পঁচাগলা রাজনীতির ছোট্ট কিছু কবিতা
মালা জপে
চোখ দুটো খোলা আছে তবু তারা অন্ধ
নাকে ঘ্রাণ লাগে ঠিক পায় না তো গন্ধ!
দিন আসে দিন যায় আরো দিন আসবে
পোড়া লাশ আরো পেলে খুশি হয়ে হাসবে!
তারা চায় গদি পেতে লাশ হোক সব্বাই
দু’জনেই মালা জপে গদি চাই, গদি চাই!
কেউ নেই নিরাপদ
লাঠিসোটা দিয়ে তারা কত গাড়ি গুঁড়িয়ে
পেট্রোল বোমা মেরে আগুনেতে পুড়িয়ে
একে একে কত প্রাণ, করেছে যে বধ।
সেই তারা এই ভাবে করে দেশে বিচরণ
দেশটাকে ডুবাতেই চালাচ্ছে এই রণ !
মানুষতো নয় এরা, খ্যাপা সব শ্বাপদ।
আমাদের প্রিয় দেশে আজ কেউ ভালো নেই
যে আঁধার জেঁকে আছে তাড়ানোর আলো নেই!
আঁধারের এই দেশে, কেউ নেই নিরাপদ।
পঁচাগলা রাজনীতি
দলে দলে দ্বন্দ্ব পথে চলে সংঘাত, জনতার উদ্বেগ সারাদিন সারারাত।
প্রতিদিন রাজপথে লাশ শুধু পড়বে !
এইদেশে কেউ নেই রাশ টেনে ধরবে?
দাউ দাউ দেশ পুড়ে কপালটা মন্দ !
শ্বাস টেনে শ্বাস ফেলে পাই পোড়া গন্ধ।
পঁচাগলা রাজনীতি আজ করো বন্ধ
দেশে থেকে দূর হোক লাশ পঁচা গন্ধ।
নষ্ট সমাজ
এই হয়েছে, সেই হয়েছে ,সব হয়েছে যথেষ্ট;
যেদিক চাই আঁধার পাই, নাইতো আলো স্পষ্ট।
এই যে সমাজ- নষ্ট সমাজ, মেয়ে হয়ে যায় ভ্রষ্ট
মা বাবাকে খুন করতে, হয়না যে তার কষ্ট !
যাচ্ছে সমাজ যাচ্ছে কোথায়, কেউ জানি কী ঠিক?
যেই সমাজে ভ্রষ্ট বানায়, জানাই তাকে ধিক্।
গণতন্ত্র রক্ষা
জাহাঙ্গীর আলম
কবিতার নামঃ “চিরচেনা সেই নাটক”
® কবিঃ আসিফুজ্জামান রুমন © (A.Z.R)
একটি ছোট পাখি ছিল - একটি ছোট্ট খাঁচায় বন্দী,
মুক্তি পেতে চাইছে সে - করে কারো সাথে সন্ধি।
হঠাৎ একদিন খাঁচা হতে - গেল সে উড়ে,
এই খবরে তোলপাড় - ঘটল দেশ জুড়ে।
সরকারীদল বলল - “পাখিটি চায়নি কখনও উড়তে
চায়নি পাখি নিজ ইচ্চায় - খাঁচা ত্যাগ করতে।
খাঁচা ত্যাগ করাতে - কেউ করেছে ষড়যন্ত্র
বিরোধীদলই পড়িয়েছে - পাখিকে কোন মন্ত্র।“
বিরোধীদল বলল - “সরকার মিথ্যে কথা বলেছে
সরকারীদলের বর্বরতাই - পাখিকে উড়তে বাধ্য করেছে
সরকারী দলই বাজিয়েছে - এই পাখি উড়ানোর সানাই
আমরা এই ঘটনার ধিক্কার - ও তীব্র নিন্দা জানাই।“
বলল এরশাদ - “পাখি খাঁচায় থাকবে বন্দি
এভাবেই শুধু শুধু - পাখি তো উড়বেই
না উড়লে সবাই মারবে পাখিকে থুথু।
পাখিটি ধরা পরলে - আমি গলফ খেলতে চলব
আর ধরা না পড়লে - আমি কিন্তু আত্মহত্যা করব।"
সুরঞ্জিত বলল - “পাখি কি এভাবে পারে যেতে
নিজের খাঁচাটি ফেলে, - যারা ঘটিয়েছে এই ঘটনা
তাদের পাঠানো হবে জেলে।
নির্বাচন বানচাল করতেই - কেউ পাখিকে দিয়েছে পাম
তবে আমার নিজস্ব ধারনা - এটা কোন কালো বিড়ালেরই কাম।“
ফখরুলও বলে - “পাখি উড়ানোর ঘটনা
সবই সরকারের সাজানো নাটক,
বিনা কারনে করছে তারা - মোদের দলের লোকদের আটক।
তারা নিজেরাই ছেড়েছে পাখি - আর দোষ দিয়েছে মোদের চাপিয়ে
আন্দোলনের এমনই ঝড় বইবে - যা দেশকে দিবে কাঁপিয়ে।“
র্যাব বলল - “পাখিটি খোজার জন্য
তদন্ত কমিটি গঠন করেছি
এই ব্যাপারে আমরা - কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছি
পাখিটি সুস্থ থাকলে - তাকে ধরে ফেলব জালে
আর অসুস্থ হলে নেব - এ্যাম্বুলেন্সে সি,এম,এইচ হাসপাতালে।
