google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দিতে হবে - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Friday, August 8

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দিতে হবে


writer PuZzle Jahan

HIV একটি ভাইরাসের নাম । মোটামুটি সবাই জানেন । এর আক্রমণে হয় AIDS নামক মরণঘাতী রোগ । যা ব্যক্তিকে(রোগীকে) তিল তিল করে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যায় । আশা করি আপনারা সবাই এর বিস্তারিত  তথ্য জানেন । এখন কথা হলো- আপনি আমি সাময়িক সুখ পাবার জন্যে এমন কারও সাথে কি মিলিত হতে রাজি আছি যার শরীরে HIV ভাইরাস আছে , যা পরবর্তীতে আমাকে বা আপনাকে AIDS নামক মরণঘাতী রোগ এনে দিবে ?









আমি বেশ কিছুদিন যাবত অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুকে হিন্দি বা ঊর্দু ভাষাতে স্ট্যাটাস না দেয়া , হিন্দি ফিল্ম , গান কিংবা এগুলোর শেয়ার ও প্রমোশন না করার ব্যাপারে অনেকের সাথেই কথা বলছি । অনেকেই আমার ওপর ক্ষেপে আছেন । অনেকেই আমাকে ফেসবুকে ব্লক করেছেন । কেউ কেউ আমাকে গন্ডমূর্খ বলতেও দ্বিধা করছেন না । মনে হচ্ছে ভারতীয় বড় বড় সঙ্গীতজ্ঞের গান না শুনলে আমি আর শিক্ষিত হতে পারবো না  । আবার কেউ কেউ আমাকে বলেছেন - এতোই যদি দেশ প্রেম তাহলে বিদেশে গিয়েছেন কেন , দেশে এসে দেশ-প্রেম দেখান !

আমি মূলত হিন্দি ঊর্দু বা অন্য যে কোন ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নই । বরং আমিও চাই একজন মানুষ বিভিন্ন ভাষা জানুক । বিদেশী গান শুনুক , ফিল্ম দেখুক , বই পড়ুক , নিজের জ্ঞান সমৃদ্ধ করুক ।বিদেশ ভ্রমন করুক । বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক । আমার আসল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলা ভাষা , গান , ফিল্ম এবং সংস্কৃতি ঠিকমতো আমরা রক্ষা করতে পারছি কি না সে বিষয়ে  সবাই যেন একটু সচেতন হয়  । আমাদের শিল্প , গান , বই, ফিল্ম এগুলোর যেন প্রচার হয় আরও বেশি করে ।   অন্তত আমাদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্যে আমাদেরকেই এই কাজ করতে হবে  ।  প্রতিটি বাংলাদেশীকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া খুব জরুরি ।

আমরা আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলে হিন্দি ভাষায় একটি স্ট্যাটাস দেয়ার ফলে কি
হতে পারে ? ভেবে দেখুন সেটা হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির এক ধরণের প্রচারণা হয়ে গেলো  । আপনার হয়তো এমন কোন ফলোয়ার আছেন যিনি আপনার কথা কাজ খুব ফলো করেন তিনি আপনার হিন্দি স্ট্যাটাস দেখে হিন্দির প্রতি মনোযোগী হবার সম্ভাবনা আছে ।

হিন্দি গান শুনছেন স্ট্যাটাসে লিখে দিলেন - " অমুক হিন্দি গানটি শুনছি । বাহ ! কি চমত্কার একটি গান  , গান না শুনলে বুঝা যাবে না " , তখন আপনার ফেসবুক বন্ধুরা ঝাঁপিয়ে পড়লো এই গান যেভাবেই হোক সংগ্রহ করে শুনতে হবে , এটা কি এক ধরণের প্রচারণা নয় ? বিনা মূল্যে আপনি প্রচারণাটা করে দিলেন ।

ঠিক একইভাবে হিন্দি গানের লিংক শেয়ার করলেন , মুভির নাম শেয়ার করলেন । ভারতীয় বাংলা গান , মুভি , বই এসবের প্রচারণা করলেন । ভালো কথা , আপনার প্রোফাইলে আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন । কিন্তু আপনার এই খাম খেয়ালীটার ফলাফল দেখুন  , একটু ভাবুন , আপনার ফলোয়াররা হিন্দির প্রতি ঝোঁকে পড়ছে  ....আপনার মগজ দখল করছে হিন্দি ।বাংলা গানের প্রচারণা আমরা করি না , কারণ আজকাল নাকি ভালো বাংলা গান হয় না , ভালো বাংলা ফিল্ম হয় না । ফলে আমরা সবাই ভারত নির্ভর ।

