ছবি এক: লং এক্সপোজারএ রাতের ছবি।
ছবি দুই: খুবই শর্ট এক্সপোজারে তোলা লাইট বাল্ব বিস্ফোরিত হওয়ার ছবি।
একটা ছবি রাতে তোলা, যেখানে দীর্ঘ সময় ক্যামেরার চোখ খুলে রাখতে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়টা তুলতে লেগেছে এক মুহুর্তের কয়েক লাখ ভাগের একভাগ সময় (এক মুহূর্ত = ৪৮ মিনিট, বাই দ্যা ওয়ে)| ব্যপারগুলো বেশ অদ্ভুত, তাইনা? এই দুটো জিনিসের কোনটিই কিন্তু আমরা চোখে এরকম দেখিনা। ম্যাট্রিক্সের নায়কের মত কপাল তো আর সবার না, কাজেই বুকের মধ্যে সেধিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ছুটে আসা বুলেট দেখা সম্ভব নয়, আবার মেঘেদের এরকম মাতালের মতো চলাও আমাদের চোখে ধরা পড়েনা।
কিন্তু ক্যামেরা দেখতে পায়। না না, ঠিক হলো না। ক্যামেরাকে দিয়ে আপনি, মানে ফটোগ্রাফার দেখাতে পারেন।
এক্সপোজার নিয়ন্ত্রনের নিয়ামকগুলো (Factors):
আমরা চোখে যা দেখি, বাস্তব কি আসলে সেইরকম সবসময়? একটা মোটামুটি অন্ধকার ঘরে যখন আপনি হুট করে ঢুকে পড়বেন, প্রথম প্রথম কিছুই দেখবেন না…কিছু সর্ষে ফুল ছাড়া। একটু সময় নিন, আস্তে আস্তে সব কিছু পরিস্কার হয়ে আসবে। এটাকে আমরা বলি ‘চোখে সইয়ে নেয়া’, তাইতো? কিন্তু ব্যপারটা কেন ঘটে, সেটা কি ভেবে দেখেছেন? বাইরের আলোকিত পরিবেশ থেকে আমরা যখন অন্ধকারে ঢুকে পড়ি, তখন চোখের পিউপিল আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, যাতে চোখে বেশি আলো প্রবেশ করে। পিউপিল এর আকার বড় হওয়ার এই সময়টা তাই তেমন কিছু দেখতে পাইনা আমরা। যখনই অন্ধকার ঘর থেকে পর্যাপ্ত আলো আমাদের চোখে আসে, তখন সবকিছু পরিস্কার হতে থাকে। এখন ধরুন, একজনের শরীরে ভিটামিন এর অভাব…(ছোটবেলায় খালি বড় বড় মাছ খেতে চাইতো, মলা ঢেলা খায়নি)| তার ক্ষেত্রে কি হবে? তার চোখ যেহেতু ভিটামিনের অভাবে দূর্বল, সে কিন্তু সুস্থ চোখের অধিকারীর চেয়ে কম দেখবে। তার আরো বেশ খানিকটা সময় লাগবে এই অল্প আলোতে সইয়ে নিতে। কেননা তার চোখ আপনার তুলনায় কম Sensitive (অর্থাৎ কম সংবেদনশীল)।
এই যে উদাহরণ দিলাম, এতেই কিন্তু ক্যামেরার এক্সপোজারএর যাবতীয় টেকনিক বলা হয়ে গেল। কিভাবে?আসুন একটু বিশ্লেষন করি:
চোখের পিউপিল = ক্যামেরার অ্যাপারচার। অ্যাপারচার যত বড় করা হবে, আলো তত বেশি প্রবেশ করবে ক্যামেরায়। অ্যাপারচার এর মান ভালভাবে বোঝার জন্য ‘লেন্স’ পর্বটি ভাল করে পড়ুন। পড়াশোনা না করলে হবে?
