আওয়ামী অপশাষনে মিথ্যার বেসাতিতে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেটা এক প্রকার ভুলেই গেছি । সব ঠিক ছিল কিন্তু যখন আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান কে রাজাকার প্রমানে মরিয়া হয়ে ঊঠল আর বসে থাকতে পারলাম না। হাত দিলাম ইতিহাসে ।
অবাক হয়ে দেখলাম কিভাবে দিনকে রাত রাতকে দিন করা হয় ।
[caption id="" align="alignleft" width="361"] কবরখোদক।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="297"] ১. ১৯৭৪ সালের, সকালবেলা। ফুটপাথ থেকে লাশ কুড়িয়ে নিচ্ছে আঞ্জুমান ই মফিদুল ইসলামের লোকেরা। ভিকটিমের নাম হাসনা, বয়স এগারো বছর, ফুটপাথে ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েকটা ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। কারণ অনাহার ও অপুষ্টিজনিত দুর্বলতা।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="369"] হাসনার মা। নিস্ব, বাকরুদ্ধ, আর্ত মানবতা।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="343"] ঢাকা ট ৯৩৫, আঞ্জুমানের এই ল্যান্ডরোভার পিকআপটি হাজার হাজার নামহীন বেওয়ারিশ শবকে শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="338"] টেইলগেট নামানো হলো।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="341"] একটি স্ট্রেচার, পুরো পরিবার।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="352"] চটের কাফন থেকে বেরিয়ে আছে প্রাণহীন শিশুর পা।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="351"] বেঁচে আছে না মরে গেছে? ঢাকার ফুটপাথ।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="335"] আর কিছু না পারুন এর জন্য দু ফোটা চোখের পানি ফেলুন। আপনার কি সন্তান আছে?[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="358"] সে যদি তোমার প্রিয় ভাই হত.................[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="328"] ঢাকার বাইরে গ্রাম এলাকা। একজন দোভাষীর মাধ্যমে এই প্রৌঢ়কে জিগ্যেস করা হলো 'শেষ কবে ভালো করে খেয়েছেন?'[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="305"] স্যার, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কখনোই ভালো করে খাওয়া হয় না! খাবার জন্য তিনি তাঁর সব জমিজমা বেঁচে দিতে বাধ্য হয়েছেন।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="352"] অনেকে এইভাবে ঘুমন্ত অব্স্থায় মারা গেছে। বিশেষ করে শিশুরা, বিশেষ করে শীতকালে।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="331"] সম্ববত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম খাবার খাচ্ছে ওরা।[/caption]
[caption id="" align="alignright" width="395"] ব্যাপারটা অত্যন্ত করুণ হলেও সত্য, এইসব শক্ত খাবার খেয়েও বহুলোক মারা গেছে। দীর্ঘদিন ক্ষুধার্ত পাকস্থলী তরল খাবার আর কিছু গ্রহণ করতে প্রায়ই অক্ষম হয়।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="397"] সকাল সাড়ে সাতটা, এর মধ্যেই গোরস্তানে পঁচাশিটা লাশ এসে জমা হয়েছে। বেশিরভাগ লাশই শিশুদের। জন পিলজার।[/caption]
[caption id="" align="alignleft" width="329"] 'কিছু কিছু জায়গায় মানুষ ঘাস-পাতা খেয়ে আছে। এমন কেন হবে? 'এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ মুজিব বলেন 'দেখুন কিছু কিছু জায়গায় এরকম হতে পারে। তবে সবজায়গায় আমাদের লঙ্গরখানা আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, পিলগারকে আগে থেকেই চিনতেন।[/caption]
'আমার এসব তথ্য চেপে রাখার চেষ্টা করিনি। আমরা পার্লামেন্টে বলেছি প্রায় সাতাশ হাজারের মতো মানুষ না খেয়ে ও অসুখে মারা গেছে।' পিলগার বলেন 'আমি কিন্তু দেখেছি সরকারী লঙ্গরখানাগুলোতে থেকে মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না' 'এটা সত্যি নয়,' মুজিবের উত্তর। 'আপনি যেরকম বললেন সেটা সত্যি হলে কয়েক মিলিয়ন লোক মারা যেত।' (পৃথিবীর প্রায় কোন দেশেই হেড অভ স্টেট/গভর্নমেন্টরা সাধারণত রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা স্বীকার করতে চান না।)
