যুক্তরাষ্ট্রের পারডিউ ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসার্চ সেন্টারের ম্যাথিউ হিউবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মানুষ কতটা মানিয়ে নিতে পারবে সে বিষয়ে গবেষণা করছেন। দ্য গার্ডিয়ানকে ম্যাথিউ বলেন,‘বাতাস শুকনো থাকলে একটা কাবাব পুড়িয়ে খাওয়ার মতো পরিবেশেও মানুষ কিছুটা সময় টিকে থাকতে পারে। কিন্তু ওই একই তাপমাত্রায় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে আমরা পুড়ে মারা যাব। ঘাম ঝরিয়ে নিজের শরীরকে ঠান্ডা করার প্রায় বিরল সক্ষমতা আছে মানুষের। কিন্তু এটা কেবল অপেক্ষাকৃত শুকনো পরিবেশেই কার্যকর হয়।’
গবেষকদের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খুবই শুষ্ক আবহাওয়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও মানুষ খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত আর্দ্রতার মধ্যে মানুষের জন্য নিরাপদ তাপমাত্রার সীমা ৩০ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতিরিক্ত গরমে মানুষের জন্য কাজের নিরাপদ তাপমাত্রার সীমা নির্ধারণে বিজ্ঞানীরা এমন একটা হিসাবের কথা বলেন, যেখানে তাপ ও আর্দ্রতা দুটোকেই হিসাব করা হয়।
এটা ‘ওয়েট-বাল্ব গ্লোব টেমপারেচার’ হিসেবে পরিচিত। এই হিসাবে বলা হয়, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় মানুষ ত্বকের বাষ্পীভবনের মধ্য দিয়ে নিজেকে নিজে ঠান্ডা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এই হিসাবে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রির চেয়ে বেশি হলে শরীরচর্চা ও প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়।
অতিরিক্ত তাপে শরীর যেভাবে প্রতিক্রিয়া করে
শরীর ঠান্ডা করা: শরীর সব সময়ই চেষ্টা করে নিজের ভেতরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার। তাপ বাড়তে থাকলে শিরা-উপশিরাগুলো ফুলে উঠে ত্বক পর্যন্ত রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়, যাতে শরীর ঠান্ডা হয়। এ সময় ঘাম বেড়ে যায়। ত্বকের লোমকূপগুলো দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গিয়ে শরীরের উপরিভাগকে ঠান্ডা করার চেষ্টা হয়। অবশ্য বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে এটা সম্ভব হয় না।
গরমের ক্লান্তি: টানা গরমের মধ্যে থাকতে থাকতে শরীরের নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা স্তিমিত হয়ে আসে। শরীর থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে যাওয়ার কারণে পেশিগুলো কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। এ থেকে পেশির বৈকল্য ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাথা ব্যথা ও ঝিমঝিম ভাব হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা মানুষ ও বয়স্করা এ অবস্থায় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
হিটস্ট্রেক: অতিরিক্ত তাপ থেকে স্ট্রোক হওয়াকে হিটস্ট্রোক বলা হয়। শরীরের নিজেকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে শরীর বিকল হয়ে পড়তে শুরু করে। মাত্র দশ মিনিটেই শরীরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যেতে পারে। এ অবস্থায় প্রত্যঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ সময় দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অতিরিক্ত তাপে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে গিয়ে এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
সানস্ট্রোক: হিটস্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ অবস্থা হলো সানস্ট্রোক। দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি মাথা, ঘাড় ও গলায় সূর্যের খরতাপ লেগে শরীর বিকল হয়ে যাওয়াকে সানস্ট্রোক বলা হয়।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় নিজেকে সুস্থ রাখতে সচেতন থাকতে হবে। প্রথমেই খেয়াল রাখা প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি পানের দিকে। গরমের দিনে ঘাম ঝরে বলে শরীরের পানির চাহিদা বেড়ে যায়। পানিশূন্যতা তৈরি হলে অতিরিক্ত তাপে শরীর দ্রুত বিকল হয়ে পড়তে পারে। বাড়ি ও কর্মস্থলের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটে চলাফেরার সময়টাতেও পানির চাহিদা মেটাতে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। এ ছাড়া স্যালাইন খাওয়ারও অভ্যাস করতে পারেন, এতে পানির পাশাপাশি শরীরে লবণের চাহিদাও মিটবে।
খোলা আকাশের নিচে বা সরাসরি সূর্যের তাপে চলাফেরা করতে হলে অবশ্যই ছাতা বা চওড়া ব্রিমের টুপি ব্যবহার করুন। সাদাসহ অন্যান্য হালকা রঙের কাপড় কম তাপ শোষণ করে বলে গরমের দিনে এমন পোশাকই পড়া উচিত। আর অবশ্যই পাতলা ও সুতি কাপড়ে তৈরি পোশাক পড়ার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখতে হবে গরমের পোশাক যেন হয় ঢিলেঢালা। এতে ঘাম কম হবে এবং ঘেমে গেলেও দ্রুতই ঘাম শুকাবে। এ ছাড়া সরাসরি সূর্যতাপের চলাফেরার সময়টুকু পাতলা কাপড়ের রুমাল/গামছা/স্কার্ফ দিয়ে ঘাড়-গলা মুড়ে রাখতে পারেন।
টানা লম্বা সময় খোলা আকাশের নিচে থেকে শরীরে গরমের ক্লান্তি চলে আসতে পারে। সুযোগ পেলে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। এ সময় ঘাড় ও গলা পানি দিয়ে মুছে ফেলুন। এতে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হবে। নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন, এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়বে, মাথা ঠান্ডা হবে। অতিরিক্ত গরমে বাইরে থেকে ফিরে কখনোই আগে পায়ে পানি ঢালবেন না, এতে হঠাৎ করে শরীরের বাড়তি তাপ মাথায় উঠে যেতে পারে। সব সময় আগে হাত-মুখ ঘাড়ে-গলায় পানি ঢেলে তারপর পা ধোবেন।