চোখ সইয়ে নেয়ার সময় = ক্যামেরার শাটার স্পিড। আলো যদি কম থাকে, চোখে সইয়ে নিতে সময় বেশি লাগে। ঠিক তেমনি আলো কম থাকলে ক্যামেরার চোখ বেশিক্ষন খুলে রাখতে হবে, অর্থাৎ শাটার স্পিড কমিয়ে দিতে হবে। সাধারনতঃ ডিজিটাল ক্যামেরার শাটার এর স্পিড ৩০ সেকেন্ড থেকে ১/৮০০০ (অর্থাৎ এক সেকেন্ডএর আটহাজার ভাগের একভাগ!!) পর্যন্ত কম বেশি করা যায়। আপনি চাইলে শাটার কত বেশি সময় খোলা রাখবেন, তার নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নিযে নিতে পারেন…যেটাকে বলে ক্যামেরার ‘Bulb’ মোড। তবে ১/৮০০০ সেকেন্ড এর চেয়ে কম সময় সাধারণতঃ শাটার স্পিড দেয়া সম্ভব না, শাটার কার্টেইন খটাস করে দুই টুকরো হয়ে যেতে পারে।
চোখের সংবেদনশীলতা (যাহাকে বলে ভিটামিনের পর্যাপ্ততা বা স্বল্পতা) = ক্যামেরার সেন্সর এর ‘আই এস ও’ (ISO)। এই বিষয়টি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল ক্যামেরার সেন্সর এর ‘গেইন’ নিয়ে আগে আলোচনা করেছিলাম। সোজা কথায়, সেন্সরের ISO যত বাড়ানো হবে, ক্যামেরা অল্প আলোতে তত বেশি সংবেদনশীল হবে। তবে ISO বাড়ালে ছবিতে ‘নয়েজ’ চলে আসবে যেটা ছবির কোয়ালিটি কিছুটা হলেও খারাপ করে দেবে। কাজেই এখানে একটা আপোষরফার ব্যপার আছে…আপনি কতখানি Noise থাকলে কিছু মনে করবেন না, সেটা চিন্তা করেই আইএসও বাড়ানো উচিত। আই এস ও র হিসাবটা এরকম:
আই এসও ১০০ > ২০০ > ৪০০ > ৮০০ > ১৬০০ > ৩২০০>…….
আইএসও ২০০ হলো ১০০ এর তুলনায দ্বিগুণ সংবেদনশীল। আইএসও ৮০০, আইএসও ২০০ এর তুলনায় চারগুন সংবেদনশীল । অর্থাৎ সাংখ্যিক মান অনেক বড় মনে হলেও, এই মানগুলো আসলে আগের মান থেকে দ্বিগুন সংবেদনশীলতাই প্রকাশ করে। এটা মনে রাখবেন। আজকাল অবশ্য বেশিরভাগ ক্যামেরাতেই মাঝামাঝি আইএসও মান ও থাকে..যেমন ধরুন ২৫০, ৩৬০..ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে যে আপনার চোখ যেভাবে কাজ করে, ক্যামেরা অনেকটা সেভাবেই কাজ করে। কিন্তু একটা বড় পার্থক্য আছে। আপনার চোখ এর পেছনে একটা মাথা আছে, যেটা পরিবেশ বুঝে চোখ নামক ক্যামেরার বিভিন্ন নিয়ামক নিয়ন্ত্রন করে আলোর প্রবেশ কে নির্ধারন করে। কিন্তু আপনার ডিজিটাল ক্যামেরার সেরকম কোন মাথা নেই। একটা প্রসেসর আছে, যেটাতে নিদৃষ্ট কিছু পূর্বনির্ধারিত সেটিং দেয়া থাকে..যেটা দিয়ে ক্যামেরা যেকোন পরিবেশে একটা গতবাধা এক্সপোজার তৈরী করতে পারে..কিন্তু ওই পর্যন্তই।
দেখা যাচ্ছে যে আপনার চোখ যেভাবে কাজ করে, ক্যামেরা অনেকটা সেভাবেই কাজ করে। কিন্তু একটা বড় পার্থক্য আছে। আপনার চোখ এর পেছনে একটা মাথা আছে, যেটা পরিবেশ বুঝে চোখ নামক ক্যামেরার বিভিন্ন নিয়ামক নিয়ন্ত্রন করে আলোর প্রবেশ কে নির্ধারন করে। কিন্তু আপনার ডিজিটাল ক্যামেরার সেরকম কোন মাথা নেই। একটা প্রসেসর আছে, যেটাতে নিদৃষ্ট কিছু পূর্বনির্ধারিত সেটিং দেয়া থাকে..যেটা দিয়ে ক্যামেরা যেকোন পরিবেশে একটা গতবাধা এক্সপোজার তৈরী করতে পারে..কিন্তু ওই পর্যন্তই।
দাড়ান, দাড়ান! মাথা তো আছে আপনার ক্যামেরার! আরে, আপনার মাথাই তো ক্যামেরার মাথা!