“একটি তিন বছরের শিশু এতই শুকনো যে, মনে হল সে যেন মায়ের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরে গেছে। আমি তার হাতটা ধরলাম। মনে হল তার চামড়া আমার আঙ্গুলে মোমের মত লেগে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের আর একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান এই যে, বিশ্বস্বাস্থ্ সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছে।”
উপরের এই প্যারা দুটি প্রখ্যাত তথ্য-অনুসন্ধানী অষ্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক জন পিলজারের লিখা। লেখাটি ছাপা হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকায়। তার এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল ১০ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে যখন কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাট ডাটিয়া পাড়ার এক জেলেপাড়ার বস্ত্রহীন “বাসন্তি” মাছ ধরার জাল পড়ে লজ্জা ঢাকা ছবি ছাপা হয়েছিল। (যদিও এ ছবিকে একটি সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেন একশ্রেণীর বিশ্লেষক কিন্তু এইঘটনার মত ঘটনা যে ঘটেছে তা তো আর মিথ্যা নয়, এইসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে )
যাঁরা অল্প-স্বল্প হলেও ডকুমেন্টারি দেখেন টেখেন তাদের জন পিলগারের (জন্ম ১৯৩৯) পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার নেই। এই অস্ট্রেলিয় ডকুমেকার প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ক্যাম্বোডিয়া, বার্মা, প্যালেস্টাইন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি অনেক কিছু নিয়ে প্রায় সবসময়েই ই প্রামাণ্য চিত্র বানিয়েছেন এবং এখনো বানাচ্ছেন। প্রচলিত প্যারাডাইমসহ পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী অবস্থানকে সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ জানাতে কখনো দ্বিধা করেননি পিলগার। নিজের দেশ বলে কখনো কোনো ছাড়া দেন নি পিলগার।
তবে উপস্থাপকের বায়াস থাকলেও ক্যামেরার চোখ সাধারনত সত্যি কথাই বলে, অন্তত আমরা এমন কিছু বাস্তবতার আভাস পাই যা আমাদের জানা ছিল না। পিলগার শব্দটা জেনে দেখলাম ইংরেজি 'পিলগ্রিম' এর জার্মান, মানে তীর্থযাত্রী- মানানসই পদবী। সত্য উদ্ঘাটনের পথে তাঁর নির্ভীক যাত্রা আরো দীর্ঘতর হোক।
দূর্ভিক্ষের কারন সমূহ
১) দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতিঃ
খাদ্যশস্যের সূষম বন্টনের অভাব এবং দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, পার্শ্ববর্তী দেশে চোরাচালানী ইত্যাদি ছিল দূর্ভিক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিভিন্ন চাটুকার আর মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তিনি ছিলেন ঘেরা। শুধু তাই নয় এইসব অসৎ তোষামোদকারীদের বিরুদ্ধে কোন নালিশও উনি শুনতেন না বা শুনতে চাইতেন না। শেখ মুজিবুর রহমান একজন বাগ্মীপূরুষ এবং তেজী নেতা হলেও তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শাসক হিসেবে ছিলেন খুবই আবেগপ্রবণ। তিনি নিজেও ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন । যার ফলে সমাজের প্রতিটি রন্ধে রন্ধে দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ছড়িয়ে পড়ে।
বৈদেশিক সাহায্য আসলেও সেটা বিতরণে ছিল যথেষ্ঠ অনিময়। এটা শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও বুঝতে পারতেন । তাইতো কোন একসময়ে উনি বলেছিলেন,“সাত কোটি লোকের দেশে আমার ভাগের কম্বলটা কই।” যদিও এ কথাটি উনি খুবই দুঃখ করে বলেছিলেন।
