google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html আতহার আলী খানের দৃষ্টিতে " বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম " - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, June 6

আতহার আলী খানের দৃষ্টিতে " বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম "



কিছু কিছু ইনিংস আছে, চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে যায়। কিছু কিছু ইনিংসে থাকে ঝড়ের আভাস। কিছু ইনিংস হয়তো শিল্পিত নয়, নয় বোলারদের শাসন করার মতো দুর্বিনীত। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে হয়ে থাকে স্মরণীয়।
আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা সাত ম্যাচের কথা বলেছিলাম। আজ বলব আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা কিছু ইনিংসের কথা। এ নিয়ে আলাদা দুটো পর্ব করা হয়েছে। সেরা ইনিংস বেছে নেওয়া বেশ কষ্টসাধ্যই। কোনটা রেখে কোনটা নেব, সে এক মধুর সমস্যাই বটে। আমার দেখা সেরা কয়েকটি ইনিংসের কথা বলছি এ পর্বে। মূলত ওয়ানডে ইনিংসগুলো থাকছে। কিন্তু বলতেই হবে ওয়ানডে স্ট্যাটাস না-পাওয়া ম্যাচে খেলা এমন কিছু ইনিংসের কথাও।
কার্ডিফে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আশরাফুলের ১০০ রানের ইনিংসটি। ছবি: এএফপিআকরাম খানের লড়াকু ইনিংস
এটি ওয়ানডের মধ্যে পড়বে না। তবুও রাখতে হবে। কারণ, এই ইনিংসটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটা বাঁক হিসেবে বিবেচিত। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে পড়বে, আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে হল্যান্ড অলআউট হলো ১৭১ রানে। ইনিংসের পরই শুরু হলো বৃষ্টি। এ কারণে ৩৩ ওভারে আমাদের লক্ষ্য দাঁড়াল ১৪১ রান। ব্যাট করতে নেমে ১৫ রানে হারিয়ে বসলাম ৪ উইকেট। সেই বিপর্যয় থেকে টেনে তুললেন আকরাম। ম্যাচটা ৩ উইকেটে জিতেছিলাম মূলত আকরাম খানের অপরাজিত ৬৮ রানের কল্যাণেই। ওই ম্যাচটা না জিতলে আইসিসি জেতা হতো না আমাদের।
ভোলার নয় রফিকুল আলমের সেই ইনিংস
রফিকুল আলমকে এই প্রজন্মের অনেকেই হয়ত চিনতে পারবেন না। কিন্তু আশির দশকে এই রফিকুল ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সাহসী ও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচি​ত রফিকুলের একটি ইনিংস কিন্তু এদেশের ক্রিকেটের দিক-দর্শন পাল্টে দেওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাঁর সেই ইনিংসটি কোনো একদিনের ম্যাচ কিংবা আইসিসি ট্রফির ম্যাচে আসেনি। তিনি ইনিংসটি খেলেছিলেন পাকিস্তানের ওমর কোরেশী একাদশের বিপক্ষে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে। কিন্তু ওমর কোরেশী একাদশের আড়ালে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে খেলা ওই ইনিংসটি ছিল এদেশের ক্রিকেটের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা স্টেডিয়ামে (আজকের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) রফিকুলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৬ রান। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন ওমর কোরেশী একাদশে রফিকুল আলমের বিপক্ষে সেদিন হাত ঘুরাচ্ছিলেন বিশ্বমানের পাকিস্তানি বোলাররা। তখনো পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ব্যতিত কোনো টেস্ট দলের মুখোমুখি না হওয়া বাংলাদেশকে রফিকুল আলমের ৮৬ রান যুগিয়েছিল আত্মবিশ্বাসের রসদ। 
কেনিয়ার বিপক্ষে দুরন্ত রফিক
