google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html 'দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক' - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Wednesday, January 6

'দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক'


নিয়াজিকে বাঙালি গেরিলাদের ভয় দেখিয়ে কাবু করে ভারত
নিউ ইয়র্ক, ১৬ ডিসেম্বর- মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে বাঙালি গেরিলাদের প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ভয় দেখিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজিকে আত্মসমর্পণে চাপ সৃষ্টি করেছিল ভারত। বাঙালি গেরিলারা পাকিস্তানি সেনাদের কচুকাটা করবে- এমন রেডিও বার্তাও অব্যাহতভাবে পাঠানো হয়েছিল নিয়াজিকে। ভারত প্রথমে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ নয় বরং যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। কিন্তু আত্মসমর্পণের প্রস্তাব অনুমোদন করে নিয়াজিকে পাঠানো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি বার্তা ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছার পর থেকে ভারত নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের চাপ দেয় পাকিস্তান বাহিনীকে। অন্যদিকে পাকিস্তান বাহিনী ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী সুরক্ষা, অধিকার ও মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তখনো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায়নি, জেনেভা কনভেনশনেও সই করেনি। এ কারণে বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণে নিয়াজির রাজি না হওয়ার ঝুঁকি ছিল। এসব তথ্য উঠে এসেছে এ বছর 'দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক' গ্রন্থে। বইটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লেখক বি জেড খসরু।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর না থাকার কারণ হিসেবে যুদ্ধে কর্তৃত্ব নিয়ে মুজিবনগর সরকার ও ভারতের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথা তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। ওই বিরোধিতার কারণে ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বাধিনায়কের পদ ছাড়ার আবেদন করেছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীকে ওই পদ থেকে সরাতে চেয়েছিলেন।
বি জেড খসরু নিউ ইয়র্কে দ্য ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি 'মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার, হাউ ইন্ডিয়া, ইউএস, চীন অ্যান্ড দ্য ইউএসএসআর শেইপড দ্য আউটকাম' বইয়েরও লেখক। বিক্রির দিক দিয়ে এটি সেরা বই।
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানীর অনুপস্থিতির প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বি জেড খসরু লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠা তরুণ নেতা শেখ মণি, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাককে নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই উদ্যোগে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নেতারা তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার অভিযোগ তোলেন। তরুণ ওই নেতারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের। তাঁরা নয়াদিল্লির কাছে প্রতিবাদ জানালেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁরা বললেন, শেখ মুজিবকে সরিয়ে তাজউদ্দীন নিজেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। এই অভিযোগে উদ্বিগ্ন হয়ে ভারত অনুধাবন করল, বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে বামপন্থী ও ডানপন্থী ধারার মধ্যে কেবল জোরালো মতানৈক্যই নয়, আওয়ামী লীগের ভেতরেও তিক্ত বিরোধ রয়েছে। এসব বিবেচনায় নয়াদিল্লি উপলব্ধি করে থাকতে পারে, স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব দৃঢ় নাও হতে পারে। মুজিবের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার সম্ভাব্য একটি উপায় ছিল, তাঁর (মুজিব) প্রতি নিবেদিত লোকদের দিয়ে বিশেষ বাহিনী গঠন করা। এ অবস্থায় মুজিব বাহিনী গড়ার ধারণা আসে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর মাথায় ।
খসরুর মতে, তাজউদ্দীন ও জেনারেল এম এ জি ওসমানী- কেউই ভারতের ওই পরিকল্পনার কথা জানতেন না। ওসমানী এ বিষয়ে প্রথম জেনেছিলেন মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী ও লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের কাছ থেকে। পাকিস্তান বাহিনী ঢাকায় নির্বিচার হত্যা শুরু করার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালানো বাঙালি সেনাদের প্রথম দলটিতে ছিলেন তাঁরা। তাঁরা নয়াদিল্লিতে যাওয়ার পর ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাঁদের জানায় যে তাঁদের মুজিব বাহিনীকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা পালিয়ে কলকাতায় চলে গিয়ে ওসমানীকে বিষয়টি জানান। ওসমানী ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজউদ্দীন জানান যে তাঁর কোনো ধারণাই নেই।
বইয়ে বলা হয়েছে, তাজউদ্দীন পরে বিষয়টি ভারত সরকারের কাছে তোলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব পি এন হাকসার, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ডি পি ধর ও জেনারেল উবান সিং তাঁর ওই উদ্বেগ অগ্রাহ্য করেন। দিল্লি থেকে তিনি ফেরেন হতাশা নিয়ে। তাজউদ্দীন ও ওসমানী মুজিব বাহিনীকে মুজিবনগর সরকারের অধীনে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
খসরুর দাবি, ওসমানীর ক্ষমতা কমাতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাজউদ্দীন ও ওসমানীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আনুগত্য জয়ের জন্য সফল ও জনপ্রিয় বাঙালি সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। এসব উদ্যোগ ধীরে ধীরে প্রকাশ হয়ে পড়লে ওসমানী ক্ষুব্ধ হন। ভারতের নির্দেশনা ছাড়াই তিনি তাঁর মতো করে যুদ্ধ পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে অস্থায়ী সরকারের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন ওসমানী। কলকাতায় একদিন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ওসমানী বিষয়টি তোলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে বলেন, ভারত যদি যুদ্ধে হস্তক্ষেপ বন্ধ না করে তাহলে তিনি সর্বাধিনায়কের পদ ছাড়ার কথা ভাববেন। একপর্যায়ে তিনি পদত্যাগপত্র দাখিল করে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। ওসমানীর অপ্রত্যাশিত এই উদ্যোগে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।
খসরুর বইয়ে উল্লেখ আছে, ওসমানীর পদত্যাগের জন্য ডালিম যে কারণের কথা বলেছেন এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন আরেক সেক্টর কমান্ডার জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ। তিনি বলেন, জিয়াই ওসমানীকে সর্বাধিনায়কের পদ থেকে সরাতে চেয়েছিলেন। জিয়া ওসমানীকে দুর্বল নেতা বলে মনে করতেন। খালেদ মোশাররফও ওসমানীকে সমর্থন করেছিলেন। সফিউল্লাহ জানান, কমান্ডারদের সম্মেলনে খালেদ মোশাররফ বলেছিলেন, 'কেউ যদি ওসমানীকে অপসারণ করতে চান তাহলে তিনি শারীরিক প্রতিরোধের শিকার হবেন।'
খসরুর দাবি, কেবল অস্থায়ী সরকার নয়, ভারতীয়দের সঙ্গেও ওসমানীর সমস্যা হয়েছিল। নভেম্বরের প্রথম দিকে ওসমানী যখন কুড়িগ্রামে সম্মুখ সমরে ছিলেন তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিতে গোপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। ওসমানীর কাছে এটি অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তিনি যুক্তি দেখান, ভারতের ইউনিটগুলো বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর নেতৃত্বের অধীনে ও বাহিনীগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর তীব্র মতবিরোধ হয়। এর প্রতিবাদে তিনি কখনো তাঁর কর্তৃত্ব দেখাননি। ওসমানী সিলেট সেক্টরে চলে আসেন এবং যুদ্ধের শেষ তিন সপ্তাহে তিনি জেড ফোর্সের সঙ্গে মিলে কাজ করেন। তাজউদ্দীন ও ভারতের প্রতি ওসমানীর অসন্তোষ থেকে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় তাঁর অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.