১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দুর্ভিক্ষের জন্য প্রকাশ্যে সরকারের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে সর্বদলীয় ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এটাই তার জন্য কাল হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। এ সম্পর্কিত একটি চিঠির সঙ্গে পদত্যাগপত্রও পাঠানো হয়েছিল তার কাছে। ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর সে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও সেইসময়কার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
২) চোরাচালানঃ
দূর্ভিক্ষের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো চোরাচালান। ১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর প্রকাশিত লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলীর কলাম অনুসারেঃ “একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। বহু বিদেশী পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ।.. প্রতি বছর যে চাউল চোরাচালন হয়ে (ভারতে) যায় তার পরিমাণ ১০ লাখ টন।” এইসব চোরাচালানকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল ধান, চাল, গম, পাট, যুদ্ধাস্ত্র, ঔষধ, মাছ, গরু, বনজ সম্পদ ইত্যাদি। একটা নবগঠিত স্বাধীন দেশের সম্পদ ভারতে পাচার করা হতো কার স্বার্থে? কারা এসবের মদদদাতা ছিল? জনতার মুখপত্র, ১ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত সংবাদ হিসেবে সেই সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যায় প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার পন্য।
মেজর অব: মো: রফিকুল ইসলাম বীরোত্তমের “শাসনের ১৩৩৮ রজনী” পৃ: ১১৯-১২৬ তে উনি লিখেছেন, “দীর্ঘ ৩ টি বছর আমরা এমনটি প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের চোখের সামনে চাল-পাট পাচার হয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে, আর বাংলার অসহায় মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে।”
৩) দাতাগোষ্ঠীর অনমনীয়তা ও অনিচ্ছাঃ
৭১-৭২ এ যে বিপুল পরিমান সাহায্য এসেছিল তার বেশিরভাগ লোপাট হয়ে যাওয়াতে বাংলাদেশে সাহায্য পাঠাতে প্রবল অনীহা দেখা দেয় দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে। লুটের সিংহভাগ হয়েছে রেডক্রসের মাধ্যমে। ৭৪ সালেই জরুরী অবস্থা চালু হয়। সে যাই হোক অনাহারে হু হু করে মানুষ মরছিল।
৪) বর্ডার ট্রেডঃ
বর্ডা র ট্রেডের নামে খুলে দেয়া হয় সীমান্ত। আসলে এই সিস্টেম শুধু চোরাচালানকেই উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে।এর ফলে চোরাচালানীদের যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, তা আজও আছে এবং তা দেশের অনুন্নত অর্থনীতির জন্য দায়ী।
আবুল মনসুর আহমদের লেখা আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর, ৪৯৮ নং পৃষ্ঠায় উনি লিখেছেন, “সীমান্তের ১০ মাইল এলাকা ট্রেডের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হলো। এর ফলে ভারতের সাথে চোরাচালানের মুক্ত এলাকা গড়ে উঠে। পাচার হয়ে যায় দেশের সম্পদ।”
৫) জালনোটের চালানঃ
ভারত থেকে বিশাল অংকের জাল নোট বাংলাদেশের বাজারে আসতো। এতে অর্থনৈতিক অবক্ষয় আরো তরান্বিত হয়। সরকার ও জনগণও জিম্মি হয়ে পড়ে এই জালনোটের কাছে।
আব্দুর রহিম আজাদের লেখা, ৭১ এর গণহত্যার নায়ক বই এর ৫২ নং পৃষ্ঠা অনুসারে সেই সময়ে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন বলতে বাধ্য হয়েছেন, “জালনোট আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করিয়া দিয়াছে।”
অলি আহাদের লিখা জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ‘৭৫, ৫২৮-৫৩১ নং পৃষ্ঠায় পাট চোরাচালান সর্ম্পকিত একটি লেখায় লিখেছেন, “নাম মাত্রমূল্যে বা জালটাকায় পাট পাচার শুরু হল।”
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.