google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html বাংলাদেশি আম্পায়ারদের প্রতি কেন আইসিসির অবহেলা ? - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Tuesday, June 9

বাংলাদেশি আম্পায়ারদের প্রতি কেন আইসিসির অবহেলা ?

আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এনামুল। ফাইল ছবিসম্প্রতি ২০১৫-১৬ মৌসুমের জন্য আম্পায়ারদের এলিট প্যানেল ঘোষণা করেছে আইসিসি। ১২ জনের সেই প্যানেলে এবারও কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশি আম্পায়ারদের অংশগ্রহণ বহু দিন ধরেই। তবু কেন এলিট প্যানেলে জায়গা হয় না বাংলাদেশি আম্পায়ারদের?
শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বেশ সুনাম রয়েছে বাংলাদেশি আম্পায়ার এনামুল হকের। ওয়ানডেতে আম্পায়ারিংয়ে এরই মধ্যে ‘ফিফটি’ করেছেন। ঝুলিতে আছে একটি টেস্ট ও চারটি টি-টোয়েন্টিতে আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতাও। নয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করা এনামুল এবারও এলিট প্যানেলে অবহেলিত। অথচ নতুন জায়গা পাওয়া দুই আম্পায়ার এনামুলের থেকে ঢের জুনিয়র ক্যারিয়ারের বয়সের দিক দিয়ে।
এবার এলিট প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন ভারতের এস রবি ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গাফেনি। ২০১১ সালে আম্পায়ারিং শুরু করা রবি ছয় টেস্ট, ২৪ ওয়ানডে ও ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে শুরু করা গাফেনি মাত্র দুটি টেস্ট ও ৪১টি ওয়ানডে ও ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মূল আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেখানে এনামুল আম্পায়ারিং করছেন ২০০৬ সাল থেকে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। ১০টি টেস্ট আর ২৯টি ওয়ানডে খেলেছেন। সেখানে রবি ও গাফানি আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেননি। শুধু ম্যাচ খেলায় নয়, আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালনের হিসেবেও এনামুল ​পিছিয়ে নেই। মোট ৫৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন এনামুল। রবি ৪২টি। গাফেনি ৫৫টি ম্যাচে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, গাফেনি-রবিরা এলিট প্যানেলে জায়গা পেলে এনামুল কেন পান না?
আইসিসি টুর্নামেন্টসহ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোয় সাধারণত এলিট প্যানেল ও ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল আম্পায়াররা ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বছরে আইসিসির যে পরিমাণ ম্যাচ আছে তার ৬৬ শতাংশ ম্যাচের দায়িত্ব পালন করেন এলিট প্যানেলের আম্পায়াররা। বাকি ৩৪ শতাংশ দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক প্যানেল আম্পায়াররা। আন্তর্জাতিক প্যানেল আম্পায়ার আছে ১২টি দেশ থেকে ২৪ জন। টিভি আম্পায়ারসহ মোট ৩৬ জন। কাজেই আন্তর্জাতিক প্যানেলে থাকা আম্পায়ারদের ভাগে ম্যাচের দায়িত্ব পড়ে খুবই কম।
আবার সবাই যে সমান ভাগে দায়িত্ব পান, তাও নয়। আইসিসি আম্পায়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে পছন্দের আম্পায়ারদের প্রাধান্য দেয় বলে অভিযোগ আছে। অবশ্য আম্পায়ারদের পারফরম্যান্সও হিসাব করা হয়। সেটাও গুরুত্ব পায় দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইসিসি কিছুটা ‘বর্ণবাদী’ আচরণ করে বলে অভিযোগ আছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের আম্পায়াররা দায়িত্ব পান বেশি। গত বিশ্বকাপেও ২৫ জন আম্পায়ারের ১৭ জনই ছিলেন ‘শ্বেতাঙ্গ’ বা ‘ইংরেজি ভাষাভাষী’।
একজন আম্পায়ারের সবচেয়ে কোন গুণটা আপনি বেশি গুরুত্ব দেন? নিশ্চয়ই তিনি কতটা নির্ভুলভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটিই। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আইসিসির নীতিতে নাকি মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা অগ্রাধিকার তালিকায় আছে চারে! আম্পায়ারদের যোগ্যতা বা গুণ হিসেবে এর আগে দেখা হয়, ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা, যোগাযোগের ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এশীয় আম্পায়ারদের মান ইংরেজি ভাষাভাষী আম্পায়ারদের চেয়ে যথেষ্ট ভালো। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি ভাষাভাষী আম্পায়াররা আইসিসির অগ্রাধিকার তালিকার প্রথম তিনটি শর্ত ভালোভাবে পূরণ করতে পারে। তা ছাড়া এটাও দেখা গেছে, কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠের কোনো খেলোয়াড় উষ্মা প্রকাশ করলে বা তর্ক করতে এলে ইংরেজি ভাষাভাষী আম্পায়ারদের সঙ্গে তারা পেরে ওঠে না।
এমনিতে আচরণবিধির শিকল আছেই। আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সামান্য ট্যা-ফোও ক​রা যাবে না। কিন্তু তারপরও কখনো কখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ইংরেজি ভাষাভাষীর আম্পায়াররা এটি ভালোভাবে সামলাতে পারে বলেই নাকি আইসিসির কাছে তাদের কদর বেশি।
এসব নিয়ে অবশ্য এনামুল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। তাঁর বিস্ময় অন্যখানে। তাঁর বক্তব্য, রবি ও গাফেনি জায়গা পেলে তাঁরও পাওয়া উচিত। বিশেষ করে গাফেনি নতুন এলিট ​প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন—এই প্রতিবেদকের কাছে এমন খবর শোনার পর এনামুল যেন চমকেই গেলেন।
বাংলাদেশের সাবেক এই স্পিনার বলেছেন, ‘এস রবি জুনিয়র হলেও সে অনেক দিন ধরে আম্পায়ারিং করছে। গাফেনি তো আরও জুনিয়র। শ্রীলঙ্কার একটা প্রভাব আছে এখানে। ওরা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দল। আইসিসিকে সেভাবেই চাপ দেয় তারা। আইসিসিতে শ্রীলঙ্কা-ভারতের প্রভাবও অনেক বেশি। তবে খুবই বিস্মিত হলাম গাফেনির এলিট আম্পায়ার হয়েছে শুনে।’
এ ব্যাপারে বিসিবি বাংলাদেশি আম্পায়ারদের কতটা সহায়তা করে? ক্রিকেটীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে বিসিবির ভূমিকা কী? এসব নিয়ে এনামুল কোনো মন্তব্য করতে চাইলেন না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবির পরিকল্পনায় সবচেয়ে অবহেলিত ‘আম্পায়ারিং’। এ নিয়ে বিসিবির তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। নতুন আম্পায়ার তুলে নিয়ে আসার উদ্যোগ তো দূরের কথা, বর্তমান আম্পায়ারদেরই আরও উন্নত প্রশিক্ষণ কিংবা দেখভালে বিসিবি খুব একটা উদ্যোগী নয়।
এনামুল একটু যেন অভিমানই করলেন। এবারের এলিট প্যানেল যে এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে, সেই খবরটাও বিসিবির কেউ তাঁকে জানায়নি!