কি বুঝলেন? ক্যামেরা শুধু আলো ধরতে পারে, আর ‘Auto’ মোড এ একটা গৎবাধা এক্সপোজার দিতে পারে। যদি কোন দৃশ্যের ছবি নিজের কল্পনার সাথে মিলিয়ে ধরতে চান, তাহলে আপনাকেই বলে দিতে হবে ক্যামেরায় কতটুকু এক্সপোজার আপনি চান। আসুন দুটো ছবি দেখি:
ছবি ৩
ছবি ৪
ছবি দেখে কি মনে হচ্ছে? একেবারে ঝকঝকে দিনের আলোয় তোলা ছবি, তাইনা? ভাল করে খেয়াল করুন, এগুলো আসলে সূর্যের আলোয় তোলা ছবি না..একদম গভীর রাতের ছবি! কিভাবে তোলা হলো এই ছবি? ক্যামেরার শাটার স্পীড একদম কমিয়ে দিয়ে, অর্থাৎ দীর্ঘক্ষন লেন্স এর মুখ খোলা রেখে। রাতের আঁধারেও খুব সামান্য আলো থাকে, আর শাটার কমিয়ে অনেক্ষন ধরে ছবি তুললে সেই অল্প আলো ধীরে ধীরে সেন্সরে ‘Register’ হতে থাকে। এই ব্যাপারটাকে বলা হয় ‘light registration’। নদীর বুকে যেমন পলি জমে জমে একসময় একটা বিশাল চর হয়ে যায়, ঠিক তেমনি অনেক্ষন ধরে এই অল্প আলো জমিয়েই ক্যামেরা একদম ঝকঝকে একটা ছবি তুলে আনতে পারে।
আশা করি এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন এক্সপোজার নিয়ন্ত্রনের ব্যপারটা। একটা গাড়ি চালানোর জন্য যেমন বেশ কয়েকটা জিনিস একসাথে নিয়ন্ত্রন করতে হয় (গিয়ার, গ্যাস, ব্রেক, স্টিয়ারিং), ঠিক সেরকম অ্যাপারচার, শাটার স্পিড আর ISO, এই তিনটে জিনিস একসাথে নিয়ন্ত্রন করতে হবে আপনার পছন্দ মতো এক্সপোজার পেতে হলে।
নিচের ছবিটি দেখুন। এই ছবি তোলার সময় যেই সেটিং ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হল: এ্যাপারচার (F value): f/8.0 , ISO: 125 , এবং শাটার স্পিড : 0.006 second. এই একই ছবি নিচের সেটিং ব্যবহার করেও তোলা সম্ভব:
ছবি ৫: মার্টল বীচ, ২০১৩
অরিজিন্যাল মান | পরিবর্তিত মান ১ | পরিবর্তিত মান ২ | |
Aperture: | f/8.0 | অপরিবর্তিত (f/8.0 ই রাখা হল।) | f/11 (এই মান f/8 এর তুলণায় অর্ধেক আলো প্রবেশ করতে দেবে।) |
Shutter speed: | ০.০০৬ সেকেন্ড (এক সেকেন্ড এর ১৬০ ভাগের একভাগ। | ০.০০৩ সেকেন্ড (এক সেকেন্ড এর ৩২০ ভাগের একভাগ)| শাটার স্পীড বাড়িয়ে দেয়া হল..এটা আগের তুলনায় অর্ধেক আলো প্রবেশ করতে দেবে। | (০.০১২ সেকেন্ড – শাটার স্পীড কমিয়ে দেয়া হলো..এই মান আগের চেয়ে দ্বিগুণ আলো প্রবেশ করতে দেবে।) |
