জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নতুন তদন্তকাজ আজ পুরোদমে শুরু হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের তিন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন, আবদুল আওয়াল ও সাইদুজ্জামানের কাছ থেকে আজ ক্রেস্টে সোনা পরিমাপের বিষয় জানতে চাওয়া হবে। বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনেই ক্রেস্টে সোনা কম দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ায় তাদের কাছ থেকেই প্রথম বক্তব্য নেবে কমিটি।
এ বিষয়ে তদন্ত করছে সংসদীয় কমিটিও। গতকাল এই কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে।
একই বিষয়ে আদালতে শহীদ পরিবারের সদস্য নাসরিন আহমেদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি রিট করেন। তবে ক্রেস্টে নির্ধারিত পরিমাণে সোনা না দেওয়ায় দুটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের করা মামলার তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন মনজিল মোরশেদ। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ মামলা করার সময় বলা হয়েছিল, মক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যেহেতু বিয়য়টি আর এগোয়নি, তাই আমরা আবার আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করার পর এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কেউ কিছু জানতে চায়নি।
‘ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে একটি সংবাদ গত ৬ এপ্রিল প্রথম আলোতে ছাপা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ সিদ্দিকী, অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. বাবুল মিঞাকে ওএসডি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি: অধিকতর তদন্তের জন্য বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল-মামুনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে থাকা চারটি ক্রেস্ট সিলগালা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর এ-সংক্রান্ত সব নথিপত্র কমিটির কাছে নিয়ে আসা হয়েছে।
জানতে চাইলে কমিটির প্রধান বলেন, তদন্ত কীভাবে করা হবে, সেই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। যেহেতু বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনের মাধ্যমেই এ অভিযোগের ঘটনার সেহেতু তাদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই তদন্ত শুরু হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
এর আগে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তদের মধ্যে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অধস্তনদের তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ কারণে অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সাত পর্বে দেওয়া ওই সম্মাননায় ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য তৈরি করা ক্রেস্ট পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) জায়গায় ক্রেস্টে সোনা পাওয়া গেছে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম (সোয়া তিন আনা)। এক ভরির মধ্যে প্রায় ১২ আনাই নেই। আর রুপার বদলে ৩০ ভরি বা ৩৫১ গ্রাম পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু পাওয়া গেছে।
সংসদীয় কমিটি: এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন ঠিকমতো তাদের জবাব না পাঠানোয় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে বলে জানান তদন্তপ্রধান আফসারুল আমিন।
দুদকের অনুসন্ধান: দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। ধারাবাহিক পর্যালোচনা শেষ। শিগগিরই সংশ্লিষ্টদেরকে ডাকা হবে।
মামলার অবস্থা: সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১০ জুন মামলা করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এমিকনের মালিক মীর দাউদ আহমেদ ওরফে নাজিম ও শান্তিনগরের মেসার্স মহসিনুল হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুদক এ মামলাটি তদন্ত করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে দুদকে খোঁজ নিয়ে এ মামলার বিষয়ে কোন অগ্রগতি পাওয়া যায়নি।


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.