google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html দেশ প্রেমিক ও একজন জিয়া - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Monday, August 4

দেশ প্রেমিক ও একজন জিয়া












শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি প্রেক্ষিত মূল্যায়ন










সি রা জু র র হ মা ন

পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা হয় একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে। সে খবর লন্ডনে এসে পৌঁছায় পরদিন দুপুরে। ফ্লিট স্ট্রিটের সাংবাদিকরা এবং লন্ডনে নিযুক্ত কয়েকজন ভিন্ন দেশি সাংবাদিক খবরের সত্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহের আশায় বিবিসি বাংলা বিভাগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েকজন সশরীরেও এসেছিলেন আমার অফিসে। বিবিসি বাংলা বিভাগ তখন পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে খবরের নির্ভরযোগ্য উত্স বলে সম্মানিত ছিল। তাছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের সাইক্লোনের সময় থেকে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য খবরের জন্য আমার ওপর নির্ভর করতে শিখেছিলেন এই সাংবাদিকরা।




তাদের প্রায় সবার একটা প্রশ্নে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম। পাকিস্তান থেকে প্রচার করা হচ্ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানে এসেছেন। এ প্রচারণা দিয়ে তারা ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল যে মুজিব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এ ধারণার মোকাবিলা আমাদের জন্য একটা বড় ভাবনা ছিল। ঢাকা থেকে সদ্য লন্ডনে আসা দু’জন পরিচিত লোক দাবি করেছিলেন যে মুজিব পূর্ব পাকিস্তানেই পলাতক আছেন এবং তারা তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। বিবিসি থেকে এদের দু’জনেরই সাক্ষাত্কার প্রচার করা হয়। সাংবাদিকরা আমাদের কথা শুনছিলেন কিন্তু ষোলোআনা বিশ্বাস করেছিলেন বলে মনে হয় না।
বিশ্বাসযোগ্য খবর আমরা পেলাম চার কিংবা পাঁচ দিনের মধ্যেই। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কালুরঘাট রিলে স্টেশন থেকে জনৈক মেজর জিয়াউর রহমান যে ঘোষণা প্রচার করেন, ফরাসি রেডিও তার একটা রেকর্ডিং ঘুরপথে সংগ্রহ করে প্রচার করেছিল। তারপর থেকে আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা এবং সে যুদ্ধে দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিশ্বাস করাতে কোনো সমস্যা হয়নি।
মেজর জিয়াউর রহমানের নাম আমি সে-ই প্রথম শুনেছিলাম। আরও পরে মুক্তিযুদ্ধে তার শৌর্য-বীর্যের আর তার সংগঠনী প্রতিভার খবর ধীরে ধীরে চুইয়ে চুইয়ে আসতে থাকে। বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে যাই। দেশের বিভিন্ন শহর-নগরে গেছি তখন। সর্বত্রই একটা নাম শুনেছি কিংবদন্তির মতোন—মেজর জিয়া, আর তার জেড ফোর্স। কিশোর ছেলেরা বিশেষ করে ধাঁচে চুল ছেঁটে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াত : ‘আমি জেড ফোর্স’।
অনেক পরে, তার মর্মান্তিক হত্যারও পর, মূলত ভারত-ঘেঁষা কেউ কেউ পঁচাত্তরের সেনা বিদ্রোহ ও শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নাম জড়িত করার হাস্যকর প্রয়াস পেয়েছেন। বিশেষ করে প্রায় ছয় বছর দিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের হেফাজতে থেকে জিয়াউর রহমানের চেষ্টায় দেশে ফিরে এসেই শেখ হাসিনা তত্কালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে খুনি বলে কুত্সা রটনা করতে থাকেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসের র’ সম্পাদিত সংস্করণই শিখেছেন, সঠিক ইতিহাস নয়। সুতরাং এজাতীয় দাবি তার পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে অনেকেই কতগুলো ঘটনার মধ্যে যোগাযোগ আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন। ঘটনাগুলো এ রকম : (আগেই বলেছি) প্রায় ছয় বছর হাসিনা ও তার বোন রেহানা দিল্লিতে র’য়ের হেফাজতে ছিলেন। সে সময় দিল্লির নাগরিক সমাজের সঙ্গেও তাদের মেলামেশার সুযোগ ছিল না।

এসব যোগাযোগ উপেক্ষণীয় নয়
জেনারেল এরশাদ ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় র’য়ের উপমহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাসদেও সিংয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার বৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাককে দিল্লি পাঠিয়ে শেখ হাসিনা ও রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া স্বর্ণ ও হীরক অলঙ্কারসহ (টিয়ারা) তখনকার অঙ্কে ৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি হাসিনাকে বুঝিয়ে দেন। হাসিনা দেশে ফিরলেন ১৭ মে ১৯৮১ সালে। তার ১৩ দিনের মাথায় ৩০ মে এক সামরিক ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। মনে রাখতে হবে যে জাতীয়তাবাদী জিয়াকে ভারত মোটেই পছন্দ করেনি। যোগাযোগগুলো উপেক্ষা করার মতো নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৮৬ সালে বিবিসি থেকে ১২ পর্বের একটি অনুষ্ঠানমালা আমি প্রচার করেছিলাম। সে অনুষ্ঠানের অনুলিপি ঢাকার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছিল। সে অনুষ্ঠানগুলোর জন্য আমি সংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর (রানী এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফরের সময়) গুলশানের একটি বাড়িতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার সাক্ষাত্কারও অনুষ্ঠানমালায় সংযোজিত হয়েছিল।
বাকশালী প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকদের নেতা কর্নেল ফারুক রহমান একাধিকবার লন্ডনে টেলিফোন করে আমাকে সাক্ষাত্কার দিতে চেয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদ তার ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কর্নেল ফারুককে নির্বাচন করার সুযোগ দেন। ফারুক তখন আবারও আমাকে ঢাকায় সাক্ষাত্কার দানের এবং তার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার আমন্ত্রণ রাখার প্রবৃত্তি আমার হয়নি। কিন্তু আমার সহকর্মী নিক ন্যূজেন্ট আমার হয়ে কর্নেল ফারুকের সাক্ষাত্কার নেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তির ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপের কথা ফারুক তখন নিক ন্যুজেন্টকে বলেছিলেন।
কর্নেল ফারুক বলেছিলেন : ‘ডিস্ট্যাবিলাইজেশনের পেছনে মূলত বিদেশি দেশগুলো আছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্য বার বার মিলিটারি আসছে; বাইরে থেকে যদি এজেন্ট (পাঠানো এবং) উসকানি দেয়া বন্ধ করে দিত, আর যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা যেত, সিভিল-মিলিটারি এক করা যেত, ঔপনিবেশিক পদ্ধতি হটানো যেত, তাহলে বাংলাদেশে কোনো রকমের এই ক্যু-টু বা অসুবিধা হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।’

মোশতাক কীভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন
ছিয়াশি সালে আমি ঢাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাক আহমেদেরও একটা দীর্ঘ সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। মোশতাক সাহেব বিস্তারিত আলোচনায় তখনকার সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বহু কর্মকর্তার নামোল্লেখ করেছেন, কিন্তু একবারও কোথাও জেনারেল জিয়াউর রহমানের নাম আলোচনায় আসেনি। যেমন—১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সকাল বেলা আটটার সময় আমাকে আমার বাসা ৫৪ নম্বর আগা মসিহ লেন থেকে কর্নেল রশিদ সাহেব এবং তার অন্য সহকর্মীরা রেডিও স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে আমি সর্বপ্রথম ফারুক সাহেবকে দেখি। তারপর সাড়ে আটটা থেকে দশটা-এগারোটা পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করি।... রশিদ সাহেবকে বললাম যে আপনারা কারা এসব করেছেন? আবার আমাকে বলছেন দায়িত্ব নিতে। তিনি বললেন, বাংলাদেশে আপনি একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আপনাকে দায়িত্বভার নিতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে, কিন্তু আপনাদের সবাইকে আমি চিনি না। বাহিনীগুলোর প্রধানদের আমি চিনতাম। তারা কোথায়?
‘জবাবে রশিদ সাহেব আমাকে বললেন যে আপনি যদি তাদের চান তাদের পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা নিয়ে আসব। সেদিনের সামরিক বাহিনীর প্রধান সফিউল্লাহ সাহেব (যিনি ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন), নেভির প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এমএইচ খান, বিমান বাহিনীর প্রধান একে খন্দকার, বিডিআরের প্রধান জেনারেল খলিলুর রহমান, তারপর বোধ হয় পুলিশ প্রধানও এলেন।... রক্ষীবাহিনীর যে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন (প্রধান ব্যক্তি বোধ হয় সেদিন দেশে ছিলেন না), তিনিও এসে আনুগত্য জানান।’
খোন্দকার মোশতাক দিল্লির প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন না। অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ভারতপন্থী বলে ধারণা প্রচলিত ছিল। অন্তত তার অভ্যুত্থানের দিন (৩ নভেম্বর ১৯৭৫) দিল্লির সাউথ ব্লকে (পররাষ্ট্র দফতর) সেদিন মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়েছিল। এ অভ্যুত্থান সম্পর্কে খোন্দকার মোশতাক আমাকে বলেন, ২ নভেম্বর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ৫০ দিনের মধ্যেই সংসদের নির্বাচন হবে। সে নির্বাচন সম্পর্কে তিনি সেদিন রাত দেড়টা পর্যন্ত স্পিকার আবদুল মালেক উকিল, মন্ত্রিসভার সদস্য ডক্টর মোজাফফর চৌধুরী, মনোরঞ্জন ধর, জেনারেল ওসমানী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর প্রমুখের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপর তিনি শুতে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু অস্বাভাবিক শব্দ শুনে তিনি অন্য একটি কামরা থেকে কর্নেল রশিদকে ডেকে পাঠান, কেননা তার টেলিফোন বিচ্ছিন্ন ছিল। রশিদের কাছ থেকেই তিনি খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের খবর জানতে পারেন।
পরদিন সকালে মিলিটারি সেক্রেটারির কামরায় গিয়ে তিনি খালেদ মোশাররফের টেলিফোনে কল নেন। ‘সেখানে খালেদ মোশাররফ আমার সঙ্গে কথা বলে। খালেদ মোশাররফের পর আমি যাকে এয়ারফোর্সের প্রধান নিযুক্ত করেছিলাম, তোয়াব, সেও কথা বলল। সে বলল, আমি এখানে আছি। এই এদের আর্মস সারেন্ডার করতে বলেন। খালেদ মোশাররফও সেই কথাই বলেছে।... তা না হলে বঙ্গভবনেই বোমা ফেলা হবে।’

ভারতপন্থী সামরিক অভ্যুত্থান
খোন্দকার মোশতাক বিমান বাহিনীর মতো সেনাবাহিনীর নেতৃত্বেও রদবদল আনেন। তিনি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে জেনারেল সফিউল্লাহর স্থলে চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করেন। খালেদ মোশাররফ ও তার প্রতি অনুগত অফিসাররা ২-৩ নভেম্বর রাতে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দফতরে অবস্থান নিয়ে তাদের অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন। মনিরুল ইসলাম চৌধুরী তখন চতুর্থ বেঙ্গলে ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরে জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের সময় তিনি তার জনসংযোগ কর্মকর্তা হন এবং কর্নেল মুনির নামে পরিচিত ছিলেন।
ছিয়াশি সালে দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে তিনি আমাকে ১৫ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের ঘটনাবলির বিশদ বিবরণ দেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট মোশতাকের কাছে খালেদ মোশাররফ ও তার সাথীরা যেসব দাবি জানান, তার মধ্যে বিশেষ করে ছিল— যে সব অফিসার বঙ্গভবনে এবং রেসকোর্সে নিজেদের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট দিয়ে বেষ্টিত করে রেখেছিলেন, ওদের ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসতে হবে; তারপর প্রেসিডেন্ট সাহেবকে সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানদের (জেনারেল জিয়া এবং এয়ার ভাইস মার্শাল তোয়াব) চাকরি থেকে সরাতে হবে। তারপর প্রেসিডেন্ট সাহেবকে প্রেসিডেন্ট হিসেবেই রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ।’ লক্ষণীয় যে, কর্নেল মুনিরও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কিংবা পরবর্তী সামরিক অভ্যুত্থানে জেনারেল জিয়াউর রহমানের কোনো ভূমিকা থাকার কথা উল্লেখ করেননি। তবে ২ নভেম্বর রাতে জিয়াকে গৃহবন্দি করার প্রসঙ্গ তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে রানী এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। ১৪ নভেম্বর (১৯৮৩) আমরা ঢাকা পৌঁছি। কথা ছিল পরদিন আমি রানীর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল যাব। কিন্তু অতি ভোরে জনৈক ক্যাপ্টেন হায়দার শেরাটন হোটেলে এসে আমার ঘুম ভাঙালেন। তিনি বললেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমাকে প্রাতঃরাশের নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন, এখুনি আমাকে তৈরি হয়ে তার সঙ্গে যেতে হবে। কর্নফ্লেকস থেকে পরোটা আর ভাজা কিডনি পর্যন্ত বহু পর্বের প্রাতঃরাশ খেতে খেতে জেনারেল এরশাদ আমাকে তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের একটা বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি বলেন যে প্রধান দুটি দলের নেত্রীদের কেউ যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তাকে মনোনয়ন না দেন তাহলে তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে বাধ্য হবেন। নেত্রীদের মতামত যাচাইয়ের দায়িত্ব তিনি চাপিয়ে দিলেন আমার ওপর।
শ্রীমঙ্গল সফর বাতিল করে আমি প্রথমেই গেলাম ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে। অনেক ঘুরিয়ে তিনি যা বললেন তার সার কথা হচ্ছে, জেনারেল এরশাদ কি কি শর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, না জেনে কোনো জবাব দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদ। তিনি আমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যে, আমি জেনারেল এরশাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। এরশাদের নাম শুনেই বেগম জিয়া এমনই ক্রুব্ধ হয়েছিলেন যে আমি আর এরশাদের প্রস্তাবের প্রসঙ্গ তোলার সাহসই পাইনি। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম, পঁচাত্তরে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ও তার স্বামীকে গৃহবন্দি করা এবং একাশিতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যা সম্পর্কে তার স্মৃতি রেকর্ড করে নিয়ে যেতেই এসেছি আমি।

