google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html ফ্রীলান্সিং থেকে আয় করার বেশ অনেকগুলো উপায় এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনা - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Monday, July 17

ফ্রীলান্সিং থেকে আয় করার বেশ অনেকগুলো উপায় এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনা

কোন সন্দেহ নেই যে আমাদের বর্তমান যুগটা হল তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, আর সামনে যে যুগটি আসছে সেটাকে ধরা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর বিকাশের ফলে একদিকে যেমন গতানুগতিক কাজের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে আসছে, ঠিক অন্যদিকে অনলাইন-ভিত্তিক কাজের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।
এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে স্বাধীনভাবে, ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। ফ্রিল্যান্সিংয়ে একদিকে যেমন রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকেও এখানে আছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। যারা এসকল কাজে খুবই দক্ষ, তাদের অনেকের মাসিক আয় কয়েক হাজার ডলার।
ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেয়। এদের মধ্যে অন্যতম সাইটগুলো হল upwork.com, fiverr.com, freelancer.com, peopleperhour.com, guru.com ও 99designs.com। এসব মার্কেটপ্লেসে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। এসব জায়গায় প্রোগ্রামিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন, গেম তৈরি, অ্যানিমেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ব্লগ ও আর্টিকেল রাইটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ নানা বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পেশার সাথে যুক্ত। তবে এই সেক্টর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারণার অভাব, অন্যদিকে যারা কাজ করতে আগ্রহী তারাও ভুগেন সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে। অনেকেই এই সেক্টরকে অনলাইন-ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতারণার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম হল পিপিসি বা পিটিসি সাইটগুলো। এই জাতীয় যত সাইট আছে সবই মুটামুটি ভুয়া। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ পিটিসি সাইট আছে যেগুলো ক্লিক করলেই ডলার আয়ের লোভনীয় অফার দিয়ে ইন্টারনেট জগতে প্রতারনা করে আসছে। আসল কথা হল কোন পিটিসি সাইটই টাকা দেয় না।
আরেকটি বড় প্রতারণা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর নামে এমএলএম। ফ্রিল্যান্সিং মানেই হচ্ছে মুক্ত পেশা, আর এমএলএম হল দায়বদ্ধতার পেশা। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি একটা নিদিষ্ট কাজ কোন ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের সাথে করে তার বিনিময়ে টাকা পাবেন, আর এমএলএম হল মানুষের কাছ থেকে টাকা এনে অন্যের পকেটে তা জমা রেখে মানুষের পেছনে পেছনে ঘুরা। সুতরাং এই দুই জগত কখনো এক হতে পারে না।
ইদানীং কালে নতুন আরেকটি জিনিস যোগ হয়েছে যার নাম ফরেক্স ট্রেডিং। অনেকেই হয়তবা অবাক হবেন এর নাম উল্লেখ করাই, তবে এটা শেয়ার বাজার থেকেও জঘন্য একটা ব্যবসা, পুরোপুরি একটা জুয়া। আমার জানামতে আজ পর্যন্ত কাউকে পাইনি যে বলতে পারবে এই কাজ করে দুই টাকা বাড়ি নিয়ে এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন-ভিত্তিক বেটিং সাইট এবং বিটকয়েন আর্নিং ও বেচাকেনাসহ অনান্য অনেক মাধ্যমে সময় ও টাকা বিনিয়োগ করে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। এধরণে সকল কাজকে এক শ্রেনীর অসাধুচক্র ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং বলে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছেন। আসলে এগুলোর কোনটিই আউটসোর্সিং জাতীয় কাজ নয়।
তবে আমি মনে করি বর্তমানে সবচাইতে বড় প্রতারণার জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারগুলো। হাজার হাজার ডলার আয়ের অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ এখন খুবই লাভজনক একটা প্রতারণা ব্যবসায় শুরু করে দিয়েছে। এরা হালে আরও পানি পেয়েছে সরকারের কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই খাতে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট দেয়ায়! সেই সাথে আমাদের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকাও কম নয়। লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এসব নিম্নমানের ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে আসলে কিছুই শিখছে না উল্টো তাদের বাবামায়ের কষ্টের টাকা নষ্ট করছে। এর ফলাফল হল কোর্স শেষে তারা টেকনিক্যালি তেমন কিছুই শিখতে পারছে না, আর যা শিখছে তা হল কীভাবে মার্কেট-প্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় ― বড়জোর কিছু স্পামিং মার্কা ইন্টারনেট মার্কেটিং।
এসকল কারণে আউটসোর্সিংয়ে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। যেখানে ইন্ডিয়া ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিংকে একটা মেইনস্ট্রীম পেশার মর্যাদা দেয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে এখনও আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে সবাইকে দশবার ভাবতে হয়। যেহেতু পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং এখনও বাংলাদেশে একটি স্বীকৃত পেশা না, আমার মত অনেক ফ্রিল্যান্সারদের নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করতে হয়। এর আসল কারণ হল, তার কাজ বা কাজের প্রক্রিয়া অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারণার অভাব।