আলাদা করে বলতে হলে উঠে আসবে এই পাঁচজনের নাম—
দেশের ক্রিকেটে তাঁর প্রমাণ করার ছিল না কিছুই। যে উচ্চতায় আগেই ছিলেন, সেখান থেকে জবাব দেওয়া-টেওয়ার ব্যাপারগুলোও হাস্যকর। তবু সাম্প্রতিক অতীতের ঘটনাপ্রবাহ, নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা মিলিয়ে বাড়তি আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন এসব তাঁকে স্পর্শই করে না। আদতে হয়তো জোগায় আরও অনুপ্রেরণা! সিরিজের প্রথম দিনেই ৬ উইকেট, পরের টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটের ইতিহাস, সিরিজে ৩ বার ৫ উইকেট, অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তৃতীয়বারের মতো সিরিজ-সেরা, ছোটখাটো আরও একগুচ্ছ অর্জন। এই সিরিজ আরেকবার জানান দিল, সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘সুপারম্যান।’
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাঁকে ডাকেন ‘মিনি’। গত দুই সিরিজে তাঁর ইনিংসগুলোও হয়ে যাচ্ছিল নামের মতোই। বাংলাদেশের আর প্রায় সবার ক্ষেত্রে ফিফটি মানে প্রাপ্তি, তাঁর ক্ষেত্রে আক্ষেপ। টানা চার টেস্ট ফিফটিতে আটকা পড়াতেই তাই প্রশ্ন, বিস্ময়, ফিসফাস। সব তাড়িয়ে দিয়েছেন সিরিজের শেষ ইনিংসে। আগের ‘মিনি’ ইনিংসগুলোর সঙ্গে শেষের বড় ইনিংসে সিরিজে দলের সবচেয়ে বেশি রান দেখা গেল তাঁরই। এই ‘পকেট ডায়নামো’ যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সত্যিকারের আশীর্বাদ। অধিনায়ক মুশফিক কাল বললেন, ‘মুমিনুলকে নিয়ে কথা বলার জন্য আমি অনেক ছোট ক্রিকেটার!’
সিরিজ শুরু করেছিলেন সর্বশেষ তিন ইনিংসে ৬৪, ৪৮ ও ৫৩ রান নিয়ে। এখানে প্রথম টেস্টে বাজে পারফরম্যান্সের পর তবু তাঁর মুণ্ডুপাত করছিলেন অনেকেই। দীর্ঘ সেঞ্চুরি-খরা নিয়ে প্রশ্নের চাবুক তো ছিলই। তামিম ব্যাট হাতেই দিয়েছেন জুতসই জবাব। সেঞ্চুরি-তৃষ্ণা কাতরতায় গড়েছেন দেশের মন্থরতম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড। পরের টেস্টেই আরেক সেঞ্চুরিতে ছুঁয়েছেন দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটি ফিফটি, এক সিরিজে প্রথমবার তিন শ (৩০৮) রান। আবার দলের ভাগ্যনিয়ন্তাদের একজন হয়ে তামিমের ফেরা।
অভিষেকে ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে যাওয়ার নজির বাংলাদেশে কম নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৫ উইকেট পাওয়া তাইজুলের চ্যালেঞ্জ ছিল তাই সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। বাঁহাতি স্পিনার সেটা শুধু ধরেই রাখলেন না, নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে ছাড়ালেন সবাইকেই! প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। পরের টেস্টেও ৬ উইকেট। সিরিজে মোট ১৭ উইকেট। অনেকেই ভুলে যেতে পারেন, প্রথম টেস্টে তাঁর ১৯ রানের ইনিংসেই লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ, জয়ে বড় অবদান ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রানের ইনিংসটার। পেয়েছেন ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ পুরস্কার। আদতে তাইজুল ছিলেন অমূল্য!