ISO: | ১২৫ (ধরুন ১০০) | ২০০ (দ্বিগুন করা হল)..সেন্সরের সংবেদনশীলতা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল। | ১২৫ (অপরিবর্তিত রাখা হলো) |
ছবিতে কি পরিবর্তন হবে | এক্সপোজারের কোন পরিবর্তন হবে না। ছবি একই রকম উজ্জ্বল দেখাবে। তবে আইএসও দ্বিগুন করার কারণে ছবিতে ‘নয়েজ’ বেড়ে যাবে। | এক্সপোজার এর কোন পরিবর্তন হবে না। তবে অ্যাপারচার ছোট করে ফেলার কারনে ডেপথ অব ফিলড বেড়ে যাবে এবং ছবি আর একটু বেশি শার্প মনে হতে পারে। |
ক্যামেরার অটো মোড: কি ভালো, কি মন্দ?
আমাদের জীবনকে সহজ করার জন্যে প্রত্যেক ক্যামেরাতেই একটা ‘অটো’ আর একটা প্রোগ্রামড অটো মোড (P) থাকে। অটো মোড হলো পুরাই অটো….ক্যামেরা তাক করুন, আর শাটার বাটন প্রেস করুন। ক্যামেরা নিজে থেকেই এক্সপোজার হিসেব করে ছবি তুলে ফেলবে। ব্যাস! আর প্রোগ্রামড অটো মোড এ কিছুটা নিয়ন্ত্রন থাকবে আপনার…বলে দিতে পারবেন যে আপনি স্বাভাবিক এক্সপোজার এর চেয়ে কিছুটা কমাতে বা বাড়াতে চান কি না এক্সপোজার। এই এক্সপোজার বাড়ানো বা কমানোর ব্যপারটায় একটু পরেই আলোচনা করছি..তার আগে দেখে নেই ক্যামেরা আসলে কি মেকানিজম ব্যবহার করে একটা দৃশ্যের এক্সপোজার হিসাব করেঃ
ক্যামেরা কিভাবে এক্সপোজার হিসাব করে:
কোন একটা দৃশ্যে কতটুকু এক্সপোজার দিতে হবে, সেটা হিসাব করার প্রথম শর্ত হচ্ছে এই দৃশ্যে কতখানি ‘উজ্জ্বলতা’ (Illumination) তথা কতখানি আলো আছে, সেটা নির্ণয় করা। এই হিসাব করার জন্যে আগেকারদিনে ‘Light meter’ ব্যবহার করা হতো।ফটোগ্রাফাররা আলাদা একটা য্ন্ত্র দিয়ে আগে দৃশ্যের আলোর মাত্রা মেপে নিতেন এবং সেই মোতাবেক ক্যামেরার অ্যাপারচার, শাটার স্পীড, ইত্যাদি সেট করতেন।ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর, আলাদা লাইট মিটারের আর প্রয়োজন পড়েনা, কেননা ক্যামেরার লেন্সএর ভিতর দিয়ে প্রবেশ করা আলো ব্যবহার করে ক্যামেরা নিজেই হিসাব টা করে ফেলতে পারে..ক্যামেরাতেই লাইট মিটার বিল্টইন থাকে। এখন দেখি এই মিটারিং কতভাবে করা যায় এবং কোন উপায়ে মিটারিং করলে ছবিতে কি প্রভাব পড়ে:
ছবি: লাইট মিটার
