১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভ ছিল আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে আমরা ভৌগোলিক সীমানা পেয়েছি। বাংলা হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্রের ভাষা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা নৃশংসতা হিটলার নাদির শাহকেও হার মানায়। এত মৃত্যু, এত বীভৎস, এত বেদনা আমরা অতীতে কখনো দেখিনি। ভবিষ্যতেও এতটা কখনো দেখব বলে মনে হয় না। তবু একাত্তর আমাদের গর্বের, গৌরবের, আনন্দের। কারণ স্বাধীনতার চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে। স্বাধীনতার চার দশকে শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, অর্থনীতি এবং ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
তখন বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই সারাদেশে উৎসবের আমেজ। দেশের তরুন ক্রিকেট পাগলরা কাজকর্ম ফেলে শুধুই বাংলাদেশের ম্যাচ শুরুর জন্য অপেক্ষা করতেন। আর ম্যাচের শুরুর সাথে সাথে স্বপ্ন, আশা-আকাংক্ষার পসরা নিয়ে বসে থাকতো পুরো জাতি। তখনকার ক্রিকেটারদের সীমাবদ্ধ পারফরম্যান্সের কথা ভুলেই যেতেন বেশির ভাগ সমর্থকরা। সীমাবদ্ধতার শৃংখল ভাঙতে চেষ্টার কোন এটি থাকতো না ক্রিকেটারদের। তবে নিরাশার মেঘেই ঘোরপাক খেতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেটটা আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলতে পারছে এই পরিচিতিটার মর্যাদা ঠিকই অনুধাবন করতে পারতেন ক্রিকেটমোদিরা। হারের মাঝে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাক্তিগত কীর্তিগুলো ভালোই উপভোগ্য হতো। ব্যাটিংয়ে কোনো ব্যাটসম্যানের ফিফটি, লোয়ার অর্ডারে হঠাৎই কোনো ব্যাটসম্যানের ঝোড়ো তাণ্ডবে একটি-দুইটি ছয়ের মার কিংবা বল হাতে কারো ২/৩ উইকেটের প্রাপ্তি নিরাশার মাঝে নতুন নতুন সপ্নের বীজ বপন করতো।
তার আগেও যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিজেদের প্রমান করার সুযোগ পেতনা তা কিন্তু নয়। এশিয়া কাপ, কিছু ত্রিদেশিয় টুর্নামেন্ট খেলত টাইগাররা। ইংল্যাণ্ড ‘এ’ দল, নাম করা কয়েকটি বিদেশি ক্লাব এসে খেলতো ৪ দিনের টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেট ম্যাচ।
১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আসরে সুযোগ পাওয়ায় আবেগাপ্লুত পুরো জাতি আর ক্রিকেট দলকে ঘিরে দেশজুড়ে অনন্য এক গৌরবের অনুভূতি। প্রথম ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে বড় হারের পর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর জয়। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর আগে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পায় বুলবুল সুজনরা। জয়ের নায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। অথচ নান্নুকে প্রথমে দলেই রাখা হয়নি। এ নিয়ে তখন মধুর বিতর্কেরও জন্ম হয়েছিল।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বড় হারের পর শেষ ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের হট ফেবারিট ছিল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানকেই কি না হারিয়ে দিল বাংলাদেশ! উৎসবের আমেজ ছড়ালো সারা দেশে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে হই হই রই রই। আবেগে আপ্লুত হলেন ক্রিকেটপ্রেমি আর দেশপ্রেমিরা। নর্দাম্পটনে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম লাল সবুজের প্রতিনিধিদের আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়। আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাহিনী নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে মামুলি ২২৩ রান। ক্রিকেট পরাশক্তি ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য ২২৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় টাইগাররা। পাকিস্তানকে টাইগার বোলাররা ১৬১ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬২ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। খালেদ মাহমুদ সুজন পেলেন সংগ্রামী ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষার পুরস্কারটি। হাতে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের ঐতিহাসিক ম্যাচটির ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ব্যাট হাতে ২৭ রানের পর বল হাতে নেন শহিদ আফ্রিদি, ইনজামাম আর সেলিম মালিকের মূল্যবান উইকেট।
আজ বাংলাদেশ যে ক্রিকেট খেলছে তা একসময়ের স্বপ্নই ছিল। এখন তো মনে হয় এত বড় স্বপ্নও আমরা দেখিনি। আজ ক্রিকেট বাণিজ্যের অন্যতম বাজার বাংলাদেশ। আইপিএলের মতো বড় আসরের ভেন্যু বাংলাদেশকে করার স্বপ্ন দেখে আজ ভারত। বারবারই বিশ্বের ১ নম্বর ওয়ানডে অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা সাকিব আল হাসান যে আমাদেরই ক্রিকেটার ! ক্রীড়াঙ্গনে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে হলে নিয়মিত অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে, মাঠে খেলাধুলা রাখতে হবে। কোনো কোনো ফেডারেশনে অযোগ্য ব্যক্তিরা পদ দখল করে রেখে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষতি সাধন করছে। ক্রীড়াঙ্গন থেকে ভুঁইফোড় ব্যক্তিদের বিতাড়িত করতে হলে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে।
আসুন দেখে নেই ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর স্মরণীয় মুহূর্ত গুলো । যা বাংলাদেশের ক্রিকেটপেমী সকলের মনে সোনালী অক্ষরে গেঁথে থাকবে চিরকাল।
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান
[youtube=http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=DkJrc7DQqR4]


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.