পাখিকে ধরেই খাঁচায় দিব - আর পাবে না কোন ফাঁক
কারন খাঁচার চারপাশে দিয়ে দিচ্ছি - বালু ভর্তি ট্রাক।“
ক্ষেপে বলল মুহিত - “রাবিস পাখি!! কেন গেল খাঁচা ছেড়ে
খাঁচায় ছিল কি খাবারের অভাব,
তার স্টুপিট স্বভাবের কারনে - পরবে অর্থনীতির উপর প্রভাব।
ঐ ননসেন্স পাখি ধরা পড়লেই - হবে গোপন খবরটি ফাস
আর ধরা না পড়লে করব না আমি - এবারের বাজেট পাশ।“
খোকার বানী - “অবরোধ সফল করতেই
পাখি গিয়েছে খাঁচা ছাড়িয়া
আর মখা'র বানী -
খাঁচা ধরিয়া নাড়াচাড়া করায় - গিয়াছে পাখি উড়িয়া।“
বলল আশরাফ - “পাখির ব্যাপারে নেই আমার
কোনই মাথা ব্যাথা,
৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে সরকার - এটাই আসল কথা।“
রিপোর্টারগন এনেছে ঘটনায় - পান্তা ভাতে ঘি
তখনই মুন্নি সাহার প্রশ্ন - “আপনার অনুভূতিটা কি?”
জনগণ বলল -
“পাখির উড়িয়া যাবে - কখনও চিন্তাও করি নাই
দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে - ঐ পাখির সুষ্ঠু বিচার চাই।“
গণজাগরণ মঞ্চ উঠল বলে -
“বেইমান পাখিকে খাঁচায় ফেরাও - নয়তবা করব লাঠি মিছিল
ও হইবে খাঁচা ঘেরাও।“
হেফাজত বলল -
“হয়ত পাখি কোনভাবে - খাঁচাটি খোলা পেয়েছে
তবে মোদের ধারনা সুযোগ পেয়ে - পাখি হয়ত তেতুল খেয়েছে।“
নির্বাচন কমিশন বলল - “আমাদের কিছুই করার নাই,
নির্দিষ্টদিনেই পাখি পাবে আঁধার - কোন বিকল্প পাবে না ঠাই।“
পাখি উড়ার বিষয়টি গিয়েছে - পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে,
তারাও সংসদে জানাল ধিক্কার - নিন্দা প্রস্তাব পাশ করিয়ে।
এসব এলাহি কান্ড গেল ঘটে - ছোট্ট পাখিকে ঘিরে,
পড়ে ছোট্ট পাখিটি বিরক্ত হয়ে - খাঁচাতেই আসল ফিরে।
এরকম পাখির ঘটনা ঘটছে নিয়ত - যা দেখছি ঘরে বসে,
রাজনীতির একই নাটকের বিবর্তনে - বিরক্তি যাচ্ছে মনে পুষে।
কবিতার নামঃ ""আমরা বাঙালি""
কবিঃআসিফুজ্জামান রুমন (A.Z.R)
আমরা বাঙালি,
টি.ভি দেখতে করি মোরা রিমোট টানাটানি
গোপন কথা গোপন বলে করাই জানাজানি,
বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে করি শুধুই কানাকানি
বিয়ে খাওয়ার পর আর মোদের হয় না থামাথামি।
বিল মোরা হাতে-নাতে ঠিক সময়ই পাই
তবুও পরিশোধ করতে দেখে-শুনে শেষ দিনেই যাই,
বিল দিতে গিয়ে যখন হয় এক লম্বা লাইন দেখা
তখন পাশ দিয়ে এঁকে দেই এক নকল লাইনের রেখা।
আমরা বাঙালি, নিজে না বুঝলেও পারি - অন্যকে বুঝিয়ে বলতে,
অনেকে পাশের বাড়ীতে ময়লা ফেলি - কিন্তু পারি না সভ্যতা বজায় চলতে।
কারো মন্দ খবরটি ইচ্ছে করে জানাই সবখানে
কিন্তু ভাল খবরটি শত চেষ্টায়ও যাবে না মোদের কানে,
কিছু ভাল হলে বলি হয়েছে নিজেরই অবদানে
ভাল না লাগলেও তালি দেই ইভা রহমানের গানে।
আমরা বাঙালি,
দেশের বিশেষ অনুষ্ঠানে মোরা ভারতীয় শিল্পী আনি
যদিও ভারতে মোরা পাব না ডাক, তা ভালভাবেই জানি,
এইতো আয়ূব বাচ্চুর গানে মোরা দেই না হাততালি
কিন্তু এ.আর.রহমানের গানে সবাই করি ফালাফালি।
মুখে বলি- মনটা আমার দেশপ্রেমের আড়ত
আর ক্রিকেটে থাকে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য দরদ,
এখন বাংলা বাদে হিন্দি গান গায় নৌকার মাঝি
আর আমরাও তো সুযোগ পেলেই ঐ লুঙ্গি ড্যান্সই নাচি।