মোশাররফের অভ্যুত্থান—বেগম জিয়ার স্মৃতি
খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেন, ‘২ তারিখ রাতে আমরা বাইরে গিয়েছিলাম— ডিনার ছিল একটা। রাত প্রায় বারোটার দিকে আমরা ফিরে এসে শুয়ে পড়েছি। রাত্রিবেলা হঠাত্ ২টার দিকে কলিং বেল বাজল। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাসায় কেউ ছিল না। আমার স্বামী নিজেই দরজা খুলল। আমি দেখতে গেলাম কী হয়েছে। সামনের দরজায় গিয়ে বেশ কিছু লোকজন দেখলাম। আর্মি অফিসার আছে দু-চারজন, আরও লোকজন দেখলাম। দেখলাম আমার স্বামী তাদের সঙ্গে বাইরে বারান্দায় বসেই কথাবার্তা বলছে। কী হচ্ছে ব্যাপারটা আমি ঠিক তখনও বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
‘ভোরের দিকে যখন আলো হলো, তখন দেখলাম সে তাদের নিয়ে ঘরের ভেতরে ড্রইং রুমে এসে বসল। খুবই নরম্যাল ব্যবহার করছিল সে। বলল এদের চা দাও, নাশতা দাও।... সকাল হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম যে ব্যাপারটা অন্য রকম। আমার (বাসার) গেট-টেট বন্ধ। কেউ বাইরে যেতে পারছে না, কেউ বাইরে যাচ্ছে না। এর মধ্যে এলেন, আমার পাশের বাসায় ছিলেন, এখন তিনি জেনারেল হয়েছেন, জেনারেল মইন (জেনারেল মইনুল ইসলাম চৌধুরী?)। তিনি একটু আলাপ-সালাপ করলেন। তিনি আমাকে বললেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না।’
৭ মার্চের ঘটনাবলি সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, ‘সাত তারিখে রাত্রিবেলা, রাত্রি বারোটার সময় থেকে একটু একটু গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। আমরা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর শুনলাম যে কতগুলো স্লোগান হচ্ছে। ‘নারায়ে তকবির- আল্লাহু আকবর’—এ রকম স্লোগান হচ্ছে। আস্তে আস্তে ওটা বাড়তে লাগল। এক পর্যায়ে দেখলাম সবাই এদিকে আসছে, আমাদের বাসার দিকে আসছে। আমার বাসার গেট বন্ধ ছিল। সে গেটটা একদম ভেঙে ফেলার মতো অবস্থা। শেষ পর্যন্ত গেটটা ভেঙেই ফেলল, আমার সামনের দরজা ভেঙে সব হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে বলল, স্যার কোথায়? আমার স্বামী তখন বেরিয়ে এলেন, ওদের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর তারা তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। তার নামে স্লোগান দিচ্ছিল।’
[প্রসঙ্গত, ঢাকা ছাড়ার আগে দুই নেত্রীর প্রতিক্রিয়ার খবর প্রেসিডেন্ট এরশাদকে জানিয়েছিলাম। ২৬ নভেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কমনওয়েলথ সরকার-প্রধান সম্মেলনে আমরা ক’জন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল একে খোন্দকার আমাকে ডেকে জেনারেল এরশাদের কাছে নিয়ে গেলেন। এরশাদ আমাকে বললেন যে অবশেষে তিনি নিজের একটা রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জনদল নাম রাখার প্রস্তাব হয়েছে।]
জেনারেল জিয়াউর রহমানের খুব সম্ভবত চারটি সাক্ষাত্কার নিয়েছি আমি। সমকালীন বিষয়াদি নিয়েই সেগুলোতে মূলত আলোচনা হয়েছে। তবে আমার মনে হয় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং দিকনির্দেশক ছিল ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দীর্ঘ বৈঠক ও আলাপচারিতা—সাক্ষাত্কার নয়। আগে থেকেই সাক্ষাত্কারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থির ছিল। সে অনুযায়ী সেদিন সকালের ফ্লাইটে আমি রাজশাহী থেকে ঢাকা ফিরে আসি। তখন বিমানবন্দর ছিল তেজগাঁওয়ে। বেরুবার মুখে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা। কুশলাদি বিনিময়ের পর তিনি বললেন, সিএমএলএ’র (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক) ইন্টারভিউ নিতে ঢাকায় ফিরেছেন বুঝি। আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলাম। তিনি বললেন, ইন্টারভিউ আজ হবে না। জেনারেল জিয়া কিছুক্ষণ পরেই চাটগাঁ যাচ্ছেন।
আমাকে তথ্য দিতে পেরে তিনি বেশ গর্বিত মনে হচ্ছিল। বললেন, পতেঙ্গা ক্যান্টনমেন্টে গোলমাল চলছে। একজন সার্জেন্ট জনৈক মেজরকে স্যালুট করতে অস্বীকার করায় মেজর তার হাতে গুলি করেছিলেন। খুব টেনশন চলছে সেখানে। জওয়ানরা আবার ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের কল্লা চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেনারেল জিয়া বিকালে সেখানে যাচ্ছেন। আমার কৌতূহল হলো। ভাবলাম ভদ্রলোককে বাজিয়ে দেখি। তিনি হতাশ করেননি। বললেন, এজাতীয় ঘটনা আরও কোনো কোনো ক্যান্টনমেন্টেও ঘটেছে। চেন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জিয়া এনসিওদের এখান থেকে সেখানে আর সেখান থেকে অন্যখানে বদলি করছেন।
সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলার অভাব সম্পর্কে আমি আগেই বিস্তারিত জেনেছিলাম। আমার বড়ভাই এয়ার কমোডোর এবিএম মাহবুবুর রহমান ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল জিয়ার বাড়ির কাছেই থাকতেন। তিনি কাছের এক অফিসারের খালি বাড়িতে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে বাড়ির দেয়ালে অন্তত এক হাজার বুলেটের গর্ত ছিল। খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের চার দিনে সেনাবাহিনীর ভেতরে অনুরূপ হিংস্রতা আরও বহু হয়েছে বলে বড়ভাই আমাকে বলেছিলেন। বলেছিলেন মিছিল করে সিপাহিদের স্লোগান দানের কথাও। বিমানবন্দরে ভদ্রলোক মোটামুটি একই রকম বিবরণ দিয়েছিলেন আমাকে।

একটি ঐতিহাসিক আলাপচারিতা

শেরাটন হোটেলে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিএমএলএ’র অফিস থেকে টেলিফোন এলো। জেনারেল আমার সঙ্গে সময় নিয়ে গল্প করতে চান। সেদিন তার হাতে বেশি সময় নেই। পরের দিন তার অফিসে যেতে আমার কি খুব বেশি অসুবিধা হবে? গরজ আমারই, সুতরাং বলতেই হলো যে কোনো অসুবিধা হবে না। আমার হাতে তখনকার ভারী টেপ রেকর্ডার এবং আমার ক্যামেরা ছিল। জেনারেল জিয়া আমাকে অভ্যর্থনা করতে নিজেই এগিয়ে এলেন। হাত থেকে ক্যামেরা আর টেপ রেকর্ডার নিয়ে তার পিএস কর্নেল অলির হাতে দিলেন। ইংরেজিতে বললেন, অলি, এগুলো প্রাণপণে রক্ষা করবে। তোমার-আমার কাছে রাইফেল যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মি. রহমানের কাছে টেপ রেকর্ডারও সে রকম। আমাকে ভেতরে তার অফিস কামরায় নিয়ে গেলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
আমার স্যুটের জ্যাকেট খুলে নিজের হাতে কামরার একেবারে শেষ মাথায় ব্র্যাকেটে রাখলেন। বললেন, কি আবার স্যুট-ট্যুট পরে এসেছেন। আমি বললাম, স্যার স্যুট আমার প্রয়োজনে নয়। শীতের দেশে থাকি, বাংলাদেশের ফেব্রুয়ারি আমার জন্য খুবই আরামদায়ক। স্যুট পরেছি আপনার সম্মানে এবং আশ্বাস দিচ্ছি, পকেটে রিভলবার কিংবা মাইক্রোফোন লুকোনো নেই। হো-হো করে হাসলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। আড়ষ্টতা কেটে একটা সহজ-স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হলো। তারপর আর আমাদের আলোচনায় কোনো সমস্যা
দেখা দেয়নি।
জেনারেল জিয়া তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সমস্যাগু
লোর একটা তালিকা দিলেন আমাকে। দেশ ছোট, সম্পদ কম, কিন্তু জনসংখ্যা বিশাল। সবচাইতে বড় সমস্যা দেশের বিশাল শিক্ষিত বেকারের সমস্যা। এদের গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা না গেলে এরাই দেশের সর্বনাশ ডেকে আনবে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে তিনি একটা কর্মসূচি তৈরি করছেন। ওদিকে বাংলাদেশের মানুষ মনেপ্রাণে গণতন্ত্র চায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়। অথচ শেখ মুজিবুর রহমান দুটোরই পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। জিযা বলেন, এ অবস্থা মানুষ কিছুতেই বেশিদিন সহ্য করবে না। তিনি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞাও যথাশিগগির প্রত্যাহার করা হবে। সে লক্ষ্যে তিনি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তানায়কদের সঙ্গে আলোচনা ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। জিয়া আরও বলেন, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের পতনের একটা বড় কারণ। দেশের দরিদ্রতম জনসাধারণকে কীভাবে খাদ্য দেয়া যায়, সে চিন্তাও করছেন তিনি।
স্বাধীনতার যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছেন তিনি কেন তাদের সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও দেশের সমস্যাগুলোর উল্লেখ করে বলেন, গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং সংহত করা না গেলে এমন দুরূহ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, তাছাড়া এই লোকগুলো তো বাংলাদেশেরই সন্তান। অন্য কোনো দেশ তো আর ওদের নেবে না। কিছুটা হাল্কা সুরে তিনি বলেন, মি. রহমান, আপনি তো বিলেতে থাকেন, ওদের বলে দেখুন না এই লোকগুলোকে নেবে কিনা। তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে গেলেন তিনি। বললেন, ওদের দেশে থাকতে দেব, অথচ একঘরে করে রাখব, তাহলে তো প্রতিমুহূর্ত পিঠে ছুরি মারার ভয়ে আমাকে পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে, দেশের কাজ করার সুযোগ পাব কখন? আপনিই বলুন, এই লোকগুলোকে নিয়ে আমি কি করি? তাদের কি আমি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসব?

সেনাবাহিনী নিয়ে জটিল সমস্যা
আগের দিন তিনি কেন চাটগাঁ গিয়েছিলেন জানতে চাইলাম আমি। তিনি বললেন, সেটাও শুনেছেন? তাহলে শুনুন—আমিও জানি যে আজ সন্ধ্যায় আপনিও চাটগাঁ যাচ্ছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনে নিন না। আমি তাকে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্বন্ধে প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, চেইন অব কমান্ড অবশ্যই ফিরিয়ে আন
তে হবে, সেনাবাহিনীর অস্তিত্বের প্রয়োজনে। জেনারেল জিয়া বলেন, সেনাবাহিনীর ভেতরে সমস্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করছে বাইরের কোনো কোনো মহল। বাইরের এই মহলগুলো দেশের ভেতরের কিংবা দেশের বাইরের সে প্রশ্ন তখন আমার মনে আসেনি। এসেছিল কর্নেল ফারুক রহমানের সঙ্গে নিক ন্যুজেন্টের সাক্ষাত্কার শুনে। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। জেনারেল জিয়া তার অনেক আগেই শহীদ হয়েছেন।
আমি বিলেত ফিরে আসার কিছুকাল পরেই জেনারেল জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচির খবর আসে। আমার তখন আমাদের সেই আলাপচারিতার কথা মনে হলো। দরিদ্রতম জনসাধারণের খাদ্য সংস্থানের লক্ষ্যে তিনি কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং খাল খনন ও নদী সংস্কারের কর্মসূচি শুরু করেন। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে পরিবারকে খাদ্য দেয়ার রীতিও তিনিই প্রথমম চালু করেন। পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই কর্মসূচির প্রসার ও বিবর্তন করেন। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন যে বিনা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে পারছে, তার কৃতিত্ব রাষ্ট্রপতি জিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাল খনন ও নদী সংস্কারের কর্মসূচিতে দেশজোড়া অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বেকার ও পেশাজীবী সব শ্রেণীর মানুষ ওই কর্মসূচিতে সাড়া দিয়েছিলেন। আমার সহকর্মী (স্যার) মার্ক টালি মযমনসিংহ জেলায় ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের ভাঙন ঠেকানোর জন্য এরকম মাটি কাটার প্রকল্পের খুবই সুন্দর একটা শব্দচিত্র পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন :
‘নদী দ্রুততর পাড় ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে নতুন একটা পাটকল আর একটা রেলসেতু ভেসে যাবে। নদীর গতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দুই মাইল লম্বা একটা খাল খননের পরিকল্পনা করা হলো। সে জন্য হাতে ধরে ৬০ লাখ ঘনফুট মাটি কাটতে হবে। প্রথম দিকে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক হয়েছিলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে, সেনাবাহিনী আর পুলিশের লোক, কলকারখানা আর সরকারি অফিস থেকেও লোক এসেছিল। আমার জন্য সবচাইতে বিস্ময়কর ছিল যে, বেশ কিছু মহিলাও এসেছিলেন। মহিলাদের একটি দলের নেত্রী ছিলেন ময়মনসিংহের মহিলা সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান।... প্রথম ঝুড়ি মাটি কাটলেন জেনারেল জিয়া স্বয়ং। জনতা তখন ধ্বনি তুলছিল—জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ।’
মার্ক টালি আমার চাইতেও বেশি বার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তাকে তিনি ভালোভাবেই চিনতেন। জিয়া হত্যার খবর পেয়ে মার্ক মন্তব্য করেছিলেন, ‘লোকটা তার প্রাণের সেনাবাহিনীকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। সেজন্যই তাকে প্রাণ দিতে হলো।’
















