্চ , ১৯৭১ , টাইম ম্যাগাজিনের অদ্ভুত তথ্য , অন্যসব প্রামান্য আর পরিশিষ্ট বিতর্ক

২৫ শে মার্চের কালো রাত - স্বাধীনতার ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত গা হিম করা এক রাত। এই রাতের প্রতিমুহূর্ত জানার অদম্য কৌতূহল কাজ করে স্বাধীনতা প্রিয় এবং এখনও অন্তরে পাকিস্তান প্রিয় সবার ভেতরে। 

অনেক আলোচনা , তথ্য উদঘাটন , ইরফরমেশন ডায়াগনসিস হয়েছে এই রাতের কুখ্যাত-বিখ্যাত ঘটনাগুলো নিয়ে। 
তার ভেতরে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিলো সেই রাতে পাকিস্তান আর্মির হাতে শেখ মুজিবের আটক হওয়া নিয়ে। 
সেটা কি আত্নসমর্পন না গ্রেফতার ছিলো ? 
সেটা কিভাবে ঘটেছিলো ? 
এই নিয়ে খোদ সেই ঘটনার ভিলেন পাকিস্তানী আর্মির ব্রিঃ জেনাঃ জহিরুল আলম খান নিজেও বই লিখেছেন "দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ"। 
সিদ্দিক সালিকের বই , মুসা সাদিকের টিক্কা খানের সাক্ষাৎকার নেয়া অনেক কিছুই হয়েছে ২৫ শে মার্চের ইনফরমেশন ডায়াগনসিস করতে গিয়ে। 
তাই বিষয়টা নিয়ে আর জানার কিছু নেই ভেবে ক্ষান্ত দিয়েছিলা। 

কিন্তু নানাভাবে সেদিন রাতের ঘটনাগুলোর টুকরো টুকরো প্রামান্যের সাথে পরিচিত হতে হতে মনে হলো এগুলো একসাথ করে জানালে ২৫ শে মার্চ , ১৯৭১ এর একটা পরিষ্কার অবয়ব পাওয়া যাবে। 

তবে সব গুলো ঘটনাকে সাজাতে গিয়ে শেষ অনুসিদ্ধান্তটি আসলো শেখ মুজিবের নেতৃত্ববীর্য কে ম্লানকর। 
তাই শিরোনাম: 
"অফেন্ডিং শেখ মুজিব" 

দেখা যাক সেদিন রাতের ঘটনাক্রম: 

সন্ধ্যা ৬:০০ : 
সুপরিচিত পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলীর পিতা মাজহার আলী এবং রেহমান সোবহান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন এবং তাকে জানান মিলিটারী ক্র্যাকডাউন আসন্ন। 
[ সূত্র: বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্য , রেহমান সোবহান , ভোরের কাগজ প্রকাশনী , ১৯৯৪ ] 

শেখ মুজিব এরপর ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন। 
এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১জন সংবাদবাহক স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে ১টি প্রেসনোট বিলি করেন যেটিতে উল্লেখ করা হয়: 
"প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চুড়ান্ত হয়েছে , ক্ষমতা হস্তান্তরের মতানৈক্য হয়েছে এবং আমি (বংগবন্ধু) আশা করি প্রেসিডেন্ট তা ঘোষনা করবেন"। 
এবিষয়ে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেন: 
"আমার দুঃখ হয় , এই নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই" 
[ সূত্র: রেপ অব বাংলাদেশ , অ্যান্থনি মাসকারেনহাস , অনুবাদ মযহারুল ইসলাম , ১৯৭৩ , পৃষ্ঠা:১১৩ ] 

২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর ভেতর ৪৫ মিনিটের ১টি মীটিং হয়। 
শেখ মুজিব পূর্বঘোষনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষনের জন্য অপেক্ষা করেন। 

সন্ধ্যা ৬:০০ টা পরবর্তী: 
ইয়াহিয়া করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার এই ঢাকা ডিপারচার এর প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ২ জন বাঙালী সামরিক কর্মকর্তা। 
১. ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এটি প্রতক্ষ্য করেন লে. কর্নেল এ. আর চৌধুরী। 
২.বিমানবন্দরে এটি প্রতক্ষ্য করেন এয়ারফোর্সের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খোন্দকার। 


