চল্লিশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ধ্যান ও প্রার্থনার জন্য মহানবী সা: নিঃসঙ্গতাপ্রিয় হয়ে উঠলেন। ফলে নির্জনতার অনুসন্ধান করতে গিয়ে হেরাগুহায় উপনীত হন। মক্কা শরিফের পূর্ব দিকে বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত জাবালে নূরের হেরাগুহায় প্রথমবার গমনকালে কিছু খাদ্যসামগ্রী সাথে করে নিয়ে যান। অতঃপর এটি তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়। তিনি কিছু দিন পর বাড়িতে ফিরতেন এবং দু-এক দিন অবস্থান করে কিছু খাদ্যসামগ্রী সাথে করে ওই গুহায় ফিরে যেতেন। বিভিন্ন পাথরের সমন্বয়ে তৈরি গুহাটি ছিল ছোট। এটি দৈর্ঘ্যে চার গজ, প্রস্থে পৌনে দুই গজ। নিচের দিকে গভীর নয়। ছোট একটি পথের পাশে ওপরের প্রান্তরের সঙ্গমস্থলে এ গুহা অবস্থিত।
মহানবী সা: এই গুহায় যাওয়ার সময় প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি খাদিজা রা:ও মাঝে মধ্যে তাঁর সাথে যেতেন এবং কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবস্থান করতেন।
নবীজী পুরো রমজান মাস এই গুহায় কাটাতেন। যাওয়া-আসার পথে পথচারী মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং গিরিগুহায় মগ্ন থাকতেন গভীর চিন্তায় অদৃশ্য অথচ সর্বব্যাপী বিশ্বপ্রভুর গভীর ধ্যানে। তিনি নিরন্তর রহস্যভেদের চেষ্টা করতেন সৃষ্টির, জীবন ও মরণের, ভালো ও মন্দের আর চেষ্টা করতেন বিশৃঙ্খলার ভেতরে সমন্বয়সাধনের। কিন্তু তাঁর সামনে সুস্পষ্ট কোনো পথ, সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি, প্রচলিত অবস্থার বিপরীত কোনো কর্মসূচি ছিল না, যার ওপর জীবন কাটিয়ে তিনি মানসিক স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। মহানবী সা:-এর এ নিঃসঙ্গপ্রিয়তা ছিল প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর হেকমতের একটি অংশ। এমনিভাবে মহান আল্লাহ তাঁকে নবুওয়াতের গুরুদায়িত্বভার বহনের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন।
রাত-দিনের আবর্তনে মহানবী সা: ৪০ বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। ২১ রমজান মোতাবেক ১০ আগস্ট ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ সোমবার হেরাগুহায় তিনি যথারীতি ধ্যানমগ্ন ছিলেন। সহসা তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন হজরত জিব্রাইল আ:। তিনি বললেন, ‘পড়–ন’। মহানবী সা: বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না।’ অতঃপর জিব্রাইল আ: মহানবী সা:কে সজোরে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, ‘পড়ুন’। কিন্তু তিনি আগের জবাবেরই পুনরুক্তি করলেন। এমনিভাবে জিব্রাইল আ: তিনবার মহানবী সা:কে আলিঙ্গন করে পড়ার জন্য বললেন।
তৃতীয়বার ছেড়ে দিয়ে ‘ইকরা বিইসমি থেকে মালাম ইয়ালাম’ (পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে সৃষ্টি করেছেন। পাঠ করুন এবং আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন সেসব, যা সে জানত না) পর্যন্ত পাঁচটি আয়াত পাঠ করেন এবং মহানবী সা:কেও পড়তে বলেন। তখন মহানবী সা: ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জিব্রাইল আ:-এর সাথে ওই আয়াতগুলো পাঠ করলেন। হজরত জিব্রাইল আ: এ পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
হেরাগুহায় মহানবী সা: যে আধ্যাত্মিক বেদনা, মানসিক সঙ্ঘাত, সন্দেহ, আশা ও আশঙ্কা নিয়ে ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন, নবুওয়াত লাভে ধন্য হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তিনি শুনতে পেলেন মহান আল্লাহর সেই বাণী, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আর সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।’ তারপর তিনি জেগে উঠলেন এবং যে কর্তব্যের প্রতি তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন।
লেখক : প্রবন্ধকার
নবীজী পুরো রমজান মাস এই গুহায় কাটাতেন। যাওয়া-আসার পথে পথচারী মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং গিরিগুহায় মগ্ন থাকতেন গভীর চিন্তায় অদৃশ্য অথচ সর্বব্যাপী বিশ্বপ্রভুর গভীর ধ্যানে। তিনি নিরন্তর রহস্যভেদের চেষ্টা করতেন সৃষ্টির, জীবন ও মরণের, ভালো ও মন্দের আর চেষ্টা করতেন বিশৃঙ্খলার ভেতরে সমন্বয়সাধনের। কিন্তু তাঁর সামনে সুস্পষ্ট কোনো পথ, সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি, প্রচলিত অবস্থার বিপরীত কোনো কর্মসূচি ছিল না, যার ওপর জীবন কাটিয়ে তিনি মানসিক স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। মহানবী সা:-এর এ নিঃসঙ্গপ্রিয়তা ছিল প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর হেকমতের একটি অংশ। এমনিভাবে মহান আল্লাহ তাঁকে নবুওয়াতের গুরুদায়িত্বভার বহনের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন।
রাত-দিনের আবর্তনে মহানবী সা: ৪০ বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। ২১ রমজান মোতাবেক ১০ আগস্ট ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ সোমবার হেরাগুহায় তিনি যথারীতি ধ্যানমগ্ন ছিলেন। সহসা তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন হজরত জিব্রাইল আ:। তিনি বললেন, ‘পড়–ন’। মহানবী সা: বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না।’ অতঃপর জিব্রাইল আ: মহানবী সা:কে সজোরে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, ‘পড়ুন’। কিন্তু তিনি আগের জবাবেরই পুনরুক্তি করলেন। এমনিভাবে জিব্রাইল আ: তিনবার মহানবী সা:কে আলিঙ্গন করে পড়ার জন্য বললেন।
তৃতীয়বার ছেড়ে দিয়ে ‘ইকরা বিইসমি থেকে মালাম ইয়ালাম’ (পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে সৃষ্টি করেছেন। পাঠ করুন এবং আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন সেসব, যা সে জানত না) পর্যন্ত পাঁচটি আয়াত পাঠ করেন এবং মহানবী সা:কেও পড়তে বলেন। তখন মহানবী সা: ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জিব্রাইল আ:-এর সাথে ওই আয়াতগুলো পাঠ করলেন। হজরত জিব্রাইল আ: এ পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
হেরাগুহায় মহানবী সা: যে আধ্যাত্মিক বেদনা, মানসিক সঙ্ঘাত, সন্দেহ, আশা ও আশঙ্কা নিয়ে ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন, নবুওয়াত লাভে ধন্য হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তিনি শুনতে পেলেন মহান আল্লাহর সেই বাণী, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আর সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।’ তারপর তিনি জেগে উঠলেন এবং যে কর্তব্যের প্রতি তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন।
লেখক : প্রবন্ধকার
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.