google-site-verification: googlefee13efd94de5649.html খবরের অন্তরালের খবর - তারুণ্যের কন্ঠস্বর

HeadLine

News Update :

Wednesday, July 30

খবরের অন্তরালের খবর

নির্বাক গণতন্ত্র ডেস্ক ।। 


 " হাসিনার নিরাপত্তায় ভারত ! "



রাজনৈতিক ভাষ্যকার : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত কি ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে পড়েছে? অথবা সরকার কি তার প্রধান মিত্র ভারতকে ্এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে আর সরকার পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিজের অবস্থানকে এবং দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছেন।

[caption id="" align="alignnone" width="720"] হাসিনার নিরাপত্তায় ভারত[/caption]

বহুল প্রচারিত ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দি পাইওনিয়ার’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে রক্ষার লক্ষ্যে সম্প্রতি ভারত সরকারের আরো কিছু করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটির ২০ নভেম্বর সংখ্যায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাথে অনেক চুক্তি করলেও ভারত সরকার সেগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার বিপাকে পড়েছে, তার বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পত্রিকাটি ভারত সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে শেখ হাসিনার বদলে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হলে ভারত বেশ সমস্যায় পড়বে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির পর দু’দেশের সম্পর্কে নাটকীয় উত্থান ঘটলেও তা আবার চুপসে যায়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হারে এই অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে যে সেই সফরে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। এতে বলা হয় যে, শেখ হাসিনার সফরের ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সমঝোতা অনুযায়ী ভারতে বাংলাদেশী পণ্য আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ও শুল্ক বহির্ভূত প্রতিবন্ধকতাগুলো সরানো হয়নি। দু’দেশের মধ্যে আরো অনেক সমঝোতা হয়েছিল। বাংলাদেশের তুলার চাহিদার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি বাংলাদেশে ১১ লাখ বেল তুলা রফতানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ১.৩৫ লাখ বেল তুলা আমদানির লক্ষ্যে এলসিও খুলেছিল। কিন্তুু ভারত তার অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণের অজুহাত তুলে রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার সাথে চুক্তির প্রাক্কালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ১৭ লাখ পিস পোশাক আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এতে বাংলাদেশ খুশী হয়েছিল। এই আমদানি ছিল ঝঅঋঞঅ চুক্তির অধীনে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশে থেকে ৮০ লাখ পিস পোশাক আমদানির অতিরিক্ত। ভারত নানা অজুহাত দেখিয়ে এর কোনটিই বাস্তবায়ন করেনি। ভারত বাংলাদেশে তিন লাখ টন চাল ও দু’লাখ টন গম নিয়ে মোট ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য রফতানির প্রতিশ্র্রুুতি দিয়েছিল। কিন্তুু এই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। দেশটি বিএসটিআই সনদের শর্ত প্রত্যাহার এবং ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল ট্রাক চলাচলের সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি। চুক্তির প্রাক্কালে বিশেষ করে ৪৮০টি স্পর্শকাতর আইটেম থেকে ৬১টি বাদ দিয়ে বাকি ৪১৯টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে আমদানি করার আশ¡াস দিয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকার এই আশ¡াসটিও পূরণ করেনি। হাসিনা-মনমোহন সিং সমঝোতা অনুযায়ী তিনবিঘা করিডোরের ওপর দিয়ে একটি ফ্লাইওভার তৈরি করে দেয়ার কথা ছিল। তাও হচ্ছে না। বলাবাহুল্য, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী এই তিনবিঘা করিডোরটি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তুু হস্তারতো দূরের কথা তার ওপরে প্রতিশ্রুত ফ্লাইওভারও এখন আর হচ্ছে না।

পাইওনিয়ারের রিপোর্টে বলা হয়, ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় শেখ হাসিনা ও ভারত উভয়ের অভিন্ন শত্রু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামীকে এই দাবি করার সুযোগ এনে দিয়েছে যে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উলফার অরবিন্দ রাজখোয়ার মতো জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতবিরোধী ইসলামী জঙ্গিদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব করার কারণে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির চাপের মুখে শর্তহীন ছাড় দেয়ার অভিযোগ উঠছে। এতে আরো বলা হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জয় পেলেও মাঝামাঝি মেয়াদে এটা বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ভারত অবশ্য শেখ হাসিনাকে সহায়তা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে। পাইওনিয়ারের মতে, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিবেশে ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই বছরই আমেরিকানরা আফগানিস্থান থেকে চলে যাবে। এর পর আল কায়েদা-তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে। তখন পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাতে পারে। প্রবল ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে ভারতকে দুই ফ্রন্টে লড়াই করতে হবে।

ভারতের এই পত্রিকাটির রিপোর্ট থেকে কয়েকটি বিষয় পরিষার হয়ে ওঠে। এক. আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান মহাজোট সরকার ভারতের আশীর্বাদে ক্ষমতায় এসেছে এবং ভারতীয় স¡ার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট। তারা ভারতের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। কিন্তুু ভারত তার বিনিময়ে বাংলাদেশকে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা কার্যকর না করায় শেখ হাসিনার সরকারকে অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। দুই. ২০০৮ সালে ব্যাপক জয় পেলেও মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়ে অবস্থার অবনতি ঘটেছে এবং ভারত শেখ হাসিনাকে সহায়তার মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। তিন. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনা ও ভারত উভয়ের অভিন্ন শত্রু। চার. ভারতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উলফার অরবিন্দ রাজখোয়ার ন্যায় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতবিরোধী ইসলামী জঙ্গিদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, জঙ্গি নাম দিলেও প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার সরকার যা করছেন তা হচ্ছে বাংলাদেশের মাটি থেকে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ¡াসী সকল দলকে উৎখাত করা। পাঁচ. আগামী ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি ক্ষমতায় না আসলে বাংলাদেশে ভারতীয় স¡ার্থ যেমন বিপন্ন হবে তেমনি ভারত আরো নানামুখী সমস্যায় পড়বে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্থান ছেড়ে যাবে এবং তালেবান আল-কায়েদা দেশটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। ভারতের জন্য এক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এই সুযোগে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাতে পারে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে যদি খালেদা জিয়ার মতো কট্টর ভারতবিরোধী ব্যক্তি ক্ষমতায় আসে তাহলে ভারতকে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে।

পাইওনিয়ারের এই রিপোর্টটির পর আওয়ামী লীগ-ভারত আঁতাত, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে দেশটির নগ্ন হস্তক্ষেপে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য তার সর্বগ্রাসী তৎপরতা, এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও তাদের প্রতিনিধিদের শত্রু ঘোষণা করে তাদের উৎখাতের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ এবং একটি দল ও গোষ্ঠীকে ক্ষমতা, অর্থবিত্ত ও সুযোগ-সুবিধার লোভ দেখিয়ে দেশ ও তার জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার বিষয়টি পরিষার হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ এখন কারা চালাচ্ছেন সে সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলে আসছিল। এখন অনেকের কাছে বিষয়টি পরিষার যে ভারতীয় নীলনকশা ও দিক-দর্শনের ভিত্তিতেই এখন বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। ভারত যাদের শত্রু মনে করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও তাদের শত্রু মনে করে নিশ্চিহ্ন করার পথে নেমেছে। তারা এখন কাউকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না।