 




শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি , দিয়েছেন বাকশাল ঘোষণা 








স্বাধীনতার ঘোষনা বিতর্ক অবসানে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে সেখানে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচারিক অভিমতই লিখককে এই পোস্ট টি নিয়ে চিন্তা করার উৎসাহ দিয়েছে।

সেখানে যেটা বলেছিলেন খায়রুল হক :

“এটি জিজ্ঞাস্য হতে পারে যে বিচারকরা ইতিহাস নির্ধারন করতে পারে কিনা । মূলত আমরা ইতিহাস নির্ধারনের দায়িত্ব নিতে পারিনা। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে মুজিব নগর সরকারের ঘোষনা মোতাবেক স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ এবং শেখ মুজিবর রহমান এই ঘোষনা দেন। এর ব্যতয় ঘটলে সংবিধান লংঘন হয় , সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্যই এই রায় ।” 

সুতরাং বিষয়টা ইতিহাসের তথ্যের কাঁটাছেড়ায় নির্ভুল প্রমানিত কিনা সেটা এখনো পেন্ডিং রয়ে গেছে।

২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দেশব্যপী ছড়িয়ে পড়েছিলো এটা নিরেট সত্য ইতিহাস ।কিন্তু সেই ঘোষনা গুলোর ভেতরে তারতম্য পাওয়া যায় বক্তব্যের দিক থেকে এবং সোর্সের দিক থেকেও।  

তাই ধানমন্ডী ৩২ নং থেকে সেদিন এই মেসেজ গুলো কিভাবে বেরিয়ে এসেছিলো অর্থাৎ সেই রূদ্ধশ্বাস সময়টাতে শেখ মুজিব কিভাবে ধানমন্ডী ৩২ নং এর বাইরের লোকদের সাথে কমিউনিকেট করেছিলেন এবং মেসেজ গুলো প্রচারকারী ব্যক্তিদের হাতে পৌছেছিলো সেটার চুলচেরা বিশ্লেষন এখনো পাইনি।

মোটা দাগে বলে ফেলা হয় টেলেক্স , টেলিফোন , ওয়্যারলেসে মাধ্যমে মেসেজ পাঠানো হয়েছিলো।

কিন্তু তথ্যগুলোর কখনোই মাইক্রস্কোপিক ডায়াগনসিস হয়েছে বলে মনে হয়নি।

সেই উদ্দেশ্যেই এই …..

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং : DOI (Declaration of Independence).

প্রথমেই দেখা যাক ধানমন্ডী ৩২ নং এ মার্চ ২৫ কি ঘটেছিলো: 

সন্ধ্যা ৬:০০ :

সুপরিচিত পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলীর পিতা মাজহার আলী এবং রেহমান সোবহান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন এবং তাকে জানান মিলিটারী ক্র্যাকডাউন আসন্ন।

[ সূত্র: বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্য , রেহমান সোবহান , ভোরের কাগজ প্রকাশনী , ১৯৯৪ ]

শেখ মুজিব এরপর ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন।
এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১জন সংবাদবাহক স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে ১টি প্রেসনোট বিলি করেন যেটিতে উল্লেখ করা হয়:
“প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চুড়ান্ত হয়েছে , ক্ষমতা হস্তান্তরের মতানৈক্য হয়েছে এবং আমি (বংগবন্ধু) আশা করি প্রেসিডেন্ট তা ঘোষনা করবেন”।
এবিষয়ে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেন:
“আমার দুঃখ হয় , এই নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই”

[ সূত্র: রেপ অব বাংলাদেশ , অ্যান্থনি মাসকারেনহাস , অনুবাদ মযহারুল ইসলাম , ১৯৭৩ , পৃষ্ঠা:১১৩ ]

২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর ভেতর ৪৫ মিনিটের ১টি মীটিং হয়।
শেখ মুজিব পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষনের জন্য অপেক্ষা করেন। 





সন্ধ্যা ৬:০০ টা পরবর্তী:

ইয়াহিয়া করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার এই ঢাকা ডিপারচার এর প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ২ জন বাঙালী সামরিক কর্মকর্তা।

১.

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এটি প্রতক্ষ্য করেন লে. কর্নেল এ. আর চৌধুরী।
২.

বিমানবন্দরে এটি প্রতক্ষ্য করেন এয়ারফোর্সের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খোন্দকার।

ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের কলাম থেকে যেটা জানা যায়
ইয়াহিয়া বিকাল ৫: ৪৫ এ প্রেসিডেন্টস হাউজ থেকে বেরিয়ে সোজা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যান এবং সেখান থেকে গোপনে এয়ারপোর্ট যান।

ক্যাঃ রফিকের কলাম , ২৫ মার্চ , ২০১০ , ইত্তেফাক 

শেখ মুজিব তখনো ১ টি ফোনকলের অপেক্ষায় ছিলেন।
এবং ডঃ কামাল হোসেন কে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন কোন ফোন এসেছে কিনা।
প্রতিবারই ডঃ কামালের উত্তর ছিলো না সূচক।
ফোনটি আসার কথা ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেঃ জেনাঃ পীরজাদার কাছ থেকে।
কারন ইয়াহিয়া বলেছিলো তার ভাষন প্রচারের আগে পীরজাদার সাথে শেখ মুজিবের ১টি ছোট বৈঠক হবে।
সেই ফোনকল আর আসেনি কোনদিন।শেখ মুজিবও বুঝতে পারেন সব আশা শেষ। ইয়াহিয়া ধোঁকা দিয়েছে।

[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ]

সন্ধ্যা ৭:০০:

সিডনী শনবার্গের রিপোর্ট [ ২৯ মার্চ , নিউইয়র্ক টাইমস ] থেকে যেটা জানা যায় দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঙালী বিহারীর সংঘর্ষ হয় এবং শেখ মুজিব ১টি বিবৃতিতে এর নিন্দা জানান। 





রাত ৮:০০ – ৮:৩০:

এরকম একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে এইচ এম কামরুজ্জামান , ক্যাপ্টেন মনসুর আলী , তাজউদ্দীন আহমদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে চলে যান।

শেখ ফজলুল হক মনি ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায়ই টুংগীপাড়া চলে যায় এবং শেখ কামাল রাত ৯টায় ধানমন্ডী ৩২নং ছেড়ে যান।

[ সূত্র : শেখ মুজিব , এস.এ. করিম, ইউপিএল, ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৯৫ ]

রাত ৮:৩০ – ৯:০০:

শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকা ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ শাহজাহান।

মঈনুল আলমের কলাম , ২৫ মার্চ ২০১০ , ইত্তেফাক

রাত ৯:০০- ৯:৩০:

ডঃ কামাল হোসেন এবং ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম ৩২নং থেকে বিদায় নেন।

অজয় রায়ের স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ক আর্টিকল থেকে যেটা জানা যায় রাত ৯ :০০ টায় সাইমন ড্রিং শেখ মুজিব কে ফোন করেছিলেন , সোর্স: ৩১ মার্চ ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ

এই তথ্যটির ১ টি ক্লু পাওয়া যায় সাইমন ড্রিং এর আরেকটি রিপোর্টে।  ২৩শে মার্চ ১৯৭১। আউটার স্টেডিয়ামে বঙ্গ বন্ধুর শেষ জনসভায় বজ্র কন্ঠে ঘোষিত হল, “কাল থেকে ব্যাংক চলবে না, অফিস আদালত চলবে না, গাড়ী চলবে না .. ..”। ঘোষণা করলেন সারা বাংলায় হরতাল । জনসভায় আগত সবাই হতাশ হলেন , এমনকি হালের নেতার পর্যন্ত ।

২৯ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :

রাত ৯:১০:

ঠিক এই সময়েই প্রথমবারের মত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন জানান রেহমান সোবহান।

[ সূত্র : প্রাগুক্ত ]

রাত ১০:০০ – ১০:৩০:

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন নঈম গহর।
কেননা শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে তিনি এম.আর. সিদ্দীকীর সাথে ফোনে কথা বলেন এবং কথা বলা শেষ হলে দেখেন রাত প্রায় ১১: ০০

নঈম গহরের কলাম , ২৫ মার্চ , ২০১০ , দৈনিক সমকাল

রাত ১০:৩০:

ইস্ট পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশনের এম.ডি. ক্যাপ্টেন রহমান এবং ২ জন এক্স নেভাল অফিসার কমান্ডার ফারুক এবং লে. মতিউর রহমান শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে আসেন।
এ সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এর ১টি ফোন আসে শেখ মুজিবের কাছে এবং “ইপিআর কে ডিসার্মড করা হয়েছে” শেখ মুজিব কে এতটুকু বলতে না বলতে লাইন কেটে যায়।

[ সূত্র : শেখ মুজিবের বাসভবনে সে সময় অবস্থানরত পারিবারিক কর্মচারী মমিনুল হক খোকা , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা - ৪৪৭-৪৮ ]

রাত ১১:০০:

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে আত্মগোপন করার অনুরোধ জানালে, শেখ মুজিব তাকে জানান তিনি বাসা ছেড়ে যাবেননা , মরতে হলে সেখানেই মরবেন।

[ সূত্র : আর্চার ব্লাড, দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১৯৮]

যদিও শেখ মুজিবের এই মুখের গর্জন শেষ পর্যন্ত একেবারেই বর্ষায়নি
বাস্তবিকভাবে।

সাইমন ড্রিং এর [৩০ মার্চ , ডেইলী টেলিগ্রাফ] রিপোর্টে যেটা পাওয়া যায় রাত ১০:০০ – ১১:০০ টার মধ্যে শেখ মুজিবের সাথে তার ১ জন রাজনৈতিক শিষ্যের কথা হয়েছিলো ফোনে :

৩০ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ : 

এই সহকর্মীটি রাজ্জাক ভিন্ন অন্য কেউ বলেই মনে হচ্ছে । কারন রাজ্জাকের বেলায় লাইন কেটে গিয়েছিলো।

এখান থেকে এই তথ্যটিও বেরিয়ে আসে পাক আর্মি ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসে রাত ১০:০০ টার দিকে।

রাত ১১:০০ – ১১:৩০:

সিরাজুল আলম খান , আ.স.ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজের শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে এটাই ছিলো শেখ মুজিবের সাথে কারো ঐ রাতে শেষ বৈঠক।

এই সময়টাতে শেখ মুজিবের বাসায় একটি ফোন কল আসে যেটির বর্ণনা দিয়েছেন হাজী গোলাম মোরশেদ :
“রাত ১১ টায় বলধা গার্ডেন থেকে ১টা ফোন এলো। বললো : রেডিও মেসেজ প্রচার হয়ে গেছে ।”

[ সূত্র : হাজী গোলাম মোর্শেদের বক্তব্য , দৈনিক পূর্বদেশ , স্বাধীনতা সংখ্যা , ১৯৯০]

১১:৩০:

ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে ঝন্টু (জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা জাকারিয়া চৌধুরীরা ভাই) ধানমন্ডী ৩২নং এ আসেন। শেখ মুজিব কে ঝন্টু অপারেশন সার্চলাইট এবং নির্বিচার গোলাগুলির খবর জানান।
ঝন্টুর মাধ্যমে পরিস্থিতি অবগত হয়ে শেখ মুজিব হাসিনা , রেহানা এবং জেলীকে ১টি ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন আত্নগোপন করার জন্য।
শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের আত্নগোপনের জন্য ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো।
ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ১১:৩০ এর পর ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।

[ সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, ইউপিএল, ২০০০, পৃ ৮৪ ]

“সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিবের বাসায় ছিলো মানুষের ঢল।কিন্তু ইয়াহিয়ার ঢাকাত্যাগের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং সেনাবাহিনীর মতিগতি দেখে সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার সর্বত্র বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ১ বিবৃতিতে বিভিন্নস্থানে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেন।”

[ সূত্র : বংগবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি , ১ম খন্ড , সম্পাদক মোনায়েম সরকার , বাংলা একাডেমী ২০০৮ , পৃষ্ঠা:৪৪৭ ]

ইত্তেফাকের শিরোনাম: মার্চ ২৬ , ১৯৭১

রাত ১ টায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মত পাক আর্মির ১ম দলটি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে ফার্মগেটের নিকট ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়।
রাত ৯:৩০ তেই সেনাবাহিনীর বহর কে বাধা দেয়ার জন্য রাস্তায় গাছ ফেলে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয় সেখানে। প্রতিরোধ তখনই শুরু হয়ে যায় পাক আর্মির বিরুদ্ধে।

[ সূ্ত্র : উইটনেস টু সারেন্ডার , সিদ্দিক সালিক , ইউপিএল , ১৯৭৭ , পৃষ্ঠা ৭৩]

রাত ১:১০ – ১: ৩০:

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিব অস্বাভাবিক কাপুরোষিত ভাবে আত্নসমর্পন করেন।
এ বিষয়ে অপারেশন বিগবার্ডের ইনচার্জ জহিরুল আলম খান নিজেই বই লিখেছেন : দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ।
সেখানে যা লেখা রয়েছে:
এবার আসুনদেখি অপারেশন বিগবার্ড বিষয়ে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) জহিরুল আলম খানের বক্তব্য কি :
___________________________
” তল্লাশী চালানোর জন্য এরপর একটি দল ঢুকলো। প্রহরীদের একজনকে বলা হলো রাস্তা দেখাতে। কিছুদূর যাওয়ার পর তার পাশে থাকা সৈন্যকে দা দিয়ে আক্রমণ করতে গিয়েছিলো সে, কিন্তু জানতো না তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। তাকে গুলি করে আহত করা হয়। এরপর সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো সার্চপার্টি। একের পর এক দরজা খুলে কাউকে পাওয়া গেলো না। একটা রুম ভেতর থেকে আটকানো ছিলো। ওপরে ওঠার পর কে যেন আমাকে বললো বদ্ধ ঘর থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ আসছে। মেজর বিল্লালকে বললাম দরজা ভাঙতে। আর আমি নীচে নামলাম ক্যাপ্টেন সাঈদের দল এলো কিনা দেখতে।
সাঈদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটা গুলির শব্দ হলো। এরপর গ্রেনেড বিস্ফোরন ও তার সাথে সাব-মেশিনগানের ব্রাশ। ভাবলাম কেউ হয়তো শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি সেই বদ্ধ রুমের দরজায় দাড়িয়ে মুজিব। রীতিমতো সন্ত্রস্ত। 

পরে জানতে পারলাম মেজর বিল্লালের লোকেরা যখন দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিলো তখন কেউ একজন সেদিকে পিস্তলের গুলি ছোড়ে। ভাগ্যক্রমে কারো গায়ে তা লাগেনি। বাধা দেয়ার আগেই বারান্দার যেদিক থেকে গুলি এসেছিলো সেদিকে গ্রেনেড ছোড়ে একজন সৈনিক। এরপর সাবমেশিনগান চালায়। গ্রেনেডের প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির আওয়াজে বদ্ধ সে রুমের ভেতর থেকেচিৎকার করে সাড়া দেন শেখ মুজিব এবং বলেন তাকে না মারার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন। নিশ্চয়তা পেয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বেরুনোর পর হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির (পরে সুবেদার) তাকে শারীরিকভাবে অপদস্থ করেন।

শেখ মুজিবকে বললাম আমার সঙ্গে আসতে। উনি জানতে চাইলেন পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারবেন কিনা। আমি তাকে তা জলদি সারতে বললাম। এরপর গাড়ির দিকে হাটা ধরলাম। এরমধ্যে সদরে রেডিও বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি যে আমরা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করেছি। (বিগবার্ড ইন কেইজ)।
মুজিব এবার বললেন ভুলে পাইপ ফেলে এসেছেন তিনি। আমাকে নিয়ে পাইপ আনতে গেলেন আবার। এরমধ্যে মুজিব আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। টের পেয়ে গেছেন তার কোনো ক্ষতি করা হবে না।বললেন, তাকে ফোন করে বললে তিনি নিজেই চলে আসতেন।”
-বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহিরুল আলম , ইনচার্জ – অপারেশন বিগবার্ড
________________________
[ সুত্র: দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ , কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অপারেশন বিগবার্ড , ২৫ শে মার্চ , ১৯৭১ - অমি রহমান পিয়াল] 

এই ঘটনার ব্যাপারে একটি অদ্ভুত তথ্য আছে টাইম ম্যাগাজিনের [ ৩ মে , ১৯৭১ ] রিপোর্টে :

পুরো বিষয়টির ভেরিফিকেশনের জন্য পড়ুন

অফেন্ডিং শেখ মুজিব-১

জহিরুল আলম খানের বক্তব্যের সাথে মিলে যায় এরকম আরো ২ টি নিউজ ক্লিপস পাওয়া যায়।

১.

এম. এফ . এইচ বেগ এর রিপোর্ট :

২৯ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ : 

শেখ মুজিব কে ফোন করে বললে তিনি নিজেই চলে আসতেন এই বক্তব্য এখানেও পাওয়া যায় এবং ১ জন বডিগার্ড কে গুরুতর আহত করা হয়েছিলো সেটাও পাওয়া যায়।

রাত ১:৩০ পর্যন্ত ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে যা যা ঘটেছে সম্ভাব্য সব সোর্স থেকে সব তথ্যগুলোকে অ্যাকুমুলেট করা হলো।

জানিয়ে রাখা ভালো : কিছু চমকে দেয়া তথ্য আমি স্কিপ করে গেছি আলোচনার ক্রম বিচার করে। সেগুলো একটু পরেই পাবেন।পড়তে থাকুন।

এবার দেখা যাক স্বাধীনতা পরবর্তী সময় গুলোতে শেখ মুজিব নিজে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন বলে দাবী করেছেন

১. সিডনী শনবার্গের সাথে [ঢাকা , ১৬ জানুয়ারী , ১৯৭২] সাক্ষাৎকার [রিপোর্ট : ১৮ মার্চ , ১৯৭২ , নিউইয়র্ক টাইমস]:

এই সাক্ষাৎকারটির বিবরন পাওয়া যায় হাসান ফেরদৌসের প্রথম আলোতে ।

মুজিব কেন আত্নসমর্পণ করেছিলেন : হাসান ফেরদৌস , ৩০ মার্চ , ২০০৯ , প্রথম আলো





এখানে তিনি পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছেন টেলিফোনে (তার যোগাযোগ / ওয়্যার কমিউনিকেশন) চট্রগ্রামের সিক্রেট হেড কোয়াটার এ মেসেজ পাঠিয়েছেন , সেটিই পরে গোপন বেতার থেকে ট্রান্সমিটেড হয়েছে।

২. জাতীয় গণপরিষদে স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ে বিতর্ক : 

বাংলাদেশ জাতীয় গনপরিষদে (বর্তমান জাতীয় সংসদ) এ ১০ এপ্রিল , ১৯৭২ এ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং নুরজাহান মুরশিদ প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

এর জবাবে শেখ মুজিব বলেন ওয়্যারলেসে চট্টগ্রামে তিনি জানিয়েছেন এই ঘোষনা এবং এই প্রস্তাবটি যেহেতু ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা ও মুজিব নগর সরকারের ১০ এপ্রিলের ঘোষনার ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছিলো সেহেতু শেখ মুজিব ওয়্যারলেসে যে মেসেজ পাঠিয়েছেন দাবী করেছেন সেটা অবশ্যই ২৫ মার্চ রাত ১২ : ০০ পরে ।

সোর্সঃ সাপ্তাহিকে প্রকাশিত স্বাধীনতার ঘোষনা প্রস্তাব বিষয়ক জাতীয় গণ পরিষদ আলোচনা , ১০ এপ্রিল , ১৯৭২ , পিডিফটির পেজ ৪

আসুন এবার শেখ মুজিবের দাবীগুলোকে চেক করে দেখা যাক:

সিডনী শনবার্গের সাথে সাক্ষাৎকার:

১.

শেখ মুজিব হরতাল ডাকার কথা বেমালুম চেপে গেছেন যেটা ইনএভিটেবল ট্রুথ।

২.

শেখ হাসিনা নিজেও সেদিন রাত ১১:৩০ পর্যন্ত ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে ছিলেন। আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মুখ থেকে মুজিবের চট্টগ্রামে টেলিফোন করা বিষয়ক কোন দাবী আসেনি ! জানিনা এটা জানার পর নতুন করে দাবী করে বসবেন কিনা !

৩.

শেখ হাসিনা , শেখ রেহানা এবং জেলীকে রাত ১১:৩০ এ ভাড়া বাসায় আত্নগোপনে পাঠানোর পর ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ধানমন্ডী ৩২ নং ছেড়ে আসেন।
খোদ ওয়াজেদ মিয়া নিজেই “নিউ এজ” এর কলামে লিখেছেন শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি।
ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী রাত ১১:৩০ পর্যন্ত শেখ মুজিব কোন লিবার্টী মেসেজ পাঠাননি কোথাও।

৪.

বর্তমান জাদরেল আওয়ামী নেতা , সেসময়কার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ১০:৩০ ফোন করেন এবং ১১:০০ স্বশরীরে দেখা করেন।
তাকেও কোন DOI মেসেজ দেননি শেখ মুজিব ।

৫.

সবচেয়ে গুরুতর তথ্য যেটি সিডনীর কাছে মুজিবের দেয়া তথ্যকে পুরোপুরি নকআউট করে সেটি হলো :
রাত ১০: ০০ – ১০:৩০ পর্যন্ত নঈম গহর ধানমন্ডী ৩২ নং এ ছিলেন এবং তার ভূমিকাটা ছিলো চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে শেখ মুজিবের কমিউনিকেশন তৈরী করা।

নঈম গহরের কলামের লিংকটি আবারো দিলাম প্রাসংগিক কারনে

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে DOI মেসেজ পাঠানোর এরকম একটি সূবর্ন সুযোগ পাওয়ার পরও শেখ মুজিব সেটি করেননি। টেলিফোন করার প্রশ্নতো অবান্তর।

বরন্চ্ঞ নঈম গহর কে কিছু রোমান্টিক বিপ্লবী বক্তব্য দিয়েছেন এবং নঈম গহর সেটাই এম.আর.সিদ্দীকিকে টেলিফোনে জানিয়েছেন।

সেখানে কোন প্রকার DOI মেসেজ নেই , থাকলে নঈম গহর ইতিহাসের অনেক বড় অংশ হতেন এবং সেটার দাবী জানাতে দেরী করতেননা।

বরন্চ্ঞ আমার যেটা ব্যক্তিগত অনুমান শেখ মুজিব জানেন যে তার কিছু ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ নঈম গহর ১০ : ৩০ – ১১ : ০০ টার ভেতরে ইমিডিয়েটলী টেলিফোনে চট্টগ্রাম আওয়ামী নেতাদের জানাবেন এবং সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে নঈম গহরের সেই টেলিফোন টিকে মুজিব নিজের করা টেলিফোন বলে চালিয়ে দিয়েছেন । একই সংগে তার ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ গুলোকে DOI মেসেজ দাবী করেছেন।

এই অনুমানের আরেকটি শক্তিশালী ক্লু দেখুন:

সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে মুজিব বলেছেন চট্টগ্রামে তিনি টেলিফোনটি করেছেন ১০:৩০ নাগাদ !
টাইমিং এর এই মিল মোটেই কাকতালীয় মনে হচ্ছেনা যেহেতু মুজিব জানতেন ১০:৩০ এর পর ইমিডিয়েটলী নঈম গহর চট্টগ্রামে তার ইন্সট্রাকশনাল মেসেজ জানিয়ে ফোন করবেন।

খুব পরিষ্কার ভাবেই শেখ মুজিব সিডনীর সাথে সাক্ষাৎকারে DOI মেসেজ বিষয়ক দাবীগুলোতে মোটেই ট্রুথফুল ছিলেননা।

বরন্চ্ঞ হাস্যকর বিষয়টা হলো শেখ মুজিব নিজেই আবার জাতীয় গনপরিষদে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার প্রস্তাবে নিজের স্বপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন!

২. ন্যাশনাল পার্লামেন্টে শেখ মুজিবের দাবী:

সেখানে শেখ মুজিব মোটাদাগে বলে গেছেন ওয়্যারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা চট্টগ্রামে পাঠান।
কিন্তু কিভাবে ?

এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত বক্তব্যটি যেটা শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনার ব্যাপারে সন্দেহ মুক্ত ব্যক্তিসকল দাবী করে থাকে – সেটা হলো রাত ১২:২০ মিনিটে পর মুজিব টেলিফোনে সেন্ট্রাল টিএনটি অফিসের বিশ্বস্ত ১ জন কে DOI মেসেজ পাঠিয়ে দেন । সেখান থেকেই বাকি সব প্রচারের ইনিশিয়েশন হয়।

আতিউর রহমান তার জনকন্ঠে লিখিত কলামে দাবী করেছেন মুজিব DOI মেসেজ পাঠান রাত ১২:২০ মিনিটে।

দৈনিক জনকন্ঠে আতিউর রহমানের কলাম

সিরাজউদ্দীন হোসেনও তার ইত্তেফাকের স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ক কলামে ১২:২০ মিনিটে মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনার দাবী করেছেন।

দৈনিক ইত্তেফাকে সিরাজউদ্দীন হোসেনের কলাম

এই রাত ১২ : ২০ এর উল্লেখ আরো অনেক গবেষকের কাছে পাওয়া যায় যারা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন – এটা বিশ্বাস করেন।

অজয় রায় দাবী করেছেন রাত ১২:০০টার পরপরই এই টেলিফোনটি শেখ মুজিব করেন।

এক্ষেত্রে অজয় রায় টাইমিং এর ব্যাপারে একটু পিছলে গিয়ে রবার্ট পেইনের ম্যাসাকার বইটির উদাহরন টানেন যেখানে বলা হয়েছে২৫ মার্চ রাতে ঘোষনাটি জানানো হয় টিএনটি অফিসের এক বিশ্বস্ত ( আজও অজ্ঞাত !) এক স্টাফ কে।

কিন্তু এটি ৭১ পরবর্তী রবার্ট পেইনের ব্যক্তিগত সংগৃহীত তথ্যদিয়ে লেখা বই মাত্র ।

এই তথ্য যে রবার্ট পেইন সেই রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান কালে পাননি এবং অন্যকোন রিপোর্টারের সরাসরি সূত্র থেকে আসেনি , বরং অন্যকোন আওয়ামী সোর্স থেকে থেকে পরবর্তী সময়ে সংগ্রহ করেছেন সেটার যুক্তিটাও দেখবেন এখন।

এরিমধ্যে নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন আতিউর রহমান আর রবার্ট পেইনের ভেতরে টুইস্ট হয়ে গেছে ঘোষনার ভাষায়। 

আগেই বলেছি ধানমন্ডী ৩২ এর ২৫ মার্চের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে দুটো সারপ্রাইজিং তথ্য স্কিপ করেছি।

এই তথ্যগুলোই শেখ মুজিবের টেলিফোন বা অন্যযেকোন ভাবে হোক , DOI মেসেজের দাবী কে রীতিমত নকআউট করে।

দেখুন সেগুলো :

১. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব কে টেলিফোন , সময় রাত ১২:২০ :

সিডনী শনবার্গের [২৭ মার্চ নিউদিল্লী থেকে] রিপোর্টক্লিপটি দেখুন :

২৮ মার্চ , ১৯৭১ ,নিউইয়র্ক টাইমস : 



সেখানে পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছে রাত ১২:২০ মিনিটে শেখ মুজিবের বাসায় টেলিফোন করা হয় ! এবং ফোনটি রিসিভ করেন আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পরিচয়দানকারী কেউ একজন (হাজী গোলাম মোরশেদ অথবা তবিবুর রহমান)।

ফোন রিসিভারের বক্তব্য অনুযায়ী শেখ মুজিব তখন শোবার ঘরে ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ফোনটি বিজি ছিলো পরবর্তী কিছু সময় এই কথোপকথনে।

যদি ১২:০০ – ১২:২০ এর মধ্যেও DOI মেসেজ শেখ মুজিব পাঠিয়ে থাকেন তাহলে সুবর্ন সুযোগ পেয়েও শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের কাছে তার DOI মেসেজ এর তথ্যটি জানাননি , ঐ আওয়ামী অফিসিয়ালের কাছ থেকেও স্বাধীনতা ঘোষনা বিষয়ে ঐ ফোনে কিছু জানানো হয়নি!

