আমরা আলো ধরতে চাই। সেই আলো কোন একটা পর্দায় প্রক্ষেপন করতে চাই। এবং তারপর, পর্দায় প্রক্ষীপ্ত আলো ডিজিটাল মাধ্যমে রেকর্ড করতে চাই। একই সংগে, আমরা ছবি তোলার সময় দেখতে চাই ফ্রেমটা কেমন ধরলাম, নান্দনিক হয়েছে কিনা, অথবা ছবিটা ঠিক যে রকম চাই, সেরকম ভাবে এক্সপোজ হচ্ছে কি না। একটা ক্যামেরাতে অন্যান্য অনেক কিছুই থাকতে পারে, কিন্তু এই ব্যপারগুলোকে সাপোর্ট দেয়ার টেকনোলজি থাকতেই হবে, এইগুলোকে আমরা বলতে পারি ‘Core’ টেকনোলজি। ঠিক যেমনটা গাড়ির ক্ষেত্রে। একটা গাড়িতে অনেক হাই ফাই ব্যপার স্যাপার থাকতে পারে, কিন্তু ইঞ্জিন আর ইঞ্জিন কন্ট্রোল গুলো না থাকলে সেটাকে গাড়ি বলা যাবে না। (নতুন নতুন গাড়ি কিনছি তো, তাই গাড়ির উদাহরন দিলাম।)
তাহলে সব ক্যামেরারই কয়েকটা মূল অংশ থাকবে:
১. একটা লেন্স, যার মধ্যে দিয়ে আলো প্রবেশ করবে। এই লেন্স এর ভিতরেই কতটুকু আলো ঢুকবে, সেটা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা থাকবে।
২. আলো টা ঢোকার পর একটা পর্দায় পড়বে, যেটা এই আলোর তীব্রতা এবং রংএর পার্থক্যকে রেকর্ড করবে। ফিল্মের যুগে এই পর্দা ছিল ফিল্ম, আর এখন সেটা হলো একটা সেন্সর।
৩. একটা মাধ্যম যার ভিতর দিয়ে আমরা শাটার প্রেস করার আগে দেখতে পাবো ফ্রেমটা কেমন হলো। এই মাধ্যমটা দুইরকম হতে পারে..একটা হলো অ্যানালগ, যার মধ্যে মুল দৃশ্যটা সরাসরিই দেখা যাবে, অনেকটা দুরবীনের মধ্যে দিয়ে যেমন দেখি। আর একটা হতে পারে ডিজিটাল, যেখানে ক্যামেরার পিছনে একটা পর্দায় দৃশ্যটা লাইভ ভিডিওর মতো দেখা যাবে।
২. আলো টা ঢোকার পর একটা পর্দায় পড়বে, যেটা এই আলোর তীব্রতা এবং রংএর পার্থক্যকে রেকর্ড করবে। ফিল্মের যুগে এই পর্দা ছিল ফিল্ম, আর এখন সেটা হলো একটা সেন্সর।
৩. একটা মাধ্যম যার ভিতর দিয়ে আমরা শাটার প্রেস করার আগে দেখতে পাবো ফ্রেমটা কেমন হলো। এই মাধ্যমটা দুইরকম হতে পারে..একটা হলো অ্যানালগ, যার মধ্যে মুল দৃশ্যটা সরাসরিই দেখা যাবে, অনেকটা দুরবীনের মধ্যে দিয়ে যেমন দেখি। আর একটা হতে পারে ডিজিটাল, যেখানে ক্যামেরার পিছনে একটা পর্দায় দৃশ্যটা লাইভ ভিডিওর মতো দেখা যাবে।
ক্যামেরা কত রকম:
ক্যামেরা অনেক রকম। ডিজিটালের তো হাজার রকম। সবগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে আরো দুটো লেকচার লাগবে। তারচেয়ে যেগুলো সম্পর্কে জানা আমাদের দরকার, সেগুলো নিয়ে আলাপ করি।
১. এস এল আর (Single lens reflex) ক্যামেরা: এস এল আর হলো মোটামুটি আদি ও আসল ক্যামেরা। ফিল্মের যুগে বেশিরভাগ ক্যামেরাই ছিল এস এল আর। ডিজিটাল যুগে হলো ডি এস এল আর; ‘ডি’ দিয়ে কি বোঝায় বলেন তো?