প্রসঙ্গত: এখানে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট নিরদ সি. চৌধুরীর একটি প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হলো। তিনি তার নিবন্ধ ঊীঢ়বপঃধঃরড়হ ভৎড়স ঘবি এড়াবৎহসবহঃ রহ ইধহমষধফবংয শিরোনামে লিখিত নিবন্ধেটি লিখেন, ”শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘন্টা পার না হতেই হঠাৎ মধ্যরাতে আই .কে গুজরালের বাসায় টেলিফোন বেঁজে উঠলো। বিষ্ময়ের সাথে শ্রী গুজরাল দেখলেন, অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ ’হ্যালো’ বলছেন। তিনি এতে সম্পর্কের উষ্ণতা অনুভব করলেন। তার মধ্যে হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধের ঝবহঃরসবহঃ ফিরে আসলো। ২১ বছর আগে শেখ মুজিবের মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধুত্বের যে অনুভূতির কবর রচিত হয়েছিল হঠাৎ তা জেগে উঠলো। বাংলাদেশের স¡াধীনতা যুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছে। তাদের অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছে। শুনতে অদ্ভুত লাগবে, তাদের স্মরণে বাংলাদেশে কোনও স্মৃতি স্তম্ভ¢ তো দূরের কথা একটা ইট দিয়ে তার চিহ্নও রাখা হয়নি। প্রবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয় যে, আওয়ামী লীগ এই স্মৃতিকে জিইয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তবে ধারণা অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকার যে সময় ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর যৌথ রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হচ্ছিল সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায়। তিনি লিখেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দার ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে তার প্রথম সফরে আওয়ামী লীগ সরকারের বন্ধুত্বের উষ্ণতা অনুভব করে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। যে আমলারা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে নিশ্চুপ ছিলেন আস্তে আস্তে তারা সহজ হচ্ছেন। এই নিবন্ধটিতে তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে, সালমানকে দিয়ে ভারত সরকার তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পাঁচটি ভারতীয় দাবি পূরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই দাবিগুলো হচ্ছে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, বাংলাদেশ ভূখন্ডের উপর দিয়ে নৌ ও স্থল ট্রানজিট প্রদান, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর ব্যবহারের সুবিধা প্রদান, গ্যাস ও কয়লা ব্যবহারের সুবিধা প্রদান এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সাহায্য প্রদান প্রভৃতি। নিরোদ চৌধুরীর প্রবন্ধে এই সুবিধাসমূহের বিনিময়ে ফারাক্কার ব্যাপারে বাংলাদেশকে কিছু ছাড় প্রদান বিশেষ করে একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানান হয় এবং বলা হয় যে, প্রকৃত পক্ষে আবেগের দিক থেকে ফারাক্কা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি কাশ্মীর; গঙ্গার পানির ন্যায্য হিসসা না পেলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে উপরোক্ত সুবিধাগুলো দেবে না।

বলা নিষ্প্রয়োজন যে, শেখ হাসিনা সরকারের উপরোক্ত মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) ভারত তার বাঞ্ছিত সুবিধা আদায় করতে পারেনি। তবে সম্পর্কের বরফ গলায় সাহায্য করার জন্য গঙ্গার পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে পাঁচ বছরের পরিবর্তে ৩০ বছরমেয়াদী একটি চুক্তি করে চমক সৃষ্টি করেছিল। এই চুক্তিতে কোনও গ্যারান্টি ক্লজ ছিল না। বাংলাদেশকে নির্ধারিত পরিমাণ পানি দেয়া না হলে কি হবে তারও কোনও উল্লেখ ছিল না। ফলে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হলেও বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হাসিনা সরকারের নীতি পলিসি, নিবর্তন-নির্যাতনমূলক কার্যক্রম এবং সর্বাত্মক ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দলসমূহের জোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ফলে ভারত বাংলাদেশ থেকে তার অবৈধ সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারেনি এবং এ প্রেক্ষিতে ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই তারা এই জোটের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু করে দেয়। এখন এটা পরিষার যে সহযোগী হিসেবে ভারত তাদের সর্বাত্মক মদদ দিয়েছে। দেশ ও সরকারকে অকার্যকর করা, ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং মানুষের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে জেএমবির সৃষ্টি ও দেশব্যাপী বোমাবাজি এবং এমনকি শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার পেছনেও এদেশীয় অপশক্তি এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ষড়যন্ত্র ছিল। দীর্ঘকাল ধরে বাইরের থেকে ইসলামের ও ইসলামপন্থীদের কোনও ক্ষতি করতে না পেরে তারা কৌশল পরিবর্তন করে এবং ইসলামপন্থী সেজে একশ্রেণীর অদূরদর্শী আলেম নামের কলংককে পূঁজি করে একের পর এক অপকর্মে লিপ্ত হয়। চারদলীয় জোটের বিরুদ্ধে এটা যে একটা ষড়যন্ত্র ছিল তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় ভারতীয় থিংক ট্যাংক ভাষর রায়ের সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধ থেকে। ‘র’-এর সাবেক এই কর্মকর্তা ঝড়ঁঃয অংরধ অহধষুংরং এৎড়ঁঢ়-এর অন্যতম পুরোধা শ্রী ভাস্বর রায় তার নিবন্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে ভারতবিরোধী জোট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন যে, এই জোট উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য উলফাকে অস্ত্রসজ্জিত করেছে, বাংলাদেশ ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে অনুমতি দিয়েছে এবং এমনকি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কনফেডারেশনভুক্ত করার কাজও যথেষ্ট এগিয়ে নিয়ে গেছে।
ভাস্কর রায় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও ভারতীয় বন্ধুত্বের সর্বশেষ প্রতীক বলে মনে করেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে বাংলাদেশের মুসলমানদের শত্রু হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে এই দেশগুলোর ১২০টি সংগঠন সমাজ সেবা ও দারিদ্র্য বিমোচনের নামে জংগী তৎপরতার সাথে জড়িত রয়েছে। তাদের তৎপরতা বন্ধ করেও কোনও ফল হচ্ছে না। কেননা আমলাতন্ত্রসহ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তারা এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, তাদের নির্মূল করা খুবই কঠিন কাজ।

বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো ভারত এবং বাংলাদেশ দু’টি স¡াধীন সার্বভৌম দেশ। আন্তর্জাতিক আইন বিধিবিধান ও নিয়মনীতি অনুযায়ী একটি স¡াধীন দেশ আরেকটি স¡াধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই হস্তক্ষেপ একটি স¡াধীন জাতির সত্তাকে অস¡ীকার করে। আবার একটি দেশের কোনও রাজনৈতিক দলকে আরেকটি দেশ শত্রুও গণ্য করতে পারে না। কোন দেশ তাদের শত্রু, কোন দেশ তাদের মিত্র এই নির্দেশনাও তারা দিতে পারে না। দুর্ভাগ্যবশত:ভারত বরাবরই এই কাজটি করছে এবং তাদের আচার আচরণের মাধ্যমে বলে দিচ্ছে যে, প্রকৃতপক্ষে স¡াধীন অস্তিত্ব নিয়ে থাকার অধিকার বাংলাদেশের নেই। তারা যা বলবে বাংলাদেশকে তাই করতে হবে। তারা যা চাইবে তা তাদের দিতে হবে। তারা যাদের ক্ষমতায় আনতে চাইবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। তারা যাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইবে এ দেশের পুতুল সরকার তাদের নিশ্চিহ্ন করার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেছে এ কথাটি আমরা অস¡ীকার করতে পারি না। এই সাহায্য যে নিঃস¡ার্থ ছিল না এ কথাটিও আমরা ভুলতে পারি না। পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র, পাটকল, বস্ত্রকল ও চিনিকলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি এবং ব্যাংক লুটের সোনাদানা সবই তারা নিয়েছেন। এ দেশের পাট শিল ধ্বংস করেছেন। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানিয়েও তারা ক্ষান্ত হননি আরো ৫৪টি নদীর উৎস মুখে বাঁধ দিয়ে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা ও পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছেন। তবুও তারা আমাদের বন্ধু। এ দেশের মানুষ তাদের শত্রু মনে করেন না। তেমনি মনে করেন না সে দেশের কোনোও রাজনৈতিক দলকেও। কিন্তু তারা আমাদের তাই মনে করেন। তাদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগই তাদের একমাত্র বন্ধু এবং কার্যত আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বিনিময়ে ভারতীয় এজেন্ডাই এ দেশে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রভুদের খুশি করেই তারা ক্ষমতায় থাকতে চান।