রাত ১২:২০ মিনিটে টেলিফোনে DOI মেসেজের তো প্রশ্নই আসেনা।

২. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব কে টেলিফোন , সময় রাত ১:০০ টা 

দ্য এজ রিপোর্ট , অস্ট্রেলিয়া , ২৯ মার্চ , ১৯৭১:



এই একই তথ্যটি সায়মন ড্রিং এর রিপোর্টেপাওয়া যায়:

৩০ মার্চ , ১৯৭১ , ডেইলী টেলিগ্রাফ :



এখানে যেটা বলা হয়েছে রাত ১:০০ টার সামান্য আগে শেখ মুজিবের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং স্বয়ং শেখ মুজিব ফোন রিসিভ করেন।সেখানে শেখ মুজিব বলেছেন যে তিনি যেকোন মূহুর্তে আক্রমণ আশা করছেন এবং একজন ভৃত্য আর দেহরক্ষী ছাড়া বাকি সবাইকে নিরাপদস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

সেই চূড়ান্ত মূহুর্তে যখন শেখ মুজিব জেনে গেছেন কি ঘটতে যাচ্ছে নিশ্চিত ভাবে এবং এর সমাধান একটাই স্বাধীনতা – তখনো শেখ মুজিব DOI মেসেজ টি যারা এর সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম“আন্তর্জাতিক সংবাদকর্মী “ তাদের কে জানাননি।

রাত ১২:২০- রাত ১:০০ টার মত ক্লাইম্যাক্স সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাথে যোগাযোগের চরম সুযোগ পেয়েও তাদের কাছে মুজিবের কোন DOI মেসেজ পৌছায়নি!

এ বিষয়ে সেসময়কার বিবিসি সাংবাদিক মার্ক টালীর একটি বক্তব্য এখানে প্রাসংগিক:
খবর পাওয়া গেছে যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন”

সোর্সঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিবিসি , বিসিডিজেসি , ২০০১।
আতিউর রহমানের কলাম থেকে সংগৃহীত


যেখানে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সাথেই শেখ মুজিবের রাত ১:০০ টার চূড়ান্ত সময়টাতে সরাসরি টেলিফোনে কথা হয়েছে সেখানে “খবর পাওয়ার” ভিত্তিতে কেন DOI মেসেজ রিপোর্ট করা হলো ?

প্রসংগক্রমে আরো ১টি তথ্য জানিয়ে দেই।
রাত ১২:৩০ এ সর্বশেষ যেই আওয়ামী লীগ কর্মী শেখ মুজিবের বাসায় টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি হলেন মওদুদ আহমেদ।
বিএনপিতে যোগদানের পূর্বে মওদুদ এ ঘটনাটির স্মৃতিচারন করেছিলেন এবং সেখানে তিনি কোন প্রকার DOI মেসেজ পাননি।

সোর্সঃ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ , মওদুদ আহমেদ , ১০ ডিসেম্বর , ১৯৯৫ , ইত্তেফাক , অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে সংগৃহীত

১২:০০ – ১২:৩০ এর ভেতরে যদি মুজিব DOI মেসেজটি পাঠিয়েও থাকেন কোন এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে , তাহলে সেই সময়ে তার বিশ্বস্ত দলীয় অনুগত কর্মী মওদুদকে টেলিফোনে পেয়েও সেটা জানাননি – এই নাটক কার্টুন প্রিয় শিশু ব্যতিত স্বাভাবিক চিন্তাশক্তির কারো পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব।

রাত ১:০০ – ১:১৫ , ধানমন্ডী ৩২ :

যেন তেন প্রকারেন “DOI মেসেজ” নামক তালগাছটিকে দখল করা এবং তালগাছটির চারপাশে রীতিমত বেড়া দিয়ে ফেলার আরেকটি প্রচেষ্টা হলো
জহিরুল আলম খানের “দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ” বই অনুসারে মুজিবকে গ্রেফতারের ঠিক আগ মূহুর্তে (আগে ১:১০- ১:১৫ এর মধ্যে ) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহির একটি ঘর থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পান এবং আওয়ামী গবেষকদের কাছে মনে হয়েছে সেটি ট্রান্সমিটার অপারেট করার শব্দ , তবে সম্ভবত ।

যাইহোক , মুজিব অনেক নাটকীয় সুযোগ পেয়েও DOI মেসেজটি ঘোষনা না করলেও যদি শেষ মূহুর্তে সেই চেষ্টা করে থাকেন তাহলে -

ঠিক সেই সময়েই রাত ১:১০- ১:১৫ এর ভেতরে দৈনিক আজাদী তে টেলেক্স মেসেজটি কে পাঠালো ?
শেখ মুজিবের কাছে তো তখন টেলেক্সের মত ওয়্যার কমিউনিকেশন মেশিন ছিলোনা !


সবচেয়ে বড় কথা শেখ মুজিবের বাসায় তখন অপারেট যোগ্য ট্রান্সমিটারই ছিলোনা!

তৎকালীন বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল্লাহ এবং বুয়েট ছাত্রনেতা রাশিদুল হাসান খান মিলে শেখ মুজিবের বাসার ছাদে ১ টি ট্রান্সমিটার বসান ঠিকই , কিন্তু সেটি ডিসফাংশনাল হয়ে যায় সেট করার পরই। শেখ মুজিবও জানতেন ট্রান্সমিটারটি কাজ করবেনা।
তাহলে ট্রান্সমিটার এ ঘোষনার সুযোগটা থাকে কোথায় ?

ঠিক এখানেই তালগাছ দখল করার জন্য সিরাজউদ্দীন হোসেন জোর করে ট্রান্সমিটারটিকে আবার ঠিক করে ফেলেছেন।
তার মতে শেখ মুজিবের অজ্ঞাতে অধ্যাপক নুরুল্লাহ ট্রান্সমিটারটি নিজে এসে আবার ঠিক করে গেছেন!

যদি সেটাই হয় তাহলে শেখ মুজিব জানতেন না যে ট্রান্সমিটারটি সচল করা হয়েছে আবার , তাহলে তার জানামতে অচল ট্রান্সমিটার দিয়ে ঘোষনা দিতে যাবেন কেন ?

সিরাজউদ্দিন হোসেনের বক্তব্য দেখুন ইত্তেফাকের কলামে

সিরাজউদ্দীন হোসেন সেখানেই থামেননি , এই কাল্পনিক ঘোষনাটিকে তিনি সেই রাত ১২ :২০ -১২:৩০ এ নিয়ে গেছেন , সেন্ট্রাল টিএনটি অফিসের কাল্পনিক টেলিফোনের পরিবর্তে যেটার ভিত্তিতে টিক্কা খান মুজিবকে গ্রেফতার করেন এবং সেই ঘোষনা টিক্কা নিজ কানে শুনেছেন!

যদি রাত ১২:২০ – ১২:৩০ না হয়ে যদি এই কাল্পনিক ঘোষনা রাত ১:১০ এ হয় তারমানে ১:১০ – ১:১৫ এর ভেতরে টিক্কা শেখ মুজিবকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা তৈরী করেন – সর্বোচ্চ হাস্যকর !

অথচ ইতিহাসের আসল সত্যিটা হলো :

নুরুল্লাহ নিজেই বলেছেন ট্রান্সমিটার বিকল হওয়ার পর তিনি আর সেটি ঠিক করেননি বা ট্রান্সমিটারটি কাজ করেনি এবং একই বিষয় অজয় রায়ও স্বীকার করেছেন তার আর্টিকলে।

এই কাল্পনিক ঘোষনার বিষয়টিকে শেষবারের মত নকআউট করছে সেই আগের টার্নিং ইনফো।

রাত ১:০০ টায় যখন মুজিব নিজেই টেলিফোনে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি যেকোন মুহুর্তে আক্রমন আশা করছেন , বাসার প্রায় সবাইকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন , তাহলে তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন না কেন একটু পরই তিনি ট্রান্সমিটার দিয়ে DOI মেসেজ পাঠাবেন !

এইসব কাল্পনিক নাটকের স্ক্রিপ্ট কখনোই ইতিহাস হতে পারেনা ।

অ্যাটাচমেন্ট : 
DOI : ২ টি মেসেজ , নাম মুজিবের , ব্যক্তিটি কে ?


একজন ক্ষণজন্মা মেজর জিয়া 


শহীদ রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। সেনাশাসকদের চরিত্রের সম্পূর্ন বিপরীতে গিয়ে গনমানুষের কাঙ্ক্ষিত সরকারের হাতে চাহিবামাত্র ক্ষমতা হাতবদলের কারনে তিনি দ্বিতীয়বার এদেশের মানুষের মন জিতে নেন। আর নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করে ২৬শে মার্চের সেই ঘোষনা তো আজও জগদ্বিখ্যাত। স্বাধীনতার প্রায় চল্লিশ বছর করে নতুন করে স্বাধীনার ইতিহাস রচনা করে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলে বিশ্বাসঘাতক শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর চেষ্টা হলেও গনমানুষের কাছে স্বাধীনতার ঘোষক এখন পর্য্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াই। কারন এই গনমানুষ ঘোষনা শুনেছে, যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধ দেখেছে। আর আদালত তো তৈরীই হয়েছে যুদ্ধের বহু পরে। আর বর্তমানের আদালত ওরফে মুজিব কোর্ট অনুযায়ী যাকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয় সেই শেখ মুজিব তখন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানী মেহমানদারী বরন করে নেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার কৃতিত্ব এখানেই শেষ না। যুদ্ধের পর তিনি রাজনীতিবিদদের হাতে দেশ তুলে নিজ ক্ষেত্রে ফিরে যান- দেশ রক্ষা। যার যার কাজ সে সে করবে। এরপর আবার দেশ ডাক দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতক শেখ মুজিব এর  মৃত্যুর পর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মাঝে অপহরন করা হয় জেনারেল জিয়াকে। এরপর যখন মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেন জিয়া, তখন গনমানুষের শরীরী ভাষা বলে দেয় তাদের রায়- আমরা এবার জেনারেল জিয়াকে প্রেসিডেন্ট জিয়া হিসেবে দেখতে চাই। এরপরের অধ্যায়টুকু বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে সম্ভবত। দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ থেকে খাদ্যে স্বনির্ভর বাংলাদেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অফুরন্ত সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র- একটি মানুষই করেছিলেন। তিনি হলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। জিয়া কিন্তু সেনাপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে চান নাই। আমার জানামতে তিনিই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। বাকশালের কালো থাবা থেকে বের করে তিনি দেশকে গনতন্ত্র এনে দেন। তবে অনেকগুলো ভাল কাজের মাঝে প্রেসিডেন্ট জিয়া একটি ভুল করেছিলেন। শেখ মুজিব  মৃত্যুর মাধ্যমে অপমৃত্যু ঘটা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন তিনি। অপরাজনীতির জনক ও বহু মায়ের বুক খালি করা আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই জিয়াই। জিয়া জীবনে যত পাপ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ এটি।  জিয়ার উদারতার পুর্ন সুযোগ নিয়েছে শেখ মুজিব এর মেয়ে শেখ হাসিনা। জিয়া বহু তদবির-চেষ্টা করে, গনরোষ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এই দেশের মানুষ শুধুমাত্র জিয়ার মুখের দিকে তাকিয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মাটিতে স্থান দিয়েছিল। জিয়ার পাপের ফল জিয়া পেয়েছে। শেখ হাসিনার দেশে ফেরার এক মাসও হয় নাই, প্রেসিডেন্ট থেকে লাশে পরিনত হন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক। কোটি জনতা এসে দাঁড়িয়েছিল জিয়ার কফিনের পাশে। পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল- ‘একটি লাশের পাশে বাংলাদেশ’…

 আজকের কালো বেড়াল খ্যাত সুরঞ্জিত থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও সংসদে-সংসদের বাহিরে জিয়ার স্তুতিবাক্য উচ্চারন করতে করতে মুখে ফেনা তুলেছিলেন। শোনা যায়, তারা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহর বদলে জিয়ার নাম নিতেন। দু’টো কারন ছিল এর পিছনে- জিয়ার ইমেজ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির ময়দানে এগিয়ে যাওয়া এবং দুই, শোকে মুহ্যমান জনতার ক্রোধ থেকে বাঁচতে জিয়ার প্রশংসা করে নিজের নাম জিয়ার খুনীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ানো ।

প্রথমত, ১৯৭৩ সালে ডাকসু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রত্যাহার করে। ১৯৬৯ সালে শে,মু রহমান তারই শিষ্য তোফায়েলকে (আব্দুল মালেকের খুনী) দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি নেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বর্তমান সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রত্যাহার করে নেন। সুতরাং বর্তমানে শেমু রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলাটা অনৈতিক ও আইনগতভাবেও এটা সম্ভবত ঠিক না।