১. ম্যাট্রিক্স (Matrix) মিটারিং: এটা হলো ক্যামেরার ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মোড মিটারিং এর জন্যে। ক্যামেরা পুরো দৃশ্যকে কয়েকটা মোটামুটি সমান উজ্জ্বলতার ‘ব্লক’ এ ভাগ করে ফেলে এবং প্রত্যেকভাগ থেকে একটা এক্সপোজার ভ্যালু নেয়। পরে এই ভ্যালুকে Average (গড়) করে আপনার ফ্রেম এর জন্যে একটা এক্সপোজার ঠিক করে দেয়।
২. সেন্টার ওয়েইটেড মিটারিং (Center weighted metering): যখন আপনি ক্যামেরা তাক করবেন, তখন আপনার ফ্রেম এর মাঝখানে যে বিষয়বস্তু থাকবে, তার উপর ভিত্তি করে ক্যামেরা এক্সপোজার ঠিক করবে…দৃশ্যের একেবারে ডান-বাম-উপর-নিচে কি আছে, সেটা দেখবে না। কখন প্রয়োজন? যখন একটা পোরট্রেইট তুলবেন, অথবা চাইবেন যে ছবির ঠিক মাঝখানের বিষয়বস্তুর এক্সপোজার ঠিক আসবে এবং সেটা আশপাশের আলোর ভিন্নতা দিয়ে affected হবে না। নিচের ছবিটা দেখুন:
৩. স্পট মিটারিং: ক্যামেরার অনেকগুলো ‘ফোকাস পয়েন্ট (spot)’ থাকে, যেটা ভিউফাইন্ডারের মধ্য দিয়ে তাকালে দেখা যায়। স্পট মিটারিং এর ক্ষেত্রে ক্যামেরা সাধারণতঃ একটা স্পট থেকে উজ্জলতার ভ্যালু নিয়ে সেটার ভিত্তিতেই পুরো দৃশ্যের মিটারিং করে ফেলে। Center weighted এর চেয়ে এই ধরনের মিটারিং এ অনেক ছোট একটা যায়গা থেকে মিটারিং করা যায়।
স্পট মিটারিং কেন ব্যবহার করি? নিচের ছবিটি দেখুন….গ্লাসের পিছনে অনেকখানি উজ্জ্বল আলোকিত যায়গা রয়েছে।Matrix মিটারিং করলে কি হতো? দৃশ্যের সবখানে সমান মাত্রার এক্সপোজার দিলে এই উজ্জ্বল অংশগুলো একেবারে সাদা হয়ে (Blown highlights) ধরা পড়তো ছবিতে। এই ডিটেইল লস এড়ানোর জন্যে ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল বিন্দুতে মিটারিং করতে হবে, যেন সেই বিন্দুটি ওভার-ব্লোউন না হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই, দৃশ্যের বাকি অংশগুলো কিছুটা অন্ধকার আসবে।
ছবি: প্রথম ছবিটিতে গ্লাসের পিছনে উজ্জ্বল যায়গাগুলো সাদা হয়ে গেছে। উজ্জ্বল যায়গায় স্পট মিটারিং করলে এইরকমটি ঘটবেনা..যেমন দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় ছবিতে। লাল রংয়ের গোল্লাটাকে অগ্রাহ্য করুন।
মিটারিং সম্পর্কে আরো ধারণা পেতে হলে নিচের লিংক টি কাজে দেবে:
http://www.exposureguide.com/metering-modes.htm
এখন একটা ছোট ‘ইন ক্লাস’ এ্যাসাইনমেন্ট। নিচের ছবিটি দেখুন। এই দৃশ্যটি যদি ম্যাট্রিক্স মিটারিং দিয়ে তোলা হতো, তাহলে কি হতো?
