google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত রহস্যঘেরা ‘কানা রাজার গুহা’ - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, April 2

প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত রহস্যঘেরা ‘কানা রাজার গুহা’

একে একে মুছে যাচ্ছে কক্সবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত স্মৃতিচিহ্নগুলো। রহস্যঘেরা ‘কানা রাজার গুহা’ তেমনি একটি স্মৃতিচিহ্ন। উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালংয়ের পাটুয়ারটে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কিংবদন্তির এ নিদর্শনটি হতে পারে দেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র।
কক্সবাজার পর্যটন উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্মৃতিচিহ্নগুলো সংস্কার করে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট করার কথা উল্লেখ থাকলেও কার্যত তার কোন বাস্তবায়ন নেই। অথচ প্রায় তিন শত বছরের প্রাচীন স্মৃতি বিজড়িত এই কানারাজার গুহাকে ঘিরে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগের অভাবে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
গুহাটির নেই কোন সংস্কার, নেই রক্ষণাবেক্ষণ। কক্সবাজারের একদল সাংবাদিক সম্প্রতি গুহাটি পরিদর্শনে যান। দেখা যায়, গুহাটির মুখটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। চারদিকে জঙ্গলে ঢাকা মুখটিই কেবল চিহ্ন হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ নুরুল আলম সাংবাদিকদের গুহাটি পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক গুহাটির দেখতে এবং খোঁজখবর নিতে আসেন। তিনি আরও জানান, গুহাটির মুখে অসংখ্য পাথর ছিল। গুহার মুখ ও আশপাশের পাথরগুলো উত্তোলন করে নিয়ে গেছে চোরের দল। এতে পাহাড়ের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে গুহার মুখে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঐতিহাসিক এ গুহাটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের মুখে এখনো গুহাটি এবং কানারাজা নামটি উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
কানারাজাকে নিয়ে জেলে, নাবিক ও মাঝি-মাল্লাদের মাঝে আছে অজানা রহস্য, অনেক কথা। কানারাজার আসল পরিচয় কি তা উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও এলাকায় জনশ্রুতি আছে তিনি একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন। ছিলেন একজন শাসক।
উখিয়ার পাটুয়ারটেকে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত 'কানরাজার গুহা'র মুখে একদল সাংবাদিককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসছেন স্থানীয় নুরুল আলম