এস এল আর ক্যামেরাগুলোর মূল বৈশিষ্টগুলো:
ক) এই ক্যামেরায় প্রয়োজন মতো লেন্স খোলা এবং বদলানো যায়।
খ) এই ক্যামেরায় একটা আয়না থাকে, যেটা কোন দৃশ্যকে প্রতিফলিত করে একটা প্রিজমের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার এর চোখে পাঠিয়ে দেয়। অর্থাত আপনি ছবি তোলার আগে দেখে নিতে পারছেন আপনার ফ্রেমের অবস্থা। দেখে নিতে পারছেন আপনার সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ খানার মধ্যে কেউ বিড়ি ফুকতে ফুকতে ঢুকে গেল কি না, কিংবা আপনার সুন্দরী মডেলের মাথাটাই কাটা পড়লো কি না উল্টো পাল্টা ফ্রেমিংয়ের কারনে। অনেকে হয়তো বলেন, আজকাল তো ক্যামেরার পেছনে একটা পর্দায় একেবারে ভিডিওর মতো প্রিভিউ দেখা যায়, তাহলে আর এই আয়না দিয়ে দেখার দরকার কি?
উত্তর টা খুব সহজ।
খ) এই ক্যামেরায় একটা আয়না থাকে, যেটা কোন দৃশ্যকে প্রতিফলিত করে একটা প্রিজমের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার এর চোখে পাঠিয়ে দেয়। অর্থাত আপনি ছবি তোলার আগে দেখে নিতে পারছেন আপনার ফ্রেমের অবস্থা। দেখে নিতে পারছেন আপনার সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ খানার মধ্যে কেউ বিড়ি ফুকতে ফুকতে ঢুকে গেল কি না, কিংবা আপনার সুন্দরী মডেলের মাথাটাই কাটা পড়লো কি না উল্টো পাল্টা ফ্রেমিংয়ের কারনে। অনেকে হয়তো বলেন, আজকাল তো ক্যামেরার পেছনে একটা পর্দায় একেবারে ভিডিওর মতো প্রিভিউ দেখা যায়, তাহলে আর এই আয়না দিয়ে দেখার দরকার কি?
উত্তর টা খুব সহজ।
ধরুন আপনার বাড়ির আয়না টা সরিয়ে আমি একটা ভিডিও ক্যামেরা বসিয়ে দিলাম, যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে দেখতে পারবেন একটা টিভিতে..মানে একটা ডিজিটাল আয়না আর কি। ভালো লাগবে আপনার? ব্যপারটা অনেকটা এইরকম ডিএসএলআর এর ক্ষেত্রে। সত্যিকারের আয়নায় যত নিখুত, আর ‘রিয়েল লাইফ’ প্রিভিউ দেখা যায়, সেটা এখন পর্যন্ত কোন ডিজিটাল স্ক্রিন রিপ্লেস করতে সক্ষম হয়নি। আপনি যদি একবার এসএল আর এর ভিউ ফাইন্ডারে ছবি দেখে অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে আর ডিজিটাল প্রিভিউ আপনার ভালো লাগবে না।
ছবি ১: ডিএসএলআর (DSLR) ক্যামেরা। ক্যামেরার অংশ গুলো নাম্বার অনুযায়ী নিচে দেয়া হল:
১. লেন্স
২. দৃশ্যের ‘প্রিভিউ’ দেখার আয়না