সাম্প্রতিক সময়কালে তোফায়েলের কিছু মন্তব্য আমার চোখে পড়েছে সবার প্রথম। তোফায়েলের পরিচয় কিছুটা দিয়ে নেই। ১৯৬৯ সালের ১৫ই আগস্ট ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। বিশ্ববিবেক ও সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ যে হত্যাকান্ডে শিউরে উঠেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরাদের সেরা হিসেবে গন্য করা হত আব্দুল মালেককে। তোফায়েল,ইনু ও মেননের নেতৃত্বে বিশ্বাসঘাতক আওয়ামী ও নাস্তিক সংগঠনগুলো হত্যা করে মুসলিম ছাত্র আব্দুল মালেককে। আব্দুল মালেককে খুন করার বিবরনটা তোফায়েল এক ঘরোয়া মুখে গর্ব সহকারে বলেছিল- বেশ কয়েকজন মিলে আব্দুল মালেককে ঘিরে ধরে। এরপর মারতে মারতে তাঁকে শুইয়ে ফেলা হয়। এরপর একটা ইট ঘাসের উপর রেখে তার উপর আব্দুল মালেকের মাথা রাখা হয়। মাথার উপর আরেকটি ইট। দুই ইটের মাঝখানে ছেঁচে হত্যা করা হয় আব্দুল মালেককে। ইন্টারনেটে এখনো সেই হত্যাকান্ডের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই আমলের সাদা-কালো ছবি। এলাকার ভাড়াটে মাস্তান থেকে তোফায়েল আজ হয়েছে ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তবু খুনী তো খুনীই।

আমার কাছে তোফায়েলের প্রথম পরিচয় সে মুসলিম ছাত্রনেতা শহীদ আব্দুল মালেকের খুনী। এরপর তোফায়েলের আরো কিছু পরিচয় আছে- টাকা খেয়ে শেখ মুজিব কে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান, জনৈক আওয়ামী নেতাকে হত্যা করে তার স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন, শেখ হাসিনার প্রাক্তন প্রেমিক ( হাসিনাকে নিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়েও গিয়েছিল সে ), শেখ মুজিব'র রক্ষী বাহিনীর প্রধান ( ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই রক্ষী বাহিনী কি ছিল সে সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন। শুধুমাত্র জাসদের চল্লিশ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল রক্ষী বাহিনী। সাধারন মানুষের কোন হিসেব রাখা হয় নাই। এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ রচিত ‘জীবন যে রকম’ বইয়ে আছে রক্ষী বাহিনী কিভাবে বাড়িঘর দখল, সুন্দরী মেয়েকে তুলে আনাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত হত)…

এরপর আসি মতিয়া সম্পর্কে। কথিত ‘বঙ্গবন্ধু’ শে,মু, রহমান জীবিত থাকতে এই মতিয়াই মন্তব্য করেছিল ‘শেখ মুজিবের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবো’… বাংলাদেশের রাজনীতিতে অশ্লীলতার শুরু এই মতিয়ার হাত ধরেই। রাস্তায় শুয়ে পড়ে অন্তর্বাস দেখিয়ে ‘আন্দোলন’ করেছিলেন এই মতিয়াই। এদেশের যুব সমাজকে নষ্ট করার ঘৃণ্য ও মারাত্মক অপরাধের অপরাধী এই মতিয়া। 


স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এবং বাকশাল  


দেশ শত্র“মুক্ত হয়েছে, আমরা স্বাধীন। স্বাধীনতার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। আমরা গ্রহন করব। দেখা গেল স্বাধ পৌছে দিতে হয়নি। কারও কারও ঘরে পৌছে গেছে। যার তার হাতে এখন অস্ত্র। রাজধানীতে অগনিত মুক্তিযোদ্ধা। পাড়ার ছেলে যারা ঢাকার বাইরে যায়নি তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তারাও মুক্তিযোদ্ধা। ১৬ই ডিসেম্বরে পাক বাহিনী আত্মসমর্পনের পর রাজাকার আলবদর তাদের অস্ত্র রাস্তায় ফেলে দিয়ে সাধারন মানুষের সাথে মিশে গেছে। আর এই সুযোগে যে যা পেয়েছে কুড়িয়ে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে তাদের দৌরাত্য ও বেশি।  ১৬ই ডিসেম্বর বা তার পর যারা অস্ত্র কুড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে তাদের বলা হয় ১৬ ডিভিশন। এই ১৬ ডিভিশন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অপরাধ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার নামে কলঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা, পাতি নেতারাও নিজেদের স্বার্থে এই ডিভিশনকে ব্যবহার করছে। যেখানে সেখানে দোকান পাট জায়গা জমি দখল করছে। সকলেই আরো সুযোগের সন্ধানে আছে।

সবাই স্বাধীনতার স্বাদ চায়, ভাগ চায়। পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালি ফেরত এসেছে। যে যে বিভাগে কাজ করত বাংলাদেশে এসে সেই বিভাগে যোগদান করল। তারাও স্বাধীনতার ভাগ চায়। পাকিস্তানে কাজ করে বঞ্চিত হয়েছে পদোন্নতি থেকে, সুযোগ সুবিধা থেকে। এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে। সবকিছু পুষিয়ে নিতে চায়। সরকারি বেসরকারি প্রায় প্রতিটি অফিসে চলছে দাবী আদায়ের অরাজকতা। মানুষের অগনিত দাবী। দাবী আদায়ের জন্য সৃষ্টি হল শত শত সংগঠন। পাকিস্তান থেকে যারা ফেরত এসেছে তাদের বলা হল রিটার্নি। রিটার্নিরা বাংলাদেশে এসে এখানকার কর্মরত কর্মচারিদের সাথে একাতœ হতে পারেনি। কারন তাদের দাবী অযৌক্তিক। স্থানীয় কর্মচারিরা মেনে নেয়নি। কর্মচারিদের মাঝে ভাগ হল। একদল স্থানীয় আর এক দল রিটার্নী। এই রিটার্নীরা শুরু করল ঘেরাও কর্মসূচি। প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ঘেরাও করে দাবী আদায় করা। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চলল এই ঘেরাও অভিযান। অযৌক্তিক দাবী আদায়। শত শত ইউনিয়নের জন্ম হল। একা দাবী আদায় করা যায় না। তাই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়। অফিসারস ইউনিয়ন থেকে রিক্সাওয়লা পর্যন্ত ইউনিয়ন। এমন কি যারা বাসা থেকে অফিসে লাঞ্চ নিয়ে যায় তারাও এখন ইউনিয়নের মাধ্যমে দর কষাকষি করে দাবী আদায়ে সোচ্চার। চারদিকে শুধু দাবী আর দাবী। সবাই স্বাধীনতার ভাগ পেতে চায়, স্বাদ পেতে চায়। কিছুদিনের মধ্যে এইসব দাবী জেলাভিত্তিক দাবীতে রুপান্তরিত হল। কে কোন্ জেলার লোক, সেই জেলার বড় সাহেব কে, বা কতজন। জেলা বড়সাহেবরাও নিজের জেলার মানুষকে স্বাদ পাইয়ে দিতে ব্যস্ত। কোথায় দেশটাকে গড়ে তুলবে তা না করে সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ছুটাছুটি করছে।  মনে হয় সবাই এখন জেলাভিত্তিক স্বাধীনতা চায়।

অস্ত্র জমা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতাদের মুখের বুলি পাল্টে গেছে। গলার স্বর বদলে গেছে। এতদিন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলার সময় একটা সমীহ ভাব নিয়ে কথা বলত, এখন নেতাসুলভ কথা বার্তা। দেশটা নেতারা স্বাধীন করেছে, স্বাধীনতার স্বাদ তারাই গ্রহন করবে। তারাই দেশের ভবিষ্যত হর্তাকর্তা। যা কিছু করার তারা এই নেতা পাতি নেতা তস্যু নেতারাই করবে এবং তারাই শুধু তারাই। কোথায় কোন মার্কেটে বিহারির দোকানপাট ব্যবসা আছে, কোথায় কোনখানে বিহারির বাড়ী, জমি জমা ছিল এসব খুজে বের করা এখন নেতাদের কাজ। তাদের হাতে ১৬ ডিভিশন আছে, দখল করা একদম সোজা। কার কোন আতœীয়কে কি দিতে হবে, কার চাকরি কোথায় হবে সব করবে এই নেতারা। সরকারি কোন্ অফিসে কি সুযোগ আছে সে সুযোগ পারে এই নেতারা, তাদের চামচা আর আ্তœীয়স্বজন। ন্যায় অন্যায়ের কোন বালাই নেই। তাদের চাই কড়ি আর সম্পদ। দেশ রসাতলে যাক, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। চুরি আর চুরি। যে যেখানে পারে সেখাইে সিধ কাটছে। এখন আসল মুক্তিযোদ্ধার হাতে অস্ত্র নেই অতএব ধমক দিলেও কিছু করার নেই। মুক্তিযোদ্ধারা যেন এক অসহায় জীব। যদি কোন মুক্তিযোদ্ধা এই নেতাদের দুর্নীতির সামান্যতম উচ্চবাচ্চ করে তাহলে দুদিন পর তার লাশটা পাওয়া যাবে খালের পাড়। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, ’আমার চারপাশে চোর আর চোর।’ 

 বাকশাল কিভাবে পাস হয় তার পর্যালোচনাঃ 


“সংসদের ২ঘন্টা ৫মিনিট স্থায়ী ঐ অধিবেশনে স্পীকার ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল। বিলের বিরোধিতা করে তিনজন বিরোধী ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য ওয়াক আউট করেন। এরা হলেন জাসদের আবদুল্লাহ সরকার, আব্দুস সাত্তার ময়নুদ্দিন আহমেদ ও স্বতন্ত্র সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। আতাউর রহমান খান আগেই সংসদ অধিবেশন থেকে বেরিয়ে আসেন। বিলটি উত্থাপন করা হলে আওয়ামী লীগের দলীয় চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে কোন প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ না দেবার আহ্‌বান জানান। এই পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের জনাব আতাউর রহমান খান বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করে আলোচনার সুযোগ দানের জন্য স্পীকার জনাব মালেক উকিলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু স্পীকার তা নাকচ করে দেন। পরে কন্ঠভোটে চীফ হুইপের প্রস্তাব গৃহিত হয়। ”

আপনি কোন ভাবেই গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে, গণতন্ত্রকে রক্ষার শপথ নিয়ে, এভাবে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন না, এমনকি এই পরিবর্তন নূন্যতম গ্রহনযোগ্য হতে পারে না এ জন্য য, ১৯৭৩ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতিকে এর কোন ইশারা ইঙ্গিত পর্যন্ত দেয় নি, শুধু মাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য এই বিধান জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।

হ্যা, বৈধ ভাবে ও বাকশাল কায়েম করা যেত, যার জন্য অবশ্যই গণভোট আহ্ববান করা উচিত ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করে নি।

অতএব, যারা বাকশালের মহিমার সুর তোলেন তাদের বলছি, বাকশাল হচ্ছে গণতন্ত্রকে পালা ক্রমে ধর্ষণ । তাও আবার ওপেন ধর্ষণ , যারা নূন্যতম গণতান্ত্রিকবোধ নিজের মধ্যে লালন করে, তারা কখনো বাকশালের প্রশংসা করতে পারে না । যে পার্লামেন্ট গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ও গণতন্ত্রের শ্রেষ্টত্ব ঘোষণার জন্য ছিল, সেই পার্লামেন্টে গণতন্ত্র মৃত্যু বরণ করলো । তাই সেই পার্লামেন্টের কাছে আর গণতন্ত্র প্রেমি জনতার কোন চাওয়া ও পাওয়ার কিছুই রইলো না ।
এখন জটিল প্রশ্ন ঐ অবস্থায় কিভাবে বৈধ ভাবে গণতন্ত্র ফিরে আসা সম্ভব ছিল ?

হ্যা দুটি উপায় ছিলো , আর সেগুলো হলোঃ  ১। ঐ কলংকিত পার্লামেন্ট ভুল বুঝতে পেরে লাইনে আসলে ? অথবা  ২। গণঅভ্যুত্থানে বা বিপ্লবে ঐ সরকারের পতন হলে ।
কিন্তু, দুঃখ জনক ভাবে কোনটিই হয় নি ? একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা কারা হয় সপরিবারে, যার মাধ্যমে বাকশালের পর জাতি আবার আরেকটি কলঙ্কের অংশীদ্বার হলো ।
ঐ সময়ে গণঅভ্যুত্থানে মুজিব সরকারকে উৎখাত করাই ছিল গণ মানুষের চাওয়া, যা হলে আওয়ামী লীগ সারা জীবনের জন্য মৃত্যু বরণ করতো কিন্তু তাদের সৌভাগ্য ১৫ ই আগষ্টের নির্মম হত্যা কান্ড তাদের পতিত জন সমর্থনকে স্থায়ী করে ফেলে জাতির বিশাল একটা অংশের মধ্যে ।

এরপর, দেশে শুরু হয় অচলাবস্থা অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থান, এক সময় ৭ই নভেম্বরের সেই সিপাহী-জনতার বিপ্লব সংঘঠিত হয়, প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতা নেন, এখন তার ক্ষমতা আরোহণকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন আসে যে ওনি কি লিজিটিমেট শাসক ? অথচ ওনিই বাকশাল বাতিল করে , দেশে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন ।

এখন, আবারো প্রশ্ন, গণতন্ত্রহীন ঐ অবস্থায় কিভাবে বৈধ শাসক আসতে পারে ???