সিরিজের শুরুতে ছিলেন বড় এক চমক, সিরিজ শেষে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। চট্টগ্রাম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন, আগের দুই টেস্টে চারটি। উইকেটসংখ্যার বিচারেই যথেষ্ট সফল। তবে এই সিরিজের জুবায়েরকে বাঁধা যাবে না শুধু সংখ্যায়। প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন, প্রমাণ করেছেন এই বয়সেই বেশ পরিণত, অস্ত্রভান্ডারও সমৃদ্ধ। এখনো শেখার বাকি অনেক, পাড়ি দিতে হবে অনেক দূর। তবে পথে থাকলে সামর্থ্য আছে পরিপূর্ণ এক লেগ স্পিনার হয়ে ওঠার। যে রোমাঞ্চ নিয়ে আবির্ভাব, এই সিরিজে সেই রোমাঞ্চ আরও তীব্র করে ছড়িয়ে দিয়েছেন জুবায়ের।
বাংলাদেশের ব্যাটিং–বোলিং
ব্যাটিং
ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
মুমিনুল হক ৩ ৬ ৩২১ ১৩১* ৬৪.২০ ১/২
তামিম ইকবাল ৩ ৬ ৩০৮ ১০৯ ৫১.৩৩ ২/১
মাহমুদউল্লাহ ৩ ৬ ২৬৪ ৭১ ৪৪.০০ ০/৩
সাকিব আল হাসান ৩ ৬ ২৫১ ১৩৭ ৪১.৮৩ ১/১
মুশফিকুর রহিম ৩ ৬ ১৫৯ ৬৪ ৩১.৮০ ০/১
ইমরুল কায়েস ১ ২ ১৪৫ ১৩০ ৭২.৫০ ১/০
শুভাগত হোম ৩ ৬ ১১৭ ৫০ ২৩.৪০ ০/১
তাইজুল ইসলাম ৩ ৫ ৬৮ ৩২ ১৭.০০ ০/০
রুবেল হোসেন ২ ৩ ৫৩ ৪৫* - ০/০
শামসুর রহমান ২ ৪ ৩৩ ২৩ ৮.২৫ ০/০
শাহাদাত হোসেন ২ ৪ ৩২ ১৮ ৮.০০ ০/০
জুবায়ের হোসেন ৩ ৩ ১৩ ৭* ৬.৫০ ০/০
শফিউল ইসলাম ১ ১ ১০ ১০ ১০.০০ ০/০
আল আমিন ১ ১ ৯ ৯ ৯.০০ ০/০
বোলিং
ওভার রান উইকেট সেরা গড় ৫/১০
সাকিব আল হাসান ১২৯.৫ ৩২৯ ১৮ ৬/৫৯ ১৮.২৭ ৩/১
তাইজুল ইসলাম ১২৯.১ ৩৬৯ ১৭ ৮/৩৯ ২১.৭০ ১/০
জুবায়ের হোসেন ৮৪.০ ৩২২ ১১ ৫/৯৬ ২৯.২৭ ১/০
রুবেল হোসেন ৩৯.০ ১২৫ ৫ ২/১৬ ২৫.০০ ০/০
শফিউল ইসলাম ২৭.০ ৬৭ ৪ ২/১৭ ১৬.৭৫ ০/০
শাহাদাত হোসেন ৩৩.০ ৯৪ ২ ১/২৫ ৪৭.০০ ০/০
শুভাগত হোম ২৮.০ ১০৩ ২ ২/৬৬ ৫১.৫০ ০/০
মাহমুদউল্লাহ ১০.০ ২৬ ১ ১/৪ ২৬.০০ ০/০
মুমিনুল হক ১.০ ০ ০ - - ০/০
আল আমিন ৮.০ ২২ ০ - - ০/০
টেস্টে বাংলাদেশের সাত জয়
১
চট্টগ্রাম, ২০০৫
বাংলাদেশ: ৪৮৮ ও ২০৪/৯ ডি.
জিম্বাবুয়ে: ৩১২ ও ১৫৪
ফল: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: এনামুল জুনিয়র।
২
সেন্ট ভিনসেন্ট, ২০০৯
বাংলাদেশ: ২৩৮ ও ৩৪৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩০৭ ও ১৮১
ফল: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।
৩
গ্রেনাডা, ২০০৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৩৭ ও ২০৯
বাংলাদেশ: ২৩২ ও ২১৭/৬
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।
৪
হারারে, ২০১৩
বাংলাদেশ: ৩৯১ ও ২৯১/৯ ডি.
জিম্বাবুয়ে: ২৮২ ও ২৫৭
ফল: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুশফিকুর রহিম।
৫
ঢাকা, ২০১৪
জিম্বাবুয়ে: ২৪০ ও ১১৪
বাংলাদেশ: ২৫৪ ও ১০১/৭
ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম।
৬
খুলনা, ২০১৪
বাংলাদেশ: ৪৩৩ ও ২৪৮/৯ ডি.
জিম্বাবুয়ে: ৩৬৮ ও ১৫১
ফল: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।
৭
চট্টগ্রাম, ২০১৪
বাংলাদেশ: ৫০৩ ও ৩১৯/৫ ডি.
জিম্বাবুয়ে:৩৭৪ ও ২৬২
ফল: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুমিনুল হক।


No comments:
Post a Comment
Thank you very much.