ভালো কথা , দেখুন ভারতে আমাদের বাংলা চ্যানেলের খুব চাহিদা থাকা স্বত্তেও ভারত সরকার আমাদের সাথে কি সুন্দর টাল বাহানা করছে , বাংলাদেশী চ্যানেল সেখানে চলতে দেয়া  না ।  ফিডব্যাকের জনপ্রিয় কিছু গান নিয়ে জোয়ার নামের একটি এলবাম কলকাতা থেকে বের হয়েছিলো । এলবামটির প্রচুর কাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কেট থেকে সেই এলবাম তুলে নেয়া হয় । বাংলাদেশে ভারতের চ্যানেল চলছেই । আমরা পাখি ড্রেসের জন্যে আত্মহত্যা করছি । স্বামী  তালাক দিচ্ছি । ভারতীয় পোশাক আশাকে নিজেকে সাজাচ্ছি প্রতিনিয়ত ।  আমাদের চিন্তা চেতনায় আসছে ভারত । আমরা বিজয় দিবসেও কিন্তু হিন্দি গান বাজাচ্ছি , সেটাও মাইক ব্যবহার করে ।

আমাদের দেশে ভারতীয় লেখকগণের বই চলে । কিন্তু ভারতে ?

আমরা আম্মা আব্বা শিখি না এখন , শিখি মাম্মা পাপা । বোন বলি না , বলি বেহেনজি । সানি লিওনের খবর আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় । সেখানে উল্যেখ করা হয় সে এখন থেকে সেরকম  ছবির বদলে এই ধরণের ছবিতে অভিনয় করবে । ( সেরকমের  ছবি যে কি সেটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন । )

দিনের পর দিন আমাদের কথা বলা , চলা ফেরা সবকিছুতে এখন আমরা ভারতীয় চ্যানেলের আদলে নিজেকে উপস্থাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি ।অনেকের অভিযোগ ভালো বাংলা গান হচ্ছে না , ভালো বাংলা ফিল্ম হচ্ছে না । আপনি আপনারা দেখি ভালো মন্দের বিচার খুব সুন্দর করে করতে পারেন , তাহলে এটা কি বুঝতে পারেন না ভারতীয় সংস্কৃতি কিভাবে আমাদের সংস্কৃতিকে  গ্রাস করছে ?  একটি সংস্কৃতি কিন্তু এভাবেই ধীরে ধীরে অন্য একটি সংস্কৃতিকে গ্রাস করে । একদিনে হুট করে গিয়ে জবর দখল করে না ।  এটা রাজ্য দখল নয় । এটা হচ্ছে মগজ দখল । মগজ দখল একটা continuous process   যা ভারত চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের ওপর ।ওরা একটার পর একটা লোভনীয় জিনিস আমাদের দিকে ছুঁড়ে   দিচ্ছে আর আমরা তা লুফে নিচ্ছি । কিংবা জোর করে আমাদেরকে গিলতে বাধ্য করছে । আমরা ধীরে ধীরে আমাদের স্বকীয়তা হারাচ্ছি  ।

এবার ভাবুন এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সুদূর প্রসারী ফলাফল কি হতে পারে । আজ আপনার কাছে যে জিনিস ভালো লাগছে । আপনি আপন করে নিচ্ছেন । কাল কিন্তু ছুঁড়ে ফেলতে পারবেন না । কাল সেটা আপনার বাচ্চা কাচ্চার হাতে সোপর্দ করবেন । ভালোবেসে । ফলে আপনার প্রিয় বাংলা হারিয়ে যাবে । আপনার নিজের সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে । আপনি হয়তো অঢেল সম্পত্তি রেখে যাবেন আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে কিন্তু স্বকীয়তা রেখে যেতে পারবেন না । রেখে যাবেন ভারতের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে আসা সংস্কৃতি । নিজের identity থাকবে না ।এবার ভাবুন , আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে আপনি কিভাবে ফকির করছেন । কি দিয়ে যেতে চান ?