একটা এথিকাল দিক হলো, ঐ সময় বিচারবিভাগ যদি ঐ সরকারকে সেইফ পাস দেয়, তাহলে তা বৈধ হওয়ার জন্য একটি ইলেকশন করতে পারে । বাস্তবে তাই, হয়েছে ১৯৭৮ সালে একটি সংসদ ইলেকশন হয়, আর সেই সংসদই আবার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনটা গ্রুপ অংশ নিয়েছে , আর সব চেয়ে বড় গ্রুপ ড কামালের নেতৃত্বে ৫৪টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে ছিল । তাছাড়া জাসদ,ন্যাপ, কম্যুনিস্ট পার্টি সহ সব দল ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

এখানেও আবার  লজিকের প্যাচে  জিয়া সরকার কি  অবৈধ  ???
এ জন্য জিয়াকে অবৈধ শাসক বলা হয় যে ওনি কোন বৈধ সরকার ছিলেন না, তাই ওনার দ্বারা কোন নির্বাচন হতে পারে না, কিন্তু নেসেসিটি অব ডকট্রিন অনুযায়ী ঐ অবস্থায় বাকশাল ছোঁড়ে ফেলতে হলে এ ছাড়া কোন উপায় নেই , কারণ ঐ সময় নির্বাচিত সরকারের বাকশালই ছিল সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা ।
আর হ্যা , এখানে কাউন্টারে আরেকটি লজিক দাঁড় করাতে পারি যে “ মঈন--ফখরুদ্দীন কী সাংবিধানিক সরকার ছিল ? ”  এর উত্তরে  না -ই বলতে হবে ।
তারপরও কেন, তাদের নির্বাচনের ফসল আওয়ামী লীগ বৈধ ? কেন ঐ নির্বাচন বৈধ নয়, কারণ তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচার বিভাগ থেকে সেইফ পাস নিয়েছে ।
SO একই লজিকে জিয়াউর রহমান একজন বৈধ প্রেসিডেন্ট এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রে নতুন প্রাণ দানকারী ।

এই স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলার ক্ষেত্রে মুজিব একজন বাতিল মতের প্রবক্তা । ওনি নিজ হাতে ওনার দল ও ওনার সারাজীবনের সংগ্রামী দর্শন হত্যা করেছেন ।

“" আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের পথ দেখানো বাংলাদেশে বাস করি না , আমারা জিয়াউর রহমানের পথ দেখানো বাংলাদেশে বাস করি ।"  বুদ্ধিবেশ্যারা এটা স্বীকার না করলেও কিছু যাই আসে না ।
১। বাংলাদেশের প্রধান দুইটা দল। আওয়ামী- বিএনপি ।
শেখ মুজিবুর রহমান তার দল আওয়ামী লীগকে হত্যা করেছেন, বাকশালের মাধ্যমে , জিয়া সেই দলকে আবার জীবিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

২। শেখ মুজিবুর রহমান সকল-শিল্প কারখানা জাতীয়করন করেছিলেন, মালিকদের বাধ্য করেছিলেন তার নিজের কারখানা জাতীয়করণ করতে, জিয়া এসে বেসরকারি কারখানাগুলো মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেন । সুতুরাং বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতির কাঠামো শেখ মুজিবের আদর্শের ন্যায় নয় বরং জিয়ার চিন্তা ও ধারণার ফসল ।

৩। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা লাভের সবচেয়ে বড় সেক্টর রেমিটেন্স যার ৭০ ভাগ আসে মধ্য-প্রাচ্যের দেশ থেকে যার সুচনা হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের একান্ত চেষ্টায় ।

৪। স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক এগুলো জিয়াউর রহমান চালু করেন ।

৫। শেখ মুজিবের তৈরী বাংলাদেশ চলছে জিয়াউর রহমানের দেখানো পুঁজিবাদি মিশ্র অর্থনীতির চাকায় ।

আজকের, " এই বাংলাদেশে শেখ মুজিবের সংগ্রামের ফসল হলেও  তা কিন্তু চলছে জিয়াউর রহমানের দেখিয়ে দেওয়া পথে ।  একি লজ্জা !!!  জাতির জনকের চিন্তা-চেতণা, তার সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশে আজ বাতিল ”

জাতির পিতা তত্ত্বঃ 


আমি, শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বলি না , ইসলামিক মৌলবাদীদের  মত ইব্রাহিম ( আ) এর যুক্তিতে নয়, আহমদ ছফার যুক্তিতে যার জন্য তাকে আওয়ামী লীগ মৃত্যুর পর বুদ্ধিজীবি গোরস্থানে দাফন করতে দেয় নি ।

ছফা: আমি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে যাব কোন দুঃখে? তোমার বাবাকে পৃথিবীর সমস্ত লোক বাবা ডাকলেও আমি ডাকবো না, তাঁকে অনেকে জাতির পিতা বলে থাকেন, আমি বলি না । তার একটাই কারণ আর সেটা হলোঃ " আমি মানি এবং মনে করি মুক্তিযুদ্ধ আমার মা । "
আমীন:  তা হলে পিতা কে ?
ছফা: " সময় ।"  সময়ের দাবি এবং পাকিস্তানীদের কার্যকলাপ। ৪৭ এর পর হতে দেশের উদরে জন্ম যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, যা ১৯৭১ এর মার্চে প্রসব বেদনায় প্রদীপ্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে।"
বইঃ আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি,  লেখক: মোহাম্মদ আমীন, সেখানের একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।

[caption id="" align="aligncenter" width="468"] যে ভালবাসা মানুষ জিয়াউর রহমানকে তার মৃত্যুর পর দেখিয়েছে , এর লাখ ভাগের এক ভাগও শেখ মুজিবের কপালে জুটে নাই । - - নির্বাক গণতন্ত্র [/caption]

পরিশেষে বলি, শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালির একজন শ্রেষ্ট সন্তান, ওনি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জাগিয়ে তুলেছেন, কিন্তু ওনিও একজন মানুষ তারও ভুল আছে, ওনি পূজনীয় ও সমালোচনার উর্ধ্বে এমন কোন ব্যক্তিত্ব নন । ওনাকে সম্মান করি । ঠিকই একই ভাবে জিয়াউর রহমানও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়, কিন্তু আমরা কিছু কিছু লোক শেখ মুজিবকে এমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যাই যা রীতিমত ধর্মীয় আবেগকে হার মানায় । 

লেখাটির বিষয়বস্তু (ট্যাগ / কি-ওয়ার্ড): শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দেননিআওয়ামী ইতিহাসবিদদের বানোয়াট কাহিনী  ;






মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যে ও আওমিলীগের ইতিহাস বিকৃতি !






আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গর্বের মুহূর্তগুলো শুরু থেকেই তোপের মুখে পড়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের। তারা এসব নিয়ে গল্প বানায়, গল্প লেখে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে। শুরু হয় ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন দিয়ে, শেষ হয় আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে ওসমানী কেনো আসেননি বলে। এসব অপপ্রচারের প্রতিটির তথ্যপ্রমাণসহ দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়া দলটির উত্তরসূরীরাও একইরকম বিকৃতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। কথাটা বলছি মুজিবনগর কমপ্লেক্সের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের একটি ভাস্কর্য প্রসঙ্গে।mujibnogor-1দেখা যাচ্ছে মিত্রবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল জগৎসিং অরোরা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পুর্বাঞ্চল প্রধান লে. জেনারেল এ.কে নিয়াজীর সঙ্গে ওই টেবিলে তৃতীয় একজন উপস্থিত ! কে এই ব্যক্তি, আমাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তার কি ভূমিকা! সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে ঠিক ওইরকম একটা ছবির ফটোশপ ভার্সন দেখার দূর্ভাগ্য আমার হয়েছিলো এক পাকিস্তানী ফোরামে। সেখানে বলা হয়েছিলো ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পাঠানো একজন প্রতিনিধির সামনে এই আত্মসমর্পন করেছেন নিয়াজী, আত্মসমর্পনের শর্তগুলোও তিনিই ঠিক করে দিয়েছেন। অথচ ইতিহাস ও তার উপাত্ত বলে ঠিক ওই জায়গায় মাটিতে হাটু গেড়ে বসেছিলেন একজন সাংবাদিক !


আমাদের আলোচিত ছবিটির অবস্থান ওই বাংলাদেশের মানচিত্রেই। সেখানে নানা ধরণের ঘটনার শৈল্পিক রূপ দেওয়া হয়েচ্ছে ভাস্কর্যে। কিন্তু এই নির্দিষ্ট ভাস্কর্যটি তৈরির জন্য কী উপাত্ত ব্যবহার করেছেন এর নির্মাতারা? এখানে তৃতীয় চেয়ার আসলো কোথা থেকে? ওই চেয়ারে বসা কে?muijibnogor-2উনি আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবর রহমান । কি দরকার এতো বড় মিথ্যাচার করার ? উনি পাকিস্থান থেকেই বাংলাদেশে ফেরত আসেন ১৯৭২ সালে ।  পোস্টে ১৭ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত খবরের কাটিং এবং মূল ছবিটি সংযুক্ত করা হলো যেখানে তৃতীয় চেয়ার বলে কিছু নেই; সেখানে সেই সাংবাদিকটি মাটিতে হাটুগেড়ে বসে আছেন বলে দেখা যাচ্ছে।




নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত খবরের কাটিং এবং মূল ছবিটি সংযুক্ত করা হলো যেখানে তৃতীয় চেয়ার বলে কিছু নেই; সেখানে সেই সাংবাদিকটি মাটিতে হাটুগেড়ে বসে আছেন বলে দেখা যাচ্ছে।

স্বাধীনতার ইতিহাস এবং এর বিকৃতিতে স্বঘোষিত মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগে সবার উপরে। এর কারন হিসেবে ধরা যায়, - আওয়ামিলীগাররা তাদের ঐতিহাসিক লজ্জা ঢাকতেই বাকশালের বৈশিষ্ট্য এবং বাকশালের কেতাবি মহিমা এবং  স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বপ্রকারের ঐতিহাসিক দলিল কাটাছেড়া করে নিজেদের মনগড়া মতো বিকৃতভাবে প্রচার করে থাকেন । মুজিবনগর কমপ্লেক্সের মতো এমন অসাধারণ উদ্যোগে ও  মারাত্মকভাবে ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়েছে । তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে যথাযথ অনুসন্ধান হবে এবং প্রকৃত ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরা হবে । যে বা যারা আমাদের ইতিহাস জানে না, তার বা তাদের কোনো যোগ্যতা নেই আমাদের ইতিহাসের স্মারক স্থাপনায় যুক্ত থাকার । স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক সময়  উনারা ছিলেন দাদাদের মেহমানখানায় বাঈজী মনোরঞ্জনে। তাই তাদের উপযুক্ত স্থান বাবুদের ঐ বাঈজী পাড়াতেই থাকা উচিত ।  



শেখ মুজিবের পতন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকায় তৎকালীন বিশ্লেষন





শেখ মুজিবের পতনের কারন কি? এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগ কখনো তার অবস্থান পরিস্কার করেনি। জাতির সামনে যে প্রোপাগান্ডাটি অনবরত চলতে থাকে তা হল কতিপয় বিপথগামী সেনা অফিসারের ক্যুতে শেখ মুজিব নিহত হয়?

স্বাধীনতা পূর্ব নেতা মুজিব কে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর মুজিবকে কোন অবস্থাতেই আমি একজন নেতার আসনে বসাতে পারিনা। সেটা যতটা না মুজিবের অন্যায় আর অবিবেচক সিদ্ধান্তের জন্য তার থেকে তার চারপাশের চাটুকারদের জন্য।

মুজিবের আশেপাশে যত চাটুকার ছিল তারা ব্যাক্তি মুজিবকে একটা “মহাপুরুষ” এর আবরন দেবার চেষ্টা করছিলো আর ব্যাক্তি মুজিব তোষনকারীদের পছন্দ করত। তো এই মহাপুরুষের আবরনটা এমনই ছিল যে কেউ কোন অন্যায় করে শুধু মুজিবের নাম বললেই সেই অন্যায় জায়েজ হয়ে যেত। মুজিব হয়ে উঠেছিল “পরশ পাথর”।

অথচ ব্যাক্তি মুজিব ছিলেন দোষে গুনে মিলিয়েই মানুষ। হ্যা এটা অস্বীকার করার উপায় নেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাক্তি মুজিব এক বিরাট প্রভাব রাখছে। মানুষ ও তাকে সেই ভাবে শ্রদ্ধা করছে। কিন্তু সেই প্রভাব স্বাধীনতা উত্তর কালে অন্যায় ভাবে মানুষের দূর্বিষহ যন্ত্রনা দিয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ সেটাতো ভুলে নাই।

কেন একজন অসাধারন নেতা যার কথায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল অথচ চার বৎসরের মাথায় তার মৃত্যুতে মানুষ কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে? এনিয়ে সামাজিক ইতিহাসবেত্তাদের অনেক কিছু গবেষনার আছে। একটা অসাধারন ক্রস সেকশান হতে পারে ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতাদের সামনে অথচ বর্তমানে সেই চল্লিশ বছরের পুরানো ভূত আবারো আমাদের মাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যেটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা।

আসলেই কি শেখ মুজিব হত্যাকান্ড কি কতিপয় সেনা অফিসারের আক্রোশ? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে দেশের সাধারন মানুষদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? ততকালীন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কি ভাবে নিয়েছিল শেখ মুজিবের হত্যাকান্ড?

