হিন্দি গান শুনছেন স্ট্যাটাসে লিখে দিলেন – ” অমুক হিন্দি গানটি শুনছি । বাহ ! কি চমত্কার একটি গান , গান না শুনলে বুঝা যাবে না ” , তখন আপনার ফেসবুক বন্ধুরা ঝাঁপিয়ে পড়লো এই গান যেভাবেই হোক সংগ্রহ করে শুনতে হবে , এটা কি এক ধরণের প্রচারণা নয় ? বিনা মূল্যে আপনি প্রচারণাটা করে দিলেন ।
ঠিক একইভাবে হিন্দি গানের লিংক শেয়ার করলেন , মুভির নাম শেয়ার করলেন । ভারতীয় বাংলা গান , মুভি , বই এসবের প্রচারণা করলেন । ভালো কথা , আপনার প্রোফাইলে আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন । কিন্তু আপনার এই খাম খেয়ালীটার ফলাফল দেখুন , একটু ভাবুন , আপনার ফলোয়াররা হিন্দির প্রতি ঝোঁকে পড়ছে ….আপনার মগজ দখল করছে হিন্দি ।বাংলা গানের প্রচারণা আমরা করি না , কারণ আজকাল নাকি ভালো বাংলা গান হয় না , ভালো বাংলা ফিল্ম হয় না । ফলে আমরা সবাই ভারত নির্ভর ।
ভালো কথা , দেখুন ভারতে আমাদের বাংলা চ্যানেলের খুব চাহিদা থাকা স্বত্তেও ভারত সরকার আমাদের সাথে কি সুন্দর টাল বাহানা করছে , বাংলাদেশী চ্যানেল সেখানে চলতে দেয়া না । ফিডব্যাকের জনপ্রিয় কিছু গান নিয়ে জোয়ার নামের একটি এলবাম কলকাতা থেকে বের হয়েছিলো । এলবামটির প্রচুর কাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কেট থেকে সেই এলবাম তুলে নেয়া হয় । বাংলাদেশে ভারতের চ্যানেল চলছেই । আমরা পাখি ড্রেসের জন্যে আত্মহত্যা করছি । স্বামী তালাক দিচ্ছি । ভারতীয় পোশাক আশাকে নিজেকে সাজাচ্ছি প্রতিনিয়ত । আমাদের চিন্তা চেতনায় আসছে ভারত । আমরা বিজয় দিবসেও কিন্তু হিন্দি গান বাজাচ্ছি , সেটাও মাইক ব্যবহার করে ।
আমাদের দেশে ভারতীয় লেখকগণের বই চলে । কিন্তু ভারতে ?
আমরা আম্মা আব্বা শিখি না এখন , শিখি মাম্মা পাপা । বোন বলি না , বলি বেহেনজি । সানি লিওনের খবর আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় । সেখানে উল্যেখ করা হয় সে এখন থেকে সেরকম ছবির বদলে এই ধরণের ছবিতে অভিনয় করবে । ( সেরকমের ছবি যে কি সেটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন । )
দিনের পর দিন আমাদের কথা বলা , চলা ফেরা সবকিছুতে এখন আমরা ভারতীয় চ্যানেলের আদলে নিজেকে উপস্থাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি ।অনেকের অভিযোগ ভালো বাংলা গান হচ্ছে না , ভালো বাংলা ফিল্ম হচ্ছে না । আপনি আপনারা দেখি ভালো মন্দের বিচার খুব সুন্দর করে করতে পারেন , তাহলে এটা কি বুঝতে পারেন না ভারতীয় সংস্কৃতি কিভাবে আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করছে ? একটি সংস্কৃতি কিন্তু এভাবেই ধীরে ধীরে অন্য একটি সংস্কৃতিকে গ্রাস করে । একদিনে হুট করে গিয়ে জবর দখল করে না । এটা রাজ্য দখল নয় । এটা হচ্ছে মগজ দখল । মগজ দখল একটা continuous process যা ভারত চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের ওপর ।ওরা একটার পর একটা লোভনীয় জিনিস আমাদের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে আর আমরা তা লুফে নিচ্ছি । কিংবা জোর করে আমাদেরকে গিলতে বাধ্য করছে । আমরা ধীরে ধীরে আমাদের স্বকীয়তা হারাচ্ছি ।
এবার ভাবুন এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সুদূর প্রসারী ফলাফল কি হতে পারে । আজ আপনার কাছে যে জিনিস ভালো লাগছে । আপনি আপন করে নিচ্ছেন । কাল কিন্তু ছুঁড়ে ফেলতে পারবেন না । কাল সেটা আপনার বাচ্চা কাচ্চার হাতে সোপর্দ করবেন । ভালোবেসে । ফলে আপনার প্রিয় বাংলা হারিয়ে যাবে । আপনার নিজের সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে । আপনি হয়তো অঢেল সম্পত্তি রেখে যাবেন আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে কিন্তু স্বকীয়তা রেখে যেতে পারবেন না । রেখে যাবেন ভারতের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে আসা সংস্কৃতি । নিজের identity থাকবে না ।এবার ভাবুন , আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে আপনি কিভাবে ফকির করছেন । কি দিয়ে যেতে চান ?
Wednesday, August 13
Tags
# তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
About তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
নব্বইয়ের আন্দোলনে আমরা যে গণতন্ত্র পেয়েছিলাম, তা ছিল শিশু। সেটার যত্ন যেভাবে নেয়া উচিৎ ছিল তার ধারে কাছেও কেউ যেতে পারে নাই। তাই গণতন্ত্র আজ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আমাদের গণতন্ত্র। তবে সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনো যদি আমরা সজাগ হই, যদি আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমকে গুরুত্ব দেই, তবে এই বিকলাঙ্গ গণতন্ত্রই আবার সোজা হয়ে পথ চলতে পারবে। তবে কথা হচ্ছে, যারা এটা করতে পারবে তারাই আজ ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি।
তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
Tags
তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.