কয়েক বছর পর তিনি ‘ডাফল কোট’ তৈরির দিকে মনোযোগী হন। ‘আমি মানুষটাই এমন। সব সময় চেষ্টা করি ভিন্ন কিছু করতে।’ মামুন চৌধুরী বলছিলেন, ‘এখানে তখন আর কেউই ডাফল কোট তৈরি করত না।’
রানির অতিথি বাংলাদেশের মামুন১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি তাঁকে যুক্তরাজ্যে পা রাখার স্বপ্নপূরণে সাহস জুগিয়েছে (যদিও তাঁর ইচ্ছা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার)। সে যুদ্ধে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছিল এক কোটি মানুষ আর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল মামুন চৌধুরীদের পারিবারিক ব্যবসাও।
মামুন চৌধুরী বলেন, ‘সফল হতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। যদি মাইকেল মার্কস (মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না?’
রানির অতিথি বাংলাদেশের মামুন কিন্তু তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল কঠিন প্রতিযোগিতা। বিশেষত যখন ইস্ট এন্ডের কাপড় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কাপড় তৈরি করা শুরু করছিলেন, তখন মামুন চৌধুরী নতুন কায়দায় দামি ডাফল কোট তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। ২০০২ সালে তিনি রব হিউসনকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডন ট্র্যাডিশন নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। রব হিউসনের মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার কিংবা অ্যাকুয়াসকিউটামের মতো টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল।
ডাফল কোট সাধারণ কোটের চেয়ে একদমই আলাদা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই কোট ছিল নাবিকদের পরিধেয় শীতবস্ত্র, এমনকি ফিল্ড মার্শাল মন্টগোমেরি সেনাদের অনুপ্রাণিত করতে এই কোট পরতেন, যেন সেনারা মনে করেন, তিনিও তাঁদের একজন। ক্যামেল (উটের পশমের রং) থেকে শুরু করে বেগুনি, টকটকে লাল, নানা উচ্চতা কিংবা ধাঁচের কোট তৈরি হয় লন্ডন ট্র্যাডিশনে। এ ধরনের কোট সাধারণত জাপানের কিছু কিছু কাপড়ের দোকানদারের কাছে খুবই জনপ্রিয়, যাঁরা নিজেদের দোকানে এক টুকরো ‘ইংল্যান্ড’ রাখতে চান। প্রতিষ্ঠানটি এখন বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোট রপ্তানি করে, যা তাদের উত্পাদনের ৯০ শতাংশ। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বাইরে ডাফল কোটের রপ্তানি বেড়েছে ৮৬৫ শতাংশ। এ বছরের জুলাই মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ‘কুইন’স অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে, প্রশংসা পেয়েছে লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন, তাঁর পূর্বসূরি কেন লিভিংস্টোন ও চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্নের মতো মানুষদের।


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.