এলাকার প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, এই গুহাটি অতীতে গুণী ব্যক্তি বা অনেক সিংহ পুরুষ পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন বইতে লেখার সুযোগ কিংবা ব্যবস্থা থাকলে সেই পরিদর্শন অভিজ্ঞতা অথবা অনেক অজানা কাহিনী আজ এই প্রজন্ম জানতে পারত। ওই সব লেখা আজ হয়ে উঠতো ইতিহাস। এসব ইতিহাস থেকে জানা যেত সৈন্য সামন্ত নিয়ে কানারাজার আগমন ও সুদীর্ঘ গুহায় বসবাসের কাহিনী।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী নুরুল আমল জানান, গুহাটির মুখ প্রায় একশ’ বর্গফুট ছিল এবং গুহার দৈর্ঘ্য আনুমানিক তিন কিলোমিটারের কম ছিল না। এই গুহাটি কেনইবা তৈরি করা হয়েছিল, কিভাবে তৈরী হয়েছিল কিংবা কানারাজা কিভাবে এই গুহায় অবস্থান নিয়েছিলেন সেসব কথা পর্যটকরা প্রবল আগ্রহে জানতে চায়। কিন্তু সরকারি সদিচ্ছার অভাবে সংস্কার ও রক্ষাণাবেক্ষণ না থাকায় সেই সব কাহিনী অজানাই থেকে যাচ্ছে।
কানারাজা না থাকলেও তার স্মৃতি এখনো এখানে অম্লান। সেই স্মৃতি-নিদর্শনটি রক্ষা করা গেলে এই রহস্যঘেরা গুহা দেখতে ইনানী সমুদ্র সৈকতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের ঢল নামবে। শুধু তাই নয় এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব আয় করবে শত কোটি টাকা। বিভিন্ন সাইজের দৃষ্টিনন্দন পাথরের সাথে বিশাল ঢেউ এর ধাক্কা লাগার বা খেলা করার দৃশ্যটি ইনানী সৈকতেই মিলে। বিশাল সমুদ্রচর এলাকা ইনানীর পাটুয়ারটেক নামক স্থানে এ কানারাজার গুহাটি বর্তমানে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে।
এই ইউনিয়নের ইনানী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের কূল ঘেঁষে পাটুয়ারটেকের সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে কানারাজার গুহার অবস্থান। কক্সবাজার লাবণী সী-বীচ থেকে এর দূরত্ব ২৫ কি.মি। গুহাটি কাছে গিয়ে দেখার জন্য বর্তমানে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মেরিণ ড্রাইভ সড়ক নিমার্ণের কারণে। বর্তামানে অনেকে সহজেই এই সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় গুহাটি দেখতে উৎসুক হয়ে পড়েন। তবে গুহাটির কাছে গেলে এখন শোনা যায় বানরের ডাকসহ পাখির কিচিরমিচির শব্দ জানান নুরুল আলম। তিনি জানান, এক সময় এসব ডাক শুনে গা শিউরে উঠতো।
জেলে ও স্থানীয়দের মুখে শুনা যায় কানারাজার গুহটি নিয়ে অনেক কথা। সমুদ্রগামি জাহাজ ও ট্রলারের মাঝি-মাল্লার কাছে গুহাটি এখনো গুহাটি অজানা রহস্য হয়ে আছে। কেননা অতীতে এই গুহা বরাবর সাগরপথে ঘটে গেছে অনেক বড় নৌ-দুর্ঘটনা। সাম্প্রকিকালেও কয়েকটি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে এই গুহা বরাবর সাগরে। এ কারণে মাঝি-মাল্লাদের কেউ কেউ কানারাজাকে আধ্যত্মিক সাধক মানতেও রাজি।
কিংবদন্তী আছে, প্রায় তিনশত বছর পূর্বে কানারাজা নামে এক ব্যক্তি তার দলবলসহ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে পাটুয়ার টেকের পাহাড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে তিনি একটি গুহা খনন করেন। পরবর্তীতে এটি কানারাজার গুহা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তিন শ' বছর পূর্বে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একমাত্র সাগর পথ। সেই সময়ে বঙ্গোপসাগরে দেশী-বিদেশী মালবাহী জাহাজ ও বিভিন্ন জলযান চলাচল করত। এ সব জলযান থেকে কানারাজা আদায় করতো ট্যাক্স। অনেকে তাকে সমীহ করে দিয়ে যেতো মূল্যবান সামগ্রী। এসব মালামাল গুহায় এনে রাখা হত।
অনেকের ধারণা, ওই গুহায় এখনো অনেক মূল্যবান সামগ্রী থাকতে পারে। এলাকার প্রবীণ লোক আহমদ হোসাইন জানান, তিনি তার দাদার কাছ থেকে শুনেছেন, প্রায় অনেক বছর পূর্বে চাকমারা সমুদ্র চরবেষ্টিত পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস শুরু করেন। পাহাড়ি এলাকা আবাদ করার সময় চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা সর্ব প্রথম এ গুহার সন্ধান পান। পরবর্তীতে রহস্য ঘেরা এ গুহাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়। এক নজর দেখার জন্য আসতে থাকে হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় অনেকের দাবি, কানা রাজার গুহাটি সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ গুহা। কালের আবর্তে এ গুহাটি বিলুপ্তির পথে। গুহার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই নৈসর্গিক। আশপাশের পাথরগুলো দুর্বৃত্তরা নিয়ে যাওয়ায় পাহাড় ভেঙ্গে গুহার মুখ অনেকখানি ভরাট হয়ে গেছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমরা তার স্মৃতিবিজড়িত ইনানীর ওই এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। কানারাজার গুহাসহ ওসব স্মৃতিচিহ্ন রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য আমরা খুব শিগগির জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠাবো।
জেলা প্রশাসন মোঃ আলী হোসেন জানান, কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের জন্য মাস্টার প্ল্যানে ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলো সংস্কার ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনার আলোকে কক্সবাজারের কানারাজার গুহাসহ সব প্রাচীন ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্নগুলো সংস্কার করে ধরে রাখা হবে।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.