আজ আপনি ফেসবুকে যে হিন্দি চর্চা করছেন , তা HIV ভাইরাসের চেয়ে কম না ।
এটাই আমাদের সংস্কৃতির জন্যে AIDS হিসেবে আবির্ভূত হবে  । আপনি কি এই AIDS এ আপনার নিজের সংস্কৃতিকে মারতে চান ?

এবার আমি আমার ফেসবুক বন্ধুদের কিছু কথার জবাব দিচ্ছি । শিক্ষিত হয়েছেন ভালো কথা নিজের ভাষাটা সুন্দর করে শিখে নিন  (আমি বলছি না যে আপনি জানেন না ) । সেটা ভালোবাসুন । চর্চা করুন । আপনার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিন ।  অন্য ভাষা নিয়ে লাফালাফি করার মাঝে কোন স্বার্থকতা নেই । অন্য ভাষা দিয়ে নিজ ভাষা সমৃদ্ধ করতে পারেন যা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম । কিন্তু অন্য ভাষায়  বিখ্যাত হবার চিন্তা বাদ দেন । মাইকেল মধুসূদন'কে ভুলে গেলে হোচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবেন , আর কিছুই হবে না ।

যারা বলেন দেশ প্রেম দেখাতে হলে দেশে এসে দেখান , বিদেশে কেন গিয়েছেন  তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলি   -- " এই বছরের প্রথম দিকে সরকারী হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের ১৫৯ দেশে কর্মরত বাংলাদেশীর সংখ্যা ৮৭ লাখ ১৭ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৭৪০ জন এবং নারী কর্মীর সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৬২! বেসরকারী হিসেব বাদ দিলাম (যারা অন্য উপায়ে বিদেশে কর্মরত আছেন) ধরে নেই সব মিলিয়ে ১ কোটি।

যেখানে দেশে বেকারত্বের শেষ নাই সেখানে এই ১ কোটি বাংলাদেশী দেশ প্রেম দেখাতে যদি দেশে ফেরত যায়  তখন দেশের কি অবস্থা হবে সেটা কি  একটু ভেবে দেখেছেন ? তাছাড়া যে দেশ বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স, গার্মেন্টস শিল্প এবং বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চলে,  সেই দেশের এতো মানুষ প্রবাসে না গিয়ে দেশ প্রেম দেখাতে দেশে অবস্থান করে মিছিল মিটিং করে , বেকারত্বের হার বাড়িয়ে কি দেশের খুব বেশি উন্নয়ন করে ফেলবে ?

আমি বিদেশে কর্মরত একজন কামলা। আমি নিজের গায়ের ঘাম মাটিতে ফেলে টাকা
রোজগার করে দেশে পাঠাই আর সেই টাকা সরকারকে কিছুটা হলেও দেশ চালাতে সহায়তা করে। আমি দেশে বসে দেশ ও জাতির পেটে লাথি দিয়ে নিজের পকেট ভরি না। এইটা কি আমার কম সৌভাগ্য ? আপনি দেশে থেকে কিরকম দেশপ্রেম দেখাচ্ছেন ? মিছিল মিটিং এ যাচ্ছেন , রাজনীতি করছেন , বন্ধুদের নিয়ে পিজা হাটে পিজা খেয়ে ফেসবুকে ছবি দিচ্ছেন আর পিজা হাটের পিছনের বস্তিতে শিশুরা না খেয়ে আছে। কিংবা আপনার সামনেই একজন বেকার যুবক চাকু হাতে নিয়ে তার বেকারত্ব ঘুচাচ্ছে তা আপনি দেখছেন , এটা আপনার দেশপ্রেম ? আপনি  ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে , ২৬ শে মার্চে , ১৬ ডিসেম্বরে শহীদ মিনারে গিয়ে বগল বাজিয়ে দেশ প্রেম জাহির করছেন আর সারা বছর সেই শহীদ মিনারে কুকুর প্রসব করে আপনি দেখেও না দেখার ভান করছেন , এই আপনার দেশ প্রেমের নমুনা ?

