google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html ‘সাঈ’ বাইতুল্লায় হজ পালন ও ওমরা জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Thursday, August 10

‘সাঈ’ বাইতুল্লায় হজ পালন ও ওমরা জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি

‘সাঈ’ হলো হজের রোকন। হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারিত নিয়মে সাঈ করতে হয়। এটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহে হজ এবং ওমরা সম্পন্ন করে; তার জন্য এ (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোনো পাপ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)
‘সাঈ’ শব্দের অর্থ হলো দৌড়ানো। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাত বার দৌড়ানোকে সাঈ বলে। ‘সাঈ’ বাইতুল্লায় হজ পালন ও ওমরা জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি।
‘সাঈ’ পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করতে হয়। হেঁটে সাঈ করতে অপারগ হলে বাহনের সাহায্যেও আদায় করা যায়। তবে বিনা ওজরে বাহন ব্যবহার করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব হয়।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোই হলো সাঈ-এর রোকন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ব্যতীত এদিক-ওদিক অথবা অন্য কোথাও দৌড়ালে ‘সাঈ’ আদায় হবে না।
সাঈ’র ইতিহাস
ইসলামের ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশে তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা ও শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ পবিত্র কাবা ঘর সংলগ্ন সাফা ও মারওয়ার কাছে মরুভূমিতে রেখে আসেন।
তাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে রেখে হজরত হাজেরা পানির জন্য কিংবা কোনো কাফেলার সন্ধানে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফায় ৭বার আসা-যাওয়া (দৌড়াদৌড়ি) করেন।
প্রথমে তিনি আশ-পাশের এলাকা দেখার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠেন। সেখান থেকে কোনো দিকে কোনো কিছু না দেখার পর তিনি পার্শ্ববর্তী মারওয়া পাহাড়ে উঠেন।
পাহাড়ের চূড়া থেকে তিনি হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেতেন। কিন্তু যখনই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে আসতেন, সেখান থেকে তাকে দেখা সম্ভব ছিল না; ফলে তিনি পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তিনি একটু দ্রুতগতিতে ছুটতেন।
এ দৌড়াদৌড়ি আল্লাহ তাআলার পছন্দ হয়ে যায়। যা তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআনে আয়াতে তাঁর নির্দশন হিসেবে উল্লেখ করেন। ফলে সাফা মারওয়ায় সাঈ বা দৌড়ানো হজ ও ওমরার রোকন হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
মনে রাখতে হবে
সাঈ করার সময় পুরুষ হাজীদের জন্য এই স্থানটুকু দ্রুত (কিছুটা হাল্কা দৌড়ের মতো) পার হতে হবে। যার দুই প্রান্তে সবুজ বাতি দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া আছে। তবে মহিলাদের দৌড়াতে হয় না; কারণ হজরত হাজেরার দৌড়ানোর বদৌলতে এবং তাঁর সম্মানে আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত সব মহিলার জন্য দ্রুত চলাকে মওকুফ ও মুলতবি করে দিয়েছেন।
এভাবে তিনি ৭ বার চলাচলের পর ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বের হচ্ছে।
হজরত হাজেরা পানির প্রবাহ রোধে পাথর দিয়ে বেঁধে দেন। আর মুখে বলেন জম জম অর্থাৎ থামো থামো। আর তখন থেকেই এটি জম জম কুপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সাঈ’র রুকন
শুধুমাত্র সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করাই হচ্ছে সাঈ’র রুকন। কোনো ব্যক্তি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাঈ না করে এদিক ওদিক করে তবে সাঈ সহিহ হবে না।

সাঈ’র জন্য শর্ত 
১. সাঈ নিজেকেই  করতে হবে। নিজে নিজে সাঈ করতে অসমর্থ হলে বাহনে করে সাঈ করা যাবে। ওজর বা অজ্ঞান হওয়া ব্যতিত কেউ কারো সাঈ করতে আদায় করতে পারবে না
২. পূর্ণ তাওয়াফ বা তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন  করার পরই সাঈ করা। তাওয়াফের ন্যূনতম চার চক্কর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সাঈ করলে তা সহিহ হবে না।
৩. সাঈর পূর্বেেই হজ ও ওমরার ইহরাম বাধতে হবে।
৪. সাঈ সাফা পাহাড় হতে আরম্ভ করতে হবে। মারওয়া থেকে শুরু করলে প্রথম চক্কর গণ্য হবে না।
৫. সাঈর অধিকাংশ চক্কর পূর্ণ করা। না করলে সাঈ আদায় হবে না।
৬. নির্ধারিত সময়ে সাঈ করা। হজের সাঈ’র জন্য এটি শর্ত।