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের তারা অনেক উপকার করেছেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে আদালতের রায়ে যখন সাজা পাওয়ার পর্যায়ে তারা পৌ ঁছে যান, শেখ হাসিনাকে তার আন্দোলনের ফসল কেয়ারটেকার সরকার দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করেন তখনি কূটনৈতিক তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করা হয় এবং জেনারেল মঈন উকে প্রভাবিত করে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করা হয়। এই ঋণ পরিশোধ করার মতো নয়। বিএনপিকে পরিকলিতভাবে পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং উঠতি ইসলামী শক্তি হিসেবে জামায়াতকে তারা টার্গেট করে নেয়। ২০০৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় থিংক ট্যাংক হিরন্ময় কার্লেকার তার এক নিবন্ধে জামায়াতকে প্রতিহত করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি সুস্পষ্ট আহবান জানান। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ধরা না পড়ায় ভারতের একটি গোষ্ঠী হতাশ হয়ে পড়েন। কার্লেকার ছিলেন এদেরই দলভুক্ত। 
জামায়াতকে তারা ভয় পায় এবং নির্বাচনে তারা নীরব দর্শক ছিলেন না। তাকে প্রতিহত করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন এবং কারচুপির মাধ্যমে তাকে প্রহসনে পরিণত করে পছন্দের দলকে ক্ষমতায় এনে প্রথম সুযোগেই নিজেদের স¡ার্থ আদায় করে নিয়েছেন। কিন্তুু দেয়ার ব্যাপারে নির্লিপ্ততা অবলম্বন করেছেন। একেই বলা হয়, আদানে ক্ষিপ্রতা, প্রতিদানে মন্থর। বাংলাদেশ সরকার এখানে পুতুল মাত্র। ভারতীয় নির্দেশনায় এখন দেশ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যুদ্ধাপরাধের বানোয়াট অভিযোগও তাদের সৃষ্টি। এই ইস্যুটি ভাস্কর রায়, সন্দীপ দীক্ষিত ও হিরন্ময় কার্লেকার প্রমুখ ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শেই জন্ম দেয়া হয়েছে। শুধু লিখনির মাধ্যমে নয়, কোনো কোনো ভারতীয় বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে এসেও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে এই ইস্যুকে চাঙ্গা করার প্ররোচনা দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে এ দেশে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তাকে বন্ধুহীন করার চেষ্টাও চলছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশী এই হস্তক্ষেপ এবং বাইরের নির্দেশনায় দেশের আইনানুগ ও দেশপ্রেমিক দল ও শক্তির উপর নির্যাতন, আইন-শৃংখলার অব্যাহত অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং জনজীবনের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান না করে আধিপত্যবাদ তোষণের বিদ্যমান সরকারি প্রবণতায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়। সরকার যদি নিজের ও দেশের কল্যাণ চান তাহলে স¡াধীন দেশের স্পিরিটকে সামনে রেখে ইনসাফ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমার বিশ্বাস । এ ক্ষেত্রে বিদেশী ডিক্টেশন তাদের কোনও কাজে লাগতে পারে না।

 

 





সংবাদপত্রের কালো দিবস সেই ১৬ জুন



১৬ জুন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের সেই কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের দর্শন অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দুটি মাত্র সংবাদপত্রের (দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভার) ডিক্লারেশন বহাল রেখে সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেন। পরে ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমসকে নতুনভাবে ডিক্লারেশন দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট চারটি পত্রিকার প্রকাশনা সাময়িকভাবে অব্যাহত রাখেন। এর আগে তিনি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন এবং এ ব্যবস্থাকে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে উল্লেখ করেন। এই বিপ্লব সফল করতেই তিনি চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখে সব দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেন। ফলে কয়েক হাজার সাংবাদিক ও সংবাদপত্রকর্মী বেকার হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের এই বিপ্লবী হস্তক্ষেপে রুদ্ধ হয়ে যায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, গোষ্ঠীর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা। তখন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের এই নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করার সাহস কারও হয়নি। তবে পরের বছর থেকে সাংবাদিক সমাজ এই দিনটিকে সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
এদিকে কালের আবর্তে এবার এমন সময়ে দিনটি আমাদের মাঝে এসেছে যখন সেই আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাসীন। বর্তমান অবস্থায় তারা সেই সময়কার একদলীয় বাকশালী নীতিমালা গ্রহণ না করলেও কার্যত দেশে নবরূপে বিরাজ করছে সেই বাকশালী ব্যবস্থা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নানা কৌশলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং সাংবাদিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি টিভি চ্যানেল ওয়ান এবং পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রচাররত যমুনা টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। আর সত্য প্রকাশের অপরাধে গত বছরের ১ জুন এই সরকার বাকশালী কায়দায় দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। এই ঘটনা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর আইনি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে দৈনিক আমার দেশ পুনঃপ্রকাশিত হয়। অন্যদিকে প্রায় ১০ মাস কারাভোগের পর মুক্ত হন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এদিকে সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেছেন, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যেই বাকশালী সরকার গণতন্ত্রবিরোধী এই পদক্ষেপ নিয়েছিল।
১৯৭৫ সালে সংবাদপত্র বন্ধের ঘটনা ওই সময়ের চারটি দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্সের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হয়। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো—