৩. ফোকাসিং স্ক্রিন
৪. প্রিজম, যেটা আলোর গতিপথ পরিবর্তন করে দর্শকের চোখে পৌছেঁ দেয়
৫. আইপিস, যেখানে চোখ রেখে প্রিভিউ দেখতে হয়
৬. ফোকাল প্লেন শাটার, ছবি তোলার মুহূর্তে এটা খুলে যায়্ এবং ফলশ্রুতিতে সেন্সরের উপর আলো পড়ে।
৭. সেন্সর।
৮. লাল তীর দিয়ে আলোর গতিপথ দেখানো হয়েছে।
গ) সাধারনত: এই ক্যামেরার সেন্সর এর সাইজ হয় একটা স্ট্যান্ডার্ড ৩৫ মিমি ফিল্মের সমান। এই অংশের আলোচনা খুব মন দিয়ে পড়ুন, দরকার আছে।
ফিল্মের যুগে একটু ফিরে যাই। একটা কথা আগেই বলেছি যে, ফিল্ম ক্যামেরাগুলোতে পর্দা ছিলো একটুকরো আলোক সংবেদী আস্তরনযু্ক্ত ফিল্ম। এই ফিল্মের রোল এর প্রস্থ ছিল মোটামুটি ৩৫ মিলিমিটার। এখন, ওইসময়ের ক্যামেরা এবং লেন্সগুলো এমন ভাবে তৈরী করা হতো যেন এই ৩৫ মিলিমিটার পর্দায় সঠিকভাবে পুরো ছবিটা ধরা পড়ে। যদি পর্দার দৈর্ঘ প্রস্থ কম বেশি হয়, তাহলে ক্যামেরা বা লেন্স এর আকার এবং আভ্যন্তরীণ গঠনেও পরিবর্তন আনতে হবে, তাইনা? তো একটা স্ট্যান্ডার্ড সাইজের লেন্স এবং ক্যামেরা তৈরী করতো সব কোম্পানিই। আজকালকার ইউ এসবি/অডিও/ভিডিও পোর্টের উদাহরন দেয়া যায়। যেই কোম্পানী, যেই জিনিসই তৈরী করুক না কেন, এই পোর্টগুলা কিন্তু একই রাখে, তা না হলে সেটা ‘কম্প্যাটিবল’ হবে না অন্য ইন্সট্রুমেন্টগুলার সাথে।
ফিল্মের যুগে একটু ফিরে যাই। একটা কথা আগেই বলেছি যে, ফিল্ম ক্যামেরাগুলোতে পর্দা ছিলো একটুকরো আলোক সংবেদী আস্তরনযু্ক্ত ফিল্ম। এই ফিল্মের রোল এর প্রস্থ ছিল মোটামুটি ৩৫ মিলিমিটার। এখন, ওইসময়ের ক্যামেরা এবং লেন্সগুলো এমন ভাবে তৈরী করা হতো যেন এই ৩৫ মিলিমিটার পর্দায় সঠিকভাবে পুরো ছবিটা ধরা পড়ে। যদি পর্দার দৈর্ঘ প্রস্থ কম বেশি হয়, তাহলে ক্যামেরা বা লেন্স এর আকার এবং আভ্যন্তরীণ গঠনেও পরিবর্তন আনতে হবে, তাইনা? তো একটা স্ট্যান্ডার্ড সাইজের লেন্স এবং ক্যামেরা তৈরী করতো সব কোম্পানিই। আজকালকার ইউ এসবি/অডিও/ভিডিও পোর্টের উদাহরন দেয়া যায়। যেই কোম্পানী, যেই জিনিসই তৈরী করুক না কেন, এই পোর্টগুলা কিন্তু একই রাখে, তা না হলে সেটা ‘কম্প্যাটিবল’ হবে না অন্য ইন্সট্রুমেন্টগুলার সাথে।