প্রথমে আমরা তাকাই দেশের ভেতরে। আপনারা জানেন ততকালীন বাকশালী নজরদারীতে মাত্র ৪টি পত্রিকা প্রকাশিত হোত। এরমধ্যে অন্যতম হল দৈনিক ইত্তেফাক।

আগষ্ট ১৭, ১৯৭৫ সাল ইত্তেফাকে পরিস্কার বলা আছে মুজিব হত্যায় মানুষজন স্বস্ত্যির নিঃশ্বাস ফেলছে এমন কি মানুষজন কোলাকুলি ও করেছে। 

আসুন দেখি বিদেশী পত্রিকাগুলো কি লিখছে মুজিবের পতন সন্মধ্যে? হংকং থেকে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিকমানের সাপ্তাহিক হোল “ফার ইষ্টার্ন রিভিউ”। এর ২৯ আগষ্ট সংখ্যায় শেখ মুজিবের পতনের কারন নিয়ে বিশ্লেষন করা হয়েছে।

সেখানে পরিস্কার লেখা আছে অহং সর্বস্ব কর্তৃত্ববাদ, ব্যাক্তিগত অতিরিক্ত ক্ষমতার মোহ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী নিরসনে অক্ষমতা শেখ মুজিবের পতন ডাকিয়া আনে। এই পত্রিকায় আরো বলা আছে, স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৭৫ সালের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে শেখ মুজিব যে আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে সে আসনের তিনি উপযুক্ত না। এমনকি পাকিস্তানী শাষনের আড়াই দশকেও এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি, দূর্নিতি কালোবাজারী সংস্কৃতি দেখা যায়নি। দৃশ্যতঃ তিনি তোষামোদে নন্দিত হয়েছিলেন বাহ্যিক ভূমিকায় তুঙ্গে উঠেছিলেন। উপরে তিনি কর্তৃত্ব দেখালেও ভেতরে তিনি ছিলেন অন্তঃসার শূন্য।

ফার ইষ্টার্ন রিভিউয়ের মতে প্রথমতঃ তাহার অতিরিক্ত ব্যাক্তিগত ক্ষমতার মোহ ছিল, দ্বিতীয়তঃ তাহার একটি হীনমন্যতা ছিল তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবজাত, তৃতীয়তঃ বাংলার বুদ্ধিদীপ্ত তর্কবাজ বুদ্ধিজীবিদের সাথে শেখ মুজিব কখনো সহজ হতে পারেনি, প্রাজ্ঞ আমলাদের সহিত ও তিনি কখনো স্বাচ্ছ্যন্দ অনুভব করেন নি। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। মুজিব নিহত।

ডেইলি টেলিগ্রাফ

১৬ ই আগষ্ট লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলী টেলিগ্রাফে মুজিব হত্যা নিয়ে বলা আছে সেনাবাহিনীর প্রতি শেখ মুজিবের অনাস্থা এবং নিজের ক্ষমতা সংহত করার উদ্দ্যেশ্য ব্যাক্তিগত বাহিনী পোষন ই শেখ মুজিবের নিহত হবার প্রধান কারন। ওই একই আর্টিকেলে শেখ মুজিবকে শোচনীয় রকম দূর্বল শাষক বলে অভিহিত করা হয়েছে। আরো বলা আছে চোখের সামনে তাহার পার্শ্বচরদের এবং দেশ ব্যাপী চরম দূর্নিতীর সাথে আপোষ ও মুজিব পতনের অন্যতম কারন।

গার্ডিয়ান
১৬ই আগষ্ট গার্ডিয়ান লিখেছে, মান্ধাতা রাজনীতিকদের মত হীন ধূর্ততা শেখ মুজিবকে তলিয়ে দিয়াছে। নিজের মর্যদা পূনোরুদ্ধার এবং পরিস্থিতি অনুকূলে আনার উদ্দ্যেশ্য একচেটিয়া ক্ষমতার দাপট ও বামপন্থার পায়তাড়া মুজিব পতনের কারন হিসাবে এই পত্রিকাটি দেখিয়েছে।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হবার পর ১২০০ কোটি পাউন্ড ষ্টার্লিং বৈদেশিক সাহায্য পাবার পরও দেশে দূর্ভিক্ষ আর দূর্নিতীবাজ চাটুকারদের দ্বারা পরিবৃত শেখ মুজিব অন্ধের মত তাদের সাপোর্ট দেয়া তার পতনকে ত্বরান্বিত করে।

সবশেষে গার্ডিয়ান লেখে, মুজিব তার দেশের নিকট অনেক অঙ্গীকার দিয়েছেন কিন্তু কার্যকরী করেছেন খুব কম।

সানডে টাইমস

সানডে টাইমসের ১৭ই আগষ্ট ১৯৭৫ এ এ্যান্থনী মাসকারেনহাস লিখেছেন চার বছরের মাঝে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গশত্রুতে পরিনত হয়েছে। তিনটি কারনে মুজিবের পতন হয়েছে

এক, নিজে সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হয়েও সেনাবাহিনীর সাথে বিমাতাসূলভ আচরন, এক্ষেত্রে তিনি মেজর ডালিমের স্ত্রীকে শেখ মুজিবের অনুচর গাজী গোলাম মোস্তফা কৃত অপমানের কথা উল্লেখ্য করেন। মেজর ডালিমের স্ত্রীকে গাজী গোলাম মোস্তফার ভাই নিগৃহিত করলে প্রতিশোধ স্পৃহায় তিন ট্রাক আর্মি অফিসার গাজীর বাড়ী ঘেরাও করে। গোলাম মোস্তফা জানের ভয়ে শেখ মুজিবের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

সেখানে মেজর ডালিম উপস্থিত হলে তুমুল কথাকাটির পর মেজর ও তার স্ত্রীকে ছাড়িয়া দেবার আগে মুজিব জওয়ান দিগকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য চরম গাল মন্দ করে এবং পরে নয়জন অফিসার কে বরখাস্ত করে।

দ্বিতীয় কারনঃ ইসলামের অমর্যদা, ১৯৭২ সালের প্রনীত সংবিধানে ইসলাম কে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত দেয়া হয়নি। “হাজার মসজিদের নগরী” র বাসিন্দাদের প্রানের দাবী ছিল ইসলাম হোক রাষ্ট্রীয় ধর্ম।

তৃতীয়তঃ মুজিব জনগনের নিকট আকাশ কুসুম প্রলোভন দিত। এ প্রসঙ্গে আদমজী জুট মিলে বেতন দেবার ব্যাপারটি এ্যান্থনী মাসকারেনহাস উল্লেখ্য করেন। এই বেতন দেয়া প্রসঙ্গে জাতিসঙ্গের এক কর্মচারী মন্তব্য করেন, “বঙ্গবন্ধুই বলে দিতেন আজ রোদ উঠবে না বৃষ্টি হবে”। 

মুজিব নিজের কফিনে নিজের শেষ পেরেক ঠুকেন পার্লামেন্টারী পদ্ধতি বিসর্জন দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি ও সোভিয়েত ক্যাডার পদ্ধতির এক বিচিত্র মিশ্রনে বাকশাল নামে একদলীয় শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তন।

এই লেখা কোন মতেই ব্যাক্তি মুজিবকে খাটো করার উদ্দ্যেশ্য না। এ লেখার প্রতিটি লাইন রেফারেন্স দেয়া আছে। ব্যাক্তি পুজা বাদ দিয়ে আমাদের বাস্তবের দিকে নজর দিতে হবে। জানতে হবে কেন মুজিবের মত নেতা ৪ বছরের মাথায় নৃষংশ ভাবে নিহত হয়েছিল।

দুঃখ জনক হলেও সত্যি ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আর ইতিহাসের পূনারাবৃতি এভাবেই ঘটে। শেখ মুজিবের পতন এর কারন গুলো বিশ্ব প্রচার মাধ্যম যেভাবে বিশ্লেষন করেছে সেই একই ভূল এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা করছেন।

জানিনা এর শেষ কি ভাবে হবে। তবে এখন আর সেই জমিদারীর যুগ নেই রাজার ছেলে রাজা হবে। মানুষ যোগ্য নেতৃত্ব দেখতে চায়। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন মানুষ ছিল এক রকম অন্ধ। মাইক ছিল শুধু উনার হাতে। উনি যদি বলতেন সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠছে আমদের বিশ্বাস করতে হোত যে সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠছে।

এখন মাইক আমাদের হাতেও আছে। সেই সব বেদ বাক্য বিশ্বাস করার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন বলতে পারি সূর্য পূর্ব দিক দিয়ে ওঠে।

আর হ্যা যত তাড়াতাড়ি শেখ হাসিনা listening to the wind হবেন তত তাড়াতাড়ি উনার জন্য মঙ্গল আমাদেরও মঙ্গল। গোয়ার্তুমি করবেন না। আপনার গোয়ার্তুমিতে শুধু আপনার না দেশের ও অমঙ্গল।

নিজে বাচুন আমাদেরও বাচতে দিন। আর আপনার পিতাকে নিয়ে আপনার লোকজন যত কম মিথ্যাচার করবে তত মঙ্গল হবে। মান কিন্তু আপনার বাবার যাচ্ছে যখন মিথ্যা প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। একজন জাতীয় নেতার সন্মান রক্ষার্তে দয়া করে পর্নোগ্রাফির লেখক কে দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করবেন না। আপনার কাছে কোনটা বড় আপনার বাবার সন্মান নাকি আপনার ক্ষমতার মোহ?

প্রত্যেক জাতীয় নেতাকে তার তার যোগ্য সন্মান দিতে শিখুন। দেখবেন সবাই আপনার বাবাকে যোগ্য সন্মান দেবে। জোর করে সন্মান আদায় করতে হবে না ।

 


"শেখ মুজিবের প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায়"



বোধহয় ১৯৭৩ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন। যে বিশাল জনসমর্থন আর ভালবাসা নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন তা ফিকে হয়ে আসছে। রাজনীতির মাঠ এবং সংসদ কোন ফ্রন্টেই স্বস্তিতে ছিলেন না। একদিকে মাওলানা, অন্যদিকে ইনু, মিনু, রব, মতিয়াদের রণহুংকার, পাশাপাশি গাজী গোলাম মোস্তফার ঔরসে জন্ম নেয়া চাটা আর লুটেরার দল, কোনটারই সুরাহা করতে পারেননি তিনি। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি বুঝে গিয়েছিলেন অঙ্গুলি হেলনে জাতিকে নাচানো আর ক্ষমতার মসনদে বসে দেশ চালানো এক জিনিস নয়। ৭৪ সালের শুরুর দিকে বুঝাই যেত না দেশে কোন প্রশাসন আছে। পরাধীন জাতি হিসাবে এ দেশের মানুষ যা দেখেনি তাই দেখতে শুরু করল স্বাধীনতার উষালগ্নে। হত্যা, গুম, খুন আর লাশের মিছিল। শতকার ৯৯ ভাগ জনসমর্থন হয়ত ৮০-৮৫ ভাগে নেমে এসেছিল। তিনি সহজ ভাবে নিতে পারেননি নিম্নমুখী এই যাত্রা। আজকের জাদরেল মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের হাতে ধরেই রচিত হয় কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনার পর্ব। অভ্যুদয় হয় নতুন এক বাহিনী...রক্ষীবাহিনী।




[caption id="" align="alignnone" width="625"] সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ রইলো[/caption]

কন্যা হাসিনার মত বাবা শেখ মুজিবও রাতের অন্ধকারে পাঠাতেন তাদের। মধ্যরাত অথবা শেষরাতের দিকে দরজায় কড়া নাড়ত। খুলতে দেরি হলে হায়েনার উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পরত। পরের ইতিহাস জানতে খুব গভীরে যেতে হবেনা আমাদের। আজকের শেখ হাসিনা উনার বাবারই কার্বন কপি। বুক হতে সন্তানকে নামিয়ে ওরা চোখ বেধে গাড়িতে উঠাত। তারপর মিলিয়ে যেত রাতের অন্ধকারে। পরদিন বেওয়ারিশ লাশের তালিকায় যুক্ত হত নতুন একটা লাশ। উচ্ছিষ্ট খোর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর দল বলতো, ওহ! উনি তো সবার পিতা, তাই একটু শাসন করছেন মাত্র। কিন্তু হায়, এ শাসন বুক খালি করে দিত হাজারো মায়ের। স্ত্রীকে করতো স্বামীহারা, পিতাকে করতো সন্তানহারা। আজকের মত সেদিনও কাউকে কাঁদতে দেয়া হতোনা। পিতার থানা-পুলিশ সন্তানদের জন্য ছিল নিষিদ্ধ। ৭৫'এর শুরুর দিকে জাতি হঠাৎ করেই বোবা বনে যায়। অনিশ্চিত স্তব্ধতায় থেমে যায় জনজীবন। ততদিনে দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে ইস্যু করা হয়ে গেছে জাতি ধর্ষনের স্থায়ী লাইসেন্স । তাও সেই পিতার হাত ধরেই। কন্যা শেখ হাসিনার মতই সমালোচনা হজম করার উদর নিয়ে জন্ম নেননি পিতা শেখ মুজিব। কলমের এক খোঁচায় গোটা দেশ হজম করার আইন করেছিলেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের মুখে এবার বেজে উঠে নতুন সুর, আহ! এ যে সমাজতন্ত্রের নতুন সূর্য!


পচাত্তরের হত্যাকারীরা অন্তত একটা উপকার করে দিয়ে গেছে শেখ পরিবারের জন্য। একজন ব্যর্থ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে অমর করে দিয়ে গেছেন চিরদিনের জন্য। বাকশাল নিয়ে পিতা শেখ মুজিব যে পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন তার শেষ গন্তব্য ছিল ভাগার। যারা বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তাদের জিম্বাবুয়ের এক কালের পিতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের জীবন কাহিনী পরে দেখার অনুরোধ করবো।




® লেখকঃ নির্বাক গণতন্ত্র                      © All Rights Reserved By: AR.Mukul Photography™ 


আমি রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে হয়তোবা  নিরপেক্ষ নই , তাই বলে তথ্য বিশ্লেষন এবং তথ্য গুলোতে পক্ষপাত দুষ্টতার কোন সুযোগ নাই। কারন বংগবন্ধুর অন্ধ ভক্ত ব্লগারদের  ব্লগকে রেফারেন্স হিসাবে নেয়া হয়েছে। -   ধন্যবাদ  সবাইকে ।।



No comments:

Post a Comment

Thank you very much.