আমরা বাঙালি,
বর্ডারে নির্বিচারে খাই গুলি, যদিও বি.জি.বি দেয় পাহাড়া
আর জার্সিতে নাম দেশের বদলে বড় করে “সাহারা”,
নিরাপত্তার আসল সময়ে পাওয়া যায় না নিরাপত্তার কোন ডাক
অসময়ে নিরাপত্তা দিয়ে যায় এখানে পুলিশ, র্যাব ও বালু ভর্তি ট্রাক।
হিন্দি চ্যানেলগুলো করে ফেলেছে বাংলা চ্যানেল দখল
মজা করে, চুপ করে দেখে যাচ্ছি মোরা সকল,
বাংলা গানের ঐতিহ্যে নেমেছে আলো থেকে আন্ধার
তবুও রুনা লায়লা যাচ্ছে গেয়ে- "দামা দাম মাস্ত কালান্দার।"
আমরা বাঙালি,
বাংলা সিনেমা দেখি না বেশি দিলেও কেউ ফ্রী
তবে দেখার জন্য নিয়ে আসি কিনে ধুম-থ্রী,
এভাবে চলতে থাকলে বাঙালির ঐতিহ্য হয়েই যাবে প্লাবন
ঐতিহ্য রক্ষায় করতে হবে এখনই অনুধাবন।
মানবতার অবগাহন
তারপর একটা বিভক্তির দেয়াল আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে
ভাগাভাগি আমরা, মানুষ আর অমানুষ
মানবতা আর হিংস্রতা, মনুষ্যত্ব আর পশুত্ব
বিভেদের এই দেয়াল ভাঙবে কি এই কঠোর পদাঘাতে?সভ্যতার অসভ্যতার দিকে তাক করা
নূপুর কন্যার নূপুরের শিঞ্জন আকাশে বাতাসে
শব্দ তরঙ্গের খেলায় তার অনুরণন ক্রমান্বয়ে বিস্তৃতির চাদরে
কর্ণযুগলে শব শব্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ, নূপুর কন্যার জানা ছিল না।
এই চরণ প্রতিবাদ, লাভ লোকসানের আন্দোলন, আর
আবেগী সভা সেমিনার বক্তৃতার মাঝে কিছু সময় ঠাই নিয়ে
হারিয়ে যাবে কালের গহ্বরে অন্য কোন নূপুরের ঝংকারে।
নগ্ন মুখগুলো তারপরেও মগ্ন আবিষ্ট চিত্তে
মানবতাকে ভগ্ন করার শত সহস্র কারসাজী নিয়ে
স্বার্থ চরিতার্থের নেশায় মত্ত তারা লোভের উন্মাদনায়
সবার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জৌলুসের বেসাতী ক্রয় বিক্রয়ে।
হাতের তালুতে শত রেখার কাটাকাটি
ভাগ্যের সাথে দুর্ভাগ্যের, পাওনার সাথে দেনার
জ্ঞানের সাথে মূর্খতার, সুখের সাথে অসুখের
মিলনের সাথে বিরহের, জীবনের সাথে মৃত্যুর।
নূপুর কন্যার পদতলেও কিছু রেখার কাটাকাটি আছে
ঘামের সাথে শ্রমের, পরিশ্রমের সাথে পারিশ্রমিকের
মেহনতের সাথে প্রাপ্তির, শোষকের সাথে শোষিতের
সভ্যতার সাথে অসভ্যতার, নগ্নতার সাথে লজ্জার।
তারপর একটা মৃত্যু রেখা সব রেখা কাটাকাটি করে
ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত করে দিল, সব কিছু তার কেঁড়ে নিল
নূপুর যেন ফাঁসির দড়ি সেখানে, হন্তার মুখে প্রতিবাদী লাথি।
ডিনামাইটের আঘাতে পাহাড় ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়
কিন্তু মানুষ আর অমানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা দেয়াল খানা ভাঙতে
নূপুর কন্যার এই একখানা পদাঘাতই কি যথেষ্ট নয়?
তার লজ্জাবতী লুকায়িত মুখ কি অসভ্যতার লজ্জা ভাঙতে পারবে?
নূপুরে শৃঙ্খলিত হয়ে ধ্বংস স্তূপের নিচে চাপা পড়া পা চাই না আর
শত শত লাশের কাতারে যার নাম এখন নূপুর কন্যা।
আমরা আলতা রাঙা নূপুর পড়া পা চাই নৈসর্গিক রূপে
যেখানে হারিয়ে যাবে আমাদের দেহমন অবারিত প্রান্তর ছুঁয়ে
পুলকিত হৃদয়ে পৃথুল প্রহর হবে সেখানে মানবতার অবগাহন।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.