google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html নতুন সৌদি পরিকল্পনা : ভিশন ২০৩০ - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Thursday, May 5

নতুন সৌদি পরিকল্পনা : ভিশন ২০৩০






সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স যে অস্থিরমতি লোক, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কারো 
যদি প্রমাণ পাওয়ার দরকার হয়ে থাকে, তবে তিনি তা পেয়ে গেছেন ২৫ এপ্রিল। ৩০ বছর 
বয়সী যুবরাজ ওই দিনটিতে ২০৩০ সাল নাগাদ তার দেশের তেলনির্ভরশীলতা কাটিয়ে 
ওঠার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। সৌদি আরবের মতো একটা 
কট্টরপন্থী দেশের জন্য এটা হতে পারে দারুণ অর্জন। তবে এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। 
আরো এগিয়ে তিনি বলেছেন, মাত্র চার বছরের মধ্যে তথা ২০২০ সাল নাগাদ তার দেশ 
তেলের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এটা পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকার ধারণাটি অবহিত করার ব্যাপার হতে 
পারে, আবার মোটামুটিভাবে রাজদরবারের তারুণ্যদীপ্ত নতুন নীতিনির্ধারকদের বিদ্যমান 
উগ্র আশাবাদের প্রকাশও হতে পারে। ভিশনকে কিভাবে বাস্তবে রূপ দেয়া হবে, তার 
চিন্তাশীল, বিস্তারিত ব্যাখ্যা এখনো দেয়া হয়নি। গত জানুয়ারি থেকেই এমন কিছুর 
প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তবে এখন সম্ভবত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা দেয়া হবে, এমনটি 
ধরে নেয়া যেতে পারে।
অনেক অনুমান সৃষ্টিকারী ঘোষণাটির রূপরেখা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। 
এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর কিছু শেয়ার ছেড়ে 
দেয়া; নানা ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন 
তহবিল গড়ে তোলা; নারীদের জন্য আরো চাকরির ব্যবস্থা করা; সামরিক সরঞ্জামসহ 
তেলবহির্ভূত শিল্প আরো চাঙ্গা করা। যে দেশটি ঐতিহাসিকভাবে তেল থেকেই সরকারি 
রাজস্বের ১০ ভাগের ৯ ভাগ সৃষ্টি করে এবং ১৮ মাস ধরে তেলের দাম কমতে থাকার 
প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের বাজেট ঘাটতি ১৩.৫ ভাগে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের 
জন্য এগুলো চরম মাত্রার পরিকল্পনা।
এগুলো বাস্তবায়নের জন্য চলতি সপ্তাহে প্রিন্স মোহাম্মদ কোনোই উদ্যোগ নেননি, যদিও 
কর্মশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ গত ১৫ বছরের ২২ শতাংশ থেকে মাত্র ৩০ শতাংশ 
বাড়ানোর মধ্যে সৌদি আরবজুড়ে প্রায় সব সংস্কার কার্যক্রমের পথরোধ করে থাকা ওয়াহাবি 
শক্তির কাছ থেকে আসা প্রতিরোধকেই প্রতিফলিত করছে। নারীদের চাকরিতে পুরোপুরি 
যোগদান করাতে চাইলে তাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতেই হবে। অনেকেই এ 
ব্যাপারে আশাবাদী, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক সংস্কার বা অন্যান্য স্বাধীনতার 
ব্যাপারেও কোনো কথা নেই। অথচ তরুণ জনসংখ্যার কাছে আপিল জানানোর এগুলো 
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যুবরাজ আশা করছেন, আরামকোর ৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার থেকে ন্যূনতম দুই ট্রিলিয়ন 
ডলার পাওয়া যাবে এবং সেগুলো বৈশ্বিক শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হবে। বিষয়টি 
অনেকাংশেই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। তবে ‘পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ নামের সবরেন 
ওয়েলথ তহবিল থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার পাওয়া যেতে পারে। এই অর্থ তেলবহির্ভূত খাত 
থেকে আয় বাড়ানোর কাজে বিনিয়োগ করা হবে। অন্যান্য শিল্পকেও বিকশিত হতে 
উৎসাহিত করা হবে। দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাজেট-সংবলিত হলেও দেশে 
উৎপাদিত হয় মাত্র ২ শতাংশ মূল্যের অস্ত্র। যুবরাজের ভিশনে ২০৩০ সাল নাগাদ অর্ধেক 
অস্ত্র স্থানীয়ভাবে তৈরির কথা বলা হয়েছে।
এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সৌদি আরবকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদেশীদের আগমন এবং 