ইত্তেফাকের নতুন সম্পাদক
সংবাদপত্র সম্পর্কে সরকারের নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন। উল্লেখযোগ্য যে, সরকার দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভার ব্যতীত সকল পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেন এবং পরে ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমসকে নতুনভাবে ডিক্লারেশন প্রদান করেন। নতুন ব্যবস্থায় জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ইত্তেফাকের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। (দৈনিক ইত্তেফাক : ১৭ জুন ১৯৭৫)
দ্বিতীয় বিপ্লবের আলোকে সংবাদপত্র
সম্পর্কে নতুন নীতি ঘোষণা
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্র পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যাপারে নতুন নীতি ঘোষণা করিয়া দুইটি অর্ডিন্যান্স জারী কারিয়াছেন। নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) হইতে সারাদেশে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমস এই চারটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হইবে। জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, জনাব ওবায়দুল হক, শেখ ফজুলল হক মনি ও জনাব এহতেশাম হায়দার চৌধুরী যথাক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন।
সরকার আরো ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল রাখিয়াছেন। এইসব পত্রপত্রিকাগুলি ছাড়া সরকারের বিনা অনুমতিতে আর কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হইবে না। বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫ জারী করিয়া ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ ও ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা ভিন্ন বাদবাকী সকল পত্রপত্রিকার ডিক্লারেশন ১৭ই জুন হইতে বাতিল করিয়া দিয়াছেন। বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয় : এই অর্ডিন্যান্স জারীর অব্যবহিত পরে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমস এই দুই দৈনিক সংবাদপত্রও প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। অতঃপর উক্ত চারটি দৈনিক এবং ১২২টি সাময়িকী ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ভিন্ন আর কোনো পত্রিকা বা সাময়িকী প্রকাশিত হইবে না।
সরকার যুগপত্ আরও একটি অর্ডিন্যান্স জারী করেন। সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহ পরিচালনার জন্য জারীকৃত এই অর্ডিন্যান্সের নাম হইতেছে সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫।
সরকার এতদসঙ্গে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন যে, অদূর-ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ও খুলনা হইতে একটি করিয়া এবং উত্তরাঞ্চলীয় কোনো একটি জেলা হইতে অপর একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হইবে।
ডিক্লারেশন বাতিলের ঘোষণা প্রকাশের অব্যবহিত পরে তথ্য ও বেতার দফতরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান যে, বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ভবিষ্যত্ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হইয়াছে।
ছাপাখানার কর্মচারীরা ভিন্ন বাতিল সংবাদপত্রসমূহের অন্যান্য কর্মচারীকে ৩০শে জুনের মধ্যে কমিটির নিকট রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করা হইয়াছে।
কমিটির সদস্যবৃন্দ হইতেছেন : জনাব মিজানুর রহমান, অধ্যাপক এম এ খালেদ এমপি, তথ্য ও বেতার দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারী আনিসুজ্জামান খান, তথ্য ও বেতার দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারী জনাব সলিমুজ্জামান, জনাব গিয়াস কামাল চৌধুরী, জনাব আমানুল্লাহ খান এমপি (বগুড়া) এবং জনাব আবদুল গনি হাজারী। জনাব আনিসুজ্জামান খান কমিটির আহ্বায়করূপে কাজ করিবেন।
ঢাকা ও খুলনায় বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের জনাব মিজানুর রহমানের নিকট রিপোর্ট করিতে হইবে। অবজারভার হাউজে তাহার অফিস হইবে। চট্টগ্রামের কর্মচারীরা সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ খালেদের নিকট এবং বগুড়ার কর্মচারীরা সংসদ সদস্য জনাব আমানুল্লাহ খানের নিকট রিপোর্ট করিবেন।
রাষ্ট্রপতি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিলের এই অর্ডিন্যান্স জারী করেন।
অর্ডিন্যান্সে বলা হয় : পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক হইয়া পড়ে। সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা অর্ডিন্যান্স বলে সরকারী সংবাদপত্রসমূহের পরিচালনা ও উন্নয়ন সাধনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য গঠিত নির্দিষ্ট কতকগুলি কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দেওয়ার জন্যও অর্ডিন্যান্সে ব্যবস্থা করা হইয়াছে। এই অর্ডিন্যান্স বলে সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের জন্য সরকার পরিচালনা বোর্ড গঠন করিবেন। সরকার বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান এবং উপযুক্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োগ করিবেন। বোর্ড অন্যান্য কাজের সহিত নিম্নলিখিত কার্যাদি সম্পাদন করিবে : সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের এবং সংবাদপত্র মুদ্রণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সরকারের মালিকানাধীন ছাপাখানাসমূহের ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, সরকারের অনুমতি অনুযায়ী স্বীয় পরিচালনাধীন সাংবাদপত্র ও ছাপাখানা সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদন ও কার্যকরীকরণ, বোর্ড সংবাদপত্র ও ছাপাখানা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় করিবে।
বোর্ড সুষ্ঠু ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্বীয় দায়িত্ব সম্পাদন করিবে, যাহাতে গণসংযোগ মাধ্যমের চাহিদা পর্যাপ্তভাবে পূরণ হয় এবং বিদেশে গঠনমূলকভাবে প্রগতিশীল জাতীয় ভাবমূর্তি বিধৃত হয়। (দৈনিক ইত্তেফাক : ১৭ জুন ১৯৭৫)

সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্র
(ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্সের পূর্ণ বিবরণ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইন, সংসদ বিষয়ক ও বিচার মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক দফতরের ১৩ জুন ১৯৭৫-এ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঘোষিত সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ তথা ১৯৭৫-এর ৩৪ নং অর্ডিন্যান্সের পূর্ণপাঠে বলা হয় :
সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এবং সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত কতিপয় কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দিবার উদ্দেশ্যে ইহা একটি অধ্যাদেশ। যেহেতু সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সরকার কর্তৃক কারবার পরিচালনা হইতেছে এই রূপ সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত কতিপয় কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দেওয়া এবং তত্সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে।
এবং যেহেতু সংসদ এখন অধিবেশনে নহে এবং আশু কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা উদ্রেককর পরিস্থিতি বিরজমান বলিয়া রাষ্ট্রপতি মনে করিতেছেন। তাই এক্ষনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের (১) নং ধারা অনুযায়ী ন্যস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন এবং জারী করিতেছেন :
১। সংক্ষিপ্ত নাম : এই অর্ডিন্যান্সকে বলা হইবে সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫।
২। সংজ্ঞাসমূহ—এই অর্ডিন্যান্সের বিষয়বস্তু ও পরিপ্রেক্ষিতে ব্যতিক্রম কোনো কিছু না থাকিলে (ক) ‘বোর্ডং’ বলিতে বুঝাইবে ৩ নং ধারার অধীনে গঠিত সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহ ব্যবস্থাপনার বোর্ড (খ) অবলুপ্ত কোম্পানী বলিতে বুঝাইবে ৬ নং ধারার অধীনে যে কোম্পানী গঠিত হইয়াছে।
৩। ব্যবস্থাপনা বোর্ডের গঠন—(১) সরকার এই অর্ডিন্যান্সের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপনা বোড নামে একটি বোর্ড গঠন করিতে পারিবেন।
(২) একজন চেয়ারম্যান এবং সরকারের বিবেচনায় উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত সংখ্যক অন্যান্য সদস্য লইয়া বোর্ডটি গঠিত হইবে।
(৩) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য যে শর্তাবলীর অধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করিবেন এবং বোর্ডের বৈঠকের বিধি পদ্ধতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হইবে।
৪। বোর্ডের কার্যক্রম—বোর্ডের কার্যক্রম হইবে— (ক) সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র এবং সরকারের মালিকানাধীন মুদ্রণ ছাপাখানাসমূহ পরিচালনা, উন্নয়ন, প্রসার এ ব্যবস্থা আধুনিক করা এবং এইসকল সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য ঐগুলি ব্যবহার করা।
(খ) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হইলে, স্বীয় ব্যবস্থাপনাধীন সংবাদপত্র ও ছাপাখানা সংশ্লিষ্ট যে কোনো চুক্তি, বা ব্যবস্থা সম্পাদন এবং বাস্তবায়ন করা।
(গ) স্বীয় ব্যবস্থাপনাধীন সংবাদপত্র ও ছাপাখানাগুলির জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো যন্ত্র, কলকব্জা রক্ষণাবেক্ষণের খুচরা অংশ, কাঁচামাল ও সামগ্রী অথবা অন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়করণ।
(ঘ) সরকারের বিশেষ অনুমোদনক্রমে ব্যবস্থাপনাধীন যে কোনো সম্পত্তি জিম্মা রাখিয়া ধার গ্রহণ বা অর্থ সংগ্রহ।
(ঙ) সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অথবা উপরোক্ত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুরূপ অন্যবিধ কাজ সম্পাদন।
৫। বোর্ড কর্তৃক অনুসৃত নীতি—(১) বোর্ড উহার কার্যক্রম সম্পাদনকালে দেশের গণসংযোগ মাধ্যম এবং গঠনমূলকভাবে জাতীয় প্রগতিশীল ভাবমূর্তি বিদেশে উপস্থাপনের চাহিদা পর্যাপ্তভাবে পূরণ করিয়া বলিষ্ঠ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কাজ করিয়া যাইবেন।
(২) বোর্ড উহার কার্যক্রম সম্পাদনকালে সময় সময় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশাদি দ্বারা পরিচালিত হইবেন।
(৩) কতিপয় কোম্পানী বাতিলকরণ—(১) ১৯১৩ সালের কোম্পানী আইন (১৯১৩-এর ৭ম)-এ অথবা সাময়িকভাবে বলবত্ অন্য কোনো আইনে অথবা অন্য কোনো ট্রাস্ট বা ওয়াকফ বা অন্য চুক্তি বা দলিলে যা কিছুই থাকুক না কেন, তফসিলে বর্ণিত কোম্পানী গুলি এই অর্ডিন্যান্স বলবত্ হইবার সাথে সাথে বিলুপ্ত হইয়া যাইবে।
(২)(১) নং উপধারা অনুযায়ী কোম্পানীগুলি ভাঙ্গিয়া যাইবার পর (ক) অবলুপ্ত কোম্পানীগুলির সকল পরিসম্পদ, স্বত্ব, অধিকার ও সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, তত্সহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর শেয়ার এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়) আদেশ (পি, ও, নং ১৬, ১৯৭২) এর অধীনে সরকারের হাতে ন্যস্ত হয় নাই—এইরূপ শেয়ার সেইগুলি অন্য কোম্পানী, কর্পোরেশন বা ট্রাষ্ট্রে রহিয়াছে, উহার পর হইতে উহাকে উক্ত আদেশ বলিয়া অভিহিত করা হইবে এবং অবলুুপ্ত কোম্পানীসমূহের সকল নগদ অর্থ ও ব্যাংকের জমা সংরক্ষিত তহবিল ও বিনিয়োগ এবং বিলুপ্ত কোম্পানীর এই রূপ সম্পত্তি হইতে উত্সারিত সকল স্বার্থ ও স্বত্ব অথবা দখলী স্বত্ব, ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত হইয়া যাইবে।
(খ) অবলুপ্ত যে কোনো কোম্পানী কর্তৃক উহার ব্যবসায় ও কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে বা তত্সংশ্লিষ্টে সৃষ্ট সকল দেনা ও দায়, গৃহীত সকল দায়িত্ব, সম্পাদিত সকল চুক্তি এবং সম্পাদিত সকল আয়োজন অথবা সম্পাদনের জন্য গৃহীত আয়োজিত সকল বিষয়াদি সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হইবে এবং সরকার কর্তৃক, সরকারের সহিত, সরকারের জন্য সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া লওয়া হইবে।
(গ) অবলুপ্ত কোম্পানীসমূহ উহাদের কারবার ও কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্টে ও উদ্দেশ্যে কোনো অর্থ অঙ্ক প্রদানযোগ্য বা আদায়যোগ্য হইলে সরকার উহা পরিশোধ বা আদায় করিতে পারিবেন।
(ঘ) পরিপ্রেক্ষিত হেতু অন্যতর না বুঝাইলে এই সকল কোম্পানীর ব্যবসা ও কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ও সংশ্লিষ্টে যে কোনো চুক্তি, দলিল, আমমোক্তারনামা, আইনগত প্রতিনিধিত্ব এবং যে কোনো প্রকৃতির অন্যবিধ দলিলে কোনো অবলুপ্ত কোম্পানীর কোনো প্রসকোজেন্স থাকিলে তাহা সরকারে প্রসঙ্গ উল্লেখ বলিয়া ধরা হইবে এবং এইরূপ চুক্তি, দলিল, ক্ষমতা, মঞ্জুরী বা চুক্তি তদনুযায়ী কার্যকর হইবে।
(ঙ) অবলুপ্ত কোম্পানীসমূহের কারবার ও কার্যক্রমের প্রয়োজন ও সংশ্লিষ্টে অবলুপ্ত কোম্পানী কর্তৃক বা উহাদের বিরুদ্ধে এই ধারার অধীনে কোম্পানী অবলুপ্ত হইবার পূর্বে আরোপিত সকল মামলা, আপীল ও আইনগত শুনানী সরকার কর্তৃক বা সরকারের বিরুদ্ধে আরোপিত মামলা, আপীল ও আইনগত শুনানী বলিয়া ধরা হইবে এবং তদনুযায়ী অব্যাহত ও ক্রমাগত থাকিবে;
(চ) কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ আদেশ বলে তাহার নিয়োগ বা চাকুরী নাকচ করিয়া দিলে এবং সরকার কর্তৃক চাকুরীর শর্তাবলী নির্ধারিত ও পুণঃসংজ্ঞায়িত না হইলে অবলুপ্ত কোম্পানীগুলির সকল অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তার চাকুরী, চাকুরীর কোনো চুক্তি বা শর্তে যাহাই থাকুক না কেন ওই সকল কোম্পানী অবলুপ্ত হইবার তাত্ক্ষণিক পূর্ববর্তী শর্তাবলীতে সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হইয়াছে বলিয়া ধরা হইবে।
(ছ) এই অর্ডিন্যান্স দ্বারা বা উহার অধীনে অবলুপ্ত কোম্পানীর কোনো অফিসার বা অন্যান্য কর্মচারীর চাকুরী সরকারের নিকট স্থানান্তরিত হইলে এইরূপ বাতিল ও বদলীর কারণে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাইবে না।
(৩) বিরোধ এড়াইবার উদ্দেশ্যে এতদ্বারা ঘোষণা করা হইতেছে যে, উক্ত আদেশের অধীনে সরকারের নিকট ন্যস্ত অবলুপ্ত কোম্পানীর সকল সম্পত্তি উক্ত আদেশের আওতায় পরিত্যক্ত সম্পতি বলিয়া আর পরিগণিত হইবে না এবং তদনুযায়ী আর উক্ত আদেশের বিধিসমূহের আওতাভুক্ত থাকিবে না।
৭। ক্ষতিপূরণ : (১) ৬ নং ধারার অধীনে সরকারের হাতে ন্যস্ত কোনো অবলুপ্ত কোম্পানীতে বিরাজমান শেয়ার এবং এই সকল শেয়ার হইতে উদ্ভূত সকল স্বত্বের ক্ষেত্রে এই ধরনের শেয়ারের মালিকদিগকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদত্ত হইবে—
(ক) যদি শেয়ারের পূর্ণমূল্য পরিশোধিত হইয়া থাকে, ঐ সকল শেয়ারের লিখিত মূল্য, এবং
(খ) শেয়ারসমূহের পূর্ণমূল্য সম্পূর্ণ পরিশোধিত না হইয়া থাকিলে, ঐ সকল শেয়ারের খাতে প্রকৃতই পরিশোধিত অংকের সমান অর্থ ।
(২) অবলুপ্ত কোম্পানীর একজন শেয়ারহোল্ডার (১) নং উপধারার অধীনে প্রদানযোগ্য ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিয়া লইলে এইরূপ শেয়ারহোল্ডার এইরূপ কোম্পানীর দেনা ও দায়ের সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্ব হইতে সম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ অব্যাহতি লাভ করিবেন।
(৩) কোনো শেয়ারহোল্ডার (১) নং উপধারার অধীনে তাহার শেয়ারসমূহের জন্য প্রদানযোগ্য ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিলে সেক্ষেত্রে ১৯১৩ সালের কোম্পানী আইনের (১৯১৩ সালের ৭ম) অধীনে অবলুপ্ত কোম্পানীর হিসাব-নিকাশের পর দায় অপেক্ষা পরিসম্পদের মূল্য বেশি বা কম হইলে তদনুযায়ী তিনি অংশ লইতে বাধ্য থাকিবেন।
স্বত্বসীল
(৬ নং ধারা দ্রষ্টব্য)
১। আলহেলাল প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং কোম্পানী লিমিটেড।
২। দৈনিক পাকিস্তান লিমিটেড।
৩। ন্যাশনাল নিউজ পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
৪। জনতা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।
শেখ মুজিবুর রহমান; রাষ্ট্রপতি।
বিচারপতি এম এইচ রহমান সেক্রেটারী
ঢাকা ১৩ জুন, ১৯৭৫। (দৈনিক ইত্তেফাক : ১৭ জুন ১৯৭৫)

সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্সের পূর্ণ বিবরণ
১৯৭৫-এর সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্স (১৯৭৫-এর ৩৩তম) এর পূর্ণ বিবরণ :
যেহেতু, জনস্বার্থে কতিপয় সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিলকরণ প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে; এবং যেহেতু সংসদ অধিবেশন নাই এবং রাষ্ট্রপতি মনে করেন যে, আশু কার্যক্রম অপরিহার্য হইয়া পড়ার মত পরিস্থিতি বিরাজমান;
তাই, এক্ষণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩ নং অনুচ্ছেদের (১) নং ধারার অধীনে .... ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন ও জারী করিতেছেন।
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও বলবত্করণ—(১) এই অর্ডিন্যান্সকে বলা হইবে সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিলকরণ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫।
(২) ইহা ১৯৭৫-এর জুন মাসের ১৭ তারিখ হইতে বলবত্ হইবে।
২। কতিপয় সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিলকরণ; ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ডিক্লারেশন ও রেজিষ্ট্রেশন) আইনে (১৯৭৩-এর ২৩তম) (এখন ইহাকে উক্ত আইন বলিয়া অভিহিত করা হইবে) অথবা সাময়িকভাবে বলবত্ অন্য যে কোনো আইনে যাহাই থাকুন না কেন—
(ক) তফসিলে বর্ণিত সংবাদপত্রগুলি ব্যতিরেকে উক্ত আইনের অধীনে যে কোনো সংবাদপত্রের জন্য প্রদত্ত ও গৃহীত ডিক্লারেশন এই অর্ডিন্যান্স জারী হওয়ার সাথে সাথে বাতিল হইয়া যাইবে এবং
(খ) এই অর্ডিন্যান্স জারী হওয়ার পর সরকার কর্তৃক বা সরকারের পক্ষে অথবা জনস্বার্থের খাতিরে অপরিহার্য বলিয়া বিবেচিত কার্যসাপেক্ষে মঞ্জুরযোগ্য সরকারী অনুমোদন লাভ ব্যতিরেকে উক্ত আইনের অধীনে কোনো সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য কোনো ডিক্লারেশন প্রদান বা গ্রহণ করা যাইবে না।
৩। শর্ত লংঘনের দায়ে ডিক্লারেশন বাতিলকরণ : ২(খ) ধারার অধীনে প্রদত্ত অনুমতি অনুসারে কোনো সংবাদপত্রের জন্য ডিক্লারেশন প্রদত্ত হইলে, যে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করা হইয়াছিল উহার কোনো শর্ত লংঘন অথবা শর্ত পালনের ব্যর্থতার কারণে সরকার আদেশক্রমে ডিক্লারেশন বাতিল করিয়া দিতে পারিবেন। (তফসিলের পূর্ণ বিবরণ ১২৪টি পত্রপত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল শীর্ষক সংবাদে দেখুন)
১২৪টি পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল
গতকাল (সোমবার) সরকার কর্তৃক জারীকৃত সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিলকরণ) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫-এর অধীনে প্রকাশনার ডিক্লারেশন বাতিলকরণ হইতে সরকার ১২৪টি দৈনিক, সাপ্তাহিক, দ্বিপাক্ষিক, মাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পত্রপত্রিকাকে অব্যাহতি দান করিয়াছেন। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) হইতে এই অর্ডিন্যন্স কার্যকরী হইতেছে।
অব্যাহতি লাভকারী পত্রপত্রিকার তালিকা নিম্নরূপ :
দৈনিক পত্রিকা
১ দি বাংলাদেশ অবজারভার, ঢাকা। ২ দৈনিক বাংলা, ঢাকা।
সাপ্তাহিক
৩ বাংলাদেশ সংবাদ, ঢাকা। ৪ বাংলাদেশ সি আই গেজেট, ঢাকা। ৫ বাংলাদেশ গেজেট, ঢাকা। ৬ বাংলাদেশ পুলিশ গেজেট, ঢাকা। ৭ ডিটেকটিভ, ঢাকা। ৮ ডাকবার্তা, ঢাকা। ৯ যুববার্তা, ঢাকা। ১০ সোভিয়েত সমীক্ষা ঢাকা। ১১ সোভিয়েত রিভিউ, ঢাকা। ১২ আরাফাত, ঢাকা। ১৩ প্রতিবেশী, ঢাকা। ১৪ বিচিত্রা, ঢাকা। ১৫ চিত্রালী, ঢাকা। ১৬ সিনেমা, ঢাকা। ১৭ বেগম, ঢাকা। ১৮ ললনা, ঢাকা। ১৯ দি পালস, ঢাকা।
মাসিক পত্রিকা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত : ২৩ পূর্বাচল, ২৪ নবারুণ, ২৫ বাংলাদেশ বেতার (ইংরেজী), ২৬ কৃষিকথা, ২৭ অগ্রদূত, ২৮ বীমাবার্তা, ২৯ সুখী পরিবার, ৩০ বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, ৩১ বুলেটিন অব স্ট্যাটিসটিক্স, ৩২ ধানশালিকের দেশ, ৩৩ উত্তারধীকার, ৩৪ গণকেন্দ্র, ৩৫ পুরোগামী বিজ্ঞান, ৩৬ সমবায়, ৩৭ শাপলা শালুক, ৩৮ স্ট্যাটিসটিক্যাল বুলেটিন অব বাংলাদেশ, ৩৯ বাংলাদেশ লেবার কেসেজ, ৪০ ইকনমিক ইন্ডিকেটর অব বাংলাদেশ, ৪১ ল’ এন্ড ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স, ৪২ বাংলাদেশ ট্যাক্স ডিডিসশন্স, ৪৩ দি জার্নাল অব ম্যানেজমেন্ট বিজনেস এন্ড ইকনমিক্স, ৪৪ বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমী, ৪৫ ঢাকা ল’ রিপোর্টস, ৪৬ কারিগর, ৪৭ আজকের সমবায়, ৪৮ মা (বাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা)। ঢাকা হইতে প্রকাশিত : ৪৯ বই, ৫০ দীপক, ৫১ উদয়ন, ৫২ ভারত বিচিত্রা, ৫৩ আল মাহদী। ৫৪ আততাওহিদ, ৫৫ নবযুগ (চাঁদপুর, কুমিল্লা) ৫৬ নাদায়ে ইসলাম, ৫৭ তাহাজীব, ঢাকা, ৫৮ সন্দীপণ, পাবনা, ৫৯ আল-আমীন ঢাকা, ৬০, হেফাজত-এ-ইসলাম, ঢাকা, ৬১ ঋতুপত্র, ময়মনসিংহ, ৬২ ছোটগল্প ঢাকা, ৬৩ চন্দ্রাকাশ, ময়মনসিংহ, ৬৪. ঢাকা ডাইজেস্ট, ঢাকা, ৬৫ দীপ্ত বাংলা, ৬৬ ধলেশ্বরী, ৬৭ দিগন্ত, ঢাকা, ৬৮ গণমন, ফরিদপুর, ৬৯ ইস্পাত, কুষ্টিয়া, ৭০ যুগরবি, চট্টগ্রাম, ঢাকা হইতে প্রকাশিত, ৭১ গণসাহিত্য, ৭২ কপোত, ৭৩ মুক্তবাংলা, ৭৪ সওগাত, ৭৫ শতদল, ৭৬ ..... ৭৭ কিংশুক, ৭৮..... ৭৯ আবাহন, ৮০ খেলাঘর, ৮১ টাপুর টুপুর (চট্টগ্রামের), ৮২ বিদিশা, ৮৩ রূপম, ৮৪. রোমাঞ্চ, ৮৫ শুভেচ্ছা, ৮৬ ঝিনুক ৮৭ চিত্রকর, ৮৮ গোয়েন্দা পত্রিকা, ৮৯ জোনাকী, ৯০ চিত্রবাণী ৯১ চলচ্চিত্র, ৯২ নিপুণ, ৯৩ খেলাধুলা, ৯৪ চিকিত্সা সাময়িকী, ৯৫ পারিবারিক চিকিত্সা (নোয়াখালী), ৯৬ হাকিমী খবর (ময়মনসিংহ), ৯৭ স্বাস্থ্য সাময়িকী (ঢাকা), ৯৮ শাশ্বতী, চট্টগ্রাম, ৯৯ বিজ্ঞান সাময়িকী (ঢাকা), ১০০ দি নিউ ইকনমিক টাইমস, ঢাকা, ১০১ ফিনান্সিয়াল টাইমস, ঢাকা, ১০২ উর্বর ময়মনসিংহ, ১০৩ রংপুর সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, রংপুর, ১০৪ মৈত্রী ঢাকা। ( দৈনিক ইত্তেফাক : ১৭ জুন ১৯৭৫)