ছবি ৬: নিউ অরলিন্স, ২০১৩।
তো এই এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শেষ করছি মিটারিং এর আলোচনা। নিচের অংশে আলোচনা হবে ক্যামেরার ‘এক্সপোজার কম্পেনসেশন’ ফিচার নিয়ে:
তো এই এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শেষ করছি মিটারিং এর আলোচনা। নিচের অংশে আলোচনা হবে ক্যামেরার ‘এক্সপোজার কম্পেনসেশন’ ফিচার নিয়ে:
ধরুন এত মিটারিং মোড এর ধার ধারেন না আপনি। ক্যামেরা তো বাই ডিফল্ট ম্যাট্রিক্স মিটারিং সেট করে রাখে। সেখান থেকে চেঞ্জ করে স্পট বা সেন্টার ওয়েইটেড করা…মেলা ঝামেলা মনে হতেও পারে। আমাদের মত অলস (এবং চালাক) প্রকৃতির মানুষের জন্যে ক্যামেরাতে এক্সপোজার কম্পেনসেশন বলে একটা ফিচার থাকে। অর্থাৎ আপনি যেই দৃশ্য ধারন করবেন, সেটার উজ্জলতাটা আন্দাজ করে নিয়ে প্রয়োজনমতো ক্যামেরা কে বলে দেবেন স্বাভাবিক মিটারিং এর তুলনায় কত বেশি বা কত কম এক্সপোজার আপনি চান।
নিচের ছবিটিকে একটা ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে ধরি:
ছবি ৭: ফ্লোরিডা, ২০১২।
এই ছবিটি সন্ধ্যার সময় তোলা, যখন আলো যথেষ্ট কম ছিল পরিবেশে। কিন্তু মানুষটির মশালগুলো যথেষ্ট আলোকিত। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা চাইবো যেন মশালের আলোগুলো স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে এবং একদম সাদা না হয়ে যায়। আগের আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম যে মশালের আলোতে যদি ‘স্পট মিটারিং’ করা হয়, তাহলে হয়তো ছবিটি আমরা যেমন চাই তেমন আসবে। কিন্তু সমস্যা একটাই…সেটা হলো লোকটি একযায়গায় স্থির হয়ে নেই…সে নেচে নেচে পারফর্ম করছে। কাজেই একটা মশালের আলোকে টার্গেট করে মিটারিং করাটা খুবই কঠিন। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আপনাকে মনের চোখে পুরো ব্যপারটা দেখে নিতে হবে:
১. আমরা মশালের আলোর ডিটেইলস চাই। ম্যাট্রিক্স মিটারিং করলে ক্যামেরা পিছনের অল্প আলোকিত আকাশ এর উজ্জ্বলতাকে প্রধান্য দেবে, ফলশ্রুতিতে পুরো দৃশ্যকেই একটু ‘ওভার এক্সপোজ’ করে ফেলবে।
২. পুরো দৃশ্যকে ওভার এক্সপোজ করে ফেলার কারনে, মশালের আগুন একদম সাদা হয়ে যাবে…ছবি তার নান্দনিকতা হারাবে।
৩. কাজেই, ক্যামেরাকে ‘ম্যাট্রিক্স মিটারিং’ করতে দেয়া হলো (কেননা এই ধরনের গতিশীল একটা মুহুর্তে স্পট মিটারিং করা প্রায় অসম্ভব)। এবং একই সাথে বলে দেয়া হলো সে যেন ম্যাট্রিক্স মিটারিং এ আসলে যেই মান পায়, তার থেকে ‘এক স্টপ’ এক্সপোজার কমিয়ে ছবিটা তোলে:
ব্যাস…হয়ে গেল! এই বিষয়টাকে বলা হয় ‘Overriding’, অর্থাৎ কোন একটা ‘ডিফল্ট’ মান কে নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রন করা।
মোটামুটি সব ক্যামেরাতেই এই কাজ করা যায়…এক্সপোজার কম্পেনসেশন করার মিটারটি ডিএসএলআর ক্যামেরায় দেখতে এরকম:
ছবি ৮: ডিজিটাল ক্যামেরার এক্সপোজার কমপেনসেশন মিটার।
