google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html বিএনপির ‘সংস্কারপন্থি’ নেতারা দলে ফেরার অপেক্ষায় - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Saturday, August 29

বিএনপির ‘সংস্কারপন্থি’ নেতারা দলে ফেরার অপেক্ষায়

bnp-logo_43701শিমুল রহমান : বিএনপির ‘সংস্কারপন্থি’ নেতারা দলে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতারা বছরের পর বছর দলের বাইরে থাকলে দলের একাধিক সূত্রে জানা যায় যে কোনো সময় তাদের দলে ডাক পড়তে পারে। সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি আর রাজপথের আন্দোলনে দলছুট এ বৃহৎ শক্তিকে বাইরে রেখে কতটুকু লাভক্ষতি হয়েছে এমন হিসাব কষেই তারা এবার নতুন করে নড়েচড়ে বসেছেন সংস্কারপন্থি ইস্যুতে।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যাঁদের ওপর নির্ভর করে এতদিন রাজনীতি করে আসছিলেন, তাদের অনেকেই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেননি। বড় বড় ডায়ালগ ছাড়া কার্যত তাদের আর রাজপথে খুঁজে পাননি তিনি। তাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্মঘাতী ভূমিকায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া।
অপরদিকে, দলের সঙ্কটকালীন মুহূর্তে সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত অনেক নেতা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশন টক শো আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের পক্ষে প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়ে তৃণমূল বিএনপিকে একধরনের বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। দলে পদ-পদবি না থাকলেও নিজের তাগিদে দলকে ভুলে যাননি এসব তুখোড় রাজনৈতিক নেতা।
সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথোপকথনে সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে। তা মনে রাখার সময় এখন নয়। আন্দোলন সফল করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কে কোন পদে আছেন কিংবা কে কোনপন্থি সেই বিবেচনা করলে চলবে না। তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করতে সবার সাংগঠনিক প্রভাব ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এছাড়া দলের সংস্কারপন্থি সাবেক এমপিদের সক্রিয় হতে বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত দেন তিনি। এদিকে, দীর্ঘদিন পর হাইকমান্ড থেকে পাওয়া বার্তাকে সুখবর বিবেচনা করে দলে ফেরার আশায় বুক বেঁধেছেন সংস্কারপন্থি নেতারা।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংস্কারপন্থিদের বড় ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় তারা যাতে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়, সেজন্য দলের দুই সিনিয়র নেতাকে সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে পরবর্তী সময়ে দলে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিতে বলেন বেগম জিয়া। পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা কয়েক দফা সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন সংস্কারপন্থিরা তাদের জানান, বিএনপিতে তাদের ফিরিয়ে না নিলেও তারা কখনোই আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে সাড়া দেবেন না এবং সাড়াও দেননি।
সূত্র জানায়, মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাদের অনেককেই বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি অনেকের পরিবারের সদস্যকেও জিম্মি করা হয়েছিল। এরকম পরিবেশে তারা নিজেদের রক্ষায় দলের বিরুদ্ধাচরণ করতে বাধ্য হন। তার পরিণতিতে ইতোমধ্যে এসব রাজনৈতিক নেতা রাজনীতিতে যথেষ্ট শিক্ষাও পেয়েছেন।
তবে ওই সময় বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় আটক অনেক নেতা পরবর্তী সময়ে দলের কট্টরপন্থি নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যাঁদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা না থাকলেও দলের নেতৃত্ব শূন্যতায় বড় বড় পদ-পদবি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। এসব নেতা একসময়ের ডাকসাইটে নেতাদের ধারেকাছেও ঘেঁষতে সাহস পেতেন না। অথচ সময়ের বিবর্তনে তারাই এখন দলের হর্তাকর্তা।
গুলশান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দলের বাইরে অবস্থানকারী নেতারা কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। কিন্তু দলের একটি সুবিধাভোগী অংশ তা কিছুতেই মেনে নিতে চাইছেন না।’
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর এবং তার মৃতদেহ গুলশান কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত একটি অংশ গুলশান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তারা কোকোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গুলশান কার্যালয়ে আসার অনুমতি চাইছিলেন। এমনকি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু গুলশান কার্যালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ায় ওইসব নেতা আর আসতে পারেননি। এ সময় তারা সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন।
তারা বলেছিলেন, এরকম একটি বেদনামুহূর্তে তারা ইচ্ছা করলেই আসতে পারেন। কিন্তু সুবিধাবাদীরা ইচ্ছা করে কোনো অঘটন ঘটালে তার পুরো দায়ভার এসব নেতাকে নিতে হবে। যা দল ও তাদের ইমেজ সঙ্কটকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তারাও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেননি।
এসব বিষয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, দলের শুরু থেকে যেসব নেতার নিরলস প্রচেষ্টায় আজকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত, সেসব নেতাকে দলে পুনর্বাসন করা হলে আজকের ভূঁইফোড় অনেক নেতাই আঁস্তাকুড়ে কিংবা দলের সাইড লাইনে বসে যেতে পারেন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে এসব নেতা শিশুর মতো। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তারা চাইবেন না দলের বাইরে অবস্থানকারীদের আবারও দলে পুনর্বাসন করা হোক।
সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে দলে ফেরার ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন- নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, মৌলভিবাজারের এমএম শাহীন, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, শহিদুল হক জামাল ও মোশারেফ হোসেন মঙ্গু, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, চাঁদপুরের এসএ সুলতান টিটু, বগুড়ার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বরগুনার নুরুল ইসলাম মনি, ঢাকার মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, গাইবান্ধার শামীম কায়সার লিঙ্কন, লক্ষ্মীপুরের জিয়াউল হক জিয়া, চাঁদপুরের আলমগীর হায়দার খান, কক্সবাজারের ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মে. জেনারেল (অব.) জেডএ খান, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও মোফাজ্জল করিম প্রমুখ।
সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বহিষ্কার করা হলেও থেমে নেই তার কার্যক্রম। তিনি দলের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেষবার যখন যশোরে গিয়েছিলেন তখন মফিকুল হাসান তৃপ্তির নেতৃত্বে বিশাল শোডাউন করা হয়।
মফিকুল হাসান বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই দল করে আসছি। তখন থেকেই বিএনপি করছি। এখনও করি। ভবিষ্যতেও করব। আমি বিএনপি চেয়ারপারসনের দিকে তাকিয়ে আছি কখন তিনি ডাকবেন। বিভিন্ন সময়ে শুনেছি আমাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’
মোশারেফ হোসেন মঙ্গু জানান, ‘শেষ কাউন্সিলে তাকে নির্বাহী কমিটিতে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে দলের সভা সমাবেশের চিঠি দেওয়া হয়। নতুন করে কমিটি গঠনের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সে উপলক্ষে বিভিন্ন সভায় তাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাতে তিনি অংশগ্রহণও করছেন।’
উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলের অভ্যন্তরে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিলে ১২৭ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি তাকে সমর্থন জানান। সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে কেবল তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি এই তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।


-ভোরের পাতা