google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html বাংলা শব্দের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Wednesday, January 6

বাংলা শব্দের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে

বাংলার ভাণ্ডারে চার লাখ শব্দরতন
বাংলা ভাষার ভাণ্ডারে শব্দসংখ্যা কত! শতবর্ষ আগের অভিধানে যেখানে সোয়া লাখের মতো শব্দ সংকলিত হয়েছিল, সাম্প্রতিককালের অভিধানে এ সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়ায়নি। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলা শব্দের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। আবার অনেকে মনে করেন, সংখ্যাটি চার লাখের কম হবে না। তবে বাংলার সব শব্দ সংকলনের ব্যাপকভিত্তিক কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।
জাতীয় জ্ঞানকোষ ‘বাংলাপিডিয়া’র প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মতে, কোনো ভাষার শব্দসংখ্যা কত, কোনো এক মুহূর্তে তা বলা কঠিন। কারণ প্রতিনিয়ত শব্দ মরে যাচ্ছে, আবার নতুন নতুন শব্দও তৈরি হচ্ছে। তবে অভিধানে শব্দ সংকলিত হলে সেই সময়ের সংখ্যা হিসেবে তা উল্লেখ করা যায়।
বাংলা ভাষার শব্দ সংকলন ও অভিধান প্রণয়নের ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানা যায়, বাংলা শব্দ সংকলিত করে বাংলায় লেখা প্রথম বাংলা থেকে বাংলা অভিধান প্রণয়ন করেন রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ। সেটি প্রকাশিত হয় প্রায় ২০০ বছর আগে, ১৮১৭ সালে। তার ঠিক ১০০ বছর পর ১৯১৭ সালে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় অভিধান জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাংলা ভাষার অভিধান’। তাতে প্রায় ৭৫ হাজার বাংলা শব্দ সংকলিত হয়। তারপর ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে শব্দসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার। এ বাংলায় বাংলা শব্দ সংকলনের কাজ শুরু হয় পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর বাংলা একাডেমি প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তা ছিল অভিধান প্রণয়ন। উদ্যোগ নেওয়া হয় ব্যবহারিক বাংলা অভিধান প্রণয়নের। কিভাবে এটি প্রণয়ন করা হবে সে ব্যাপারে সুপারিশ ও নীতিমালা তৈরির জন্য তৎকালীন দেশসেরা পণ্ডিতদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে বাংলা একাডেমি। এ কমিটিতে ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, অজিত কুমার গুহ ও আহমদ শরীফের মতো পণ্ডিতরা। সমসাময়িক অন্যান্য বিশেষজ্ঞও নানাভাবে যুক্ত হন এ প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে ড. মুহম্মদ এনামুল হকের সম্পাদনায় স্বরবর্ণ অংশ, ১৯৮৪ সালে অধ্যাপক শিবপ্রসন্ন লাহিড়ীর সম্পাদনায় ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ এবং ১৯৯২ সালে অখণ্ড পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ নামে প্রকাশিত হয়। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় পরিমার্জিত সংস্করণ। এতে ভুক্তি ও উপভুক্তি মিলে মোট ৭৩ হাজার ২৭৯টি শব্দের অভিধা পাওয়া যায়। এ অভিধানের আরেকটি সংস্করণ আগামী জুনে প্রকাশিত হওয়ার কথা। এ নতুন সংস্করণে নতুন দুই হাজার শব্দ সংযুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ অভিধানের হিসাব মতে বাংলা শব্দের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে সাকল্যে ৭৫ হাজার। তবে সর্বশেষ যে অভিধান প্রকাশিত হয়েছে চলতি ফেব্রুয়ারিতে, এটিই হবে এযাবৎকালের বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় অভিধান। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত এ অভিধান হচ্ছে ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’। বাংলা ভাষায় এর আগে প্রকাশিত বড় অভিধান জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাংলা ভাষার অভিধান’ প্রকাশের প্রায় ১০০ বছর পর প্রকাশিত হলো এ অভিধান। তাতে কত শব্দ স্থান পেয়েছে সে পরিসংখ্যান উল্লেখ নেই। তবে সম্পাদক ড. গোলাম মুরশিদ জানিয়েছেন, এতে প্রায় দেড় লাখ শব্দ যুক্ত হয়েছে। এ হিসাবে গত ১০০ বছরে বাংলার শব্দ সংকলনে যুক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার শব্দ।
তবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলা একাডেমির অভিধানে সংকলিত শব্দসংখ্যা দিয়ে বাংলা শব্দভাণ্ডারের শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে না। কারণ বাংলা একাডেমি যে অভিধানগুলো করেছে, তা সাহিত্যভিত্তিক। বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানে যুক্ত হয়েছে সেসব শব্দ, যা বাংলা সাহিত্যে ঢুকেছে। এর বাইরে তো অগণিত শব্দ রয়ে গেছে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মতে, আমাদের ভূখণ্ডের সব যুগের, সব শ্রেণীর, সব ধর্মের, সব সংস্কৃতির শব্দকে সংকলিত করলে বাংলা শব্দের সংখ্যা দুই লাখের কম হবে না। কিন্তু এ রকম শব্দ সংকলনের কোনো উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এশিয়াটিক সোসাইটি ২০০৯ সালের দিকে এ রকম একটি উদ্যোগ নিলেও তা নানা কারণে সফল হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের মতে, বাংলা শব্দভাণ্ডারে শব্দসংখ্যা চার লাখের কম হবে না। এ ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা না হওয়ার কারণে প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। তাঁর মতে, রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.