google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html 'রিয়া' একটি অপ্রকাশিত বা লুকায়িত শিরক - Riya The Hidden Shirk. - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Friday, August 6

'রিয়া' একটি অপ্রকাশিত বা লুকায়িত শিরক - Riya The Hidden Shirk.

 কোন নেক আমল বা ইবাদত মানুষকে দেখানোর বা সুনাম ও যশ অর্জনের জন্য অথবা সুখ্যাতি বা জাগতিক কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য করা কার্যকলাপ ও  নিজেকে একটু ভিন্নভাবে লোকজনের কাছে উপস্থাপন করা কিংবা সমাজে লোকে ধার্মিক বলে আলাদা সম্মান করবে এ উদ্দেশ্য নিজেকে মানুষের সামনে আল্লাহ ভীরু, পরহেজগাররূপে প্রকাশ করাকে ইসলামের পরিভাষায় রিয়া বলে।

 রিয়া এতোটাই নিকৃষ্ট এক মন্দ স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত খুবই নিম্নশ্রেণির প্রাণীর মধ্যেও বিরাজ করে না । ইবাদত একান্ত আল্লাহর জন্য। আর "রিয়া" অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। 

আসুন জেনে নিই আমাদের সমাজে সংগঠিত হওয়া প্রধান কিছু "রিয়া” বা লোক দেখানো ইবাদতঃ 

রিয়া মিশ্রিত ইবাদত কখনও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না বরং এর জন্য শান্তি অবধারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র দর্শন লাভের আশা রাখে, সে যেন নেক কাজ করে এবং তার ইবাদতে যেন অপর কাউকে শরিক না করে। ’পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে রিয়ার অপকারিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

লোক দেখানো নামাজ আদায় করা সম্পর্কে আল্লাহ্‌তায়ালার স্পষ্ট ঘোষণা কোরআনের বিভিন্ন সুরায় উল্লেখ করেছেন ।     

‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা নামাজ আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে’ (সুরা নিসা ১৪২)।

“আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু - বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” (সুরা আল-আন আ’মঃ ১৬২)

“আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার কাছে ‘ওহী’ নাজিল করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ হচ্ছেন ‘একমাত্র’ ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” (সুরা আল-কাহফঃ ১১০)

অন্য আরো একটি আয়াতে  যারা লোক দেখানো ইবাদত করে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে এবং, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় ছোটখাটো বস্তু দান করা থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৭)

এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, “কিয়ামাতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সত্ত্বার কিয়দংশ উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষগণ সকলেই তাঁর সম্মুখে সিজদায় পড়ে যাবে। তবে সিজদা থেকে বিরত থাকবে কেবল ঐ সমস্ত লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষকে দেখানোর জন্য ও প্রশংসা পাওয়ার জন্য সিজদা (সালাত আদায়) করতো। তারা সিজদা করতে চাইবে বটে, কিন্তু তাদের পিঠ ও কোমর কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে।” ( বুখারী, মুসলিম, মিশকাতঃ ৫৩০৮ )

হাদিসে এই লক্ষণটি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে , জাহান্নামের আগুনে প্রথম তিন ব্যক্তি যাদের নিক্ষেপ করা হবে 👉 ঐ আলেম ব্যক্তি  👉 ঐ শহীদ এবং 👉 ঐ ব্যক্তি যে সম্পদ দান করেছে । কিন্তু এই তিন ব্যক্তির সকলেই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির চেয়ে মানুষের প্রশংসাকে কামনা করেছিল । যে ব্যক্তি মানুষের প্রশংসা কামনা করে, সে অবশ্যই মনে মনে নিজেকে নিয়ে গর্বিত হয় । এই জন্য যে , সে মনে করে সে এই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য । অতএব তার উদ্ধত ও অহংকারী হয়ে উঠার ক্ষেত্রে এটা একটা বিপদজনক দিক ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) বলেছেন - " আল্লাহ্‌ সবচেয়ে মহান এবং মহৎ । তিনি বলে , অহংকার আমার চাদর এবং বড়ত্ব আমার পোষাক। সুতরাং এগুলোর কোনটির সাথে যে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করে , আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব ।"    

✅ মেহমান আসবে তাই নামায শেষ হয়ে গেলে ও নামাজ পড়ার ভান করা কিংবা  এজন্য মেহমান ঘরে প্রবেশ করা পর্যন্ত জায়নামাজে বসে থাকা। সম্পুর্ন ইচ্ছাকৃত না হলেও অবচেতন মন চাইছে নামায যে পড়তেছি মেহমান দেখুক! এটিই রিয়া

✅ কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করলো-আপনি কি করছেন?