হুম। স্বীকার করছি অনেকেই সমাজ সেবামূলক অনেক কাজ করছেন । কিন্তু তাই বলে যারা প্রবাসে আছেন মনে করবেন না যে তারা দেশের জন্যে কিছু করছেন না , মনে করবেন না যে তাদের দেশপ্রেমের অধিকার নেই । বিদেশের মাটিতে কিন্তু আপনি বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে পারেন না , যারা উড়ায় তারা প্রবাসী । প্রবাসে থেকে যদি দেশপ্রেম না-ই হতো তাহলে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থাকতো না । চিন্তা বদলান ।

এখন যুদ্ধ মাঠে ময়দানে নয় । সেটা কবেই হয়েছে ১৯৭১ এ । এখন যুদ্ধ প্রতিটি চেতনায় । আমাদের প্রতিটি কাজে ।

আমাদের শিক্ষায় । আমাদের পতাকা সমুন্নত করাটাই আমাদের যুদ্ধ এখন ।

মনে রাখবেন , আমি বিদেশী ভাষা বা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নই । আমি আগ্রাসী সংকৃতির বিরুদ্ধে ।আমি নিজেও বিদেশী মুভি দেখি , গান শুনি , বই পড়ি । কিন্তু আমার জীবন যাপন বাংলা ।

আমি যে এলাকায় থাকি এখানে ইংরেজিতে কথা না বলে বাইরে ঊর্দু এবং বাসায় বাংলা ব্যবহার করেই দিন কাটিয়ে দিতে পারবো । কিন্তু আমি পাকিস্তানি না ভারতীয় করও সাথে কথা বললে প্রথমে ইংরেজিতেই কথা বলার চেষ্টা করি । সে যদি ইংরেজি না বুঝে তখন ঊর্দুতে কথা বলি । আর তখন আমার কথোপকথনটুকু যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করে নিই ।

আপনি , আমি , তুমি সবাই যদি চাই এই আগ্রাসন কি রুখে দিতে পারবো না ? বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথেই আমার কথা হয়েছে । অনেকেই আমার ওপর ক্ষেপে আছেন । আমি কিন্তু এই বিষয় নিয়ে সবার সাথে কথা বলি না । শুধু যাদেরকে কাছের মনে হয় । মনে হয় আমার অনুরোধ রাখতে পারে , তাদের সাথেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলি । তারপরেও তুপের মুখে পড়ে যাই । তারপরেও কেউ কেউ আমাকে unfriend করেন, ব্লক করেন , মনে হয় যেন একজন বন্ধুর চেয়ে হিন্দির প্রতি তাদের মায়া বেশি , যেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলে আমি কতো বড় অপরাধ করে ফেলেছি । যাই হোক , সবাইকে অনুরোধ করছি বিষয়টি ভেবে দেখুন । এখনই সময় । ভারতীয় চ্যানেল বয়কট করুন । ভারতীয় গান , ফিল্ম , বই এগুলোর প্রমোশন থেকে দূরে থাকুন । অন্তত আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটি একটি আত্ম পরিচয় খুঁজে পায় সেই বিষয়টি ভাবুন ।

জানি আমার এই লেখা সবাই পড়বেন না ।আবার যারা পড়বেন তাদের সবাই
আমাকে সমর্থন করবেন না । ভারত  প্রীতি ছাড়বেন না ।তবু বলি - আমাকে যদি অন্তত ৫ জন বন্ধু সমর্থন করেন তাতেই আমি খুশি । অন্তত ৫ জনের প্রফাইলে হিন্দি নিয়ে কোন কথা হবে না ।আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের দ্বারা এটোটুকুও যদি সম্ভব হয় সেটা কম কিসে ।

তবে এ পর্যন্ত আমি অনেকের সমর্থন পেয়েছি । আর এর মধ্যে ৪/৫ জন আছেন যারা আমাকে খুব তাগিদ দিচ্ছেন এ বিষয়ে যেন একটু লেখা-লেখি করি ।

ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের ।

----------------------------

জাহান

রাত ২:৪৪

০৮.০৮.২০১৪

ইংল্যান্ড



 





আপনিও এই চেষ্টা করতে পারেন ...