@@@কালো দিবসে ডিইউজের গোলটেবিল আলোচনা : সাংবাদিক সম্পাদক ও মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান : আমরা বাংলাদেশ নামের এক বৃহত্ কারাগারে বন্দি : মাহমুদুর রহমান@@@
স্টাফ রিপোর্টার
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিক ইউনিয়ন, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক, সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদকগণ। তারা বলেন, আমরা এখন বাংলাদেশ নামের এক বৃহত্ কারাগারে বন্দি হয়ে আছি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস ও আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি আবদুস শহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, আমাদের সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, নিউনেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম তাহাবুর, কবি আল মুজাহিদী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, প্রবীণ সাংবাদিক শেখ রকিব উদ্দিন, কলামিস্ট মোবায়েদুর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, বিএফইউজে সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, সাবেক মহাসচিব আবদুল আজিজ, প্রবীণ সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার, সাংবাদিক কাজিম রেজা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দিনকাল সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল বলেই তার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এ সরকার আমাদের জবান কেড়ে নিতে চাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো দেশে টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকা থাকবে; কিন্তু সেগুলোতে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা থাকবে না। আজ রাষ্ট্র টিকবে কিনা এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমি ছোট কারাগার থেকে আপনাদের আন্দোলনের ফলে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এখন বৃহত্ কারাগারে আছি। যে দেশের সীমান্তের চতুর্দিকে কাঁটাতারের বেড়া থাকে সেই দেশ কারাগার নয়তো কী? আর এই কারাগারের জেলার, সুপার ভারতীয়রা। জেলে জেলার ও সুপাররা যেমন বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তেমনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস নেত্রী ও সেনাপ্রধান এদেশে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন।
বর্তমানে পত্রিকাগুলো কর্পোরেট গ্রুপের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে। এগুলোতে গণমানুষের কথা আসছে না। আমি যে পত্রিকার সম্পাদক ওই পত্রিকা কোনো কর্পোরেট হাউসের মুখপত্র নয়। আমার কোনো কর্পোরেট ব্যবসা নেই। তাই আমি পত্রিকার মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করে চলেছি।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
আমানুল্লাহ কবীর বলেন, সাংবাদিকদের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের ফলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এসেছে। আওয়ামী লীগের চরিত্র কখনও মিডিয়াবান্ধব ছিল না। পঁচাত্তরের ১৬ জুন ৪টি পত্রিকা লিফলেট আকারে রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয় তারা। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দৈনিক বাংলাসহ ৪টি সংবাদপত্র বন্ধ করে। এবারও দুটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বন্ধ করেছে। আমার দেশ বন্ধ ও মাহমুদুর রহমানকে তারা গ্রেফতার করেছে। আদালত অবমাননার মামলায় বিচারপতি ক্ষুব্ধ হয়ে মাহমুদুর রহমানকে ৬ মাসের সাজা দিয়েছেন। অথচ সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী তিনি তা করতে পারেন না। সরকারের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ সবাই এখন সংবাদপত্রের ওপর ক্ষুব্ধ।
আমাদের সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সংবাদপত্রে কালো দিবসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য প্রতি মাসে অন্তত একটি আলোচনা সভা করা উচিত। কেউ কেউ বলেন, মাহমুদুর রহমান সাংবাদিক ছিলেন না। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের মতো বয়স্ক ও বিজ্ঞব্যক্তি যদি সাংবাদিকতায় না আসতেন তাহলে তার সৃষ্ট গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। অভিজ্ঞতার কথা বলে দূরে ঠেলে দিলে আমার আজকের কাগজে আমি সম্পাদক হতে পারতাম না। আমাদের সব বিভেদ ভুলে একটি নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। এজন্য কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। সব সম্পাদককে একত্রিত করতে হবে। সবাই হয়তো এখনই আসবেন না। কিন্তু বছরের কোনো না কোনো সময় তারা যখন বিপদে পড়বেন তখন ওই প্লাটফর্মে আসবেন। এতে দেখা যাবে বছরের শেষে সবাই একই প্লাটফর্মে চলে এসেছেন। কোনো ইনস্টিটিউশনকে এই ঐক্যবদ্ধ করার কাজ হাতে নিতে হবে। সেটা সাংবাদিক ইউনিয়নও হতে পারে জাতীয় প্রেস ক্লাবও হতে পারে।
নিউনেশন সম্পাদক মোস্তফা শেখ কামাল মজুমদার বলেন, এখনও সংবাদপত্রে কালো দিবস চলছে। সাংবাদিকদের কালো, সাদা ও সবুজ তালিকা তৈরি করে দমননীতি চালানো হচ্ছে। রকিব উদ্দিন বলেন, তিনি ’৭৫-এর কালো দিবসে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের একজন। জীবিকার তাগিদে ঢাকার ফরাশগঞ্জে একটি আড়ত দিয়েছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে থেকে চালসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে এনে সেখানে বিক্রি করতেন। আগামী দিনগুলোতেও সাংবাদিকতার পথ নিষ্কণ্টক নয়। বরং সামনের দিনগুলোতে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।
এরশাদ মজুমদার বলেন, ওই সময় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করেই ক্ষান্ত হয়নি ক্ষমতাসীনরা, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে বাকশালে যোগ দিতেও বাধ্য করা হয়েছিল।
মোবায়েদুর রহমান বলেন, বেরুবাড়ি ভারতকে দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম কালো দিবস রচিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় করিডোর দেয়া হয়েছে। বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে। অথচ এক সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকার মাত্র ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে নিরাপত্তার কথা বলে ভারত তা দেয়নি। আমরা কিভাবে আমাদের বুকচিরে করিডোর দিতে পারি। তিনি বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্তত একদিনের জন্য হলেও করিডোরের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকুন। তিনি আরও বলেন, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম, আল্লাহর প্রতি আস্থা সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক সবচেয়ে ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন।
কাজিম রেজা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর সাংবাদিকরা নীরব থাকলেও মাহমুদুর রহমান ও কবি ফরহাদ মজহারের মতো ব্যক্তিরা প্রতিবাদ করেছিলেন। সাংবাদিকতা করতে গেলে কারও ধন্যবাদ পাওয়া যাবে এমন আশা করা ঠিক নয়; বরং লাথিগুঁতো খেয়েই সাংবাদিকতার পেশা টিকিয়ে রাখতে হবে।
মূল প্রবন্ধে ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সংবাদপত্র দলন ও সাংবাদিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন এবং পরবর্তী সময়ে সংবাদপত্রের ওপর দমন-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।

