প্রশ্নঃ “১৯৭১ সালের ২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করার পরে কালুরঘাটের ঘোষণা গৌন হয়ে পড়ে না নাকি? .........।“
সেই প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেয়ার আমার এক খুদ্র প্রয়াসঃ
২রা মার্চ-৩রা মার্চ ছাত্রদের পতাকা উত্তোলন অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু সেই পতাকা উত্তলনের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের সুত্রপাত হয় নি। সেগুলো ছিল স্বাধীনতার ডাক, কিন্তু স্বাধীনতার যুদ্ধ নয়। কালুরঘাটের ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধের সুত্রপাত। যেটা এতদিন ছিল থিওরি, ২৬ শে মার্চের কালুরঘাটের ঘোষণা দিয়ে শুরু হোল সেটার প্রয়োগ। ২৫ শে মার্চের আগে যা ছিল রক্ত গরম করা ডাক, ২৬ শে মার্চের পর সেটা হয়ে গেলো রক্ত ঝরা যুদ্ধ। ২৫ শে মার্চের আগের সংগ্রামে ছিল জেল জুলুমের ভয়। ২৬ শে মার্চের পর শুরু হোল লাশের যুদ্ধ। পার্থক্য টা সেখানে। গুরুত্ব টা সেখানে।
কোন ঘটনাই গৌণ নয়। সব ঘটনাই একটার পরবর্তী আর একটা। কিন্তু কোন ঘটনার আগে কাজ করে আশা, যেমন ২৫ শে মার্চের আগের ঘটনা গুলো। মানুষ আশা করেছিল ইয়াহিয়া ছাত্র-জনতার দাবী, কিংবা ছয় দফার দাবী মেনে নিবে। দেশের মানুষ হয়তো বিনা রক্ত ক্ষয়ে স্বায়ত্ব শাসন অথবা স্বাধীনতা পাবে। উল্লেখ্য ছাত্র-ভাসানি এরা দাবী করেছিল স্বাধীনতা, আর শেখ মুজিব দাবী করেছিল ছয় দফার দাবীর ভিত্তিতে স্বায়ত্ব শাসন। সেই সব দাবীর মিছিলে-সমাবেশে জীবনের ঝুকি টা কম ছিল। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেইসব মিছিল-সমাবেশে যোগ দিয়েছিলো। তারা কোনরকমেই পাকিস্তানি মিলিটারির নির্মম সহিংসতার ধারনা করে নাই।
কিন্তু ২৫ শে মার্চ এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাছবিচারহিন হত্যাযজ্ঞয়ের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। সেই সময় বিদ্রোহ ঘোষণা করা, আস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসার কে হত্যা করা মানে নিজের প্রাণের মায়া উপেক্ষা করা। নিজের পরিবার কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া। সেই রাতে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরার জন্য অতুলনিয় দেশপ্রেম আর সাহসের দরকার ছিল।
২৬ শে মার্চের রাতে শেখ মুজিব তো গ্রেফতার হয়েই গেলেন, সব রাজনিতিবিদ-নেতারা শেখ মুজিবের পরামর্শে আত্মগোপন করলেন...আম-জনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্বিচারে মারা যাচ্ছে...... কিন্ত সেই সময় পরিস্থিতি যদি এরুপ হোতো– মেজর জিয়া চুপ করে বসে থাকলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করল না, মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না, তারা তাঁদের গতবাধা চাকুরি করে গেলেন ......... তাহলে তাঁর ফলাফল আজ অন্যরকম হোতো।
আর সেই জন্যই মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা এত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই ঘোষণার সাথে সাথে তাঁদের বিদ্রোহ এত তাৎপর্যপূর্ণ।


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.