কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম থেকে শুরু করে দলে সবচেয়ে নবাগত জুবায়ের—সবার মুখে একই কথা, সিরিজ জিততে হবে। পারলে ৩-০ তে। জিম্বাবুয়েকে প্রথম টেস্টে হারানোর আনন্দ সবার মধ্যেই এক-আধটু আছে। তবে আনন্দের প্রকাশটা সীমিত। আনন্দের চেয়ে তাঁদের কথায় বেশি বাজছে প্রতিজ্ঞা। একটা আফসোসও কি নয়!
জিম্বাবুয়েকে হারালে এমনিতেই এখন আর খুব বেশি আনন্দ-উৎসব হয় না। তার ওপর পরশু প্রথম টেস্টের জয়টা এল কত কষ্টে! জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১০১ রানের লক্ষ্য পেরোতেও সাত উইকেট নেই! বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের সময় আফসোসধ্বনি শোনা গেছে ড্রেসিংরুমেই। খেলোয়াড়দের কারও কারও মুখ থেকে স্বগতোক্তির মতো বের হয়ে এসেছে, ‘এই ম্যাচও যদি আমাদের এভাবে জিততে হয়...!’
আফসোসটা ম্যাচ জেতার পরও রয়ে গেছে। খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বক্তব্যের সারমর্মেও কেবলই আফসোস। তিনটি বাজে রানআউট আর ব্যাটসম্যানদের উইকেট ‘উপহার’ দিয়ে আসা দেখে রীতিমতো বিস্মিত এই শ্রীলঙ্কান। কালকের দিনটা ছুটিতে কাটানোর পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রস্তুতি শুরু হবে আজ। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে কাল বিকেলে দুই দল একসঙ্গে উড়াল দেবে খুলনার উদ্দেশে। তবে হাথুরুসিংহে তাঁর কাজ শুরু করে দিয়েছেন পরশু খেলা শেষ হওয়ার পর থেকেই।
প্রথম টেস্ট শেষে কাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক টিম মিটিং না হলেও হাথুরুসিংহে কারও কারও সঙ্গে আলাদা কথা বলেছেন। ওপেনার শামসুর রহমান যেমন একজন। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ শামসুর রান করেছেন ৮ আর ০। তবে কোচ নাকি এটিকে খুব বড় ব্যর্থতা মনে করছেন না। শামসুরকে ব্যাটিংয়ের নতুন কিছু কৌশল শিখিয়েছেন তিনি। সেগুলোতে এখনো ধাতস্থ হয়ে উঠতে না পারাটাই তাঁর এই ব্যর্থতার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কাল টেলিফোনে শামসুরও বলছিলেন, ‘কোচ আমাকে বলেছেন নতুন টেকনিকে ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগবে। তবে এসব টেকনিকের কারণে আমার ব্যাটিং আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আমি যদি এই টেকনিকটা ধরে রাখি, আগের চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটিং করব।’
নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতাটুকু বাদ দিলে প্রথম টেস্টের জয়ের গুরুত্ব আর সবার মতো শামসুরের কাছেও অনেক, ‘এই জয় নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এ বছর আমরা অনেকগুলো ক্লোজ ম্যাচে হেরেছি, যার কিছু অন্তত জেতা উচিত ছিল। সেসব হার থেকে আমরা কিছু শিখতে পেরেছি এবং সেটা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম টেস্টে কাজে লাগিয়েছি, সেটাই আসল।’ তবে তিনিও স্বীকার করেছেন, ‘টেস্টটা আমাদের আরও সহজভাবে জেতা উচিত ছিল। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ফেলাতেই কঠিন হয়ে পড়ে সেটা।’
প্রায় দেড় বছর পর টেস্টে ফিরেই জয় দেখলেন শাহাদাত হোসেন। ৩৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলেন এই প্রথম। তা কেমন সেই স্বাদটা? শাহাদাতের মুখ থেকেই শুনুন, ‘টেস্ট ম্যাচ যে খেলেছে, সে-ই বোঝে টেস্ট ম্যাচ কী। এই প্রথম আমি টেস্ট জিতলাম। এত দিন পর স্বাদটা পেয়ে মনে হচ্ছে অনেক কিছু পেয়ে গেছি।’
শুধু যে টেস্ট জয় পেয়েছেন, তা নয়। পরশু শেষ হওয়া প্রথম টেস্টে শাহাদাত ফিরে পেয়েছেন আরও দুটি জিনিস, ‘এই টেস্টে আমি অনেক দিন পর ভালো লাইন-লেংথে বল করেছি। আমি আমার আসল জিনিসটা ফিরে পেয়েছি, সে জন্যই বেশি ভালো লাগছে। তা ছাড়া আমার যে আক্রমণাত্মক মনোভাব, সেটাও এই টেস্টে ফিরে এসেছে। আমি আমার হারানো সবকিছু ফিরে পেয়েছি। সব সময় চাইব এগুলো ধরে রাখতে।’
অভিষেক টেস্ট নিয়ে সবার মধ্যেই একধরনের শিহরণ কাজ করে। জুবায়েরের মধ্যেও করেছে। সঙ্গে ছিল কিছু কল্পনা, যার সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে পেরে খুশি তরুণ এই লেগ স্পিনার, ‘প্রথম ম্যাচে ভালো কিছু করার ইচ্ছা ছিল। প্রথম ইনিংসে সেটা কিছুটা হলেও পেরেছি। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তো তাইজুল ভাই-ই সব উইকেট নিয়ে গেলেন।’
তাইজুলের সাফল্য মধুর এক আক্ষেপ ছড়িয়ে দিল জুবায়েরের মনে। তবে দলের সবার মধ্যে আক্ষেপটা মোটেও মধুর নয়। জিম্বাবুয়েকে তিন দিনে হারিয়ে দেওয়ার পরও সবার একটাই আফসোস—আরও ভালোভাবে জেতা যেত ম্যাচটা!


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.