যখন ক্যামেরা টেকনোলজি ফিল্ম থেকে ডিজিটালে পরিবর্তিত হতে থাকলো, তখন কোম্পানীগুলো চেষ্টা করলো যেন আগের তৈরী লেন্স এবং অন্যান্য অ্যাকসেসরিজ এই নতুর প্রযুক্তির সাথে খাপ খায়। তারা ফিল্ম সরিয়ে ডিজিটাল পর্দা বসালো ঠিক ই , কিন্তু মাপ রেখে দিল একই, যাতে পুরানো লেন্স গুলো এই ক্যামেরার সাথে ব্যবহার করা যায়, এবং নতুন করে সবগুলো লেন্স এর আকার এবং গঠন পরিবর্তন করতে না হয়।
এই উদ্দেশ্য থেকেই জন্ম হলো ৩৫ মিমি ডিজিটাল সেন্সরের, যেটার প্রকৃত মাত্রা হলো ৩৬ মিমি X 24 মিমি। এই সাইজের সেন্সরকে বলা হয় ‘ফুলফ্রেম’, কেন সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখন। একেবারে অতি সহজ করে বলতে গেলে, ক্যামেরার বাইরের সবকিছু একই থাকলো, শুধু ফিল্মের যায়গাটা দখল করে নিলো একটা ‘একই সাইজের’ ডিজিটাল সেন্সর। ব্যপারটি অবশ্যই এত সহজ নয়..এই ডিজিটাল ডাটা প্রসেস করার জন্যে অনেক সার্কিট যোগ করতে হলো, সেটা আলোচনা না করি।
এই উদ্দেশ্য থেকেই জন্ম হলো ৩৫ মিমি ডিজিটাল সেন্সরের, যেটার প্রকৃত মাত্রা হলো ৩৬ মিমি X 24 মিমি। এই সাইজের সেন্সরকে বলা হয় ‘ফুলফ্রেম’, কেন সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখন। একেবারে অতি সহজ করে বলতে গেলে, ক্যামেরার বাইরের সবকিছু একই থাকলো, শুধু ফিল্মের যায়গাটা দখল করে নিলো একটা ‘একই সাইজের’ ডিজিটাল সেন্সর। ব্যপারটি অবশ্যই এত সহজ নয়..এই ডিজিটাল ডাটা প্রসেস করার জন্যে অনেক সার্কিট যোগ করতে হলো, সেটা আলোচনা না করি।
মুশকিল হলো, এই সাইজের সেন্সর এর ছবির মান অনেক ভাল হলেও, এটা তৈরীতে খরচ অনেক বেশি, সুতরাং অবধারিত ভাবেই ফুলফ্রেম ডিজিটাল ক্যামেরার দাম অনেক। গুগলে সার্চ করে দেখুন, বেশিরভাগ কোম্পানীর সবচেয়ে দামি ক্যমেরাগুলো হলো ফুলফ্রেম। এই সেন্সরগুলোকে বলে ‘APS (Advanced Photo System)’ sensor. এখন কিভাবে কম মূল্যে এই ধরনের ক্যমেরা বানানো সম্ভব, যেটা সবাই কিনতে পারবে? সহজ সমাধান – ছোট সেন্সর বানাও, খরচ কম। কিন্তু ছোট সেন্সর বানালে তো সেই মাপের উপর ভিত্তি করে ছোট ছোট লেন্স বানাতে হয়…সে অনেক ভেজালের ব্যপার। সম্পূর্ন নতুন একটা সিস্টেমের জন্যে লেন্স বা লেন্স এর ‘মাউন্ট (mount) (পরের লেকচারে আলোচনা করছি মাউন্ট নিয়ে) ডেভেলপ করতে কোন কোম্পানিই প্রথমে চায়নি।
কাজেই দামে সস্তা, কিন্তু কাজে মোটামুটি একই ধাচের ক্যামেরা বানানোর জন্যে তারা সেন্সরের সাইজটা ছোট করে ফেললো, যদিও লেন্স বা অন্য কোন কিছুই বদলালো না। এর ফলে কি ঘটলো?