    যারা হিন্দি উর্দু ইংলিশ কিংবা অন্য যে কোন বিদেশী ভাষা খুব ভাল জানেন - আপনাদের এই অর্জন'কে আমি স্বাগত জানাই । ড : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ২৬ টিরও বেশি ভাষা জানতেন । বিদেশী ভাষা যত বেশি জানবেন তত বেশি অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন । জ্ঞান ততই বাড়বে । কিন্তু একটিবার আপনি কি চিন্তা করেছেন নিজের মাতৃভাষা কতটুকু জানেন ? মাতৃভাষার ব্যবহার যে কত সুন্দর , বিশেষ করে বাংলা ভাষা যে কত সমৃদ্ধ একটি ভাষা সেটি কি একবার ভেবে দেখা বা নিরীক্ষা করার পেছনে একটু সময় দিয়েছেন ? বিশেষ করে ভারতীয় ভাষা আর সংস্কৃতি যে আমাদের সংস্কৃতি ও ভাষার ওপর কি রকম আগ্রাসী হয়ে ওঠছে সেটি কি জানেন ? একবার ভেবে দেখেছেন ? হিন্দি ভাষাতেই যদি আপনার এত আবেগ উতলে ওঠে তাহলেতো ১৯৫২ তে বাঙালি যা করেছে আপনার চোখে তা নেহায়েত ভুল ছাড়া আর কিছুই না । অন্য ভাষা আপনার ভাল লাগতেই পারে , আমি তার বিরোধিতা করছি না । তবে প্রথমে আপনার মাতৃভাষা নিয়ে ভাবুন । জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা পাওয়ার জন্যে বেশ কিছু বাঙালী প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন , আপনার আমার সমর্থন না পেলে সেই মর্যাদা পাওয়া কি সম্ভব আর সমর্থন ছাড়া মর্যাদা পেয়েই বা কি লাভ বলুন ? বিদেশী সিনেমা দেখবেন ? ভাল কথা । দেখুন । তবে সাথে একটা বাংলা কেন দেখবেন না ? কোন অজুহাত মানি না ।বিদেশী ভাষার একটি বই পড়বেন ? বাংলা একটি বই কেন পড়বেন না ? গান শুনবেন - কিছু বাংলা গানও শুনুন ।অনলাইনের যতই প্রসার হচ্ছে আমাদের ঘরে ঘরে রান্না ঘরে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখি ভারত প্রবেশ করছে , হিন্দি প্রবেশ করছে , বাংলা কেন আসন পেতে বসতে পারছে না ?  আমি আমার প্রিয় ফেসবুক বন্ধুদের প্রতি এই অনুরোধটুকু করব - বাংলাভাষীদের ফেসবুক হিন্দিতে ভরে যাচ্ছে , আমরা চাইলেই  এটি বাংলাতে ভরপুর করতে পারি । বাংলাতেই প্রেম ,কাম   , রাগ- অনুরাগ , আদর -স্নেহ , সম্মান সব প্রকাশ করতে পারি খুব সুন্দর করে । আসুন একটু চেষ্টা করি ।আর আপনি যদি বাংলাতে কম স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন তাহলে ইংরেজি কেন ব্যবহার করবেন না ? আন্তর্জাতিক ভাষাটাই ব্যবহার করুন ।

** ব্যক্তিগত ভাবে আমি সিদ্বান্ত নিয়েছি  বিজয়ের মাসে আমি বাংলা ব্যতীত অন্য কোন ভাষা যতটা পারি কম ব্যবহার করব । যদিও একটু কষ্টকর হবে । তারপরও চেষ্টা করছি । পহেলা ডিসেম্বর থেকেই শুরু করে দিয়েয়েছি । চেষ্টা  চলছে .. আমার ছোট বেলা থেকেই এই অভ্যাস । বিজয় দিবসে , স্বাধীনতা দিবসে , ভাষা দিবসে আমি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করি না যদি তা একান্তই প্রয়োজনীয় না হয় । বা ভুলবশত না হয় । তবে এবার আমি চিন্তা করেছি সারা ডিসেম্বর মাসই এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব । যদিও ইংল্যান্ডে ইংরেজি ছাড়া আহার নিদ্রা সবই প্রায় অসম্ভব , তবুও অন্তত যতটা পারি চেষ্টা করতে দোষ কি , হয়ত পারব না তবু মনের মাঝেতো থাকবে আমি এই কাজটি করছি বা চেষ্টা করছি  । আমার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ঠ ।এবার হয়তো কেউ কেউ আমাকে ভন্ড ভাববেন , উন্মাদ ভাববেন । আপনি যদি তা ভেবে শান্তি পান তবে তাই ভাবুন । আমার কিচ্ছু যায় আসে না ।

আমার সিদ্বান্তটি যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন । বাংলাভাষা কত বেশি ব্যবহার করা যায় ।