উত্তরে আপনি বললেন নামায পড়ে উঠে নাস্তা করতেছি বা নামায পড়ে উঠে এখন রান্না করতেছি। এখানে শুধু নাস্তা বা রান্না করার কথা বললেই হতো, সাথে -নামায পড়ে উঠে" কথাটি জুড়ে দিয়ে অতি সুক্ষভাবে নামাযকে প্রচারে নিয়ে আসা হল। এটি ই রিয়া

✅ ফজরের সময় যে নামায পড়তে উঠলেন কিন্তু কেউ জানলো না, তাই সেটা মানুষকে জানানোর জন্য দিলেন ফেসবুকে একটা পোস্ট, লিখলেন : "সবাই নামায পড়তে উঠুন অথবা ঐ সময়ই ফজর নামাজের ফযীলত সম্পর্কিত বা শাস্তি নিয়ে পোস্ট করলেন।" আপনি জানেন আপনার এই পোস্টে কারো ঘুম ভাংগবেনা,তাও  পোষ্ট দিলেন । মোট কথা নামাযের ব্যাপারটা সবাইকে জানাতেই হবে। এটিই রিয়া

✅ কোন এক বন্ধুর সাথে নফল রোজা রেখে দুপুরে  চ্যাট করছেন, হঠাৎ তাকে জিজ্ঞেস করে বসলেন,ভাত খেয়েছিস কিনা?অথচ আজীবন তার ভাতের খবর নেননি,সে হ্যাঁ/না উত্তরের সাথে যে "তুই খেয়েছিস?"এটা জিজ্ঞেস করবে সেটার গ্যারান্টি সূর্য উঠার মতই সত্য,সে সুযোগে না দোস্ত রোজা রেখেছি বলে রোজার প্রচার করে দিলেন, এটি ই রিয়া

✅ সামনে কুরবানির ঈদ তাই কুরবানির গরু কিনলেন, অফলাইনের আশেপাশের সবাই দেখলেও অনলাইন বন্ধুদের সামনে তো আর শো আপ করা হলো না। তাই প্রাইভেসি পাবলিক করে দিয়ে কুরবানির পশুর ছবিসহ দিলেন এক পোস্ট, আলহামদুলিল্লাহ্‌ Done. এইটি রিয়া

✅ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় মজার ছলেই টেকনিকে বলে দিলেন, তুই বেটা কিপটা, কিছুই দান করিস না। প্রতিউত্তরে, "তুই কি দান করে উল্টিয়ে ফেলছিস? এই প্রশ্নটা যে করবে তা পৌষের পর মাঘ মাস  আসার মতই নিশ্চিত আপনি, সাথে সাথেই দিয়ে দিলেন আপনার দানের লিস্ট সম্পূর্ণ ডিটেলস সহকারে। এইটি রিয়া

✅ কেউ জিজ্ঞেস করলো- আপনার নাম কি ? আপনি উত্তরে বললেন হাজী অমুক বা তমুক । এই যে নাম ফাটানোর উদ্দেশ্যে হাজী উপাধি লাগিয়ে আপনার নাম উপস্থাপন করলেন এটিই রিয়া । 

কারণ আসলে হাজী কারো নাম হতে পারে না । নামের অংশ ও হতে পারে না । পিতা মাতা জন্মের পরে সন্তানের যে নাম রেখে থাকেন মূলত সেটিই তার নাম । মূলত যারা হজ্বব্রত পালন করতে বাইতুল্লায় যায় তাদের যাত্রাকালীন এবং হজ্ব পালন করা কালীন ওই সময়টুকুকে হাজী সম্বোধন করা হয় ।

হাজী মানে হজ্ব যাত্রী ( Pilgrim ) । নামের আগে  হাজী না লিখলে বা হাজী বলে সম্বোধন না করলে ঝগড়া পর্যন্ত বাধিয়ে দেন । অথচ আমাদের প্রিয় নবীজি, চার খালিফা  এবং তাঁর সাহাবীগণ সবাই একাধিকবার হজ্ব করেছেন । অথচ উনাদের কারো নামের আগে হাজী শব্দটিই নেই । যেমনঃ 

❌ হাজী ওমর (রাঃ),
❌ হাজী আবু বকর (রাঃ) কিংবা 
❌ হাজী মোহাম্মদ (সাঃ) 
 উনাদের কারো নামের আগেই হাজী শব্দটি নেই ।

নামাজ, রোজা, যাকাতের মতোই হজ্ব ও একটি ইবাদত । তাই কেউ নামাজ পড়লেই তাঁর নামের আগে   " নামাজী " লেখার দরকার নেই কিংবা কেউ যাকাত দিলে তাঁর নামের অংশে 'যাকাতি' লেখাও বেমানান। এমনকি কেউ লিখেন ও না । তাহলে হাজী লিখা নিয়ে কেন এতো লম্ফজম্ফ ! এতে রিয়া প্রকাশ পায় ।

এইরকম অসংখ্য রিয়া আমরা করে থাকি যার মধ্যে গুটি কয়েক উপরে  উল্লেখ করা হল।

 আসুন জেনে নিই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ

কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকাল একবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন।

اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

( আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩ ) হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে রিয়া বা লোক দেখানো কাজ থেকে বিরত রাখুন। জাহান্নামের শাস্তি থেকে দুরে রাখুন । 

( আমিন )








1 comment:

Thank you very much.