এই ব্যপারটি আমার কাছে খুব সহজ লাগে, কিন্তু যাদের একেবারে ধারনা নেই, তাদের জন্যে সহজে বোঝানো মুশকিল। কাজেই আমি একটা উদাহরণের আশ্রয নেবো। সিনেমা হলে তো মোটামুটি সবাই গেছেন, নাকি? সিনেমা হলে কি থাকে? একটা বিশাল পর্দা, যেখানে একটা দৃশ্যকে দর্শকদের মাথার উপর দিযে একটা লেন্স এর মাধ্যমে প্রজেক্ট করা হয়। তাইলে ক্যামেরার সাথে সিনেমা হলের মিল কোথায়? পুরো হলটাকে মনে করতে পারেন ক্যামেরার ‘বডি’, অর্থাৎ লেন্স বাদে বাকি অংশ। সিনেমা হলের পর্দা হলো ক্যামেরার সেন্সর। আর যেই লেন্স দিয়ে দৃশ্যকে সিনেমার পর্দায় প্রতিফলিত করা হয়, সেটাকে তুলনা করুন ক্যামেরার লেন্স এর সাথে।(আলোক প্রক্ষেপনের মূল নীতি কিন্তু আসলেই এরকম, শুধু পার্থক্য হলো প্রক্রিয়াটা ঠিক উল্টো…ক্যামেরার ক্ষেত্রে একটা বিশাল বড় দৃশ্যকে একটা অতিক্ষুদ্র পর্দায় ধরে ফেলা হয়, আর সিনেমা হলে সেই অতিক্ষুদ্র ধারনকৃত দৃশ্যকে একটা ইয়া বড় পর্দায় পূণরায় প্রক্ষেপন করা হয়।)
ছবি ২: সিনেমা হল
এখন ধরুন, পর্দায চলছে নিঃস্বার্থ ভালবাসা।আপনারা মুগ্ধ হয়ে দেখছেন। হঠাৎ কয়েকজন এসে সিনেমা হলের পর্দা খুলে নিয়ে গেল..যদিও আর কোন কিছুই বদলালো না। এরপর তারা বসিয়ে দিল একট ছোট পর্দা।তাহলে কি ঘটবে? নিচের ছবি দেখুন..
ছবি ৩: সব কিছু ঠিক রেখে যদি পর্দার আকার ছোট করে ফেলা হয়, তাহলে কি ঘটবে সেটা দেখানো হয়েছে। নিঃস্বার্থ ভালবাসা ছাড়া অন্য যেকোন সিনেমার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য (সিরিয়াসলি!)।
এতক্ষনে আশা করি বোঝাতে পেরেছি। সবকিছু একই রেখে যদি একই রকম ভাবে ক্যামেরার সেন্সরটা ছোট করে ফেলা হয়, তাহলে সেন্সর ছবিটা ধরবে ঠিকই, কিন্তু পুরো ছবিটা ধরতে পারবে না, ক্রপ (Crop) হয়ে যাবে। ছবির বাদবাকি অংশ পড়বে সেন্সরের বাইরে, কাজেই সেই অংশটুকু ডিজিটালি ধারন করা সম্ভব হবেনা। এই ধরনের ছোট সেন্সরগুলোকে বলা হয় ‘ক্রপ সেন্সর’ বা APS-C (Advanced Photo system- classic) sensor. APS-C সেন্সর এর ‘C’ কিন্তু ক্রপ বোঝায় না, এটা বোঝায় আরো ছোট একধরনের ফিল্ম, যেটা মোটামুটি ২৫ মিমি চওড়ায়। APS-C সেন্সর গুলোর সাইজ হয় সাধারনত এরকমই।নিচের ছবি দেখুন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর এর তুলনামূলক সাইজ দেখানো হয়েছে। আপাততঃ ফুলফ্রেম আর এপিএস-সি বুঝলেই চলবে। এই দুইরকমের মাঝামাঝি আর একটা সেন্সর সাইজ (APS-H) আছে, যেটা ক্যাননের বেশ কিছু ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়।
ছবি ৪: বিভিন্ন সাইজের ক্যামেরার সেন্সরের তূলনামূলক চিত্র (সূত্র: উইকিপেডিয়া)
পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা:
এই ক্যামেরাগুলা অনেকটা ‘প্যাকেজ’ প্রোগ্রামের মতো। অর্থাৎ, এতে একটা লেন্স ফিক্সড করে দেয়া থাকে, যেটা খোলা সম্ভব নয়। এছাড়াও, এতে এস এল আর ক্যামেরার মতো কোন আয়না থাকেনা। আগেই বলেছি, ডিএসএলআর ক্যামেরার আয়নার কাজ হলো কোন দৃশ্যকে ক্যামেরায় ধরার আগে সেটাকে আপনার চোখে পৌছে দেয়া। এই কাজটি পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরায় করা হয় সরাসরি ডিজিটাল ‘লাইভ ভিউ দিয়ে। আসলে আজকাল সবরকম ক্যামেরাতেই এই ডিজিটাল ভিউ দেখার ব্যবস্থা আছে..কিছুদিন আগে এস এল আর এ ছিল না (আমারটায় নাই); এসএলআর এ এখন দুরকমই একসাথে থাকে…মিরর ভিউ এবং ডিজিটাল লাইভ ভিউ…যেটা খুশি ব্যবহার করতে পারেন।
পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় আয়না থাকেনা, তুলনামূলভাবে ছোট একটি সেন্সর ব্যবহৃত হয় এবং লেন্স এর সাইজ হয় ছোট। কাজেই ওভারঅল, এই ক্যামেরাগুলো আকারে এসএলআর এর চেয়ে অনেক ছোট, সহজে বহনযোগ্য। এই কারনে শখের ফটোগ্রাফী বা পারিবারিক ছবি তোলার জন্যে অনেকেই এই ক্যামেরা কিনে থাকেন। এখন আর বারো বছরে যুগ নাই, বছর বছর যুগ পাল্টায়। কাজেই আজকাল দেখবেন ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ তোলার জন্যেও অনেকে ডিএসএলআর ই ব্যবহার করে থাকেন।
পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় আয়না থাকেনা, তুলনামূলভাবে ছোট একটি সেন্সর ব্যবহৃত হয় এবং লেন্স এর সাইজ হয় ছোট। কাজেই ওভারঅল, এই ক্যামেরাগুলো আকারে এসএলআর এর চেয়ে অনেক ছোট, সহজে বহনযোগ্য। এই কারনে শখের ফটোগ্রাফী বা পারিবারিক ছবি তোলার জন্যে অনেকেই এই ক্যামেরা কিনে থাকেন। এখন আর বারো বছরে যুগ নাই, বছর বছর যুগ পাল্টায়। কাজেই আজকাল দেখবেন ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ তোলার জন্যেও অনেকে ডিএসএলআর ই ব্যবহার করে থাকেন।
মিররলেস ইন্টারচেঞ্জেবল লেন্স ক্যামেরা:
এই ক্যামেরাগুলোকে বলা যায় কম্প্যাক্ট পয়েন্ট এন্ড শুট এবং ডিএসএলআর এর মাঝামাঝি একটা অপশন। এই ক্যামেরাগুলোর সেন্সর সাইজ হয় পয়েন্ট এন্ড শুটের চেয়ে বড়; কিছু আছে যেগুলো APS-C সেন্সর ব্যবহার করে, আর কিছু আছে যেগুলোতে তার চেয়ে ছোট সেন্সর। (ছবিতে Micro four-thirds সেন্সর সাইজটি দেখুন) | এই ক্যামেরাতে ডিএসএলআর এর মতো মিরর নেই, কাজেই অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডারের সুবিধা পাবেন না, যদিও লাইভ প্রিভিউ থাকবে। আর ডিএসএলআর এর মতোই অনেক লেন্স এর অপশন আছে, যেটা খুশি (কিনে আর কি) ক্যামেরার বডিতে লাগাতে পারবেন। সহজে বহনযোগ্য, আর সেন্সর বড় বলে তুলনামূলক ভাবে ছবির কোয়ালিটি পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা’র চেয়ে ভাল।
