পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীরের একটি লেখায় নতুন করে থলের বিড়ালের খবর বের হয়েছে। যে লেখায় তিনি বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান ভাঙ্গতে চাননি। তিনি একটি কনফেডারেশন চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের দ্যা নিউজ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত ওই লেখায় হামিদ মীর লিখেছেন, পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার ১০ মাস পূর্বে আওয়ামী লীগ প্রধান সেনা শাসকদের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে চেয়েছিলেন। তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফার্লান্ডের সঙ্গে ১৯৭১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি দেখা করেছিলেন। ওই সময় তিনি পূর্ব-পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ আলাদা করার চেয়ে একটি কনফেডারেশন গড়ার পক্ষে নিজের মত দিয়েছিলেন।
তিনি পরে আর্চার ব্লাডকেও একটি গোপন বার্তা দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি মধ্যস্থতা করতে রাজি থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এরআগেই ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনীর অপারেশন শুরু যায়। যা ভারতকে পূব-পাকিস্তানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৩ দিন যুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ করে।
হামিদ মীর লিখেছেন, সাংবাদিক বি জেড খসরু তার ‘মিথ এন্ড ফ্যাক্টস: বাংলাদেশ লিভারেশন ওয়ার’ শীর্ষক গ্রন্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির ইতিহাসের কিছু অজানা তথ্য উন্মোচন করেছেন। তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া কিছু মার্কিন দলিলের ভিত্তিতে তিনি এ বই লিখেছেন। তিনি দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব এমনকি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সে সমঝোতার সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি গোপন তার বার্তায় জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মুজিবুর রহমান স্বাধীন পূর্ব-পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চান। মার্কিন কর্মকর্তারা কখনওই এ ব্যাপারে তাকে উদ্ধুদ্ধ করেননি। তবে যদি পাকিস্তান ভেঙ্গে যায় সেক্ষেত্রে মার্কিন পরিকল্পনা কি হবে তা নিয়ে তারা পরিকল্পনা তৈরি শুরু করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফার্ল্যান্ড মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠকের বিষয়টি ১৯৭১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, মুজিব তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন। ধীরে ধীরে মুজিব ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যাল জেনারেলের সঙ্গে তিনি ১০ই মার্চ একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যোগাযোগ করেন। ভারতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ছির। এমনকি সেনা অভিযানের পরও তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য জহরুল কাইয়ূম ১৯৭১ সালের ৩১শে জুলাই কলকাতায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এবং তাদের অবহিত করেন, আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার জন্য উদগ্রীব। কারণ তারা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফল এবং গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে বামপন্থীদের ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা খোন্দকার মোশ্তাক আহমেদ ১৯৭১ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান, আওয়ামী লীগ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন বেকথ্রু হয়নি।
খসরুর বইয়ের বর্ণনামতে ১৯৭১ সালের ১৪ই মার্চ খুবই ইন্টারেস্টিং এক ঘটনা ঘটনা ঘটে। ওয়ালি খান এবং মীর গাউস বকস ১৩ই মার্চ ঢাকা পৌঁছান এবং মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন। মীর গাউস সরাসরি মুজিবকে জিজ্ঞাস করেন, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন কি না? মুজিব খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, কে কাকে পাকিস্তান না ভাঙ্গার কথা বলছে। তোমরা যারা কংগ্রেসের সহযোগি ছিলা তারা আমাকে এ কথা বলছো। যে একজন হার্ডকোর মুসলীম লীগার ছিল এবং পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস।
গাউস বকস মুজিবের কথায় সন্তুষ্ট হন। তিনি ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আলোচনাও শুরু হয়। কিন্তু ইয়াহিয়া মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিলেন না। খসরু তার বইয়ে দাবি করেছেন, শেষ পর্যন্ত মার্কিনিদের বিশ্বাস ছিল মুজিব পাকিস্তান ভাঙ্গতে চান। এমনকি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসেও তাকে যদি সুযোগ দেয়া হতো তিনি কনফেডারেশন মেনে নিতেন। আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য মার্কিনিরা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দায়ী করে থাকে। কনফেডারেশনে ভুট্টোর সঙ্গে কাজ করতে মুজিব তৈরি ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু মস্কো এবং দিল্লি কনফেডারেশনের ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিল।
Monday, August 18
থলের বিড়ালঃ “ মুজিব পাকিস্তান ভাঙ্গতে চাননি ”
Tags
# Automatic
# স্বাধীনতা
About তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
নব্বইয়ের আন্দোলনে আমরা যে গণতন্ত্র পেয়েছিলাম, তা ছিল শিশু। সেটার যত্ন যেভাবে নেয়া উচিৎ ছিল তার ধারে কাছেও কেউ যেতে পারে নাই। তাই গণতন্ত্র আজ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আমাদের গণতন্ত্র। তবে সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনো যদি আমরা সজাগ হই, যদি আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমকে গুরুত্ব দেই, তবে এই বিকলাঙ্গ গণতন্ত্রই আবার সোজা হয়ে পথ চলতে পারবে। তবে কথা হচ্ছে, যারা এটা করতে পারবে তারাই আজ ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি।
স্বাধীনতা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
Thank you very much.