আরো স্বচ্ছতা ও সেকুলার আইনসহ আন্তর্জাতিক আচরণবিধি প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু 
দেশটির আলেমসমাজ বাইরের দুনিয়ার দরজা বন্ধ রাখতে চাইছে। তা ছাড়া ইরানের সাথে 
উত্তেজনার মীমাংসা করার জন্য ইয়েমেনে প্রিন্স মোহাম্মদ যে ছায়াযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, তার 
ফলে সম্ভাব্য অস্থিরতার ঝুঁকিও বিদেশীদের মোকাবেলা করতে হবে। তবে বিদেশীদের 
স্বাগত জানানোর পথে সঠিক একটি পদক্ষেপ হলো বিদেশীদের জন্য স্থায়ী আবাসিক 
নাগরিকত্ব সূচক ‘গ্রিন কার্ডের’ ব্যবস্থা করার ঘোষণা।
অঢেল তেলসম্পদের কারণে সমাজের মধ্যে যে পরিশ্রমবিমুখতা সৃষ্টি করেছে, সেটা আরেকটি 
বড় বাধা। দেশটিতে তেলের প্রতি আসক্তি দূর করার জন্য বছরের পর বছর যে চেষ্টা 
চালানো হয়েছে, তার সবই বিফলে গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে এক সৌদি বিশ্লেষক কৌতুক 
করে বলেছেন এভাবে : ‘বিষয়টি এমন যে এক বাবা তার ৪০ বছর বয়সী ছেলেকে বলছেন, 
তোমার চাকরিতে যাওয়ার বয়স হয়েছে।’
বার্ধক্যগ্রস্ত শাসকদের হাতে পরিচালিত দেশটিতে প্রিন্স মোহাম্মদের তারুণ্য তরুণদের উদ্দীপ্ত 
করতে সহায়তা করতে পারে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাকে দেশের সত্যিকার 
পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু তেল রাজস্ব দুর্বল হয়ে পড়ায় এবং 
বেকারত্ব ১১.৬ শতাংশে বেড়ে যাওয়ায় স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কাই প্রবল।
এ কারণেই মে মাসের শেষ দিকে কিংবা জুন মাসের প্রথম দিকে তিনি যখন তার ভিশন তথা 
‘ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন প্লানের’ বিস্তারিত রূপ প্রকাশ করবেন, তখন সংস্কার নিয়ে ঝুলে 
থাকা অনেক প্রশ্নেরও নিরসন করা দরকার হবে। রিয়াদে থাকা বিদেশী নির্বাহীরা প্রিন্স 
মোহাম্মদের অর্থনৈতিক পরিষদের সরকারি ব্যয় কমানোর তাগিদ অনুভব করায় অভিভূত 
হয়েছেন। বিনিয়োগের আগে এ দিকে নজর দেয়া উচিত বলে তাদের মনে হয়েছে।
সৌদি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একওয়া পাওয়ারের প্রধান নির্বাহী প্যাডি পাদমানাথান 
বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো, তারা স্বীকার করছে- আমরা অক্ষম, আমরা 
দুর্নীতিগ্রস্ত এবং আমাদের বদলানো দরকার।’ প্যাডির প্রতিষ্ঠানটি ৯৫০০ মেগাওয়াট 
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।
তিনি বিদ্যুতের মতো সরকারি পরিষেবাগুলোতে ভর্তুকি কমানোর প্রশংসা করেছেন। তবে 
বেসরকারীকরণের ধরনটি আরো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার ওপরও জোর দিয়েছেন। আরেক 
ব্যবসায়ী শ্রমবাজার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিতে চান, যাতে যেসব সৌদি 
চাকরিজীবী দক্ষতার পরিচয় দেবে না, তাদের বরখাস্ত করা যায়। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে 
পারছে না, এমন ২০ সৌদিকে বরখাস্ত করা হলে আপনি নিজেকে টুইটার ঝড়ের মধ্যে 
দেখতে পাবেন।’
চূড়ান্ত বিষয় হলো, সফলতার সম্ভাবনা সম্ভবত নির্ভর করছে যুবরাজের নিজের ক্ষমতার 
ওপর। গত বছর ৮০ বছর বয়সী সালমান বাদশাহ হওয়ার পর তিনি নীতিনির্ধারণে বিপুল 
ক্ষমতা করায়ত্ত করেছেন। কিন্তু সিংহাসনে আসীন হওয়ার দিক থেকে তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় 
স্থানে। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো স্বপ্ন নয়, তিনি তা অর্জন করতে পারবেন, তা-ই বাস্তবতা।’
কিন্তু যখন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বিষয়টি জড়িয়ে থাকে, প্রতিবেশীরা উত্তেজনায় থাকে 
এবং সংস্কারসাধন নির্ভর করে সামজিক চুক্তির ওপর, তখন প্রমাণ করার কাজটি করা অনেক 
কঠিন। অনেক দশক ধরেই দেশটি তেলবহির্ভূত সম্পদ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে 
আসছে। এবারের প্রতিশ্রুতি যে আগেরগুলোর মতো নয়, যুবরাজকে তা প্রমাণ করতে হবে। 
( ইকোনমিস্ট অবলম্বনে )
সংগ্রহেঃ নয়াদিগন্ত 

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.