সাঈ’র ওয়াজিবসমূহ
১. যাবতীয় অপবিত্রতা হতে মুক্ত হয়ে তাওয়াফের পর সাঈ করা।
২. সাঈ সাফা হতে আরম্ভ করা এবং মারওয়াতে শেষ করা।
৩. পায়ে হেটে সাঈ করা। বিনা ওজরে বাহনে চড়ে সাঈ করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব।
৪. সাত চক্কর পূর্ণ করা। ফরজ চার চক্করের পর আরো তিন চক্কর পূর্ণ করা। যদি কেউ তিন চক্কর ছেড়ে দেয় তবে সাঈ হবে কিন্তু প্রতি চক্করের পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম বা সমপরিমাণ মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব।
৫. ওমরার  সাঈর ক্ষেত্রে ওমরার ইহরাম সাঈ সমাপ্ত করা পর্যন্ত বহাল থাকা।
৬. সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দুরুত্ব অতিক্রম করা।

সাঈর সুন্নাতসমূহ
১. হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করে সাঈ’র উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া।
২. তাওয়াফের পরপরই সাঈ করা।
৩. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর আরোহন করা এবং কিবলামুখী হওয়া।
৪. সাঈ’র চক্কর পরপর সমাপন করা।
৫. জানাবাত এবং ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র থাকা।
৬. এমন তাওয়াফের সাঈ করা যা পবিত্রাবস্থায় সম্পন্ন করা হয়েছে এবং কাপড়, শরীর ও তাওয়াফের জায়গাও পবিত্র ছিল এবং ওজু ছিল।
৭. সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে দ্রুতপায়ে অতিক্রম করা।

সাঈ’তে যা মাকরুহ
১. ক্রয়-বিক্রয় কথা-বার্তা বলার দরুণ একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায় এবং দুআ পাঠ করতে অসুবিধা হয়।
২. বিনা ওজরে সাঈকে তাওয়াফ হতে অথবা কুরবানির দিনসমূহ হতে বিলম্বিত করা।
৩. বিনা সতরে সাঈ করা।
৪. সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে দ্রুত না চলা।
৫. চক্করসমূহের মধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেক হওয়া।
৬. সাফা ও মারওয়া আরোহন না করা।

সাঈ’র মুস্তাহাব
নিয়্যাতের সহিত সাফা ও মারওয়া’র ওপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা। বিনয় ও নম্রতা সহকারে তিন-তিন বার জিকির ও দোয়া করা। সাঈ চক্করসমূহের মধ্যে বিনা ওজরে বেশি ব্যবধান হয়ে গেলে পুনরায় নতুন করে সাঈ শুরু করা। সাঈ সমাপ্ত করে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা।

সাঈ’র সুন্নাত তরিকা
বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ের ওপরে ওঠে ‘আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি’ বলে  কাবার দিকে তাকিয়ে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে তিনবার হামদ ও সানা পাঠ করা। তারপর উচ্চস্বরে তাকবির ও তাহলিল (আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) পাঠ করা। তারপর দুরুদ পাঠ করা। তারপর নিজের প্রয়োজনীয় দোয়া করা।

সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানের দোয়া
সবুজ চিহ্নিত স্থান দ্রুততার সহিত অতিক্রম করা এবং এই দোয়াটি পাড়া।
উচ্চারণ- রাব্বিগফির ওয়ারহাম আনতাল আআ’যযু ওয়াল আকরাম’।
হজরত হাজেরার সাফা ও মারওয়ায় দৌড়ানোর এই পুণ্যময় স্মৃতির স্মরণ করতে আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত সাফা মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো (দ্রুত যাতায়াত করা) ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আর তাই হজ ও ওমরার ফরজ তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়া সাঈ করা সকল হাজীর জন্য ওয়াজিব। 
হজ ও ওমরা পালনে প্রত্যেকেরই উচিত উপরোক্ত নিয়মগুলো যথাযথ পালন এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা একান্ত বাঞ্ছণীয়। আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরা পালনকারীদের সুন্দরভাবে সাঈসহ যাবতীয় কাজগুলো যথাযথ আদায় করার  তাওফিক দান করুন। আমিন।