ছবি ৫: প্যানাসনিক লুমিক্স মিররলেস ক্যামেরা এবং ক্যাননের পয়েন্ট এন্ড শ্যুট কমপ্যাক্ট ক্যামেরা। খেয়াল দেখুন, দুটি ক্যামেরারই সাইজ প্রায় কাছাকাছি। এর কারন, ক্যাননের জি ১১ যদিও কম্প্যাক্ট ক্যামেরা, এর সেন্সরের সাইজ তূলনামূলক ভাবে অন্য কম্প্যাক্ট ক্যামেরার চেয়ে বড়।
হাইব্রিড ক্যামেরা:
সময়ের সাথে সাথে ইঞ্জিনিয়াররা চেষ্টা করছেন কিভাবে নানা রকম অপশন একসাথে জুড়ে দিয়ে ফটোগ্রাফারদের মন জয় করা যায়। এখন অনেক ক্যামেরা আছে, যেগুলো ছোট হলেও, একটা অপট্যিকাল ভিউফাইন্ডার এবং লাইভ ভিউ, দুটোই থাকে। কিভাবে? খুব সহজ। ডিএসএলআর এর মিরর নেই এর ভিতরে, কিন্তু ক্যামেরার উপর দিকে একটা ‘ওপেনিং’ থাকে, যেটা দিয়ে আপনি সরাসরি ফ্রেম টাকে দেখতে পাবেন। এসএলআর এর মতো ‘থ্রো দ্য লেন্স’ হবে না যদিও…তারপরও অনেকে এই অপশন টা পছন্দ করেন। ফুজিফিল্ম X100 বা X100s এইধরনের হাইব্রিড ক্যামেরা।
ছবি ৬: হাইব্রিড ক্যামেরা ফুজি এক্স১০০এস। এই ক্যামেরাতে অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডার আছে, বড় আকারের সেন্সর আছে..যদিও লেন্স ফিক্সড, পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
সেন্সরএর আকার নিয়ে কিছু কথা:
লেম্যানদের জন্যে একটা সহজ সূত্র – ‘যত বড় সেন্সর, ছবির কারিগরী মান ততো ভালো।‘ তো এই ছবির মান জিনিসটা কি? আসুন বিশ্লেষন করি:
১. ছবি হবে ঝকঝকে। আপনি বাস্তবে যেটা দেখেছেন, ছবি হবে অনেকটা তার কাছাকাছি। আলোর সুক্ষ কারুকাজ গুলোর ডিটেইলস ছবিতে স্পষ্ট ভাবে আসবে।
২. ছবিতে ‘নয়েজ’ থাকবে খুবই কম। আমার ধারনা সবাই দেখেছেন কিভাবে অল্প আলোতে ছবি তুললে ছবিতে ছোট ছোট লাল নীল বিন্দু দেখা যায়, এই জিনিসটাকে বলে নয়েজ। এই জিনিস বেশি বোঝা যায় অল্প আলোয় ছবি তুললে, কিংবা ছবির তুলনামূলক অন্ধকার অংশগুলোতে।
৩. ছবির খুব উজ্জ্বল অংশগুলো একেবারে সাদা হয়ে যাবে না, সেখানে ডিটেইলস দেখা যাবে। একইভাবে, ছবির অন্ধকার অংশগুলো একেবারে কালো হয়ে যাবেনা।
৪. ছবির ‘Detail’ হবে ভালো..অর্থাৎ ছবির প্রত্যেকটি ছোটখাটো বিষয়বস্তুর ভিতর রং এবং কন্ট্রাস্ট এর পার্থক্য থাকবে..একটার সাথে আর একটা মিশে যাবে না।
ছবি ৭: ছবির ডিটেইল এর পার্থক্য
ছবির মান ভাল হওয়ার এই শর্তগুলো মানতে হলে দুটো জিনিস বিবেচ্য: এক হল ক্যামেরার সেন্সরের আকার, আর এক হলো যেই লেন্স এ ছবি তুলবেন, সেই লেন্স এর মান। সেন্সরের সাইজ কিভাবে ছবির মান কে প্রভাবিত করে?
