google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, November 8

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। এদিন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব আর প্রতিরোধের মাধ্যমেই সেদিন রক্ষা পেয়েছিল সদ্য অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব; প্রতিহত হয়েছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ও আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র। সিপাহি-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবাদপুরুষ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম)'কে। 


১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ৬ই নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩রা নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে বিশেষত সিপাহিদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব—যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।

তদানীন্তন 'দৈনিক বাংলা'র রিপোর্টে ৭ই নভেম্বর বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয়—‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি’। জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়ে তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভণ্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাংকের গলায় পরিয়ে দেয় ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।’

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে ৭ নভেম্বর সম্পর্কে লেখেন—‘১৯৭৫ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টসহ সারা শহরে ছড়ানো হলো হাজার হাজার প্রচারপত্র। এই কাজগুলো করল বামপন্থী জাসদ। এ সময় রাজনৈতিক দল জাসদ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু এরা কাজ করছিল বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং বিপ্লবী গণবাহিনীর আবরণে। একটি ব্যাপারে ডান ও বাম উভয় রাজনৈতিক দলই একমত ছিল। আর তা হচ্ছে, খালেদ মোশাররফ একজন বিশ্বাসঘাতক, ভারতের দালাল এবং সে ঘৃণিত বাকশাল ও মুজিববাদ ফিরিয়ে আনতে চাইছে।’

জাসদ এক ধাপ আরও এগিয়ে গেল। তারা বলল, সিনিয়র অফিসাররা নিজেদের স্বার্থে জওয়ানদের ব্যবহার করছে। সাধারণ মানুষ ও জওয়ানদের ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। গণজাগরণের ডাক দিয়ে জাসদ ১২টি দাবি পেশ করে। এগুলোর মধ্যে ছিল—ব্যাটম্যান প্রথা বাতিল করতে হবে, অফিসারদের ব্যক্তিগত কাজে সৈন্যদের ব্যবহার করা চলবে না, পোশাক ও পদমর্যাদার ক্ষেত্রে জওয়ান ও অফিসারদের ব্যবধান দূর করতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। জাসদের দাবিগুলো সে সময়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সৈনিকদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হলো।

জাসদের এই দাবিনামা এবং গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়ার পেছনে যে ব্যক্তিটি কাজ করছিলেন—তিনি হলেন সাবেক আর্মি অফিসার লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহের। তিনিই প্রথম জওয়ানদের মধ্যে ‘ওরা এবং আমরা’ এই ধারণার সৃষ্টি করান এবং অফিসারদের বিরুদ্ধে জওয়ানদের মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করেন।

মধ্যরাতের কিছু পরই অর্থাৎ ৭ নভেম্বরের ভোরের দিকে জওয়ানরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়ল। তারা অস্ত্রাগার থেকে স্টেনগান-রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্র লুট করল এবং তারা ‘সিপাই-সিপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই’ এবং ‘সিপাই-সিপাই ভাই ভাই, সুবেদারদের ওপরে অফিসার নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে দ্রুত ক্যান্টনমেন্টে ছড়িয়ে পড়ল।

সারা ঢাকা শহরে এই ‘সিপাহি বিপ্লব’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। রাত ১টার মধ্যেই সিপাহিরা পুরো ক্যান্টনমেন্ট দখল করে নিল। এদের কেউ কেউ ক্রমাগত ফাঁকা গুলি ছুড়তে লাগল। অন্যরা উত্তেজিত অবস্থায় স্লোগান দিতে দিতে অফিসারদের খুঁজতে লাগল। বেঙ্গল ল্যান্সারের হাবিলদার সারওয়ারের নেতৃত্বে একদল জওয়ান গেল জেনারেল জিয়ার বাসভবনে।