সাধারণতঃ একটা হুইল ঘুরিয়ে এই মিটারের ভ্যালু স্বাভাবিক এক্সপোজারের তুলনায় কম বা বেশি করা যায়।এক্সপোজার কম্পেনসেশন সম্পর্কে আরো জানার জন্যে নিচের লিংকটি দেখতে পারেন:
ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রায় কখনই স্পট/সেন্টার মিটারিং ব্যবহার করি না..একটা ছবি তোলার সময় চোখের আন্দাজে দৃশ্যটির উজ্জ্বলতার মাত্রা বোঝার চেষ্টা করি এবং দ্রুততার সাথে সেই মোতাবেক এক্সপোজার কম্পেনসেট করে নেই। এতে সময় বাঁচে এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত হাতছাড়া হয়ে যায় না।
ক্যামেরার এক্সপোজার মোড:
অটো/প্রোগ্রামড অটো (P or A): আগেই বলেছি। এই মোডে ফটোগ্রাফারের কাজ খালি ক্যামেরা তাক করা। ক্যামেরা এক্সপোজার ক্যালকুলেট করে নিজেই শাটার স্পিড, অ্যাপারচার (এবং অনেক সময় আই এস ও) ঠিক করে নিয়ে ছবি তুলবে।
আপাতঃ দৃষ্টিতে খুব ভাল মনে হলেও, অটো মোডের সমস্যা আছে। ক্যামেরা ফিজিক্সের সূত্র অনুযায়ী চলে, হৃদয়ের সূত্র অনুযায়ী নয়। কোন একটা দৃশ্য আপনার কাছে ‘এ্যাজ ইট ইজ’ সুন্দর মনে হতে পারে, কিন্তু ক্যামেরা ভেবে নেবে যে এই দৃশ্যে আলো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বা বেশি এবং সেইমত হিসাব করে একটা ছবি তুলে ফেলবে। ধরুন আপনার বোনের জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালানো হলো..আর ঘরটা একটু অন্ধকার করে দেয়া হলো পরিবেশটায় একটু স্বপ্নীল ভাব আনার জন্যে। তো ক্যামেরা ওইসব স্বপ্ন টপ্ন নিয়ে মাথা ঘামাবেনা, দৃশ্যটা উজ্জ্বল করার জন্য গদাম করে ফ্ল্যাশ মেরে দেবে। ফলে কি হবে? সবকিছু সাদা হয়ে যাবে, স্বপ্ন দুরে পালাবে, আর মোমবাতির আলো লজ্জায় অদৃশ্য হয়ে যাবে।
ছবি ৯: আপনি আসলে যে রকম চান..মোমবাতির আলোর আবহ ঠিক মত ধরা পড়তে হবে।
ছবি ১০: অটোমেটিক মোড এ ক্যামেরা দেখবে যথেষ্ট আলো নেই, কাজেই ফিল ফ্ল্যাশ মেরে কাজ চালানোর চেষ্টা করবে। ফলাফল হবে ভয়াবহ।
বুঝতেই পারছেন…সব যায়গায় অটোমেটিক মোড চলবে না!
অ্যাপারচার প্রায়োরিটি মোড (Av): এই মোডে ক্যামেরা নিজেই শাটার স্পিড ঠিক করবে…তবে আপনি অ্যাপারচার ভ্যালু নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। দিনের বেলা, যখন পর্যাপ্ত আলো থাকে, তখন এই মোড ভাল কাজে দেয়, কেননা আলো বেশি হওয়ার কারণে ক্যামেরা যথেষ্ট ‘Fast’ শাটারস্পিড দিতে পারবে, ফলশ্রুতিতে ছবি কেপে যাবে না।
শাটার প্রায়োরিটি (Tv): এই মোড এ আপনি শাটার স্পিড ঠিক করতে পারবেন, ক্যামেরা ঠিক করবে অ্যাপারচার ভ্যালু। রাতে ছবি তোলার জন্য এই মোড কাজে লাগতে পারে…অথবা যখন দ্রুতগতির কোনকিছুর ছবি তুলবেন তখন (যেমন স্পোর্টস এ)…. শাটার স্পিড যথেষ্ট বাড়িয়ে দিন, যেন ছবি কেপে না যায়। আর আই এসও একটু বাড়িয়ে দিন। ক্যামেরা নিজেই সবচেয়ে বড় অ্যাপারচার সিলেক্ট করে নেবে।
কয়েকটি ছবি এবং কিভাবে সেগুলো তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু আলোচনা:
১.