* আমার খুব কাছের একজন মানুষ আজ হিন্দি ভাষাতে স্ট্যাটাস দিয়েছিল । যেহেতু সে বয়সে অনেক ছোট তাই একটু আদর আর একটু শাসন এরকমই সুরে বলেছিলাম যে , বিজয়ের মাসে বাংলা কেন ব্যবহার করবে না ।সে আমাকে জানাল - শুধু প্রফাইল পিকচারে লাল সবুজ টি-শার্ট পড়ে ছবি দিলে আর বাংলায় কথা বললেই দেশ প্রেমিক হওয়া যায় না ।আমার জবাবটা ছিল এরকম - বিদেশের মাটিতে থেকেও আমরা কিছুলোক ছোট ছোট বাচ্চাদের বাংলা পড়া লেখা শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি , যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করতে হচ্ছে । একটা বাংলা ভাষা শিক্ষার অনুষ্ঠানে দেশের জাতীয় পতাকার রঙ্গে রাঙানো টি-শার্ট পড়ে যদি সবাইকে এই রঙের  প্রতি আরেকবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি তাতে দোষ কিসের কিংবা আমার নিজ দেশের ক্রিকেট দলের জার্সি পড়ে যদি প্রফাইলে পিকচার দেই , বা বিদেশের মাটিতে একটু ঘুরাফিরা করে সবাইকে বাংলাদেশ লিখা এই লাল সবুজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তাতে দোষ কিসের ? আর দেশপ্রেম কি শুধু বড় বড় কাজে ? যুদ্ধে , রক্তদানে আর মিছিলে মিটিঙে ? বিদেশে যারা আছি ছুটিতে যদি অন্যান্য দেশে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে নিজ দেশে গিয়ে  পয়সা খরচ করি তাহলে তা দেশীয় অর্থনীতিতে একটি ভুমিকা রাখে , কিংবা আমরা যে বিদেশে থেকে কষ্টার্জিত পয়সা এখানে কম খরচ করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি  যা দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভুমিকা রাখছে সেটি কি দেশ প্রেমের আওতায় পড়ে না ? বিদেশে থেকেও দেশীয় পণ্য ব্যবহারের সুযোগ খুঁজি সেটি কি ? বড় বড় কাজ করে দেশ-প্রেম প্রকাশ করার সুযোগ সবার জীবনে আসে না । তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে দেশপ্রেম'কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে । কাজ যত ছোটই হোক ।  দেশপ্রেম হোক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজে । হৃদয়ে বাংলাদেশ থাকুক প্রতিটি মুহুর্তে ...----- এই মন্তব্যের কারণে সে আমাকে তার বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ব্লক করেছে । বিষয়টি  আমাকে এই কারণে ভাবাচ্ছে যে - অন্য ভাষা সংস্কৃতির প্রতি আমাদের এতই প্রেম  ! আমরা  নিজের ভাষা, সংস্কৃতিরই বা  কি জানি  ?  এরকম অনেক অনেক বন্ধুর কার্য কলাপ আমার চোখে পড়ছে প্রতিদিন ।এর আগেও বেশ কয়েকবার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর সাথে এ বিষয়ে আমার অনেক কথাবার্তা হয়েছে । কিন্তু কি করা - বাংলা ভাষাতে ওনাদের বুকের ভেতরে নাকি প্রেম জাগে না .. ওনাদের প্রেমের যে কত আহ্লাদ ... এমনই যদি প্রেম হয় যে নিজের মাতৃভাষাতে তা জেগে উঠতে পারে না , প্রেম জাগতে হলে যদি লাগে পরদেশী ভাষা তাহলে এইসব আবেগ অনুভূতি আর প্রেমের কি নাম দিব ?

আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করি প্রতিদিন । বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অঙ্গীকার করি প্রতিদিন ... আসলে এগিয়ে বলতে কি তাহলে ভারত আর পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছি নাকি ?

সময় এখনই । দেশকে ভালবাসার , সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দাঁড়াবার এখনই সময় । আসুন সুন্দর করে বাংলা শিখি , দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভালবাসি ...

------------------------------

জাহান

০৩:৩০ রাত

০২/১২/২০১৩

ব্র্যাডফোর্ড , ইংল্যান্ড ।




 

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.