google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html পাথর যখন প্রতীক - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, November 8

পাথর যখন প্রতীক

একসময় ধর্মীয় কৃত্য কিংবা ডিসকোর্সের মধ্য দিয়ে পাথরে প্রাণ অনুভব করার রীতি ছিল। অন্তর ও বাহিরের এ ধরনের সহজ সম্পর্কে ছেদ টেনে দিল বিজ্ঞান। শিল্পীরা বস্তুজগতের সঙ্গে সংবেদী যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী, ফলে আধুনিক শিল্পের সূচনাপর্বে বিংশ শতকের শুরুতে শিল্পীর কাজের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল চরিত্র। ফরাসি শিল্পী রঁদ্যা পাথরকে কথা বলতে দেওয়ার পক্ষে মুখ খুললেন প্রথম। তাঁর আবির্ভাব-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় আভাগার্দ শিল্পীদের কাজে, ফর্মের নানা নিরীক্ষায় স্পষ্ট হয়ে উঠল বস্তুর চরিত্র ফুটিয়ে তোলার তাগিদ.....


ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান সেই ঐতিহ্যেরই ধারক। ‘স্টোনস’ শিরোনামে তাঁর চলমান প্রদর্শনীর ভাস্কর্যগুলো পাথরের চরিত্রনির্ভর, যার বড় অংশই ক্ষুদ্রাকৃতির। তবে এসব ভাস্কর্যে প্রাণের চাঞ্চল্যের চেয়ে শিল্পীর ঝোঁক বেশি এবার জ্যামিতির দিকে। অধিকাংশ কাজই কোনো না কোনো মোটিফকে উপলক্ষ করে। তবে পাথরে চরিত্রের বৈচিত্র্যের দিকে শিল্পীর খেয়াল উল্লেখ করার মতো। নানা প্রকৃতির মার্বেল পাথর দিয়ে শিল্পকর্ম গড়েছেন হামিদুজ্জামান। সভ্যতার ইতিহাসে বহুল ব্যবহৃত কারারা থেকে শুরু করে পিঙ্ক, ক্লাক-হোয়াইট—এসব মার্বেলের প্রাকৃতিক চেহারা শিল্পী ব্যবহার করেছেন ভাস্কর্যের সারফেসের বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলতে।
শিরোনামের দিক থেকে তিনি একমাত্রিক, নম্বরের সূত্রে স্বকীয়—প্রতিটি কাজই ‘স্টোন’ (পাথর) সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এই সিরিজের কাজকে আত্মনির্দেশক অভিধা দেওয়া যেতে পারে। কারণ পাখি, মানুষের মুখ কিংবা বীজের মতো পরিচিত প্রাকৃতিক ফর্মও হামিদুজ্জামানের হাতে বিমূর্ত মোটিফের আকার পেয়েছে। পাশ্চাত্যের ফর্মালিস্ট ভাষার যে নানা সূচিমুখ বিশ শতকের শুরুতে দুনিয়া শাসন করেছে, তা আত্তীকরণের মাধ্যমে হামিদুজ্জামান খুঁজে পেয়েছেন মেদহীন, মোহহীন, ফর্মনির্ভর ভাস্কর্য নির্মাণের পন্থা। তাই প্রাকৃতিক ফর্ম অপেক্ষা জ্যামিতিক ছক বা ছাঁচপ্রধান করে গড়া তাঁর ভাস্কর্যের কনস্ট্রাকশন। মিনিমালিজমে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল চরিত্র উদ্ঘাটনের প্রয়াস, নির্মাণশৈলী ও অভিপ্রায়ের মধ্য দিয়ে শিল্পী সেটি কর্ষণ করেছেন। ‘পাথর-৩’, ‘পাথর-৭’ কিংবা বিশেষভাবে উল্লেখ্য ‘পাথর-২’-তে এই নিরীক্ষা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হয়।
বৈচিত্র্য নির্মাণে অতি মনোযোগী এই ভাস্কর। কাটার পদ্ধতির চিহ্ন সচেতনভাবে ভাস্কর্যে রেখে দিয়ে সারফেস ও ফর্মের মধ্যে বাঙ্ময়তা সৃষ্টি করেছেন তিনি। আবার কোনো কোনো কাজে সেটি নির্মাণকৌশলকে প্রধান করে তুলেছে। যেমন ‘পাথর–৪’।
যদিও হামিদুজ্জামানের অধিকাংশ কাজ প্রকাশবাদিতাকে পাশ কাটিয়ে মোটিফের জ্যামিতিক সারল্য নির্মাণে উৎসাহী, তবু ‘পাথর-৯’ শিরোনামের কাজে পিঙ্ক পাথরের টেক্সচারের যে প্রায়-বিমূর্ত মুখাবয়ব, এই অভিব্যক্তি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যবহৃত হলে প্রদর্শনীর মান নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পেত বলে মনে হয়।
পাথরের চরিত্র থেকে উত্তীর্ণ যে কয়টি মুখাবয়ব এই প্রদর্শনীর অংশ, তার প্রতিটিই বিমানবিকীকরণের অসাধারণ উদাহরণ।
২৪ অক্টোবর গ্যালারি কায়ায় শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। ভাস্কর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে কয়েকটি ড্রয়িংও। এগুলো শিল্পীর মনোকাঠামো বুঝতে সহায়তা করে। তবে এই ড্রয়িংয়ের মাধ্যমে যে ফর্ম তিনি সামনে হাজির করেছেন, ভাস্কর্য থেকে তা পৃথক। বলা ভালো, এসব ড্রয়িংয়ের মধ্য দিয়েই ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্যের মোটিফ নির্মাণের প্রাথমিক নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন হামিদুজ্জামান।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.