চার দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পেলেন জেনারেল জিয়া। নৈশ পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই জিয়াকে উল্লসিত জওয়ানরা কাঁধে করে নিয়ে গেল ২ ফিল্ড আর্টিলারির হেডকোয়ার্টারে। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন বিহ্বল হয়ে পড়েছেন জিয়া। নাম না জানা অনেক জওয়ানের সঙ্গে আলিঙ্গন, করমর্দন করলেন তিনি। তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে জিয়া প্রথমেই ফোন করলেন জেনারেল খলিলকে। তাকে বললেন, ‘আমি মুক্ত। আমি ভালো আছি। আমার জন্য কোনো চিন্তা করবেন না।’

জিয়া তার মুক্তিদাতাদের কয়েকজন অফিসারকে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন। তারা হচ্ছেন জেনারেল মীর শওকত আলী, জেনারেল আবদুর রহমান এবং কর্নেল আমিনুল হক। সৈন্যরা যখন তাদের নিয়ে এলো, তখন তিনি তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন। সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি তাদের সহযোগিতা চাইলেন। বললেন, ‘আমি রক্তপাত চাই না।’

তথ্যবহুল এ গ্রন্থটিতে আরও বলা হয়েছে, রাত দেড়টার দিকে জওয়ানরা রেডিও স্টেশন দখল করে নিল। তারা রাতের কর্মীদের জানাল যে, জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। বিস্মিত রেডিওর কর্মকর্তারা প্রথমে বুঝে উঠতে পারলেন না তারা কী করবেন। যখন তারা টের পেলেন যে, জওয়ানরা তাদের ভয় দেখাচ্ছে না এবং খালেদ মোশাররফ পরাজয়বরণ করেছেন; তখন তারা সবাই উল্লসিত সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দিলেন। সৈন্য এবং সাধারণ মানুষ ভর্তি কিছু ল্যান্সার ট্যাঙ্ক শহরের মাঝখানে এসে পৌঁছল। ক্যান্টনমেন্টে গোলাগুলির শব্দ শুনে প্রথমে লোকজন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেডিওতে ক্রমাগত ‘সিপাহি বিপ্লবের’ ঘোষণা এবং জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখলের খবর শুনে হাজার হাজার লোক স্রোতের মতো রাস্তায় নেমে এলো। তিন দিন ধরে তারা বিশ্বাস করছিল যে, ভারত খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে তাদের কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে। এখন সেই দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে। সর্বত্র জওয়ান এবং সাধারণ মানুষ খুশিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করল, রাস্তায় নামল। সারারাত তারা স্লোগান দিল, ‘আল্লাহু আকবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ’। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মতো এদেশের মানুষ আবার জেগে উঠেছে। এটা ছিল একটি স্মরণীয় রাত।

রেডিও বাংলাদেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে জেনারেল জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেন, তিনি সাময়িকভাবে প্রধান আইন প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। সেনাবাহিনীর অনুরোধে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, সাধ্য অনুযায়ী তিনি তার কর্তব্য পালন করবেন। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে সবাইকে কাজে যোগ দেয়ারও নির্দেশ দেন।

ইতিহাসের ঘটনাবলী পর্যালোচনা করলেই আমরা সত্য উপলব্ধি করতে পারি। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ/বাকশাল নেতা খন্দকার মুশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভার প্রায় সকল সদস্যই মুশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। মুশতাক আহমেদ ছিলেন শেখ মুজিবের আদর্শ বাকশালের ৪র্থ সদস্য।

ক্ষমতা নেয়ার পর মুশতাক আহমেদ সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন। সে সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি ও তৎকালীন জেনারেল শফিউল্লাহ। জিয়াউর রহমান তখন ছিলেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। মুশতাকের মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীর বেশে উপস্হিত ছিলেন তাহের-ইনু বাহিনী ও তৎকালীন মুজিব বিদ্রোহী নেতারা। প্রশ্ন থেকে যায়, যদি তাহের-ইনু বাহিনী বা জাসদ শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নাই থাকেন (বর্তমান দাবি অনুযায়ি), তবে খন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে জাসদ ও তাহের-ইনু বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল? মুশতাকের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থান ঘটালে তাহের-ইনু বাহিনীর ভূমিকা কার পক্ষে ছিলো- ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নাকি খন্দকার মুশতাক আহমেদের পক্ষে?!

শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর আরও দশদিন অর্থাৎ ২৪ আগষ্ট পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ছিলেন জেনারেল শফিউল্লাহ। বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে সরকারি চাকরী কনফার্ম হবার পরেই তিনি দায়িত্ব ছাড়েন। এরপর যথারীতি সেনাবাহিনীর নিয়মানুসারে 'ডেপুটি চিফ অব স্টাফ' থেকে প্রমোশন পেয়ে ২৫ আগষ্ট 'সেনাপ্রধান' হন জিয়াউর রহমান।

তবে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হলেও তখন তিন বাহিনীর প্রধানের উপর নজিরবিহীনভাবে 'ডেপুটি চিফ অব ডিফেন্স' নামে এক পদ সৃষ্টি করেছিলেন খন্দকার মুশতাক। সে পদে নিয়োগ দেয়া হয় তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে। প্রায় একই সময়ে জেনারেল ওসমানীকে নিয়োগ দেয়া হয় রাষ্ট্রপতি খন্দকার মুশতাকের 'ডিফেন্স এডভাইজার' পদে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর জিয়াউর রহমান রক্ষীবাহিনীর প্রভাবমুক্ত ও পেশাদার একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সেনাবহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেন। জিয়াউর রহমান'কে বন্দি করার পর, ৩রা নভেম্বর তারিখে প্রশাসনের উপর নিজের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশাতাকের সাথে নানা দেন-দরবার ও দর-কষাকষি শুরু করেন খালেদ মোশাররফ। সে সময় বন্দি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রও নেওয়া হয়েছিল। এরপর ৪ নভেম্বর তারিখে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজেই নিজেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন নেন ও সেনাপ্রধান হিসেবে নিজেই ঘোষণা করেন।

এরই মধ্যে ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে সংগঠিত হয় জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড। মোশতাক ও আওয়ামী লীগে নেতা রাশেদ মোশাররফের সম্মতিতে ৩রা নভেম্বর সন্ধ্যার পরে ১৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের সাথে জড়িতরা নিরাপদে দেশত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন খন্দকার মুশতাক আহমেদ। এরপর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সম্মতিতে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ৬ই নভেম্বর তারিখে।

১৫ আগষ্ট থেকে মুশতাক-শফিউল্লাহর জারিকৃত সামরিক আইন বহাল থাকায় রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম একাধারে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেন। বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি, ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে ১২ তারিখে শেখ মুজিব তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

৬ই নভেম্বর দিবাগত রাতে পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। ৭ই নভেম্বর ঘটে ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হবার পর জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে পুনর্বহাল হন। ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আবু সায়েম। এ সময়কালে জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ১৯৭৭ সালের ২০ এপৃল রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম পদতায়গ করলে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ২১ এপৃল তারিখে।

১৯৭৮ সালের ৩রা জুন বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সে নির্বাচনে জেনারেল ওসমানী সহ মোট ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন শহীদ জিয়া। এরপর ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ২০৮টি আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী আসন সংখ্যা ছিল ৩৯টি। সর্বমোট ২৯টি রাজনৈতিক দল সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

১৯৭৮ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের উন্নয়নকল্পে ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচীর উপর জনগণের আস্হা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ৩০ মে তারিখে 'গণভোট' অনুষ্ঠিত হয়।

ইতিহাস সাক্ষী, জিয়াউর রহমান সামরিক আইন জারি করেননি। ১৫শে আগষ্ট মুশতাকের জারিকৃত সামরিক আইন বরং জিয়াউর রহমানই রাষ্ট্রপতি হবার পর প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, ফিরিয়ে এনেছিলেন বহুদলীয় গণতণ্ত্র। এছাড়া ইতিহাস ঘাটলে আরও জানা যায় যে, ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বিলটিও জারি করেছিলেন খন্দকার মুশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।

৭ নভেম্বরে পরাজিত আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় অনুচররা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের পথের কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান'কে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাৎ বরণ করলেও তাঁর আদর্শে বলীয়ান এদেশের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

লেখকঃমারুফ খান  প্রবাসী বাংলাদেশি (ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কর্মী) 



 

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.