প্রতিটা সেন্সরে থাকে হাজার হাজার আলোক সংবেদী বিন্দু, বা পিক্সেল (Pixel)| এই পিক্সেলগুলোর কাজ হলো লেন্স থেকে আসা আলোকে ধারন করা। একটা সহজ ও কাল্পনিক উদাহরণ: ধরুন একটা বড় সেন্সরে মোট বারো টি পিক্সেল আছে। যেহেতু সেন্সরটি বড়, এ্রর পিক্সেলগুলোও অনেক বড়ো হবে, এবং হবে অনেক বেশি মাত্রায় আলোক সংবেদী (Light sensitive)। এখন একটি ছোট ক্যামেরার জন্যে একই ধরনের একটা সেন্সর তৈরী করা হলো ১২ টি পিক্সেল সহ। যেহেতু এই ক্যামেরাগুলোর লেন্স ছোট, কাজেই এদের জন্যে তৈরী সেন্সরও ছোট হতে হবে। কিন্তু ছোট একটা সেন্সরে এতগুলো পিক্সেল আটানোর ফলে, স্বাভাবিকভাবেই পিক্সেলগুলোর আকৃতি ছোট হয়ে যাবে। পিক্সেল ছোট হলে কি হবে? এরা হবে অনেক কম আলোক সংবেদী। যেই পরিমান আলো একটা বড় সেন্সরে যথেষ্ট সংবেদনশীলতা তৈরী করতে পারতো, সেই একই পরিমান আলো দিয়ে একই পরিমান সংবেদনশীলতা এই ছোট সেন্সরে তৈরী করা যাবে না। তাহলে কি করনীয়? সহজ…জোর করে এদেরকে sensitive করতে হবে, অর্থাৎ এই পিক্সেলগুলোর ইলেকট্রনিক গেইন (Gain) বাড়িয়ে দিতে হবে। এই গেইন বাড়ানোর ব্যপারটাকে বলা হয় ‘ISO’, যেটার সম্পর্কে ‘আলো এবং এক্সপোজার’ অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ছবি ৮: একনম্বর সেন্সর সাইজে অনেক বড়ো, তাই এর পিক্সেলগুলোও বড়। ২ নম্বর সেন্সরের আকার ছোট, কিন্তু পিক্সেলের সংখ্যা একই। কাজেই স্থান সংস্থান করতে গিয়ে পিক্সেলগুলো ছোট করে ফেলতে হয়েছে।
সেন্সরের ইলেকট্রনিক গেইন বাড়ালে একটা সমস্যা আছে…প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, এবং ফলশ্রুতিতে সেন্সরের ‘নয়েজ’ বেড়ে যায়। সেই নয়েজ ছবিতে ধরা পড়বে..লাল নীল সর্ষেফুল আর কি। আর যদি অল্প আলোতে ছবি তোলেন, তাহলে এই নয়েজ আরো প্রকট আকার ধারন করবে। কাজেই সেন্সর ছোট হলে, ক্যামেরা ছোট হবে ঠিকই..কিন্তু একই সাথে পাল্লা দিয়ে আপনার ছবির ‘কোয়ালিটি’ খারাপ হওয়া শুরু করবে। জীবনটাই আসলে আপোষরফার ব্যাপার…সব সুবিধা একসাথে কখনই পাওয়া যায় না!
ছবি ৯: কম এবং বেশি নয়েজ, একই ছবি একটা কমপ্যাক্ট ক্যামেরা এবং এস এল আর ক্যামেরায় একই ‘গেইন’ (ISO sensitivity) লেভেলে তোলা। কম্প্যাক্ট ক্যামেরার ছবিতে নয়েজ অনেক বেশি।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.