শেখ মুজিব তখনো ১ টি ফোনকলের অপেক্ষায় ছিলেন।এবং ডঃ কামাল হোসেন কে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন কোন ফোন এসেছে কিনা। 
প্রতিবারই ডঃ কামালের উত্তর ছিলো না সূচক। 
ফোনটি আসার কথা ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেঃ জেনাঃ পীরজাদার কাছ থেকে। 
কারন ইয়াহিয়া বলেছিলো তার ভাষন প্রচারের আগে পীরজাদার সাথে শেখ মুজিবের ১টি ছোট বৈঠক হবে। 
সেই ফোনকল আর আসেনি কোনদিন।শেখ মুজিবও বুঝতে পারেন সব আশা শেষ। ইয়াহিয়া ধোঁকা দিয়েছে। 
[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ] 



রাত ৮:০০: 
এরকম একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে এইচ এম কামরুজ্জামান , ক্যাপ্টেন মনসুর আলী , তাজউদ্দীন আহমদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে চলে যান। 
শেখ ফজলুল হক মনি ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায়ই টুংগীপাড়া চলে যায় এবং শেখ কামাল রাত ৯টায় ধানমন্ডী ৩২নং ছেড়ে যান। 
[ সূত্র : শেখ মুজিব , এস.এ. করিম, ইউপিএল, ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৯৫ ] 

রাত ৯:০০: 
ডঃ কামাল হোসেন এবং ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম ৩২নং থেকে বিদায় নেন। 



রাত ৯:১০: 
ঠিক এই সময়েই প্রথমবারের মত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন জানান রেহমান সোবহান। [ সূত্র : প্রাগুক্ত ] 

রাত ১০:৩০: 
ইস্ট পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশনের এম.ডি. ক্যাপ্টেন রহমান এবং ২ জন এক্স নেভাল অফিসার কমান্ডার ফারুক এবং লে. মতিউর রহমান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে আসেন। 
এ সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এর ১টি ফোন আসে শেখ মুজিবের কাছে এবং "ইপিআর কে ডিসার্মড করা হয়েছে" শেখ মুজিব কে এতটুকু বলতে না বলতে লাইন কেটে যায়। 
[ সূত্র : শেখ মুজিবের বাসভবনে সে সময় অবস্থানরত পারিবারিক কর্মচারী মমিনুল হক খোকা , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা - ৪৪৭-৪৮ ] 

রাত ১১:০০: 
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে আত্মগোপন করার অনুরোধ জানালে, শেখ মুজিব তাকে জানান তিনি বাসা ছেড়ে যাবেননা , মরতে হলে সেখানেই মরবেন। 
[ সূত্র : আর্চার ব্লাড, দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১৯৮] 
যদিও শেখ মুজিবের এই মুখের গর্জন শেষ পর্যন্ত একেবারেই বর্ষায়নি 
বাস্তবিকভাবে। 
রাত ১১:০০: 
সিরাজুল আলম খান , আ.স.ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজের শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন। 
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে এটাই ছিলো শেখ মুজিবের সাথে কারো ঐ রাতে শেষ বৈঠক। 

১১:৩০: 
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে ঝন্টু (জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা জাকারিয়া চৌধুরীরা ভাই) ধানমন্ডী ৩২নং এ আসেন। শেখ মুজিব কে ঝন্টু অপারেশন সার্চলাইট এবং নির্বিচার গোলাগুলির খবর জানান। 
ঝন্টুর মাধ্যমে পরিস্থিতি অবগত হয়ে শেখ মুজিব হাসিনা , রেহানা এবং জেলীকে ১টি ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন আত্নগোপন করার জন্য। 
শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের আত্নগোপনের জন্য ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো। 
ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ১১:৩০ এর পর ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন। 
[ সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০০, পৃ ৮৪ ] 

"সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিবের বাসায় ছিলো মানুষের ঢল।কিন্তু ইয়াহিয়ার ঢাকাত্যাগের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং সেনাবাহিনীর মতিগতি দেখে সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার সর্বত্র বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। 
এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ১ বিবৃতিতে বিভিন্নস্থানে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেন।" 
[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ] 

ইত্তেফাকের শিরোনাম: মার্চ ২৬ , ১৯৭১