আগের পর্বেই রফিকের ইনিংসটা নিয়ে বলেছি। এ পর্বেও বলতে হচ্ছে। কারণ, ওই ম্যাচটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওটা ছিল আমাদের প্রথম ওয়ানডে জয়। কেনিয়ার দেওয়া ২৩৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সেদিন দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলাম আমি আর রফিক। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতেই এল ১৩৭ রান। ৪৭ রানের মাথায় আমি ফিরলাম রান আউটে কাটা পড়ে। তবে ম্যাচের চেহারা বদলে গেল রফিকের ৮৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে। প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেলাম আমরা। দারুণ এক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা রফিক।
দুরন্ত তামিম, পেছনে ‘মি. ডিপেন্ডবল’ মুশফিক। ছবি: প্রথম আলেঅ‘কার্ডিফ কিং’ আশরাফুল
২০০৫ সালের কার্ডিফের সেই স্মৃতি মনে পড়লে চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোহম্মদ আশরাফুলের সেই ইনিংসটির কথা। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকের হারানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আশরাফুলের ১০০ রানের ইনিংসটি। পরের ম্যাচ নটিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আশরাফুল খেলল ৫২ বলে ৯৪ রানের আরেকটি চোখ জুড়োনো ইনিংস। টানা দুই ম্যাচে দুটি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এমন ইনিংস খেলবে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান, ওই সময় ভাবাটা কঠিনই ছিল।
ইডেন গার্ডেনের সেই ইনিংসটা
নিজের কথা বলতে একটু সংকোচই হচ্ছে! ১৯৯০ সালে এশিয়া কাপে ইডেন গার্ডেনসে শ্রীলঙ্কা আমাদের লক্ষ্য দিল ২৫০ রান। শক্তিমত্তা ও নতুন দল হিসেবে ওই লক্ষ্য পেরোনো আমাদের জন্য কঠিনই ছিল। তবুও বুক চিতিয়ে লড়েছিলাম। অপরাজিত ছিলাম ৯৫ বলে ৭৮ রানে। ওই ইনিংসের জন্য আমাকে দেওয়া হলো ম্যাচ সেরার পুরস্কার। কোনো বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ সেরা হওয়ায় হয়তো মানুষ এ ইনিংসটা মনে রাখে। পরের এশিয়া কাপেই ১৯৯৭ সালে কলোম্বতে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলাম ৮২ রান। সেটাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওই সময়ে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এমন ইনিংস বড় অর্জন বলেই গণ্য হতো।
বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান
১৯৯৯ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের পর আরও তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ছিল না। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি-খরা ঘুচল এবার মাহমুদউল্লাহর হাত ধরেই। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা মাহমুদউল্লাহর সেই ইনিংসে কেবল সেঞ্চুরি-খরা ঘোচেনি। বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট।
আসাধারণ তামিম
সাম্প্রতিক হওয়ায় এ স্মৃতিটা একেবারই তরতাজা। গত ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিমের ১৩২ রানের সুবাদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬ বছর পর বাংলাদেশ হারাল পাকিস্তানকে। স্বপ্নের মতোই এক সিরিজ গেল তামিমের। পরের ম্যাচেও করল অপরাজিত ১১৬ রান। শেষ ম্যাচে ৬৪। অনবদ্য, দুরন্ত তামিম!
‘মি. ডিপেন্ডবল’ মুশফিক
১৬ বছর বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মুশফিকুর রহিমের। খেলেছিল ১০৬ রানের ইনিংস। তামিমকে ছাপিয়ে সেদিন ম্যাচসেরাও সে। কাজেই এই ইনিংসটি সেরা তালিকায় রাখতেই হবে।
চোখ জুড়োনো সৌম্য
সৌম্য সরকারের ব্যাটিং দেখা চোখের বড্ড আরাম! বিশ্বকাপেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিল। এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলে নিজেকে আরও ভালোভাবে চেনাল।

রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকের হারানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আশরাফুলের ১০০ রানের ইনিংসটি। পরের ম্যাচ নটিংহামে...Posted by Prothom Alo on Friday, June 5, 2015