 

 



অতি গোপনীয় নথি ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওয়েবসাইট উইকিলিকস এবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের নানা দিক।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব গোপনীয় নথিতে উঠে এসেছে ১৯৭৩-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির চালচিত্র। গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক। এতে স্থান পেয়েছে সে সময়ের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নানা দিক।

কূটনৈতিক এসব রিপোর্টে শেখ মুজিবের শাসনকালের মূল্যায়ন করা হয়েছে। দুর্লভ তথ্য রয়েছে বাংলাদেশের খাদ্যসঙ্কট ও দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে। বর্ণনা আছে অর্থনৈতিক সঙ্কট, চোরাচালান, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে।

গোপন এসব নথিতে রয়েছে সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, দেশে জরুরি অবস্থা জারিসহ সেই সময়কার প্রতিটি ঘটনারই নির্মোহ বিশ্লেষণ। নথিতে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, ঢাকায় জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বীরোচিত সংবর্ধনা ও সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের মৃত্যু সম্পর্কেও রয়েছে বহু অজানা তথ্য।

মুজিব শাসনের বর্ণনাসম্বলিত উইকিলিকসের যে তথ্য দেশবাসী যাতে না জানতে পারে তার জন্য মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেসব তথ্য পাবেন নিচের লিঙ্কগুলোতে।
1. CONSTITUTION IS CHANGED: MUJIB NOW PRESIDENT:
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html


  1. NEW COUNCIL OF MINISTERS EQUALS OLD CABINET:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00489_b.html

  2. SHEIKH MUJIB: THE NEW MUGHAL:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00666_b.html


  3. CHAIRMAN MUJIB: THE NATIONAL PARTY IS ANNOUNCED:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA01000_b.html


  4. MORE MEMBERS FOR THE NEW PARTY:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA01022_b.html


  5. EK NETA, EK DESH: MUJIB GOES TO THE PEOPLE:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA01241_b.html


  6. COMING ATTRACTION FOR JUNE: BAKSAL LEADERSHIP:
    https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA02753_b.html




উইকিলিক্সের শেখ মুজিব শাসনামলের আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ-
http://wikileaks.org/plusd/index.php?qproject%5B0%5D=ps&qproject%5B1%5D=cg&q&s&qfconcept_hid&qfconcept&qftags_hid&qftags2_hid&qftags&qforigin=Bangladesh&qforigin_hid=Bangladesh&qfdestination_hid&qfdestination&qfofficeorigin_hid&qfofficeorigin&qfofficeaction_hid&qfofficeaction&qfoclass&qforiginalhandlingrestriction&qfcclass&qfexecutiveorder_hid&qfexecutiveorder&qfmarkings&qftype&qfenclosure_hid&qfenclosure&qfserie&qflocator&qfsigncount&qtfrom=1966-01-01&qtto=2010-12-31&qsort=tasc#result

ঘটনাগুলোর হেডলাইনের (Subject অপশনটিতে দেখুন) উপর ক্লিক করলে সেই ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারবেন। আরও সংবাদ জানতে পেজটির নিচে এসে “Get Next 20”, “Get Next 100”, “Get Next 500” এর যে কোন একটিতে ক্লিক করুন।

 

 

পরিশেষে, 

আমরা কেমন দেশে বাস করছি । দেশটা যে কোন পর্যায়ে গেছে তা দেশের জনগণ অনুধাবন করতে পারছেন অবশ্যই । রাজনৈতিক নিলর্জ্জতায় দেশটা উচ্ছনে যাচ্ছে । যে দলই ক্ষমতায় যায় তারা ভুলে যায় যে তারাও বিরোধী দল ছিল । তারাও হরতাল করেছিল তারাও গাড়ি পুড়েছিলো । ক্ষমতায় থেকে যা ইচ্ছা তাই করছে রাজনৈতিক দলগুলো । সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে একতরফাভাবে । ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন হলে তো যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেনো সে দলেরই জয় নিশ্চিত ।

যে দলই ক্ষমতায় যায়…..দেখলাম তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়াই ব্যস্ত । কিভাবে নিজেদের বিত্ত বৈভব বাড়ানো যায় সেদিকেই তাদের নজর । নাম পরিবর্তনের খেলায় মেতে উঠে……। নাম দিয়া কি হবে? দেশের জনগনই যদি শান্তিতে না থাকতে পারে । চাকুরীর বেলায়ও তাই হয় । সুপারিশ লাগে, ঘোষ লাগে চাকুরী পেতে হলে । নিজের দলের লোক হলেতো কথাই নেই । এসব লিখতে গেলে অনেক কথা । এখানে আমি কোন দলের পক্ষপাতিত্ব করছি না । আপামর জনতার সম্পত্তি, আমাদের সম্পত্তি । যা দিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি । জীবিকা নির্বাহের পথটিই যদি এভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় তাতে ক্ষতি কার হচ্ছে……আমাদের জনগণের না সরকারের । এভাবেই প্রতিটি হরতালে কত কত গাড়ি পুড়িয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করা হচ্ছে। দোকানপাট বন্ধ থাকাতে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে  ।  কই সরকার বা নেতানেত্রীদেরতো কোন ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে না । ইশ্ যদি তৃতীয় একটা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হতো । যে দল শুধু দেশকে নিয়ে ভাববে দেশের জনগণকে নিয়ে ভাববে, দেশের সম্মান রক্ষা করবে, দেশের, দেশের জনগণের কিভাবে উন্নতি হবে সেদিক গুলো নিয়ে ভাববে । যেখানে থাকবে না স্বার্থপরতা……থাকবে না নিজেদের বৈত্ত বৈভব বাড়ানোর চিন্তা । তাহলে আমাদের দেশটা হতো সকল দেশের সেরা । সকল দেশের চেয়ে সুন্দর ।

<a href="http://creativecommons.org/licenses/by/4.0/" rel="nofollow"></a> All Rights Reserved: AR.Mukul Photography 2014 by <a href="http://creativecommons.org/" rel="nofollow">creativecommons.org/</a> is licensed under a <a href="http://creativecommons.org/licenses/by/4.0/" rel="nofollow">Creative Commons Attribution 4.0 International License</a>.Based on a work at <a href="http://armukulvoice.wordpress.com/live-your-life-live-your-dream/.Permissions">www.armukulvoice.wordpress.com/live-your-life-live-your-dream/.Permissions</a> beyond the scope of this license may be available at <a href="http://armukulvoice.wordpress.com/live-your-life-live-your-dream/.Permissions" rel="nofollow">http://armukulvoice.wordpress.com/live-your-life-live-your-dream/.Permissions</a>.

[ চলবে ]



 

No comments:

Post a Comment

Thank you very much.