Exposure | 1/4000 sec |
Aperture | f/10.0 |
Focal Length | 18 mm |
ISO Speed | 200 |
Exposure Bias | -2/3 EV |
Flash | Off, Did not fire |
খুব হাই শাটার স্পীড ব্যবহার করা হয়েছে যেনো লাফ দেয়া ছেলেটি ‘শার্প’ ভাবে ছবিতে ধরা পরে। যেহেতু সরাসরি সূর্যের দিকে তাক করে ছবি তোলা হয়েছে কাজেই যেন সূর্যের অংশ জ্বলে না যায় তাই -২/৩ এক্সপোজার কম্পেনসেশন ব্যবহার করা হয়েছে একটু আন্ডার এক্সপোজ করার জন্যে। অ্যাপারচার কমিয়ে F 10 করা হয়েছে যেন ডেপথ অব ফিল্ড বেশি আসে।
২.
Exposure | 0.6 |
Aperture | f/4.0 |
Focal Length | 17 mm |
ISO Speed | 500 |
Exposure Bias | -2/3 EV |
Flash | On, Did not fire |
এই ছবিটি সেন্টার ওয়েইটেড মিটারিং করে তোলা যেত, যেহেতু বেলুনগুলো বেশ উজ্জ্বল আশপাশের পরিবেশের তুলনায়। তবে আমি তুলেছিলাম একটু আন্ডার এক্সপোজ করে। আর চেয়েছিলাম যেন ছবিতে বেশি নয়েজ না আসে…এইজন্যে আইএসও ৫০০ তে রেখেছি। যেহেতু ছবিটি রাতে তোলা আর অনেকটাই অন্ধকার, নয়েজ বেশি থাকলে সেটা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যেত। খেয়াল করে দেখুন ছবির শাটার স্পিড আধা সেকেন্ড এর মতো।এত কম শাটার স্পিডে সাধারণতঃ ছবি কেপে যায়..তবে ব্যপারটা অনেকটাই অভ্যাসের এবং আপনার হাতের Steadiness এর উপর নির্ভর করে। আমি ধারণা করছি আমার বন্ধু আবদুল্লাহ্র জন্যে এই ধরনের কম শাটার স্পিডে ছবি তোলা একটু কঠিন হবে…মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চ করার সময় ওর হাত সবসময় কাঁপত বলে আমি ওর নাম দিয়েছিলাম কাঁপদুল্লাহ।
৩.
Exposure | 0.002 sec (1/500) |
Aperture | f/5.0 |
Focal Length | 94 mm |
ISO Speed | 100 |
Exposure Bias | -1/3 EV |
Flash | Off, Did not fire |
উজ্জ্বল দিনের আলোয় তোলা ছবি। ছবিতে ডান দিকে অনেকটা আকাশ আর বাম দিকে বেশ আলোকিত জয় রাইড। এই দুটো জিনিসের উজ্জ্বলতার মাত্রা প্রায় একই রকম, কিন্তু সাধারণতঃ আকাশের ছবি তোলার সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় কেননা মেঘের সাদা অংশগুলোর ‘হাইলাইট’ জ্বলে যেতে পারে। কাজেই কিছুটা আন্ডার এক্সপোজ করে তোলা হয়েছে।
৪.
Exposure | 0.005 sec (1/200) |
Aperture | f/5.0 |
Focal Length | 104 mm |
ISO Speed | 100 |
Exposure Bias | 0 EV |
Flash | On, Did not fire |
এই দৃশ্যের উজ্জলতা মোটামুটি Even বা সমসত্ত্ব। কাজেই এক্সপোজার নিয়ে তেমন কোন কারিগরি করার প্রয়োজন হয়নি।
আজকে এইপর্যন্ত। ক্যামেরা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, ছবি তুলুন, এক্সপোজার ভাল না লাগলে কমিয়ে বাড়িয়ে আবার তুলুন, যতক্ষন না মনমতো হয়।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.