google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html ‘জয় বাংলা’ এখন ব্যবহার হয় জনদুর্ভোগ আর নারীর সম্মানহানিতে ও ! - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, March 10

‘জয় বাংলা’ এখন ব্যবহার হয় জনদুর্ভোগ আর নারীর সম্মানহানিতে ও !

মানুষের কোন সম্মান নেই, নিরাপত্তা নেই, রাজনৈতিক বা সামাজিক অধিকারটাও নেই। গোটা দেশ যেন একটি পরিবার কিংবা একটি দলের হাতে জিম্মি। গতকাল ৭ মার্চ, ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্ট হলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুর নাতি রিদওয়ান সিদ্দিকী ববিকে বিশাল নিরাপত্তা বহর নিয়ে চলতে দেখলাম। অল্প বয়সী একজন যুবক কিন্তু অনেক বেশী সৌভাগ্যবান। কেননা রাষ্ট্র তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। অথচ দিন কয়েক আগে সিলেটে ড. মুহাম্মাদ জাফর ইকবালের উপর হামলা হলো। তার নিরাপত্তায় থাকা দুই পুলিশ সদস্যও তাকে রক্ষা করতে পারলেন না।
আসলেই মনটা খারাপ হয়ে যায় যখন ভাবি দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে ???
গতকাল ৭ মার্চ ছিল ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশে সভা-সমাবেশ করার অনুমোদনপ্রাপ্ত একমাত্র বৈধ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাও করেছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সফল, আর অহংকার আর দম্ভে ভরা একটি ভাষণ দিয়ে হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সফল। ব্যর্থ হলো রাজধানীতে থাকা প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ।
গতকাল আওয়ামী লীগ নামক এই সৌভাগ্যবান দলটির সভা-সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য রাজধানীতে চলাচলরত বাসগুলোর শ্রমিক, ড্রাইভার ও হেলপারদেরকে বাধ্য করা হয়। বাস শ্রমিক ফেডারেশন অঘোষিতভাবে এই নির্দেশনা জারি করে। ফলশ্রুতিতে জনদুর্ভোগ। সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় কোন শৃংখলা ছিলনা, ছিল ভয়াবহ যানজট। আর বিকেলে বের হয়ে পাবলিক তেমন কোন বাসই পায়নি। আচ্ছা, ভাল কথা, কেউ কি জানেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য আওয়ামী লীগ কি ডিএমপির অনুমতি নিয়েছিল?
আপনাদের মনে থাকার কথা, সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপির শান্তিপুর্ন মানব বন্ধন বা কালো পতাকা প্রদর্শনের মত কর্মসূচীগুলোতেও পুলিশ বেপরোয়াভাবে বাধা দিয়েছে, লাঠি চার্জ করেছে। পুলিশের ভাষ্য, এই সব কর্মসূচী করার জন্য বিএনপি আগে থেকে অনুমতি নেয়নি। পুলিশ আরো বলেছিল, রাস্তায় মানুষের চলাচল ব্যহত করার অধিকার বিএনপির নেই। তাই তারা লাঠিচার্জ করে রাস্তা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। অথচ গতকাল সারাদিন মানুষের চলাচলকে জিম্মি করে সরকারী বাহিনী এত বড় মিটিং করলো, পুলিশের চোখে সেটা পড়লোনা। ওবায়দুল কাদের সাহেব নাকি জনগনের কাছে ভোগান্তির জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন, অথচ পুলিশ দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছে। তাই লেখার শুরুতে বললাম অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জনগন বাধ্য হয়ে আর সরকারী বাহিনীগুলো দালালি করে বাংলাদেশের একমাত্র ভাগ্যবান দল আওয়ামী লীগের সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষনে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমার মনে হয়, গতকাল যারা ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থেকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মোড়ে ভাষনের এই লাইনগুলো শুনেছেন, তারাও বোধ হয় একইভাবে চলমান দু:শাসন থেকে মুক্তিই চেয়েছেন নিরন্তর।
৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। সেই জন্যই কিনা জানিনা। গতকাল ৭ মার্চে আওয়ামী সোনার ছেলেরা ঢাকা শহরের যত্রতত্র নারীদেরকে সম্মানহানি করেছে, শ্লীলতাহানি করেছে। গতকাল ফেসবুকসহ অন্যন্য সামাজিক মিডিয়ায় নির্যাতনের শিকার বেশ কিছু তরুনী, কিশোরী ও ছাত্রীরা আক্ষেপ করে পোস্ট করেছিলেন। সেগুলো বেশ ভাইরালও হয়েছিল।
যেমন মেঘলা নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে গতকালের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিবরন দিতে গিয়ে লিখেছেন, হল থেকে বের হয়ে কোন রিক্সা পাই নি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর পুরোটা রাস্তা জুড়ে ৭মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছেমতো টিজ করছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছে টিজ করছে। বহু হয়রানির পর শহীদ মিনার থেকে রিক্সা নিয়ে শাহবাগ যাচ্ছি । এতেও রক্ষা নাই। চারুকলার সামনে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাইছে গায়ে। প্রায় আধাভেজা করে দিছে। যখন রাগ হচ্ছিলাম তখন তো আরেকজন রিক্সার পেছন থেকে চুল টেনে দৌড় দিছে । সিরিয়াসলি !!! রিক্সা থেকে নামতে চাচ্ছিলাম জুতাবো ওইটাকে তাই। পাশের রিক্সার ভদ্রলোক খুব ভদ্রভাবে না করলো তাই রিক্সা থেকে নামিনি । গৌরবময় ৭ মার্চ সোনার ছেলেরা এত ভালভাবেই পালন করছে যে নিজের ক্যাম্পাসেই হ্যারাসড হতে হয়।
অন্যদিকে অদিতি বৈরাগী নামে আরেক নারী যে অভিজ্ঞতার বিবরন দিয়েছেন তাতো ভয়াবহ। আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী একটি মিছিল বাংলামোটর দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ঘিরে ধরে যাচ্ছেতাই ভাবে উত্যক্ত করেছে। তার শরীরে হাত দিয়েছে, জামার কিছু অংশ ছিড়ে নিয়ে গেছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন আর তীব্র ব্যাথা নিয়ে মেয়েটি বাড়ী ফিরেছে।‘জয় বাংলা’ ছিল আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের বহুল ব্যবহৃত শ্লোগান। অথচ সেই স্বাধীন দেশে এই শ্লোগান এখন সাধারন মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন জয় বাংলা বলে গাড়ি ভাংচুর করা হয়, ভিসির অফিস ভাংচুর করা হয়, মানুষকে পেটানো হয়। এখন জয় বাংলা বলে আগে বাড়ানোর নামে সব গাড়ির চলাচলকে থামিয়ে দেয়া হয়।। জয় বাংলা নাম দিয়ে নারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়া হয়, তাকে উত্যক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানের এই বেহাল দশা আর এই নির্মম অপপ্রয়োগের দায় নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই।
অদিতি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি যেভাবে শেষ করেছেন, আমার মনে হয় তা হাহাকার হয়ে শুধু ৭ মার্চের নায়ক শেখ মুজিব নয় বরং স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া সকল নিহত ও আহত মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ হয়েই ভেসে বেড়াবে। কেননা এই স্বাধীনতা তারা চাননি।অদিতি লিখেছেন, “আমি এই শুয়োরদের দেশে থাকবোনা। জয় বাংলা বলে যারা মেয়ে মলেস্ট করে তাদের দেশে আমি থাকবোনা। থাকবোনা। থাকবোনা।"


সূত্রঃ https://banglamail71.info/archives/32717

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.