আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৫ সালে লর্ডস টেস্ট দিয়ে। সর্বশেষ টেস্ট আর ওয়ানডে খেলেছেন গত বছর। কাজেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে হলেও শাহাদাত হোসেন অন্তত ধরে রাখতে পেরেছেন ক্যারিয়ারের হালটা। কিন্তু যদি তাঁর ফর্মের কথা বলেন, সেটা হঠাৎ আসে আর হঠাৎ যায়। এই উজ্জ্বল তো এই নিষ্প্রভ। তবে এভাবে খেলেও শাহাদাত এমন এক কীর্তি গড়ে রেখেছেন, যেটা এখন পর্যন্ত পারেনি বাংলাদেশের আর কোনো পেসারই। ৩৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে চারবার পেয়েছেন ৫ উইকেট। এর মধ্যে একবার আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে। ওয়ানডেতেও একটা হ্যাটট্রিক আছে।
অভিষেক টেস্টে উইকেটশূন্য থাকলেও নিজেকে প্রমাণ করতে দেরি হয়নি শাহাদাতের। দীর্ঘদেহী শরীর আর দুরন্ত গতির বোলিং—সত্যিকারের পেসার হয়ে ওঠার প্রাথমিক দুটি শর্ত প্রকৃতিই পূরণ করে দিয়েছিল তাঁর হয়ে। সহজাত একটা আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এক নম্বর বোলার বানিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। শাহাদাতের কাজ ছিল শুধু নিজেকে ধরে রাখা এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেটাতেই তিনি ব্যর্থ। চোটাঘাতের একটা প্রভাব হয়তো আছে, তবে আবহে মিশে ছিল অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত জীবনও। নিজের সেসব ভুল এখন নিজেই স্বীকার করেন শাহাদাত, ‘আমার অনেক দুর্বলতা ছিল। নিজের কারণেই ভালো করে খেলতে পারতাম না। প্র্যাকটিস করতাম না। সমস্যাটা যদি আরও এক-দুই বছর আগে বুঝতে পারতাম, অবশ্যই আমি এখন জাতীয় দলে থাকতাম।’
শুরু থেকে ক্রিকেটার শাহাদাতকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদেরও একই মত। জাতীয় দলে শাহাদাতের প্রথম অধিনায়ক হাবিবুল বাশার যেমন বলছিলেন, ‘ফাস্ট বোলারদের যে দুটি জিনিস থাকা সবচেয়ে জরুরি, দুটিই তার ছিল—উচ্চতা ও গতি। প্রথম দেখাতে মনে হয়েছিল, ওকে দিয়ে অনেক কিছু সম্ভব। কিন্তু সেটা করতে না পারার দায় তাকেই নিতে হবে। ক্রিকেটারদের জন্য রূঢ় বাস্তবতা হলো, ফিটনেস আর শৃঙ্খলা থেকে যে একটু সরে যায়, তাকে পারফরম্যান্স হারিয়েই প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়।’
নতুন বলে প্রথম সঙ্গী মাশরাফি বিন মুর্তজাও প্রাই একই রকমভাবে মূল্যায়ন করলেন শাহাদাতকে, ‘ওর শুরুটা অনেক ভালো ছিল। এ রকম ভালো শুরু অনেকেই করে। কিন্তু যখন সব পাওয়া হয়ে যায়, তখন কারও কারও মধ্যে আত্মতৃপ্তি চলে আসে। ভাবে, আমি তো অনেক কিছু করে ফেললাম। এই উপলব্ধিটা খেলোয়াড়দের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ধারণা, রাজীবের (শাহাদাত) ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে।’ মাশরাফির বিশ্বাস, জীবনটা আরেকটু গোছানো হলে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব ছিল শাহাদাতের পক্ষে। তবে সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘বিয়ের পর নিজেকে ও অনেক গুটিয়ে নিয়েছে। শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে জীবনে। এখনো যদি ও ভালোভাবে চেষ্টা করে, আমার বিশ্বাস আবার আগের জায়গায় ফিরতে পারবে। ওর সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’
কাল মিরপুরে শাহাদাতের কথা শুনে মনে হলো, তিনি নিজেও এটি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, ‘আমার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করছি। বাড়তি জিম সেশন করছি, রানিং সেশন করছি। আমার বাদ পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ফিটনেস। এখন আমার ফিটনেস অনেক ভালো।’
আগের শাহাদাত ফিরবেন আবারও, এই আশায় কি তাহলে বসতি গাড়া যায় ?


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.